আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মর্মান্তিক !!!

চোখ বন্ধ কর গয়না পড়াব বলেই কব্জি কেটে নিল পাষন্ড স্বামী চোখ বন্ধ কর গয়না পড়াব বলেই কব্জি কেটে নিল পাষন্ড স্বামী হাওয়া আক্তার ওরফে জুঁইয়ের (২০) ’অপরাধ’ স্বামীর নিষেধ স্বত্তেও পড়াশোনা করা। বিয়ের পরপরই অশিক্ষিত স্বামী তাকে জানিয়ে দেয় আর পড়াশোনা করা যাবে না। কিন্তু লেখাপড়ার প্রতি অদম্য টানে জুঁই নরসিংদী সরকারি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হয়। নির্বাচনী পরীক্ষায়ও ভাল ফল করে সে। স্বামীর নিষেধ স্বত্তেও পড়াশোনা করার খেসারত দিতে হলো জুঁইকে ডান হাতের কব্জি দিয়ে।

সে যাতে আর লিখতে না পারে সে জন্য ডান হাতের কব্জি কেটে নেয় ঈর্ষান্বিত আবুধাবি প্রবাসী স্বামী রফিকুল ইসলাম। গত ৪ ডিসেম্বর সকালে ক্যান্টনমেন্ট থানার জিয়া কলোনীতে রফিকের দুলাভাইয়ের বাসায় এ পৈশাচিক ঘটনা ঘটে। ডান হাতের আঙ্গুলগুলো হারিয়ে জুঁই নরসিংদী পৌর এলাকার ভেলানগরের বাসায় কষ্টকর দিন কাটাচ্ছে। সকাল-সন্ধ্যা সহপাঠীরা এসে তাকে সান্তনা দিচ্ছে। গত সোমবার ইত্তেফাকের প্রতিনিধি জুঁইয়ের ভেলানগর বাসায় গিয়ে দেখতে পান বুকের উপর ব্যান্ডেজ বাধা ডান হাতটি রেখে শুয়ে আছে সে।

অসহায় শিশুর মতো ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছিল এই প্রতিনিধিকে। ঘটনার কথা জিজ্ঞেস করার সঙ্গে সঙ্গেই কেঁদে ফেলে সে। বলতে থাকে স্বামীর সংসার, পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ও স্বামীর নিষেধের কথা। হাত কেটে নেয়ার প্রসঙ্গ আসতেই হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে সে। বলে তার স্বামী মানুষ নামের একটা নরপশু।

জুঁই জানায়, রফিকের দুলাভাইয়ের বাসায় বিদেশ থেকে আনা স্বর্ণের নেকলেসও হাতের বালা পড়ানোর কথা বলে সে বর্বরোচিত ঘটনা ঘটায়। আবুধাবি থেকে এসে সে আমার সঙ্গে ভালবাসা আর প্রেমের নানা ছন্দে কথা বলতে থাকে। যা হিন্দি সিনেমাকে হার মানিয়ে দেয়। যেভাবে কব্জি কেটে নেয় রফিক তিন বছর আগে জুঁইয়ের সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানার নুরজাহানপুর গ্রামের বাসিন্দা বাতেন মিয়ার ছেলে রফিকুল ইসলাম রফিকের সঙ্গে বিয়ে হয়। তখন জুই মাত্র এসএসসি পাশ করেছে।

বিয়ের পরপরই রফিক সাফ জানিয়ে দেয় আর লেখাপাড়া করা যাবে না । এর কিছুদিন পরই রফিক চলে যায় আবুধাবি। জুঁইয়ের বাবা ইউসুফ মিয়া একজন তাঁতশ্রমিক। দরিদ্র পরিবারের মেয়ে জুঁইয়ের ছেলেবেলা থেকেই লেখা পড়ার করার স্বপ্ন। মেয়ের লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহের কথা জানতেন ইউসুফ মিয়া।

আর্থিক দৈন্যদশার মধ্যেও মেয়ের পড়াশোনার খরচ যুগিয়েছেন তিনি। স্বামীর সংসারে এসে লেখাপড়ার নেশায় জুঁই নরসিংদী সরকারি কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হয় মানবিক বিভাগে। বর্তমানে সে শেষ বর্ষের ছাত্রী। অশিক্ষিত রফিক স্ত্রীর কলেজে ভর্তির সংবাদ শুনেই মারাত্মক ক্ষিপ্ত হয়। রফিকের আত্নীয় স্বজনও বিষয়টি ভালচোখে দেখেননি।

