আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাবার লালসার শিকার কন্যা: তবে কি বাবার কোলেও শিশু কন্যা নিরাপদ নয়?

আমি নির্বাক হয়ে গেলে তোমার পতন অনিবার্য ! বিষয়টি নিয়ে লিখব কি লিখব না, তা নিয়ে রীতিমতো দ্বিধাদ্বন্দে ভূগছি। এমন একটা স্পর্শকাতর ও ঘৃণ্য বিষয়, লিখতে নিজের বিবেকেই বাধ সাধে। কিন্তু আমাদের সামাজিক অবয় ঠিক কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে, তার জন্যই লেখা উচিত। অন্তত ঘৃণা প্রকাশ করার জন্য হলেও। খবরটা শুনে রীতিমতো টাস্কি খেয়েছিলাম।

প্রথমে বিশ্বাস হতে চাইছিল না। অফিসে লেটনাইট ডিউটি করছি। সোর্স ফোন করে বলল, বাড্ডা থানায় বাবার হাতে শিশু ‘রেপের’ ঘটনা আছে, খোঁজ নেন। সঙ্গে সঙ্গে বাড্ডা থানায় ফোন করে জানতে পারলাম, ঘটনা সত্য। শিশু কন্যাটিকে পুলিশ নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে।

আর তার নরপিশাচ বাবাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর আগে শিশুটির মা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে, ধর্ষণের মামলা, বাবার বিরুদ্ধে। সাংবাদিকতা করি। কত ধরণের ঘটনার নিউজ কভার করতে হয়, তার কোনো শেষ নেই। বাবা-মায়ের পরকীয়ার বলি হচ্ছে শিশু, এটি এখন প্রায়ই ঘটছে।

বাবা-মা নিজেরাই কেউ শিশু সন্তানকে গলাটিপে, ছুড়ি মেড়ে, পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করছে। এমন আরো অনেক ঘটনা, লিখে শেষ করা যাবে না। কিন্তু এই একটি বিষয় বাবা তার ঔরসজাত কন্যাকে ধর্ষণ করেছে, এমন ঘটনা খুব কমই ঘটে। আমিও এর আগে এমন ঘটনা নিয়ে কখনো সংবাদ লিখিনি। পুলিশের কাছ থেকে ডিটেইল তথ্য নিয়ে নিউজ লিখলাম।

সেকেন্ড এডিশনের কাজ চলছে। দ্রুত নিউজ দিতে হবে। কিন্তু আমি লিখছি, আমার কেন যেন হাত চলছে না। এও কি সম্ভব? একজন বাবা তার নিজের সন্তানের সঙ্গে এমনটা করতে পারে? আমরা কোন দুনিয়ায় এসে পড়লাম। সামাজিক অবয় কোথায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে? দ্রুত রিপোর্ট শেষ করে জমা দিলাম।

এর মধ্যে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার সঙ্গে বার দুয়েক কথা হলো। তার কাছ থেকে আর ডিউটি অফিসারের কাছ থেকে মামলার আদ্যপান্ত বর্ণণা শুনলাম। তদন্তকারী কর্মকর্তাকে সবার শেষে প্রশ্ন করলাম, ধর্ষণকারী-নরপিশাচ বাবা কী বলছে? সে কি বিষয়টি স্বীকার করেছে? প্রশ্ন করছি, আর মনে প্রাণে চাইছি উত্তর যেন না হয়, যেন পুরো ঘটনাটি মিথ্যা হয়। কিন্তু না, তদন্ত কর্মকর্তা জানালেন, বাবা নিজেই ঘটনাটি স্বীকার করেছে। নরপিশাচ ওই বাবার নাম নুরুল আমীন (৪০)।

গত ৪ অক্টোবর সে তার ১৩ বছর বয়সী শিশু কন্যাকে নিয়ে মধ্যবাড্ডায় একটি বাসায় ভাড়া থাকা শুরু করে। সঙ্গে শিশু কন্যা। এরপর থেকে সে নিয়মিত শিশুটিকে ধর্ষণ করে আসছিল। স্থানীয় লোকজন বিষয়টি আঁচ করে। বুধবার স্থানীয়রা ওই নরপিশাচকে হাতেনাতে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেছে।

খবর পেয়ে তার মা নাসিমা বেগম আসেন গ্রামের বাড়ি থেকে। তিনি ওইদিনই ওই নরপিশাচের বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় একটি মামলা (নং ২৬) দায়ের করেছেন। শিশুটির মা নাসিমা মামলার অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, প্রায় ১৭ বছর আগে নুরুল আমীনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের তিন বছরের মাথায় তাদের বিচ্ছেদ হয়। এর আগেই তাদের ঘরে আসে দুটি জমজ কন্যা সন্তান।

বিচ্ছেদের কিছুদিনের মাথায় অন্য এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে হয় নাসিমার। জমজ দুই কন্যা সন্তান তাদের নানার বাড়িতে বড় হতে থাকে। মাঝে মধ্যে বাবা নুরুল আমিন ওই বাসায় গিয়ে মেয়েদের দেখে আসত। সম্প্রতি সে এক কন্যাকে নিয়ে আসে নিজের কাছে। গার্মেন্টে চাকরীতে ঢুকিয়ে দেওয়ার নাম করে গত ৪ অক্টোবর থেকে নুরুল আমীন শিশু কন্যাকে নিয়ে মধ্য বাড্ডার একটি বাড়িতে বসবাস শুরু করে।

নুরুল আমীনের আচরণ সন্দেহজনক হওয়ায় বুধবার স্থানীয় লোকজন শিশু কন্যাকে রেপ করার সময় হাতেনাতে ধরে ফেলে। কন্যাটিকে পাষণ্ড বাবার হাত থেকে উদ্ধার করে। পরে বাবা-মেয়েকে সোপর্দ করা হয় পুলিশে। এই নরপিশাচ বাবা নামের কুলাঙ্গারটাকে কী বলে ধিক্কার জানাবো? আমি তো ধিক্কার জানানোর ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। এ আমরা কোন সমাজে বাস করছি।

এই নষ্ট সমাজ থেকে পরিত্রাণ কীভাবে সম্ভব? তবে কি এখন ভাবতে হবে বাবার কোলেও তার শিশু কন্যা সন্তানটি নিরাপদ নয়? বাবা-মায়ের হাতে পরকীয়ার বলি হচ্ছে অনেক সন্তান। বাবা-মা নিজেরাই কেউ শিশু সন্তানকে গলাটিপে, ছুড়ি মেড়ে, পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করছে। এরা তবু মরে গিয়ে তাদের জন্মদাতা-দাত্রীর এমন পৈশাচিক কর্মকান্ড থেকে রেহাই পেয়েছে। কিন্তু এই যে মেয়েটি, কেবল বয়স্বন্ধী কালে পড়েছে যে মেয়েটি, বাবার হাতে এমন পৈশাচিক বর্বরতার শিকার হলো, বাকী জীবনটা তার কীভাবে কাটবে? একদিন, যদি সে এই চরম গ্লানি নিয়ে বেঁচে থাকার সাহসটা ধরে রাখতে পারে, তবুও সে কি ভুলতে পারবে এই ঘটনাটির কথা? তার জন্মদাতার এই পৈশাচিকতার কথা? আমরা কি পারি না কোনোভাবে আমাদের এই সমাজটাকে এহেন অবয়ের হাত থেকে বাঁচাতে? সময় খুব কম, যা করার এখনই করতে হবে, আমাদেরই করতে হবে। কিন্তু কি করব? আমি কিছু ভেবে পাচ্ছি না...... ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.