আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পরিচিত হোন বাংলাদেশের মনমুগ্ধকর একটি ঝর্ণার সাথেঃ জাদিফাই

সত্য বলেছি, সত্য বলছি এবং আরো সত্য বলেই যাব উঁচু পাহাড় আর চার দিকে সবুজের সমারোহ। নির্মল নিস্তব্ধতা। মাঝে পাহাড়ের বুক চিরে স্বচ্ছ পানির ধারা পাথর বেয়ে নিচে নেমে আসছে। ছিটকে পড়া পানির ওপর সূর্যের কিরণ পড়তেই বর্ণিল রঙধনু। চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার মতো দৃশ্য।

বান্দরবানের কেওক্রাডাং পাহাড়ের কাছে জাদিফাই ঝরনার দৃশ্যটি এমনই। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় ঝরনাটি সম্পর্কে লোকজন এখনো তেমন জানতে পারেননি। তবে দুই বছর ধরে ঝরনাটি দেখতে প্রচুর পর্যটক কেওক্রাডাংয়ের পাদদেশে ভিড় করছেন। লোকমুখে এর সৌন্দর্য ছড়িয়ে পড়ায় এখন পর্যটকেরা জাদিফাই এলাকায় যাচ্ছেন। জাদিফাই শব্দটির অর্থ জমিন থেকে পড়া পানি।

উঁচু পাহাড় বেয়ে জমিন থেকে স্বচ্ছ পানির ধারা নিচে নেমে আসে বলে ওই এলাকার বম সম্প্রদায় এ ঝরনাটির নাম দিয়েছেন জাদিফাই ঝরনা। কেওক্রাডাং পাহাড় থেকে ঝরনাটির দূরত্ব প্রায় দেড় কিলোমিটার। এ ছাড়া কেওক্রাডাং এলাকার কান্নানপাড়া থেকেও ঝরনাটিতে যাওয়া যায়। স্থানীয়রা জানান, কেওক্রাডাং, জংছিয়া ও জাদিফাই এ তিনটি পাহাড়ি ছড়া (ঝিড়ি) একসাথে মিলিত হয়ে জাদিফাই ঝরনার সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় ২০০ ফুট ওপর থেকে কালো পাথর বেয়ে স্বচ্ছ পানির ধারা নিচে নেমে আসছে।

ঝরনাটি পরে মিলিত হয়েছে সাংঙ্গু নদীর সাথে। কেওক্রাডাং এলাকায় গাছ, বেত, বাঁশ দিয়ে ছোট একটি রিসোর্ট তৈরি করেছেন এলাকার বাসিন্দা লালমুন থন লালা। রিসোর্টটিতে পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে। যারাই কেওক্রাডাং ঘুরতে গেছেন, তারা লালার আতিথেয়তার সুনাম করেন। লালা বম জানান, পাহাড়ি ঝোপঝাড় কেটে অনেক কষ্টে জাদিফাই যাওয়ার রাস্তাটি তৈরি করা হয়েছে।

গত বছর সেখানে বেশ কয়েকজন পর্যটককে নিয়ে যান তিনি। পর্যটকেরা ঝরনা দেখে মুগ্ধ হন। লালা জানান, দূর থেকে আসা পর্যটকেরা শুধু নন, স'ানীয় পাহাড়িরাও ঝরনাটি দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারেন না। তিনি মনে করেন, দেশে এ রকম সুন্দর আর একটি ঝরনাও নেই। এলাকার পর্যটন ব্যবসায়ী সিয়াম থন বম জানান- শীত, গ্রীষ্ম সব সময়ই পানির ধারা থাকে ঝরনাটিতে।

পাহাড়ের নিস-ব্ধতার মাঝে দূর থেকে শোনা যায় ঝরনার কলকল শব্দ। পানির ধারা যখন নিচে পাথরের ওপর পড়ে, সেখানেই দেখা যায় রঙধনু। পর্যটকদের সুবিধার জন্য জাদিফাই ঝরনায় একটি কাঠের ঘর বানানোর খুব ইচ্ছা লালা বমের। শিগগিরই তিনি ঝরনায় যাওয়ার জন্য প্রশস- রাস্তা ও বিশ্রামের জন্য একটি কাঠের ঘর বানাবেন। স্থানীয়রা মনে করছেন, সুযোগ সুবিধা দেয়া হলে পর্যটকদের ভিড় বাড়বে।

এটি হতে পারে বান্দরবানের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। ঢাকা থেকে সরাসরি বেশ কয়েকটি বাস সার্ভিস (এস আলম, সৌদিয়া, শ্যামলী, ডলফিন, ইউনিক) রয়েছে বান্দরবানে। বান্দরবান শহর থেকে জিপ বা বাস সার্ভিসে রুমাবাজার। সেখান থেকে হেঁটে বা জিপে করে বগা লেক হয়ে কেওক্রাডাং। জাদিফাই যেতে এরপর এক ঘণ্টার হাঁটা পথ।

ইচ্ছে করলে রুমাবাজার বা কেওক্রাডাং এলাকা থেকে স্থানীয় গাইডও সাথে নিতে পারেন। জাদিফাই দেখতে গেলে পথে প্রায় ২০০০ ফুট পাহাড়ের চূড়ায় প্রাকৃতিক বগা লেক, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পাহাড় কেওক্রাডাং ও সর্বোচ্চ পাহাড় তাজিংডংও দেখা যায়। এর সাথে পাহাড়ি গুহা, ছড়া, ঝরনা আর বর্ণিল সংস্কৃতির পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জীবনধারাও অবলোকন করা যায়। লেখকঃ মিনারুল হক, বান্দরবান সূত্র  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।