আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সংঘাতের রাজনীতি আর গনতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চেষ্টা....

দেশে আবারও শুরু হয়েছে সংঘাতের রাজনীতি। আকস্মিকভাবে 'অস্থিতিশীল' হয়ে উঠছে রাজনৈতিক অঙ্গন। সংঘাত ও সংঘর্ষের দিকে এগোচ্ছে দেশ। মহাজোট সরকারের তিন বছরের শাসনামলের মাথায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপি পরস্পর মুখোমুখি অবস্থান গ্রহণ করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। রাজধানীসহ সারাদেশে আকস্মিক সহিংস ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল ও সচেতন দেশবাসী।

ওয়ান-ইলেভেনের তিক্ত অভিজ্ঞতার পর পাঁচ বছর না যেতেই সরকার ও বিরোধী দল মুখোমুখি অবস্থান গ্রহণের দিকে ধাবিত হওয়ার বিষয়টি 'অনাকাঙ্ক্ষিত' ও 'দুঃখজনক' বলে মনে করছেন তারা। দু'পক্ষের মধ্যে 'সহনশীলতার' অভাবে আবারও 'তৃতীয়পক্ষে'র সুযোগ নেওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন কয়েকজন রাজনীতি বিশ্লেষক। সরকার ও বিরোধী দলকে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। হঠাৎ করে রাজধানীতে চোরাগোপ্তা হামলা, সংঘর্ষ, বোমা বিস্ফোরণ, গাড়িতে অগি্নসংযোগ এবং বিস্ফোরণে একজন নিহত এবং সিলেটে বাসে অগি্নদগ্ধ হয়ে একজন নিহত হওয়ার ঘটনায় জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক ও অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। এসব সহিংসতার জন্য বিরোধী দল বিএনপিকে দায়ী করছে সরকারি দল।

তবে বিরোধী দল বলছে, সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা মুক্তিযোদ্ধাদের 'রিসিভ' করতে সমবেত হওয়া দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে পুলিশ। জানা গেছে, কার্যত সরকারকে 'চাপের মুখে' রাখতেই 'হার্ডলাইন' অবস্থান গ্রহণ করে বিএনপি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় মহাসমাবেশ থেকে 'লাগাতার অবস্থান' কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান করার পরিকল্পনা করছে। অন্যদিকে বিরোধী দলের ধ্বংসাত্মক রাজনীতি কঠোর হাতে মোকাবেলার হুশিয়ারি উচ্চারণ করছে সরকারি দল।

কেউ কাউকে এক বিন্দুও ছাড় দিতে নারাজ। সহিংস ঘটনায় ১১টি মামলায় বিএনপি ও জামায়াতের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার এবং আসামি করা হয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করলেও পুলিশের বাধার মুখে মিছিল করতে পারেনি। পুলিশের কঠোর নজরদারির মধ্যেও বিজয়নগর ও নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশে পরপর ছয়টি হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলি খান সমকালকে বলেন, সংঘাতের রাজনীতি অতীতেও ছিল, মাঝে কয়েক বছর কমলেও এখন আবার তা শুরু হচ্ছে।

এটা খুবই দুঃখজনক। দেশের মানুষ শান্তি চায়। রাজনৈতিক দলগুলোকে সমঝোতামূলক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান করতে হবে। অন্যথায় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে ভুলের মাশুল দিতে হবে।

সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে দেশে সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। দেশের রাজনৈতিক 'সংস্কৃতি' বদলানো প্রয়োজন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ হচ্ছে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে রাজনৈতিক 'ঐকমত্য'। প্রধান দু'দলকেই অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের পথ চলতে হবে। যাতে কোনো 'তৃতীয়পক্ষ' সুযোগ নিতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

একই সঙ্গে রোববারের সহিংসতার ঘটনা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের শাস্তি দাবি করেন তিনি। ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় 'লাগাতার অবস্থান' কর্মসূচির প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি : আগামী কয়েক মাসে রাজনৈতিক মাঠ গরম করে সরকারকে চাপের মুখে রাখতে চায় বিএনপি। আগামী ফেব্রুয়ারিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে আবারও বড় জমায়েত করে টানা অবস্থান কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বিএনপি। সরকার বিরোধী দলের কর্মসূচি পালনে বাধা দিলে এবারের মতো গোপনে জমায়েত হয়ে রাজধানীর একটি পয়েন্টে অবস্থান নেবে তারা। অবশ্য দলের একটি অংশ গোপনে কর্মসূচি পালন না করে ঢাকায় মহাসমাবেশ করে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালনের পক্ষে।

এ কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতিতে বড় ধরনের 'অঘটন' না ঘটলে হরতাল দেবে না দলটি। রোববারের ঘটনায় একজন নিহত এবং দুই শতাধিক নেতাকর্মী গ্রেফতার হওয়ার পরও হরতাল দেয়নি তারা। সূত্রমতে, ফেব্রুয়ারির ওই কর্মসূচি সফল করতে বড় ধরনের ফান্ড তৈরি করা হচ্ছে। ব্যাপক লোকসমাগমের জন্য প্রয়োজনে প্রচুর অর্থ খরচ করবেন তারা। কর্মসূচির ক'দিন আগেই ঢাকার বাইরে থেকে বিক্ষিপ্তভাবে নেতাকর্মীরা জড়ো হবে।

টানা অবস্থান কর্মসূচি পালন করলে ক'দিনের খাবার মজুদ রাখার ব্যবস্থাও করা হবে। পাশাপাশি শক্তি প্রদর্শনের জন্য 'বিশেষ কর্মী বাহিনী'ও থাকবে। এ জন্য ছাত্রদল ও যুবদলের কয়েক নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এদিকে 'মনমতো' নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন না হলেও মেনে নেবে না বিএনপি। নিরপেক্ষ কমিশন গড়তে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি দেবে তারা।

রাষ্ট্রপতির সংলাপে যোগদানের ব্যাপারে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি দলটি। তবে দলটির নেতারা বলছেন, এ সংলাপ গুরুত্বহীন। এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দাবি আদায়ে তারা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন কর্মসূচি পালন করবেন। বাধা দিলে তার দায় সরকারকে বহন করতে হবে। একই সঙ্গে তিনি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করে আবার ক্ষমতায় যাওয়ার ষড়যন্ত্র থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করা হয়েছে দাবি করেন।

তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি আদায়ে আগামী জানুয়ারিতে চট্টগ্রাম অভিমুখে রোডমার্চ শেষে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বৃহত্তর কর্মসূচি দেবেন। বিরোধী দলের আন্দোলনের মুখে নিজেদের গুছিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ চলছে আওয়ামী লীগে। এ ছাড়া বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম বাস্তবায়নের দাবিতে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারি দলটি। এ জন্য এরই মধ্যে সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, বিরোধী দল দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

তারা সংঘাতের রাজনীতির দিকে এগোচ্ছে। এ অবস্থায় তাদের বিনা বাধায় ছেড়ে দেওয়া হবে না। তাদের সংঘাতের রাজনীতির বিপরীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শান্তির রাজনীতি নিশ্চিত করা হবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.