আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কেরু ভ্রমণ ও আমার কেমিক্যাল এঞ্জিনিয়ার হওয়ার বৃথা চেষ্টা (পাঠকের ওনুরোধে দশ মিনিটেই ২য় পর্ব দিলাম )

অনেকগুলো পোস্ট ড্রাফটে নিলাম বিশেষ কারণে 1st Part পরের দিন মাইক্রো যোগে ঘুরতে বেরুলাম । এবার পরিবেশ প্রকৃতি সামান্য ভিন্ন। নদী ধানক্ষেতের সাথে যোগ হয়েছে আখের খেত, হাসের ঝাঁক এবং আমাদের খুনসুটি চলছেই যথারীতি। একটা গল্প না বলে থাকতে পারছিই না। দর্শনার প্রধান আকর্ষণ যেহেতু চিনিকল তাই এক বন্ধু বায়না ধরলও আখ খেতের পাশে দাঁড়িয়ে গ্রুপ ছবি তোলা হোক।

সাথে সাথেই আরেকজনের মন্তব্য ছুটে গেলো, ‘ রাস্তার দুধারে ছাগলের সংখ্যাওতো অনেক কিন্তু তাই বলে ছাগলের গলা জড়িয়ে ছবি তুলবি নাকি? ’ উল্লেখ্য ছাগলের সংখ্যা প্রচুর এবং তা নিয়ে কাহানীও ঘটে মাশাল্লাহ। হঠাৎ শুনলাম, ‘একটি ছাগল হারানো গিয়াছে...’(ব্লগের কথা মনে পড়ল ) মাইকে এমনভাবে বলল যেন একজন এর বাচ্চা হারানো গেছে। কবিগুরু রবি ঠাকুরের আস্তানায় গিয়ে হাজির হলাম। পুরানো আমলের বাড়ি সংস্কার করে ঠিকঠাক রাখার চেষ্টা আছে বোঝা গেলো। বাইরে বিশাল এক ব্যানারে তাকিয়ে আমার চক্ষু চরক গাছ।

তাতে এদেশীয় একনেত্রী তার পিতা আর রবীন্দ্রনাথ এর ছবি (এটাই সাইজে সবচেয়ে ছোট) এক কাতারে। বাঙ্গালির লেজুড়বৃত্তির গোষ্ঠী উদ্ধার করে ছুটলাম বজরা দেখতে । সে বজরা পানিতে চলে না মডেল মাত্র। তাতে কি আমাদের উৎসাহ মরে, পাশেই পেয়ে গেলাম রবিঠাকুরের পুকুর । তাতে অদ্ভুত এক নৌযান তাকে নৌকা, স্পিডবোট না সাইকেল বলব বুঝে উঠতে পারলাম না।

ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ হওয়ার প্রয়াস, বিখ্যাত কুলফি কিংবা কচি ডাব সবই চাখা হল। আফসোস কোন কৃষ্ণকলির দেখা পেলুম না কবিগুরু মত! এই জন্যেই আমাদের কবি হওয়া হয় না। গাড়িতে করে ঘুরে আরও জানতে পারলুম রবি ঠাকুর সব কথাই সঠিক বলেননি(যেমন: দেখবার যোগ্য লোকটি থাকলেও যোগ্য স্থানটি থাকে না) আমার মনে হল কখনো সখনো দেখবার যোগ্য স্থান থাকলেও একালে যোগ্য লোকের দেখা মেলে না। কি আর করা ! তারচেয়ে পদ্মার পাড়ে চল সময় কাটাই পদ্মাতো বুড়িগঙ্গা নয় ভাই। পদ্মার পাড়েঃ সর্বনাশা পদ্মা নদী অতি কাছ দেখে আমরা উৎফুল্ল এবং আনন্দিত, তবে ঝাপ দেয়ার ইচ্ছা নিবারণ করতেই হল।

কাশবনের নিবিড় সমারোহে আখের খেতের ছায়ায় কুবের মাঝি হতে মন চায়। দীর্ঘশ্বাস আরও দীর্ঘ নাকরে লেগে গেলাম ফটো সেশনে। সত্যি পদ্মা চিরযৌবনা, উচ্ছল এবং জীবন্ত। এ নদীর কোন তুলনা নেই। কারণ জানতে না চেয়ে বরং ঘুরে আসুন।

