আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার জাপান যাওয়া.....৬ (হিরোশিমা কাহিনী-১)

বাংলাদেশের মাটি দিয়ে গড়া এক মানুষ হিরোশিমা দেখার সৌভাগ্য হবে এমনটি কল্পনাও করিনি। জাপানের বুলেট ট্রেনে করে রওয়ানা দিলাম। কয়েক ঘন্টার জার্নি। মাঝপথে জাপানের ফুজি পর্বত দেখার স্বাধ। ট্রেনের ভেতর থেকে ঐতিহাসিক ফুজি পর্বতমালায় চোখ রাখলাম।

জাপানের ঘুমন্ত এ আগ্নেয়গিরি দেখতে অসাধারন। বিকেল নাগাদ হিরোশিমা পৌছলাম। গাড়ী থেকে নামতে নামতে সন্ধ্যা প্রায়। তাই সবাই হোটেলে। সকালে হিরোশিমায় সূর্য উঠার দৃশ্য দেখলাম।

সুন্দর চিমচাম শহর। সকালে সবাই বেরিঢে পড়লো হিরোশিমা দেখতে। যাত্রা হিরোশিমা পিস মেমোরিয়েল হল। আমাদের স্বাগত জানাতে এগিয়ে এলো কর্মকর্তারা। ভেতরে ঢুকে প্রশান্তিতে মন জুড়িয়ে গেল।

ঝাকে ঝাকে কবুতর। উড়ে এসে বসছে গায়ের উপর। খাবার ছুড়ে দিলে সবাই এক সাথে ডানা ঝাপটিয়ে উড়ে। মনোরম দৃশ্য। দুর থেকে দেখা যাচ্ছে অষ্টম শ্রেনিতে পাঠ্য বইয়ে দেখা সেই ঐতিহাসিক বিধ্বস্ত ভবনটি।

ভবনটি দেখেই আমার বুকের ভেতর কেমন একটা শব্দ হলো। যা ছিল কল্পনায় তা বাস্তব হয়ে দেখা দিল আমার সামনে। হিরোশিমার মানুষগুলোকে দেখে মনে হলো এরা নিরীহ। কোন আঘাতে বিপর্যস্ত, নীরব, সরল প্রকৃতির। ১৯৪৫ সালের তাদের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া আনবিক ঝড়ের চিত্র বিশাল বিশাল ছবির মাধ্যমে গ্লাস বন্দী করে রাখা হয়েছে।

দেখতে দেখতে চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। এগুলো এত নির্মম, এত ভয়ংকর যা না দেখলে বুঝা যাবে না। ঝড়ে সাথে তারা লড়েছে। মনের মধ্যে প্রতিশোধ স্পৃহা থাকলেও মানুষগুলোকে দেখে বুঝা যায় না। এরা বলে আমরা পাপিকে নয়, পাপকে ঘৃনা করি।

হিরোশিমার উপর বর্ননা করতে গিয়ে হিরোশিমা ধংসযজ্ঞ নিজের চোখে দেখা তাকুমি ইয়াকুতার বলছিলেন, আনবিক বোমার মত গণখুনের অস্ত্রের মালিকানাই অন্তত এরুপ অবস্থার জম্ম দেয় বলে আমি মনে করি। বিশ্বের বিভিন্ন স্থান নানা চাপের মধ্যে থাকতে দেখা যায় এবং সম্ভবনা থেকে যায় যে সামান্য খিটিমিটি থেকে যুদ্ধ লেগে যেতে পারে। আণবিক বোমা আমার কাছে, কাজেই আমি তা ব্যবহার করবো এরুপ কুযুক্তি থেকে দুনিয়াকে মুক্ত করতেই হবে। আণবিক বোমা প্রস্তত না করা ও তার মালিক না হওয়ার আদর্শ আজকের দুনিয়ার জন্য জরুরী। ১৯৭৪ সালে আমি যখন স্পেন এ একটি আণবিক বোমার ক্ষতির উপর চলচিত্র দেখায় তখন একটি অবিস্মরনীয় অভিজ্ঞতা লাভ করি।

