আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেই দিনগুলি

জীবনের অর্থ খুজিনা,তাই জীবনকে অর্থহীন মনে হয়না ১৫ ডিসেম্বর। সকাল ১০টা। ফার্মগেট। স্থান-ই। হক কোচিং।

এসেছি ভর্তি হতে। কোচিং করমু। বিশাল মানুষ হমু। বাপের ব্যাফুক ইচ্ছা,সাথে মায়ের দোয়া। যাক,আইলাম দেখি কিছু হয় কিনা।

ঢুকেই দেখা হলো চিকনা এক লোকের সাথে। প্রায় ধাক্কা খাচ্ছিলাম। উনিই ধরে ঠেকালেন। মেজাজ পুরাই বিলা হয়ে গেলো সকাল সকাল। যাই হোক,ভাবলাম মামা-টামা কিছু হবে হয়তো।

উরিব্বাস,ব্যাডা বাজখায়ী গলায় স্বাগত(!!!) জানালো,আমি তোমার অপু স্যার। এই কোচিং(আরেকটা সার্কাস,এইডারে উনি কোচিং কন!!!) এর পরিচালক। আমারে জিগাইলেন,”তুমি কে?””আরে ব্যাডা আবাল,দেইখা বুঝস না আমি কে। আরে আমি ইসটুডেন্ট,এইহানে পরমু। মানুষ হইতে আইছি”।

কইতে চাইলাম। কিন্তু ভদ্রতা করে বললাম,আসসালামু আলাইকুম,জনাব(!!!),আমি আদনান,কলেজ থেকে সোজা এখানে এসেছি। শুনেছি আপনার এই খুপড়ি নাকি দেশের সেরা বিদ্যাপীঠ!!!আমার চাছাছোলা কথায় উনি কিঞ্চিত অবাক হলেন। বল্লেন,সায়েন্স?”জী”…ওমা,এবার অবাক হলাম আমি। ট্রাফিক পুলিশের মত এক হাত তুলে আরেক হাত দিয়ে ইঙ্গিত দিলেন সোজা যেয়ে বামে।

যাও। গেলাম। দেখি অনেকগুলা ইস্মার্ট পোলা আর সুন্দরী মাইয়া বয়া আছে। আরে মজা, আইছি পড়ালেখা করতে। মাইয়া দেখতে না।

আদনান ভালো হও। তোমার লক্ষ্য পুরণ করে চলে যাও। হু হু,বুঝছি,আর জ্ঞান দিতে হবেনা,নিজের বিবেকরে কইলাম। last bench এ বসলাম। চুইংগাম চাবাচ্ছি আপন মনে।

বামে তাকালাম,পাশে একটু দূরে এক মাইয়া বসে আছে। না,আসলে বসে নাই,বরং বলা ভালো নড়াচড়া করছে। মনে হচ্ছে মুখের বানী নিঃসরণে উনি বিশেষভাবে ব্রতী। মাইক চলছে সমানে। এইডি আইছে কই থেইকা?একজনারে জিগাইলাম।

ওমা,সিটি কলেজ। নিজের কলেজ। নাহ ধারণা বদলাতেই হয়। আবার মনে মনে বললাম,”আরে সিটি কলেজের মাইয়া কথা বলবেনা তো কি হলিক্রস/ভিকারুন্নেসার মাইয়ারা কথা বলবে। আহা,কি সুন্দর করে কথা বলে মেয়েটা।

কলিজা জুড়ায় যায়। ” তাকালাম ডাইনে। এক নাদুস নুদুস ফর্সা পোলা,চুপচাপ বসে আছে। পাশের জনের সাথে পুটপুট করে মাঝে মাঝে। বাচ্চা বাচ্চা চেহারার ছেলেটাকে দেখে ভালোই লাগলো।

ক্লাশ শুরু হলো,আইলেন chemistry স্যার। ওহ নো,এই chemistry জিনিসটা আমার বিশেষ বিরক্তির কারণ। স্যার আইসাই কি বলতে লাগলেন আল্লাহ মালুম,আমার মনে হচ্ছে সবাই বুঝতেছে,আমি শালার বলদা,কাতলা মাছের মতো হা করে তাকায় আছি শুধু। হঠাত স্যার কি যেনো প্রশ্ন করলেন। দেখি সামনের সিটের এক পোলা দাঁড়ায় হুদাই উত্তর দিচ্ছে।

যদিও ওর কিছুই হচ্ছেনা। বরং ওর কথা শুনে সবাই লাফিং গ্যাসের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে। এইডা নিয়ে উনার কোনো headache ই নাই!!!কথা তার বলতেই হবে। স্যার বসায় দেয়,আবার দাঁড়ায়। মেজাজ ই খারাপ হয়ে গেলো প্রথম দিন।

শালার বিদ্যার্জন। এরপর ফাজিল পোলা হিসেবে মোটামুটি সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলাম। একদিন দেখি নতুন এক চিড়িয়া এসে হাজির। চিকনা কইরা। ক্যামুন কুতু কুতু দৃষ্টিতে তাকায়।

কথা কয়না। আবার মিটিমিটি হাসে আমার দিকে চেয়ে। আরে এ আবার কি জ্বালা। নাম জিগাই,কইলো। একদিন খেয়াল করলাম,এক কোণায় পিচ্চি দুইডা মাইয়া বয়া খিল খিল করে হাসে একটু পর পরই।

হুদাই। এগুলান আইছে কোত্থেকে???বিয়ে করলে এরকম দুইডা মাইয়ার বাপ হইতাম,আহা…হামাকে বাবা বাবা বুলাতো। কিযে শান্তি হতো। যাক ওই চিকনা পোলা দেখি আবার ওই দুইডার লগে সেই ভাব জমায়া ফেলছে। ভালোই।

