আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজ এক যুদ্ধের গল্প বলব

হারিয়ে গেছি হারিয়ে গেছি হারিয়ে গেছি ওরে, হারিয়ে গেছি অন্ধরাতে শিশির ভেজা ভোরে । হারিয়ে গেছি ভোরের আলোয় আজকে সারা দিন, হারিয়ে গেছি রাতের কালোয় বাজছে সাপের বীণ। হারিয়ে গেছি রক্ত লালে হারিয়ে গেছি ভাই, হারিয়ে গেছি শূন্য মাঝে আর যে আমি নাই । আমি আজ এক যুদ্ধের গল্প বলব । এটা এক যুদ্ধের ভেতর আরেক যুদ্ধের কথা , জীবন নিয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রামের কথা ! ১৯৪৫ সালের মার্চ মাস ।

চারিদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সাইরেন বাজছে । মানুষ মানুষকে জন্তুর মত হত্যা করছে । মার্চের ১৭ তারিখ ঝাঁকে ঝাঁকে অ্যামিরিকান বিমান এসে জাপানের এক শহরকে ধ্বংসস্তুপে পরিনত করে দিয়ে গেল। সেদিন প্রায় নয়হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল আর লাখ লাখ মানুষ তাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছিল । সেদিন হাজার হাজার মানুষের মত এক বালক মৃত্যুকে জয় করতে পারল।

নতুন করে জীবন পেল । চারিদিকে হাহাকার, খাবারের অভাব । বালকটির ছোট বোনটি পুষ্টির অভাবে না ফিরার দেশে চলে গেল । আরেক বোন অসুখে ভুগে আর বাবা বোমার আঘাতে পাড়ি দিল অজানা এক দেশে । যুদ্ধ শেষ হয়ে আরো অনেক বছর কেটে গেল।

সে বালকটি এখন অনেক বড় । সে তার দত্তক পিতা, বোন এবং নিজের জীবনের উপর ভিত্তি করে একটা উপন্যাস লিখে ফেলল । নামঃ Hotaru no Haka এ উপন্যাসটি অনেক জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর এর উপর ভিত্তি করে একটা চলচিত্র বানানো হল, এনিমেশান মুভি, খুব সিম্পল এনিমেশন মুভি, কোথাও কোন আহামরি কিছুই নেই তারপরও কেন যেন ভাললাগার আবেশ ছড়িয়ে মনকে ভারাকান্ত করে ফেলে এ মুভিটি । নিজের অজান্তেই চোখ থেকে ঝরে পড়ে ক’ফোটা নোনা জল । বারে বারে চশমাটা ঝাপসা হয়ে আসে, টিস্যু পেপারটা ভিজতে থাকে............ মুভির একটা ছবিঃ মুভির শুরুতেই আমি শক খেয়েছি ।

শুরুটা ঠিক এরকম , September 21st, 1945... That's the night I died. এরপর ছবির এগিয়ে চলে । ভাল লাগা, যুদ্ধের জন্য ঘৃনা, কষ্ট এগুলো ধীরে ধীরে বাড়তেই থাকে । উপন্যাসটার নামানুসারেই মুভির নাম রাখা হয় Hotaru no Haka । ইংরেজী করলে হয় Grave of the Fireflies সাধারন ভাবে বলা যায় “জোনাক পোকার সমাধি” । গল্পের বালকের নাম সেইতা আর তার বোনের নাম সেতসুকো ।

বাচ্চাটাকে দেখলে কোলে তুলে আদর করতে ইচ্ছে করে । এরকম একটা চার বছরের বাচ্চার কষ্ট দেখলে সত্যিই নিজের বুকটা হুহু করে উঠে । মুভিতে ভাই আর বোন তাদের বিভিন্ন আনন্দ বেদনাগুলো আমাদেরকে তাদের সাথে নিয়ে গিয়ে দেখিয়েছে । যুদ্ধে মাকে হারিয়েও ছেলেটি বোনকে জানতে দেয়না । বারবার মায়ের কথা বললে এটা সেটা বলে খেলা দেখিয়ে ভুলিয়ে রাখে ।

বাবা নৌবাহিনীতে কর্মরত । বাবা-মা ছাড়া তাদের দুজনের জীবনের সাথে সংগ্রামই এ মুভির মূল ঘটনা । মাঝে মাঝে বাবা মায়ের সাথে অতীতে ফিরে দেখা স্মৃতি দেখিয়ে তাদের কষ্ট ও সামাজিক বাস্তবতা ফুটিয়ে তোলা হয় । প্রথম পাঁচ মিনিট খুব ভালভাবে না দেখলে মুভির ভিতরে সেভাবে ঢুকতে পারবেন না । আমি মনে করি এ মুভিটি সবার দেখা উচিত ।

ভাল না লাগলেও দেখা উচিত, কারন মুভির একটু ভিতরে গেলেই আপনি আর মুভি ছেড়ে উঠতে পারবেন না। আমার দেখা সেরা দশের মধ্যে এটাকে স্থান দেওয়া যায় । আমি জানি অনেকেই এ মুভিটা দেখেছেন । কিন্তু যারা দেখেননি শুধু তাদের জন্যঃ ১৯৭১ সালে আমাদের দেশেও এরকম এক যুদ্ধ হয়েছিল । এ ডিসেম্বর মাসেই আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি ।

আমাদেরও এরকম অনেক ছোট ছোট বাচ্চারা যুদ্ধের বলী হয়েছিল । হয়তো কেউ কেউ বেঁচে ফিরলেও লিখতে পারেনি এরকম উপন্যাস, কারন বাবা-মা হীন জীবনই যেখানে অচল সেখানে পড়ালেখাই বা করাবে কে ? বাংলাদেশের সকল শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করছি । আর যারা এত বছর পরও আমাদের কাছে ক্ষমা চায়নি, তাদের জন্য ধিক শত ধিক । এর চেয়েও বেশি ধিক্কার জানাই তাদের যারা সেই নিকৃষ্টদের নিজের শরীরে অংকন করে মাঠে নিয়ে যায়। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।