টেস্ট পরীক্ষার আগে রফিক তার শ্বাশুড়ি পারভীন বেগমকে জানিয়ে দেয় টেস্ট পরীক্ষা অংশ গ্রহণ করলে জুঁইকে পুড়িয়ে হত্যা করা হবে। এতো প্রতিকূলতার মধ্যেও টেস্ট পরীক্ষায় অংশ নেয় জুঁই। স্বামী যখন তাকে মানা করতো আর পড়াশোনা করা যাবে না তখন জুই স্বামীকে বলতো, তুমি ভয় পেয়ো না। মেয়েদের স্বামী একজনই। আমি এইচএসসি পর্যন্ত পড়বো।

তবুও মন গলেনি পাষণ্ড রফিকের। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী জুঁইকে তার ননদ নাইমা জানায়, তোমার স্বামী বিদেশ থেকে মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার ও কসমেটিকস পাঠিয়েছে। তুমি বাসায় এসে নিয়ে যাও। ননদের স্বামী সেনাবাহিনীর কর্পোরাল মো. শফিকুল ইসলামও অনুরূপ সংবাদ জুঁইকে দেয়। ১ ডিসেম্বর জুঁই নরসিংদী থেকে স্বামীর পাঠানো জিনিসপত্র নিতে জিয়া কলোনীর ননদের বাসায় যায়।

তিন দিন অতিবাহিত হলেও জুঁইকে কোন জিনিসপত্র দেয়া হয়নি। এ বিষয়ে সে ননদের কাছে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, আর একদিন পরই তোমার জিনিসপত্র দিয়ে দিবো। কান্না জড়িত কণ্ঠে জুঁই বলে ‘ ৪ ডিসেম্বর সকাল ৭টায় ঘুম থেকে উঠে দেখি বিছানার সামনে রফিক দাঁড়ানো। জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কখন আসছো। উত্তরে রফিক বলে, এইতো কিছুক্ষণ আগে আবুধাবি থেকে আসলাম।

তোমার সঙ্গে একা কথা আছে বলে রফিক তাকে একটি কক্ষে নিয়ে যায়। ’ অনেক দিন পর স্বামীকে দেখে আনন্দে ভরে উঠে জুঁইয়ের মন। চরম আবেগে পাশের কক্ষে দুইজনে গিয়ে বসে। এ সময় নাইমা ও তার স্বামী শফিকুল ইসলামসহ পরিবারের অন্য কক্ষে ছিল। রফিক কক্ষের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে দেয়।

রফিক জুঁইকে বলে তুমি তাহলে ঠিকই পরীক্ষা দিয়েছো। চোখ বন্ধ করো, তোমাকে এমন পুরস্কার দিবো, যা তুমি কখনো কল্পনা করতে পারবে না। স্বামীর এমন মধুর কথা শুনে আবেগে জুঁই চোখ বন্ধ করে ফেলে। এ সুযোগে ওড়না দিয়ে জুইয়ের দুই চোখ টাইট করে বেঁধে ফেলে রফিক। স্কচটেপ দিয়ে বন্ধ করে দেয় মুখ।

এরপর রফিক জুঁইকে বলে, তুমি ডান হাত লম্বা করো। জুই ডান হাত লম্বা করার সঙ্গে সঙ্গে ধারাল চাপাতি দিয়ে কোপ দেয় রফিক। এক কোপেই জুঁইয়ের কব্জি হাত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মুখে স্কচটেপ থাকায় জুঁই চিত্কার করতে পারেনি। মেঝে ভেসে যায় রক্তে।

রক্তাক্ত জুঁইকে ঐ কক্ষের বারান্দায় ফেলে রাখে রফিক। কিছুক্ষণ পর ননদ ও তার স্বামী এসে রক্ত পরিস্কার করে। জুঁইকে পরে উত্তরার একটি প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় তারা। সেখানে ডাক্তার ডান হাতে কবজি কিভাবে কেটেছে জুঁইয়ের কাছে জানতে চাইলে সে পুরো ঘটনা প্রকাশ করে। এ সময় ননদ ও তার স্বামী দ্রুত হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায়।

