আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাবার হত্যাকারীর সাজা দেখে যেতে চান প্রফুল্ল

নিপুণ লেখনীর শানিত গর্জন / লিখব আজ নিপুণ কথন যুদ্ধাপরাধের বিচার দ্রুত শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করে একাত্তরে বাবাকে হারানো প্রফুল্ল চন্দ্র সিংহ বলেছেন, এ সরকারের আমলেই বিচার শেষ না হলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির বিপদ আছে। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ চট্টগ্রামের নূতন চন্দ্র সিংহের মেজো ছেলে প্রফুল্ল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ৪০ বছর পর হলেও যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। তবে ৭২ বছর বয়সি প্রফুল্ল বাবার হত্যাকারীর শাস্তি দেখেই মরতে চান। প্রফুল্ল বলেন, “বিচার যেহেতু শুরু হয়েছে যুদ্ধাপরাধের বিচার এবার হবেই। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার নিয়ে মানুষের শঙ্কা থাকলেও তা হয়েছে।

সে কারণে আমরা আশাবাদী। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও হবে। ” কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতন চন্দ্রকে ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল রাউজানের গহিরায় নিজের বাড়িতে হত্যা করা হয়। ওই এলাকায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর বাড়ি। একাত্তরে যুদ্ধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন তিনি।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সালাউদ্দিন কাদেরের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো আনা হয়েছে, তার মধ্যে নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যার অভিযোগও রয়েছে। প্রফুল্ল সিংহ বলেন, “যারা যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, তাদের যথাযথ শাস্তি হওয়া উচিত। ” চট্টগ্রামে সালাউদ্দিন কাদের ও তার বাবা মুসলিম লীগ নেতা প্রয়াত ফজলুল কাদের চৌধুরী ছাড়াও অনেক যুদ্ধাপরাধী আছে জানিয়ে প্রফুল্ল চন্দ্র বলেন, “৪০ বছর পর এ বিচার শুরু হওয়ায় সবাইকেই হয়তো আইনের আওতায় আনা যাবে না। তবে কিছু লোককে অবশ্যই শাস্তি দেওয়া উচিত। ” এ সরকারের আমলেই বিচার শেষ করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “তা না হলে একাত্তরের পরাজিত এই শক্তি আবারো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে।

অভিযোগ রয়েছে, ১৯৭১ এর ১৩ এপ্রিল সালাউদ্দিন কাদের পাকিস্তানি সেনাদের রাউজান কলেজ ক্যাম্প থেকে নূতন চন্দ্রের বাড়িতে নিয়ে আসেন। প্রথমে পাকিস্তানি সেনারা ফিরে গেলেও সালাউদ্দিন কাদের আবার তাদের নিয়ে আসেন। “বাড়ির মন্দির থেকে বের করে এনে বাবাকে হত্যা করা হয়,” বলেন প্রফুল্ল। গত বছরের ২৪ এপ্রিল রাউজানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কমিটিকেও একথা বলেন প্রফুল্ল সিংহ ও তার পরিবারের সদস্যরা। প্রফুল্ল বলেন, তার বাবাকে যেদিন হত্যা করা হয় তার দুদিন আগে ছাত্র ইউনিয়নের সে সময়ের নেতা মুক্তিযোদ্ধা আবদুল্লাহ আল নোমান ও তার বড় ভাই আবদুল্লাহ আল হারুণ তাদের পরিবারের সবাইকে রক্ষার জন্য ভারতে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।

“কিন্তু বাবা দেশ ছেড়ে যেতে চাননি। তিনি বলেছিলেন, দেশ আর মাকে (মন্দিরের প্রতিমা) ছেড়ে তিনি যাবেন না। ” ঘটনার সময় পরিবারের কেউ দেশে না থাকলেও দেশে ফেরার পর প্রত্যক্ষদর্শী ও তখনকার স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আমানত খাঁ চৌধুরীর কাছে বাবাকে হত্যার কথা বিস্তারিত জানতে পারেন প্রফুল্ল। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, এ ঘটনায় আমার বড়ভাই সত্যরঞ্জন সিংহ বাদি হয়ে সালাউদ্দিন কাদের ও তার বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরীকে আসামি করে ১৯৭২ সালের ২৯ জানুয়ারি রাউজান থানায় একটি মামলা করেন। “ওই মামলায় সে সময় ব্রজহরি কর্মকার নামে এক প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যও ১৬৪ ধারায় রেকর্ড করা হয়েছিল।

এগুলো পরে গায়েব করা হয়েছে। ” মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের আগেই দেশ ছাড়েন সালাউদ্দিন কাদের। তার বাবা ফজলুল কাদের স্বাধীনতার পর কারাগারে থাকা অবস্থায় মারা যান। ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাদের এদেশীয় দোসরদের সহায়তায় রাউজানের কুণ্ডেশ্বরী ছাড়াও জগৎমল্ল পাড়া ও ঊনসত্তর পাড়ায় নির্বিচারে শতাধিক হিন্দুকে হত্যা করে। এরমধ্যে জগৎমল্লপাড়ায় একই পরিবারের সাতজনহ ৩৭ জন এবং উনসত্তর পাড়ায় ৬৯ জনকে হত্যা করা হয়।

সালাউদ্দিন কাদেরের নেতৃত্বে মুসলিম লীগের নেতাকর্মীদের সহায়তায় ওই সব হত্যাকাণ্ড হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। আমরা অনতিবিলম্বে সাকা চৌধুরীসহ সকল যুদ্ধাপরাধীর বিচার চাই । সূত্রঃ চট্টগ্রাম, ডিসেম্বর ১৫ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.