ধ্রিম…ধ্রিম…ধ্রিম…না না,কোনো ঢোলের শব্দ না। এলার্ম ও না। এটা হলো ব্যাকগ্রউন্ড মিউজিক। মানে সামনে যা দেখলাম,তাতে মনের মধ্যে এই সাউন্ড ই আইতাছইল। দেখি এক মহিলা,বোরকা পরা।

হাতে হাতমোজা,পায়ে মোজা। আরে,এলিয়েন নাকি। খুব ভাব নিয়ে নামলেনন গাড়ি থেকে। অতপর প্যারেড করে সিড়ি দিয়ে উঠলেন। ওমা,পেছনে দেখি এক মেয়েও আছে।

সেও মায়ের মতোই লাজুক(!!!) প্রকৃতির। উঠে আবার আসলেন আমাদেরই ক্লাশে। মেয়েকে বসিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। এভাবেই দৈনিক নিয়ে আসতেন। এরপর দেখতাম আবার এসে নিয়েও যেতেন।

উনার গাড়িখানাও ছিলো মাশাল্লাহ। তা আন্টির “আম্মাজান” মানে মেয়েটা দেখতাম লেখাপড়ায় ভীষণ serious.সব ক্লাশে উনার সদর্প(উনার প্যারেড করে আসা)-সশস্ত্র(আমাদের দিকে উনার look)-সরব(স্যারের সাথে বকবকানি) পদচারণা ছিলো। আরেক মা জননীর কথা বলি। উনার আবার অভ্যাস ছিল,আমরা কিছু বললেই উনি বলতেন,”আমার আম্মু বলছে……”উনিও পড়াশোনায় ব্যাফুক সিরিয়াস ছিলেন। তবে তা আমাদের varsity -র আবাল ভালো ছাত্রীদের মত কাছড়া টাইপের না।

অবশ্য উনি এখন উনার পছন্দমত যায়গায় চলে গেছেন। সিলোড মেদিক্যালেত পড়েন উনি। ডাক্তার আফা হবেন। উনি ছিলেন ঢাকা সিটি কলেজের…সেই ভাব এ অষ্টমী থাকতেন সারাদিন। আমার আজাইড়া প্যাচালের সর্বশেষ প্রমীলা ব্যাক্তিত্ব হলেন আবিভক্ত সাবেক ঢাকার মহান বিদ্ব্যাপীঠ ইডেন কলেজের একজন খ্যাতিমান নারী।

উনি পড়তেন গেছি-আইছি(bcic) কলেজের। উনি অবশ্য আমাদের কোচিং এর না। পাশের কোচিং এর। এখানে আসতেন তার দুই লিলিপুট সাইজের ফ্রেন্ডের জন্য। ভদ্রমহিলা নিজেও same সাইজের হলেও রাগ এবং চুপ করে থাকার প্রতিযোগিতায় মেডেল বিজয়িনী।

উনি ছোট বেলায় ছিলেন ৪ ফুট(এখন ৩ফুট!!!)। ২ফুট চুল+২ফুট উনি herself.কপাত করে একখান কথা বলে দেই। আমার এই লেখা পড়ে যদি কেউ আমারে ঝাড়ি মারার জন্য ফোন দেয়,তো ইনিই হবেন সেই দুর্লভ সৃষ্টি। অবশ্য উনি প্রশংসা করার জন্য ফোন দিবেন না,দিবেন ঝাড়ি মারার জন্য। এবার আসি বিশিষ্ট রাজনৈতিক এর কথায়।

সেই সময়ের সেই তুখোড় ক্রীড়াবিদ এবং মেধাবী ছাত্র এখন জগন্নাথের নামী রাজনীতিবিদ। হালারে এখনো পাইলে মারতাম। কয়েকদিনের জন্য বাসায় গেলেই উনি ফোন দিবেন,দোস্ত আয়। তারপর খাতির করে বসাবে। তারপর “দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় এবং ভবিষ্যতের জাতি গঠনে আমার ভূমিকা” শীর্ষক একক টক শো-র শ্যুটিং শুরু করবেন।

সোহান,রোমেন,সেতু,অভি,রাজিব,ইভা,নাতাশা,লিয়া,জিনান…এই মানুষগুলাকে ঘিরেই এক সময় ছিল আমার পৃথিবী । কৈশোর পেরোনো দুর্দান্ত সেই দিনগুলিযে আমরা হাতে হাত রেখে পার করেছি। কখনো টি.এস.সি,কখনো জিয়া উদ্যান,কখনোবা বসুন্ধরা সিটি। কাবার কখনো সেজান পয়েন্ট। আজ জীবনের প্রয়োজনে,সময়ের দাবীতে আমরা অনেক দূরে।

আগের মতো রাত জেগে কল কনফারেন্স ও করা হয়না এখন। হয়না সারাদিন টো টো করে ঘোরা। হয়না আড্ডাবাজি। কিংবা হয়না সেই খোঁচাখুচি। কখনো হাসি,কখনো অভিমান,আবার কখনো ঝগড়া।

আজ আমি ভীষণ ব্যাস্ত…রাজনীতি,পড়াশোনা,প্রেম…সময় পাইনা দম ফেলার। জানি তোরা কেউই পাসনা। কিন্তু তবুও…কখনো কি মনের ভুলেও সেই দিনগুলা মনে পরে???আমার পরে। সেই দিনভর আড্ডা আর রাত ভর কনফারেন্স। আচ্ছা,আমার চেহারা কি তোদের মনে আছে???আমার কিন্তু আছে।

চোখ বুজলেই তোদের দেখি যে……… ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।