আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছাম্মাক ছাল্লো আর দেশপ্রেমের বিরোধে নতুন দিন

১৬ ডিসেম্বর, ২০১১। বিজয় দিবসের চল্লিশ বছরের ভোর হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির একটি কক্ষ থেকে উচ্চস্বরে গান বাজছে। না কোন দেশপ্রেমের গান নয়, কম্পিউটারে চলছে হিন্দি গান। উলালা..উলালা, ছাম্মাক ছাম্মা নাচকে টাইপের গান।

আর তার সঙ্গে একটু পর পর চিৎকার করছে কিছু তরুণ-তরুণী যারা বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানের সফল আয়োজক। না এটি কোন কাল্পনিক দৃশ্য নয়। আজ সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে এই দৃশ্য দেখতে হয়েছে। আর মনে মনে ভেবেছি, কি কুক্ষনেই না টিএসসি গিয়েছিলাম। একটু ব্যাখ্যা করি।

স্বাধীনতার চল্লিশ বছর উদযাপন উপলক্ষ্যে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্তৃতিক সংগঠন। বিতর্ক, গান, চলচ্চিত্র সবই আছে। ১৪ ডিসেম্বর থেকে সেসব অণুষ্ঠান চলছে। প্রতিবছরই আমি এসব অনুষ্ঠানে যোগ দেই সময় সুযোগ করে। কিন্তু এবার নানান ঝামেলা আর অফিসের ব্যস্ততা এসব কারণে যাওয়া হচ্ছিলো না।

১৫ডিসেম্বর রাতে অফিস শেষ করে মনে হলো সব বিজয় দিবসে কোন না অনুষ্ঠানে যাই এবার স্বাধীনতার চল্লিশ বছরে বসে থাকবো? ঠিক করলাম কোন একটি অনুষ্ঠানে যবো। কিন্তু কোথায় যাবো? ঢাকায় এতো এতো প্রোগাম। হঠাৎ মনে হলো রাজারবাগ পুলিশ লাইনে স্বাধীনতার চল্লিশ বছর উপলক্ষ্যে যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হেয়ছে সেখানেই যাই। অনুষ্ঠানের একটি কার্ডও ছিলো আমার কাছে। মনে হলো, চল্লিশ বছর উদযাপনের সবচেয়ে ভালো জায়গা হতে পারে রাজারবাগ।

রাত ১১ টার দিকে গেলাম সেখানে। দেশাত্মবোধক গান, নগরবাউল জ্মেস-এর কয়েকটা অসাধারণ গান আর রাত ১২ টায় পুলিশের প্রতিরোধ যুদ্ধ আর বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে প্রদর্শণী দেখে ভালো লাগলো। চোখ দুটো ভিজে আসছিলো। মনে হলো, যেখান থেকে স্বাধীনতার প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ হয়েছিলো মার্চে, যেখানে শহীদ হয়েছিলো ১১৯ জন পুলিশ সদস্য, সেখানে বসে বিজয় দিবসরে মুহুর্তটা উদযাপন করাটা সৌভাগ্যের। রাজারবাগের অনুষ্ঠান শেষে টিএসসি গেলাম রাত সাড়ে ১২ টার দিকে।

টিএসসিতে গিয়ে দেখি আতশবাজি চলছে। অসংখ্য তরুণ। অনেক চেনা পরিচিতি মুখ। পুরোনো কয়েকজনের সঙ্গে গল্প করছিলাম। হঠাৎ করে ছাত্র ইউনিয়নের নেতা মানব দা বললেন, তোর সঙ্গে আলাপ আছে।

আয় বসি। শুরু হলো রাজনৈতিক আলাপ। আমরা টিএসতি বসে কথা বলেই যাচ্ছি শীতে কাপতে কাপতে। রাতের খাওয়া হয়নি। তবুও দেশের স্বপ্নে বিভোর হয়ে আমরা নানা স্বপ্ন বুনে যাচ্ছি রাজনীতির।

