আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সখিনা কেন সখি না!

"ব্লগকে সিরিয়াসলি নেবার কিছু নেই"...গরীব স্ক্রীপ্ট রাইটার সখিনার জন্যই ফার্স্ট বেঞ্চের ছেলেমেয়েদের ২সারির মাঝখানের প্রথম সিটটাতে বসতো টেনেটুনে ক্লাসে ওঠা ছাত্র… আজও রশীদ স্যারের হোমমেড চিকন কঞ্চির স্বাদ ভুলতে পারে নি রমজান। পিছনের দিকে বসলে হয়তো মাঝে মাঝে পড়া না করে যেয়েও ফাকতালে বেঁচে যাবার সুযোগ ছিল। কিন্তু একেবারে সামনের সিটে বসতো বলেই প্রতি ক্লাসে পড়া ধরতো প্রতিটা স্যার। আর পরেরদিন রমজানকে সামনে দেখেই আগেরদিন পড়া পারে নি এটা মনে পড়তো আর আবার পড়া ধরতো আর … ক্লাসের নূড়া সবসময়ই এইটা নিয়ে হাসি তামাশা করতো… পড়া পারিস না আবার রোজ রোজ মার খেতে কেন সামনে এসে বসিস! এ কারণেই রমজানের একটা নামও দিয়েছিল নূড়া উজকুম্বা রমজান... মাঝে মাঝে অবশ্য নূড়া রমজানকে সুপরামর্শও দিতো …পড়া করে আসতে বলতো… কিন্তু রমজানের যে মন বসে না পড়ার টেবিলে… একথা কেমনে বোঝায়… সখিনা বসতো ঠিক পাশের সিটে… মাঝখানে দেড়হাত ফাকা জায়গা টিচারদের চলাচলের জন্য। কতবার সখিনার কলম পড়ে গিয়েছে তুলতে গিয়েছে, রমজানও তার কলম ফেলেছে ইচ্ছা করে একবার কলম তুলবার উসিলায় চোখাচোখি তো হবে সখিনার সাথে।

কিন্তু সখিনা কখনো রমজানের দিকে তাকাতো না… সে ছিল খুবই সিরিয়াস ছাত্রী। সবময়ই সে ১ থেকে ৩ এর মধ্যে থাকতো। আর রমজানও ১ থেকে ৩ এর মধ্যে থাকতো তবে সেটা পিছন দিক থেকে। তখন ক্লাস টেনে পড়ে, একদিন সকালে ক্লাস শেষে সখিনা রমজানকে বলল, ক্লাস শেষে একটু অপেক্ষা করো, তোমার সাথে কথা আছে। একথা শুনার পর বাকি কয়েকটি ঘন্টা কিভাবে কাটিয়েছিলো রমজান সেটা সে ই জানে শুধু।

ক্লাস শেষে সখিনা রমজানকে বলল, তার মায়ের চিকেন পক্স হয়েছে, বাবা ঢাকায় গিয়েছে। ১০০টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো, ডাব কিনে যেন তার বাসায় পৌছে দেয়। রমজান একটু হতাশ হয়েছিল প্রথমে, ভেবেছিল সখিনাও হয়তো তার মনের কথা বলবে কিন্তু সেতো ডাব হাতে ধরিয়ে দিল! পরেই নিজেকে বুঝ দিল, এ কথা তো সখিনা নূড়া কেও বলতে পারতো কিন্তু নূড়াকে না বলে তাকে বলেছে কারণ সখিনা রমজানকে আপন ভাবে তাই বলেছে। আর তাছাড়া তাকে তো বাসায়ও যেতে বলেছে ডাব নিয়ে। হয়তো তাকেই সে দায়িত্বশীল ভেবেছে তাই তাকে এতবড় একটা দায়িত্ব দিয়েছে।

সখিনাদের বাসায় ডাব নিয়ে গেল রমজান সাথে এক হালি কলা। সখিনার ছোটভাই কলা ডাব নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। সখিনার কোন দেখা নেই। হতাশ হলেও হার মানে না রমজান। বাঙালী নারী লাজুক হবে এটা তো দোষের কিছু না… মনকে শান্ত্বণা দেয় রমজান।

এভাবেই বেশ কিছুদিন যাবার পর একদিন রমজান সিদ্ধান্ত নেয় বহুদিন তো আমি কাপুরুষের জীবন কাটালাম এইবার সখিনাকে ভালবাসার কথা না বললেই না। পরদিন সকালে মওলানা সাহেবের কাছ থেকে ভয় পাওয়া কমানোর জন্য পানি পড়া খেয়ে আর গলায় একটা তাবিজ ঝুলিয়ে স্কুলে যায় রমজান। কিন্তু সখিনা আসে না সেদিন… সেদিন কেন তারপর বহুদিন হয়ে গিয়েছে সখিনা ফিরে আসে নি… তার কোন খবরও কেউ জানে না। জীবিকার তাগিদে রমজানও আজ বিদেশে প্রায় ১৫ বছর। রমজানের মা রমজানকে গত ১০ বছর ধরে বিয়ে করার জন্য পীড়াপীড়ি করছেন।

কিন্তু রমজান আজ ৩৫বছরের হবার পরও মাকে বলে, বিয়ে করার সময় হয় নি এখনও। নূড়ার ফোন পেয়ে রমজান নিজেকে সামলাতে পারে না। প্লেনের টিকেট কেটে সাথে সাথে দেশে চলে আসে রমজান। রমজানের মাও এইবার নাছোড়বান্দা, এইবার তিনি ছেলের বিয়ে দিয়েই ছাড়বেন। সখিনাদের বাসা থেকে বিয়ের ব্যাপারে খুব আগ্রহ দেখাচ্ছে শুনে আর না করে না রমজান।

সামনের কয়েকটা চুল পাকলেও ঠিক যেন আগের মতই রয়ে গিয়েছে তাতে কি! আমার জন্য যদি সখিনা এতগুলো বছর অপেক্ষা করতে পারে তবে সখিনার সব দাঁত পরে গেলেই বা কি আসে যায়!... মনে মনে বলে রমজান। মেয়ে একদম মায়ের মত হয়েছে, সখিনার ছোটভাইয়ের কথা শুনে যেন সম্বিত ফিরে পায় রমজান। সখিনাকে সে তো দেখেছেই তার মাকে দেখা না দেখার কি আছে! নিজের মনেই বলে রমজান। একটা ১৭/১৮ বছরেরে মেয়ে মাথায় ঘোমটা দিয়ে এসে সালাম দেয়। সালামের উত্তর দিতে দিতে রমজান বলে, এইটা কে? নূড়া বলে, আমাদের সখিনার মেয়ে… এ ই তো পাত্রী।

এক দৌড়ে রমজান ঘর থেকে বের হয়ে যায় রমজান, এরপর আর রমজানকে ওই গ্রামে দেখা যায় নি। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।