আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রেমিকা সেজে গাড়ি ছিনতাই

প্রেমিকা সেজে গাড়ি ছিনতাই করতে গিয়ে এবার সুন্দরী এক তরুণীসহ তার সহযোগী ধরা পড়েছে। তারা হচ্ছে ফারিয়া জাহান আসমা (২০) ও তার সহযোগী সাইফুর রহমান রাজিব (২১)। তবে ধরা পড়েনি মূল হোতা জাহিদ আহমেদ দিপু (২৩)। পুলিশের ভাষায়, গাড়ি চোর দলের মূল হোতা দিপু পলাতক থাকলেও মামলা এড়াতে নানাভাবে চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে। জয়দেবপুর থানার হোতাপাড়া ফাঁড়ির ইনচার্জ সৈয়দ আজহার হোসেন জানান, নাটকীয় এক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছে তরুণী আসমা ও তার সহযোগীরা।

এজন্য তারা দীর্ঘদিন ধরে আসমাকে দিয়ে প্রেমের ফাঁদ পেতেছিল আশুলিয়া এলাকার কোণ্ডলবাগ গ্রামের তরুণ ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেনের জন্য। গত মাসের শেষ দিকে ইকবালকে মোবাইলে ফোন করে তরুণী আসমা। ইকবাল তার ডাকে সাড়া দেন। কথা হয় দীর্ঘক্ষণ। সেই থেকে শুরু।

কিন্তু তাদের এ প্রেম ছিল মোবাইলে। ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন জানান, আসমাকে সামনাসামনি দেখা করতে বললে নানাভাবে এড়িয়ে যেত। আসমা বলত, উত্তরায় পরিচিত লোকজন রয়েছে, তাই তার পক্ষে দেখা করা সম্ভব নয়। দেখা করতে হলে গাজীপুরে ন্যাশনাল পার্কে তার বাবার চাইনিজ রেস্টুরেন্ট হ্যাপি ইনে দেখা করতে হবে। শর্ত দেয় একা দেখা করার।

মোবাইলে তরুণী নিজের নাম মেহি বলে জানায়। লেখাপড়া করে শাহিন কলেজে। বাসা জিয়া কলোনিতে। বাস্তবে এসবই ছিল মিথ্যা। ওর প্রকৃত নাম ফারিয়া জাহার আসমা।

বাবার নাম আবির হোসেন। দক্ষিণখান থানার ১৭ নম্বর লেনের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ১৭ নম্বরে বাসা। লেখাপড়া করে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচারাল অ্যান্ড টেকনোলজি নামের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইকবাল জানান, অবশেষে ২৭ নভেম্বর দেখা করার দিন ধার্য হয়। গাড়িচালক সুমনকে সঙ্গে নিয়ে যান তিনি।

ন্যাশনাল পার্কের ৩ নম্বর গেটে গেলে প্রেমিকা মেহি ও তার সহযোগী রাজিব চালককে দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। মেহি তাকে জানায়, তার প্রেমিকা সামনে রয়েছে। দেখা করতে হলে চালককে নামিয়ে নিজেই গাড়ি নিয়ে যেতে হবে। ইকবাল বলেন, তখনও প্রেমিকা কোনটা তা জানতাম না বা চিনতাম না। তরুণীর কথায় বিশ্বাস করে চালক সুমনকে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিজেই ড্রাইভ করে সামনে এগোতে থাকি।

কিছু দূর যেতেই চার তরুণ জোর করে তার গাড়িতে উঠে বসে। তারা গাড়িতে উঠেই তাকে মারপিট করে চালকের আসন থেকে সরিয়ে পেছনের সিটে বসায়। চালক সুমন জানান, জোর করে তার মালিককে পেছনের সিটে বসানোর এ দৃশ্য তিনি দেখতে পেয়ে ছিনতাইকারী বলে চিত্কার দেন। জনতা এগিয়ে এসে পেছনে হাঁটতে থাকা তরুণী আসমা ও তার সহযোগী রাজিবকে ধরে গণধোলাই দেয়। এরপর তিনি মোবাইলে আত্মীয়দের ইকবালসহ গাড়ি ছিনতাইয়ের খবর জানিয়ে দেন।

ইকবালের বড় ভাই বাবুল হোসেন জানান, গাড়িতে চারজনের দু’জন মুখোশ পরা ছিল। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তাদের মুখোশ খুলে যায়। তবে তাদের চিনতে পারেননি ইকবাল। দুই সহযোগী ধরা পড়ে যাওয়ায় গাড়ির সিটের নিচে হাত-পা ও মুখ বেঁধে ছিনতাইকারীরা মারতে থাকে ইকবালকে। কাপাসিয়ার ত্রিমোহনী বাজারের কিছু দূরে বালচর এলাকায় যাওয়ার পর গাড়ির চাকা আটকে যায়।

একই সঙ্গে গাড়ির গ্যাস শেষ হয়ে যায়। বাবুল জানান, এ সময় ছিনতাইকারীরা ইকবালকেই গাড়ি ছিনতাইকারী বলে লোকজন ডাকার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে তারা গাড়ি রেখে কৌশলে পালিয়ে যায়। মোবাইলে খবর পেয়ে কাপাসিয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পুলিশ আহত অবস্থায় ইকবালকে উদ্ধার করে কাপাসিয়া থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

ঘটনা দিনই জয়দেবপুর থানায় দ্রুত বিচার আইনে একটি মামলা (নং-৮৮) করেন ইকবাল। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সৈয়দ আজহার হোসেন জানান, আসমা ও তার সহযোগীর দেওয়া তথ্য মতে, ঘটনার সঙ্গে সাতজন জড়িত। এর মধ্যে চারজনের নাম পাওয়া গেলেও তিনজনের নাম জানা যায়নি। আসমা ও রাজিব তিনজনকে চিনে না বলে জানিয়েছে। মূল হোতা দিপু ও নাজমুল।

জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা ঘটনার বিস্তারিত খুলে বলেছে। এজন্য তাদের রিমান্ডে নেওয়া হয়নি। আদালতে স্বীকারোক্তি দিতেও রাজি হয়েছে। তিনি বলেন, পরিকল্পনার মূল হোতা দিপু এবং বাদী ইকবাল একই গ্রামের বাসিন্দা। দিপুই তরুণীকে ইকবালের মোবাইল নম্বর দিয়েছে।

দিপুর কারণেই আসমা প্রেমিকা সেজে গাড়ি ছিনতাইয়ে অংশ নেয়। তিনি জানান, অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। আসামিরা বড় লোকের বখে যাওয়া সন্তান। অভিযোগ সম্পর্কে মূল হোতা দিপুর বাবা সাইফুদ্দিন আহমেদ বকুল বলেন, ছেলে না বুঝে হয়তো একটা ভুল করেছে। বিষয়টি সত্য নয় বলে ছেলে মোবাইলে তাকে জানিয়েছে।

 ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।