হঠাৎ উচ্চস্বরে কম্পিউটারে বেজে আসা শুরু হলো হিন্দি গান আর উলালা শব্দ। তাও আবার একাত্তর নামধারী একটি সংগঠন থেকে। মানব দা চরম বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ। তার কথা, টিএসসিতে এভাবে সকাল হতে পারে না। চল চলে যাই।

মনে মনে আমিও চরম বিরক্ত। তারপরেও মানবদাকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম দাদা ওরা তিনদিন ধরে সারারাত কাজ করছে। ক্লান্ত। তাই হয়তো রাতে হিন্দি গান শুনছে ক্লান্ত দূর করতে। ওরা বুঝতে পারছে না এইটার শব্দ বাইরে যাচ্ছে।

অন্যদের খারাপ লাগছে। মানবদার প্রশ্ন, কোন দেশাত্মবোধক গান শুনে তার সঙ্গে তাল মিলিয়েও তো ওরা ক্লান্তি কাটাতে পারতো। আর এই ভোরে যারা টিএসসি আসছ হিন্দি গান শুনে তারা কি ভাববে? আমার জানা নেই সেই প্রশ্নের উত্তর। মনে মনে ভাবছি, এই সংগঠনকে দোষ কি দেওয়া যায়? কিন্তু এই সংগঠনের অনেককে তো আমি দেখেছি কঠোর পরিশ্রম করতে। তাদের মধ্যে আছে অনেক দেশপ্রম।

তাহলে কি বাইরে একটি রাত কাটানো আর হৈ হুল্লোড় করাই বিজয় দিবস। এসব ভাবতে ভাবতেই কথা না বাড়িয়ে মানবদাকে বললাম চলো এখান থেকৈ বিদায় নেই। শীতের সকালে মানব দাকে দিয়ে পুরাণ ঢাকায় দিয়ে আসতে যাচ্ছি। ভোর ছয়টা বাজে। মনটা একটু খারাপই।

কিন্তু নগরভবনের সামনে আসতেই মনটা ভালো হয়ে গেলো। ভ্যান আর পরিবহন শ্রমিকদের মাইকে তখন বাজছে, দেশাত্মবোধক গান। সব কটা জানালা খুলে দাও না এই গান। আমরা পরষ্পরকে তখন বলছি, আজকের এই সকালে কোন গান শুনতে হবে সেটি এই পরিবহন শ্রমিকরাও জানে। কিন্তু টিএসসির কিছু দেশপ্রেমিক সাংস্কৃতিক কর্মী জানে না।

একটু আগাতেই বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে মাইকে ভেসে আসছে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ। যাক সকালটা তাহলে মন্দ নয়। মানবদাকে নামিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে বাসায় ফিরছি। টিএসসি দিয়ে যাওার পথে দেখলাম কিছু তরুণ এবার আজকের অনুষ্ঠানের জন্য কাজ শুরু করে দিয়েছে। ভালো লাগলো।

আরেকটু এগিয়ে দেখি বিভিন্ন হলের সামনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস দাড়িয়ে। যাবে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে। ছাত্ররা ঘুম ভাঙ্গা চোখে সেসব বাসে উঠছে। তাদের চোথে মুখে দেশের জন্য চরম ভালোবাসা। আর তাই শীতের সকালে ঘুম ভেঙ্গে তারা যাচ্ছে সাভারে।

দেখেই মনটা ভালো হয়ে গেলো। আমি চিরকাল আশাবাদী মানুষ। কখনো হতাশ হয়নি। চরম নিরাশার মধ্যেও স্বপ্ন দেখতে আমার ভালো লাগে। আমি স্বপ্ন দেখতে দেখতে বাসায় ফিরছি।

আর মনে মনে ভাবছি, আমরা কেউ কেউ ক্ষনিকের মোহে ভুল পথে চললেও সবাই একসঙ্গে ভুল পথে চলি না। কাজেই বিজয় আসবেই। জয় বাংলা। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।