কুষ্টিয়া এলে লালনের আখড়ায় না গেলে পাপ হবার সম্ভাবনা তবে তার আগে নিজের দেশের সীমান্ত দেখার বর্ণন দিব। ‘অনিকেত প্রান্তরে’ নামক আর্টসেলের ১৬ মিনিটের সুদীর্ঘ সংগীত চিরকাল যন্ত্রণাই দিয়েছে; কখনো মানে বুঝিনি,বোঝার চেষ্টাও করিনাই। ‘পেশাদার প্রতিহিংসা’ শব্দগুলোর মানেও স্পষ্ট, (পাশাপাশি দুটো আখখেত কিন্তু ওইপারেরটাতে দাঁড়ানোর সুযোগ মিলল না ) আমাদের সীমান্ত রক্ষীরা অতন্দ্র প্রহরীর মতন ,ঝড়-বৃষ্টিতে প্রিয়জন থেকে বহু বহু দূরে তাদের জননী জন্মভুমিকে পাহারা দিয়ে যান, সময়ের এপিটাফে আসলেই কি তাদের কথা লেখা থাকবে? ‘বৈকালিক বাতাসে’ সহযোগিতামুলক মনোভাবে মনেই হয় না কি টানটান উত্তেজনা ১৩১.০০ নং খুঁটির দুইপাশের মানব সম্প্রদায়ের মধ্যে। ‘নো-ম্যান্স ল্যান্ড’ বিষয়টা নিয়েও আলোকপ্রাপ্তি ঘটল এ সুযোগে! কুষ্টিয়ার লালনের আখড়া ও তার আশেপাশে মনে হয় সারা বছরই উৎসবের পরিবেশ থাকে। যার চারিদিকে তাকালে মনে হয় ‘আনন্দের মেলা বসিছে’ , বৃথা ‘মনের মানুষ’ খোজার সাধনা।

সুন্দর করে গোছানো , চারিদিকে বাগান, লালনের মিউজিয়াম-সবমিলিয়ে আখড়া শুনে যা ভেবেছিলাম তা নয়। লালনের ব্যবহৃত তৈজসপত্র ও তার সংগী সাথীদের ছবি-পরিচয়ে সাজানো মিউজিয়াম মোটের উপর মন্দ না। জীবনে প্রথমবারের মতন সত্যিকারের বাউলদের গান শুনলাম সামনাসামনি। দারুণ দারুণ সব গান ফেলে আমি ও আমার বন্ধুদের কেউ উঠতেই চাচ্ছিলো না। কিন্তু ‘সময় গেলে সাধন হবে না’; কখনো হয়ও না।

আমাদেরও যেমন ঢাকায় ফেরার বাস ধরা দরকার ছিল । কিন্তু দর্শনার নদী, আখখেত, রাজহংসের রাজকীয় ভঙ্গীতে চলাফেরার চেয়েও যেটা মিস করব তা হলো মানুষের আথিতিয়তা । সমুদ্রের মতন হৃদয় নিয়ে যারা আমাদের অষ্টপান্ডবকে রীতিমত জামাই আদরে রেখেছেন তাদেরকে ধন্যবাদ দিয়েও বিব্রত করতে মন সায় দেয় না। পরিশিষ্টঃ carew একজন ব্রিটিশ রমণির নাম। কারখানাখানা ব্রিটিশদের তৈরি সেতো বুঝতেই পারছেন।

চিনি বানানোর কাজে প্রতিবছর কেনো এই সরকারি মালিকাধীন কোম্পানী লস (একমাত্র বৈধ ডিস্টলারি অবশ্য তাদেরি আর তাই মোটের উপর সামান্য লাভের মুখ দেখেন তারা; দেশ বিদেশে কেরুর তৈরী এই বস্তুর চাহিদাও নাকি অনেক ) করে তার কারণ উদ্ধার হলো আলাপে আলাপে। সবই নষ্ট রাজনীতির কুফল। কোম্পানীর সাড়ে তিন হাজার একর জমির অনেকটাই বেদখলে। কোম্পানীর প্রতি মায়াও হয়তো অনেক কম কারো কারো মধ্যে। সবমিলিয়ে সত্যিকারের বাংলাদেশের অনেকটাই প্রতিচ্ছবি।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।