আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

'ঢাকাভঙ্গ' ! খুব দরকার ছিল কি ?

আমি লিমন , কাদের , মিলন এর মত সাধারণ একজন মানুষ। তাই শঙ্কিত থাকি , চাই না স্বাভাবিক মৃত্যুর কোনো গেরান্টি , কারণ আজ আমাদের চাওয়ার নেই কোনো মূল্য । ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী, ৪০০ বছরের একটি একটি ঐতিয্য। মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে ১৬০৮ সালে ঢাকার গোড়াপত্তন হয়। তখন ঢাকার নাম ছিল জাহাঙ্গীরনগর।

১৮৬৪ সালে ঢাকা পৌরসভায় উন্নীত হয়। ১৯৪৭ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী হয় শহরটি। ১৯৭৮ সালে পৌরসভা থেকে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন হয় ঢাকা। ১৯৯০ সালে ঢাকা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের নাম হয় ঢাকা সিটি কর্পোরেশন। ৪০০ বছরের ঐতিয্যবাহী ঢাকাকে ভাগ করে ফেলা হলো মাত্র ৪ মিনিটে ! ঢাকার সদ্য বিদায় নেওয়া নগর পিতা সাদেক হোসেন খোকার কোনো যোগ্য প্রতিদ্বন্দী না পেয়ে সরকার ঢাকাকে দুই ভাগ করেছে এটা দিবালোকের মত স্পষ্ট।

'ঢাকা সিটি করপোরেশনকে ভাগ করার মানে, নগরবাসীর হৃদয়কে দু’ভাগ করে দেওয়া। ঢাকাকে ভাগ করবেন না, প্রয়োজনে আমি আগামী নির্বাচনে দাড়াব না, তারপরও ঢাকাকে জবাই করবেন না', ঢাকার অখন্ডতা রক্ষা করার জন্য খোকার আবেগাপ্লুত এমন আবেদনও আমলে নেয় নি সরকার। ঢাকা ভাগের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী যুক্তি দিয়েছেন যে, জনসংখ্যা বাড়ছে। ঠিকমতো জনসেবা দেওয়া যাচ্ছে না। তাই ঢাকাকে দুই ভাগ করলে নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি পাবে।

আসলে 'নাগরিক সুবিধা'টা কি? এখন কি ঢাকার মানুষ জ্যামে আটকাবে না ? নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুত থাকবে ? লোডশ্যাডিং হবে না ? বৃষ্টি হলে রাস্তায় পানি জমবে না ? সন্ত্রাসীদের কর্মকান্ড থেমে যাবে ? ওয়াসার পানি ক্রিস্টাল ক্লিয়ার হয়ে যাবে ? ঢাকায় কি জিনিষ পত্রের দাম কমে যাবে ? এই রকম অনেক প্রশ্ন আছে কিন্তু উত্তর আছে কি ? হ্যা, আছে। মাথা ব্যাথা ??? মাথা ব্যাথার সর্বোত্তম ঔষধ এখন মাথাকে দুই চার টুকরা করে ফেলা। মার্গারেট থ্যাচার যখন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী, তখন তিনি লন্ডন শহরকে ভাগ করেছিলেন। কারণ, হিসেবে বলেছিলেন, এতে বিশাল লন্ডন শহরের পরিষেবাগুলো আরও উন্নত হবে। তাঁর দলের অনেক সাংসদ তাঁর তীব্র সমালোচনা করেছিলেন।

কাজ হয়নি কিছু। লন্ডনকে একটা গোটা আপেলের মতো চার টুকরা করা হয়েছিল। ফল হয়েছিল উল্টো। সমন্বয়ের অভাবে দেখা দিল চরম বিপর্যয়। থ্যাচারের পতনের পর সেই লন্ডনকে আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়েছিল।

ভারতের মুম্বাই শহরের আয়তনে বড়, জনসংখ্যা ঢাকা থেকে বেশি। তো মুম্বাইকে কি ভাগ করা হয়েছে নাকি ? তাহলে কি কেউ যদি বলে সারা বাংলাদেশে তো দুর্নীতির মহাসমারহ, সবখানে অবেস্থাপনা, সেবা কাকে বলে এই সংজ্ঞাই দেশের ৯৮% নাগরিকই জানে না, তাহলে কি আমাদের দেশকে 'বাংলাদেশ উত্তর', 'বাংলাদেশ দক্ষিন' ২ টি ভাগে ভাগ করে ফেলা উচিত ? সত্যি দুক্ষ হয়, আমাদের প্রধানমন্ত্রী এত বছর রাজনীতি করে, দুই দুইবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে আজও Decentralization আর Dividation বুঝলেন না ! প্রয়োজন ছিল ঢাকাকে বিকেন্দ্রীকরণ করা, দুই ভাগ করা না। ডিজিটাল স্লোগানে মাতাল হওয়া সরকার 'ই-গভর্ণ্যান্স' প্রয়োগ করলো না, অথচ ঢাকাকে দ্বিখন্ডিত করলো ! একবার তাদের মাথায় আসলো আড়িয়াল বিলে বাবার নামে বিমানবন্দর করবো, পরে তারা এ থেকে বাধ্য হয়ে সরে আসার পর ক্ষোভ স্বরুপ এটা ঘটলো। বিশিষ্ট নগর বিশেষজ্ঞ স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন এই সম্পর্কে বলেছেন, 'বাকশাল গঠন করে আওয়ামী লীগ যে ভুল করেছিল, ডিসিসির বিভক্তিও তেমন একটা ভুল। জনমত না নিয়ে এ বিভক্তির কারণে সমস্যা কমার বদলে আরও বাড়বে।

' মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এই যে আপনি ঢাকা কে ২ ভাগ করলেন, তা কি আপনার নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে ছিল ? দেশ এখন হাজারটা সমস্যায় জর্জরিত ! দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, জ্বালানির দাম দফায় দফায় বৃদ্ধি, শেয়ার মার্কেটের লাগামহীন পতন, সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যা, তিস্তা চুক্তি না হওয়া, ইন্ডিয়াকে ফ্রী ট্রানজিট দেওয়া, টিপাইমুখ ইস্সু, এখন পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ না করতে পারা..... এমন আরো হাজার হাজার ইস্সু যা রয়েছে। এত কিছু ফেলে কেন ঢাকাকে দুই ভাগ করতে চান ? ২/৩ অংশ মেজরিটি পেলেই কি যা ইচ্ছে তাই করা যায় ? একটি ঢাকা সিটি পরিচালনার জন্য যদি দুইজন মেয়র দরকার হয়, তাহলে পুরো দেশ পরিচালনার জন্য কতজন প্রধানমন্ত্রী দরকার ? এক সিটি কর্পোরেশনের খরচ তখন দ্বিগুন হবে, (২ সিটি কর্পোরেশনের কারনে) কে দিবে ঐ খরচ ? এই বিভক্তি দেশের জনগণ মানতে পারেনি, বিশেষ করে ঢাকার স্থানীয়দের বুকে রক্তক্ষরণ হয়েছে। জনমত যাচাই করা ছাড়া এমন সিদ্ধান্ত অমূলক, অযৌক্তিক ও অদূরদর্শী । আমাদের প্রাণের ঢাকাকে ফিরিয়ে দেওয়া হোক। মোবাইল থেকে শেয়ার করার লিঙ্ক - http://on.fb.me/w1Iu7j এই ফেইসবুক পেইজ থেকে নেওয়া - অপ্রকাশিত পেইজ লিন্ক - https://www.facebook.com/unreleased.LIVE  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।