আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্লগ নিয়ন্ত্রণ হবে ডিজিটাল স্বৈরাচার

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্লগগুলোকে নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দিয়েছেন। তার মতে, ব্লগ এখন অনেকটা পর্নোগ্রাফিতে পরিণত হয়েছে এবং তার নেত্রী ও অন্যান্য নেতার বিরুদ্ধে সব মন্তব্য মডারেট করতে হবে। ডিজিএফআইয়ের লোকেরা বহু আগেই একটি বড় ব্লগের কর্তাব্যক্তিদের ধরে নিয়ে হুমকি-ধমকি দিয়েছিল। যার ফলে বড় ব্লগটির সামপ্রতিক মডারেশন আরো বেশি আওয়ামীবান্ধব। সৈয়দ আশরাফদের জানা থাকা প্রয়োজন, মতামত প্রকাশের অন্য মাধ্যমগুলোর মতো ব্লগগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।

বিশ্বব্যাপী অনেক তোলপাড় হলেও ব্লগিং বন্ধ করা যায়নি। কারণ বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে বসে মুহূর্তের মধ্যে এটি করা সম্ভব। ব্লগে ছদ্মনামে সমাজের সব শ্রেণীর মানুষ এমনকি সরকারি চাকরিজীবীও নিশ্চিন্তে তাদের মতামত তুলে ধরতে পারেন। সৈয়দ আশরাফের এ রকমের অবিবেচনাপ্রসূত বক্তব্য তার নেত্রী ও দলকে ব্লগারদের প্রতিবাদের লক্ষ্যবস' বানিয়ে ফেলল। অসত্য, অশোভন ও অশুদ্ধ বিষয়গুলো যথাযথভাবে মডারেশনের ক্ষেত্রে আরো যত্নবান হওয়ার দরকার রয়েছে।

বিষয়টি এ রকম হলে খুবই ভালো। কিন' আশরাফ সাহেবদের উদ্দেশ্য ও চিন্তা অন্য কারণে। ব্লগকে তাদের নিয়ন্ত্রণের চিন্তা আরব জাগরণের ভয় থেকে। বাকস্বাধীনতার অবশিষ্ট মাধ্যম তথা ব্লগগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ আসার আগেই মৌলিক অধিকারগুলোর ব্যাপারে ফেসবুক ও বিভিন্ন ব্লগে তরুণ প্রজন্মের সোচ্চার ভূমিকা লক্ষ করার মতো। সৈয়দ আশরাফের বক্তব্যের প্রতিবাদে অনলাইন জগতে চলছে তরুণদের নিন্দার ঝড়।

তথ্যপ্রযুক্তির এই চরম উৎকর্ষের যুগে দাঁড়িয়ে বাকস্বাধীনতার এসব প্লাটফর্মকে নিয়ন্ত্রণের চিন্তা করা সময়কে ধারণ করতে না পারার নামান্তর মাত্র। ব্লগগুলো নেতিবাচক নেশার বিপরীতে একটি ইতিবাচক প্লাটফর্ম। দেশে বর্তমানে প্রায় ৯ কোটি মোবাইল ও দু’কোটিরও বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী আছে। অদূর ভবিষ্যতে নেটের খরচ কমে যাওয়ার কারণে এবং গতি বেড়ে যাওয়ায় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা অত্যন্ত দ্রুততার সাথে বেড়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে ব্লগগুলো পাবে নতুন মাত্রা।

তরুণদের ফেসবুকে বিভিন্ন কারণে বিস্তর সময় দেয়া কিংবা নেতিবাচক সাইটগুলো থেকে গঠনমূলক সাইটে বা কাজে ব্যস্ত রাখা না গেলে ডিজিটালের প্লাবন জাতির উন্নতির পরিবর্তে সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে। বর্তমান সময়ে বিশ্বব্যাপী ব্লগিং বিষয়টি অত্যন্ত আলোচিত। চলতি বছর মধ্যপ্রাচ্যের আন্দোলনে ব্লগারদের ভূমিকা, পাশ্চাত্যের আগ্রাসন ও অনিয়মের প্রতিবাদে আন্দোলনের নেতৃত্ব ও শান্তিতে নারী ব্লগারের নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির ঘটনা উল্লেখ করার মতো। মাহাথির মোহাম্মদ থেকে শুরু করে অনেক বিশ্বনেতাও ব্লগিং জগতে আমাদের সবার জন্য বিশেষ করে তরুণদের জন্য অন্যরকম অনুপ্রেরণা। বাংলাদেশেও মন্ত্রী থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সচিব ও বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণীর পেশার অনেকেই ব্লগিংয়ে আসছেন।

বাংলাদেশেও জাতীয় স্বার্থে ব্লগারদের ভূমিকা প্রশংসনীয়। অতীতে ফেলানী ইস্যুতে মূল ভূমিকা ব্লগাররাই রেখেছেন। ফেলানী ইস্যু নিয়ে বাংলা ব্লগগুলোর ভূমিকাও ইন্ডিয়ার কিছু ফোরামে আলোচনার ঝড় তুলেছিল। আজকে বিচারপতি, আইনজীবী, শিক্ষক, সাংবাদিক, পেশাজীবী, শ্রমিক, কৃষক সব জায়গাতেই দুই দলে বিভক্ত। বিদেশী শকুনদের হাত থেকে দেশের সম্পদ রক্ষা করে সামনে এগোতে ব্লগারদের শক্তিশালী ভূমিকা সময়ের দাবিও বটে।

তবে সব সময় ব্লগারদের দর্শন হতে হবে ন্যায়নিষ্ঠ ও দেশের স্বার্থে। ব্লগ তথা বাকস্বাধীনতার অবশিষ্ট মাধ্যমগুলোর ওপর কোনোরকম নিয়ন্ত্রণ আসার আগেই মৌলিক অধিকারগুলোর ব্যাপারে আমাদেরকে জনমত তৈরি ও জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। সূত্র: হাসান জামান,লেখক, ব্লগার http://www.dailynayadiganta.com/details/16109 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.