দর্শকদের মুখের সেই আতন্কিত হতবুদ্ধি ভাব এখনও আমার স্মৃতিতে অম্লান। এর কারন হয় তারা সম্পূর্ণ অজ্ঞ ছিল অথবা তাদের কখনো কেউ সত্য জানায় নাই..তার কথাগুলো শুনে আমরাও হলাম আবেগাপ্লুত। বের করতে লেগে গেলাম কেমন করে কি হলো। কিভাবে মারা হলো আনবিক বোমা। যা পেলাম তাতে দেখা যায়, ১৯৪৫ সালের প্রশান্ত মহাসাগরীয় যুদ্ধের শেষ দিনগুলোতে মুল জাপান যুক্তরাষ্ট্রের বিমান আক্রমনের পথে প্রতিরোধহীন ছিল, আর তার শহরগুলোকে একের পর এক ধংস করে দেয়া হয়।

অজ্ঞাত কারনে জাপানের কিয়োতো শহর বাদে বড় শহরগুলোর মধ্যে একমাত্র হিরোশিমাই ব্যাতিক্রম ছিল যার উপর আক্রমন হয় নাই। যুদ্ধের সময় অল্প দিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ বিমানগুলো হিরোশিমার উপর দিয়ে নানা রকম যুদ্ধ বিরোধূ প্রচার পত্র ফেলতে থাকে। এসব প্রচারপত্রের কোনটাতে হিরোশিমার উপর আনবিক বোমা হামলার ইঙ্গিত ছিল না। হিরোশিমা নয়, পুরো বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে ১৯৪৫ সালের ৯ আগষ্ট সকাল সোয়া ৮টায় ফেলা হয় আনবিক বোমা। পুরো বিশ্ব হতবাক।

বিরানভুমিতে পরিনত হয় হিরোশিমা। হিরোশিমার উপর ফেলা আনবিক বোমাটির ওজন ছিল ৪ টন। ৩ মিটার লম্বা। ১ কিলোগ্রাম ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ বোমাটি ২০.০০০ হাজার টন টিএন্ডটি সমান সমান ধংস ক্ষমতা সম্পন্ন এক ভয়ংকর মারনাস্ত্র। বোমাটির মান ছিল বিশ্বে সর্বাধুনিক।

এটি হিরোশিমায় ফেলার আগে যুক্তরাষ্ট্র ১৯৪৫ সালের ১৬ জুলাই নিউ মেক্সিকোর মেরু অঞ্চলে পরীক্ষামূলক বিস্ফোরন ঘটায়। তাতে তারা সফল হয়। পরবর্তিতে আরেকটি বোমা ইন্ডিয়ানা পোলিশ নামক ক্রুজারে করে ২৭ জুলাই প্রশান্ত মহাসাগরের মারিয়ানস দ্বীপপুঞ্জের তিনিয়ান দ্বীপে নিয়ে যায়। মূলত হিরোশিমাকে পরিকল্পিতভাবে ধংস করার জন্য তারা একাজ করে। কি পরিমান রক্তের হোলি খেলা হবে তা তারা জানতো।

ঐ দ্বীপে বোমাটি নেয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী প্রধানের সদর দফতর ওয়াম দ্বীপে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বহরের আক্রমন নীতি নির্ধারক ঘাটির প্রধানকে এক আদেশ দেয়া হয়। তা হচ্ছে আবহাওয়া অনুকুলতা সাপেক্ষে ৩ আগষ্ট বা তারপর যথাশীঘ্র সম্ভব বিশেষ বোমাটি প্রথমে হিরোশিমা, নিগাতা, নাগাসাকি বা কোকুরার যে কোনটিতে ফেলতে হবে। শেষ পর্যন্ত তারা বেছে নেয় ৬ আগষ্ট দিনটি। প্রথমটি ফেলা হয় হিরোশিমায়, বোমার ধংসযজ্ঞ দেখে মাতোয়ারা যুক্তরাষ্ট্র ৯ আগষ্ট দ্বিতীয়টি ফেলে নাগাসাকিতে। তার পরবর্তি ইতিহাস মাকির্নীদের নারকীয় হত্যাযজ্ঞের ইতিহাস... ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।