জুইকে ডাক্তার দ্রুত পঙ্গু হাসপাতালে প্রেরণ করে। ৬ ঘণ্টার মধ্যে বিচ্ছিন্ন আঙ্গুল পাওয়া গেলে জোড়া লাগানো সম্ভব হতো জুঁইকে পঙ্গু হাসপাতালের সার্জন জানান, ডান হাতের পাঁচটি আঙ্গুল ৬ ঘণ্টার মধ্যে পুনরায় ঐ স্থানে জোড়া লাগানো হলে আগের মত হয়ে যাবে। এই কথা শুনে জুঁইয়ের বাবা ও অভিভাবকরা ছুটে যান জিয়া কলোনীর ১০৭/৫ নম্বর ভবনের তৃতীয় তলায় শফিকের বাসায়। রফিকের হাতে পায়ে ধরে জুইয়ের বাবা বলেন, বাবা তুমি আমার মেয়ের আঙ্গুলগুলো দাও। উত্তরে রফিক শ্বশুরকে বলে আঙ্গুলগুলো উত্তরার ঐ হাসপাতালের ডাক্তারের কাছে রয়েছে।

এ কথা শুনেই সবাই সেখানে ছুটে যান। তখন ডাক্তার বলেন, ‘আমার কাছে আঙ্গুল নেই। ’ পুনরায় তারা আবার জিয়া কলোনীতে ছুটে আসেন। এখানে এসে তারা চিত্কার শুরু করলে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন। ঘাতক রফিক ডাস্টবিন থেকে জুইয়ের বৃদ্ধা আঙ্গুল ব্যাতীত অন্য চারটি আঙ্গুল খুঁজে বের করে।

পরে তা শ্বশুরের হাতে তুলে দেয়। পরে তারা চারটি আঙ্গুল নিয়ে পঙ্গু হাসপাতালে যায়। সময় ১০ ঘণ্টার বেশি অতিবাহিত হওয়ায় চারটি আঙ্গুল জোড়া লাগানো সম্ভব হয়নি। ডাক্তার পরীক্ষা করে দেখেন আঙ্গুলের কোষগুলো মারা গেছে। পঙ্গু হাসপাতালে দুইদিন চিকিত্সাধীন থাকে জুঁই।

পরে ছাড়পত্র নিয়ে নরসিংদী চলে যায় জুঁই। পরদিন ক্যান্টনমেন্ট থানায় রফিককে আসামি করে এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশ ঘাতক রফিককে গ্রেফতার ও জুঁইয়ের কবজি কাটায় ব্যবহুত চাপাতিটি উদ্ধার করেছে। গুলশান জোনের ভারপ্রাপ্ত উপ-পুলিশ কমিশনার নিজামুল হক মোল্লা বলেন, পাষণ্ড রফিককে গ্রেফতার এবং ঘটনার আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। মহানগর পুলিশ কমিশনার বেনজির আহমেদ বলেন, জুইয়ের বর্বরোচিত ঘটনার আরো সুষ্ঠুভাবে তদন্তের জন্য দ্রুত বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

জুইকে বাড়ি নিয়ে আসার সংবাদ পেয়ে তার নিজ কলেজসহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, সাংবাদিক, মানবাধিকার সংস্থার প্রতিনিধি, আশপাশের লোকজনসহ শহরের বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষের ব্যাপক ভির জমে করে তাদের বাসায়। লোমহর্ষক এ ঘটনা জানার পর নরসিংদীতে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। সহপাঠিরা এর প্রতিবাদ জানায়। নরসিংদী জেলা নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ফোরাম জেলা শাখার নেত্রী এমডিএস এর নির্বাহী পরিচালক ও মানবাধিকার সংগঠক ফাহিমা খানম, নারী নির্যাতনকারী বর্বর স্বামী রফিকুল ইসলামসহ সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে ঐ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে। নির্যাতিত নারী ও তার পরিবারের পক্ষে সকল প্রকার সহযোগিতা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেন।

এদিকে গত রবিবার নরসিংদী জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা উন্মে মাহমুদা খানম, মাদারস ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি এমডিএস-এর প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক সাংবাদিক ফাহিমা খানম, জেলা মহিলা বিষয়ক মহিলা অধিদপ্তরের নাজমা বেগম ও অন্যান্যরা নির্যাতিত কলেজ ছাত্রী অসুস্থ জুইকে দেখতে যান। Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।