আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধরা খাইয়া আধা-মরা হইয়া গেছি। এমন ধরা জীবনেও খাই নাই।

আমি বাংলাদেশের দালাল| আমি প্রবাসী। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কামলা দেই; মাস শেষ হইলে এক বা দুই তারিখে বেতন পেয়ে পরবর্তী শনিবারে দেশে পাঠাই। গত দুই মাস যাবত বাড়িতে টাকার তেমন কোন উল্লেখযোগ্য প্রয়োজন ছিলো না, তাই পাঠাই নি। দুই মাসের বেতন জমা করে এই মাসেরটা সহ তিন মাসের বেতন একত্রে একটা বড় এমাউন্ট পাঠাবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। গত দুই মাসের সিংগাপুর ডলার রেট ভালোই ছিল প্রায় ৬৩ টাকার কাছা-কাছি।

গত দুই তারিখে গত মাসের বেতন সহ ৩ মাসে মোট জমা হয়েছে ২৭৫০ সিং ডলার। এখন টাকা পাঠাবো কিন্তু রেট যে এমন কমা কমেছে তাতে আমি লস, লস এবং লস খাইতেছি। প্রতিদিন রেট কমতেছে। গতকাল ছিলো ৬০.৮৫ টাকা, আজকে ৬০.৬০ টাকা, আগামী কাল হয়ত দেখা যাবে ৬০.৩৫ টাকা। আমি মারা গেছি।

ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন। একটা দিক বিবেচনা করলে ভালোই, ডলারের বিপরীতে টাকা শক্তিশালী হচ্ছে। আমাদের অর্থনীতি শক্ত ভিত গড়ে তুলছে। এটা আশার কথা। কিন্তু সেটা তো বড় লোকদের জন্য, যারা পাজেরো, বিএমডব্লিউ, পোরশে, ল্যান্ডক্রুজার, মার্সিডিজ হাকায়।

আমার মতো দিন আনে দিন খাওয়া পাবলিকের জন্য জন্য অর্থনীতির শক্ত বুলি আর কার্ল মার্কস বা এরিস্টটলের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সঙ্গা, সুত্র বা মুলনীতি কোন কাজে আসবে না বরং উহা বুমেরাং হইয়া আমাদেরই পশ্চাতদেশে ঢুকিবে। উনারা অল্প টাকায় ডলার কিনতে পারেন, উনারা তাদের বিদেশ ভ্রমনে, পন্য আমদানীতে খরচের হার কমিয়ে আনেন। আর আমাদের মতো হিমোগ্লোবিন, লোহিত রক্ত কনিকা বিক্রি করে, শরীর থেকে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাংগানিজ আর ক্যালশিয়াম বের করার বিনিময়ে যে কয়টা টাকা কামাই তার উপর এই হটাৎ করে বিনিময় হার এতো নিচে নেমে যাওয়া, এটা আমাদের উন্নয়নের পথে বাধার সৃষ্টি করছে। কি লিখতে কি লিখছি!!! হ্যাঁ আমি শেষ। আমার ইনকাম কমে যাচ্ছে।

আমি শেষ হওয়ার ২য় কারণটা হলোঃ- প্রতিদিন ভোর ৫ টায় উঠে ফ্রেস হয়ে ৫.২০ এ অফিসের বাস ধরতে হয়। ৭.৩০ থেকে অফিশিয়াল ওয়ার্ক শুরু হয়। তো শনিবার বরাবরের মতোই আমার ২নং মোবাইলে এলার্ম দিয়ে মোবাইলটা ব্যাকপ্যাকের সাইড পকেট থেকে বের করে বিছানার উপর রাখতে গিয়ে ঘুমের ঘোরে রেখেছি কম অর্ধেক বিছানায় বাকি অর্ধেক খোলা জানলার শুণ্যে। ফলাফল: ৫ তলা থেকে প্রথমে ৪র্থ তলার সানশেড এ পড়ার শব্দ পেলাম। আর কিছু না।

যাই হউক, এ নিয়ে আমি এতো চিন্তিত না। যেখানে পরার কথা সেখানে প্রচুর সবুজ ঘাস প্রায় আধহাত লম্বা + মাটিও খুব নরম; ঘাসের জন্য কেয়ার টেকার প্রতিদিন ২ বেলা পানি দেয়। তারপর বিছানা থেকে নেমে হাত-মুখ ধুয়ে জামা-কাপড় পরে ব্যাকপ্যাক নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। ৫ তলার নিচে এসে আর মোবাইলের কথা মনে নেই। গিয়ে উঠলাম গাড়িতে।

সারাদিন অফিস করে বিকেলে বাসায় পৌছে আবার মনে হলো মোবাইলের কথা। তাড়াতাড়ি নিচে নেমে গেলাম। আর মোবাইলটা ফিরে পেলাম না। ঘাস-টাস সব খুব ভালো করে খূজেছি। একটা মোবাইল, একটা সিম, একটা ২জিবি মেমোরি কার্ড, রিসেন্ট রিলিজ অডিও গান এবং আমার ফ্যামিলির + বিয়ের কিছু ছবি সহ মোবাইল গায়েব।

এখন বলেন আমি কি বেচে আছি না মরে গেছি??? ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।