আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খাগরাছড়ি, মেঘ আর পাহাড়ের নিবিড় আলিঙ্গন স্বাক্ষী নীলাকাশ রিপোষ্ট

জীবন চলা মানে প্রতিক্ষন জীবনান্তের দিকে এগিয়ে চলা গত ঈদে গিয়েছিলাম পাহাড়ের উপত্যকায় গড়ে ওঠা নৈস্বর্গীক প্রাকৃতিক দৃশ্যে সমৃদ্ধ পাহাড়ী জেলা খাগরাছড়িতে । পাহাড়ের চড়াই উৎরাই বেয়ে পীচ ঢালা সড়ক বেয়ে মসৃন গতিতে এগিয়ে চলা, প্রকৃতিকে নিজের ভেতর অনুভব করা, আমিও এই প্রকৃতির অংশ আমিই প্রকৃতি, এই ভাবনায় বিভোর হয়ে পথ চলার এক পর্যায়ে আবিষ্কার করলাম পৌছে গেছি খাগরাছড়ি । শুরুটা হয়ে ছিলো চট্টগ্রাম থেকে, সকাল আটটায় বেরিয়ে পড়লাম খাগরাছড়ির উদ্দেশ্যে । অক্সিজেন মোড় হয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে বাম পাশে রেখে হাটহাজারি হয়ে খাগরাছড়ির পথে । অটোরিক্সা, বাস, ট্রাকের জট পেরিয়ে একসময় ফাকা রাস্তায় নিজেকে গাঢ় সবুজ শ্যামল প্রকৃতির মাঝে আবিষ্কার করলাম।

তারপর শুধু চড়াই বেয়ে উপরে উঠে আকাশ ছোয়ার বাসনা আবার উৎরাই বেয়ে নিচে নেমে বাস্তবে পদার্পন, আমরা আকাশের নই বরং মাটির সন্তান মাটিই আমাদের আশ্রয় । এক সময় পৌছে গেলাম আলু টিলার পর্যটন স্পটে । এখানে একটি প্রাকৃতিক গুহা আছে । গুহাটির ভিতরে একটি বহমান ঝর্না আছে । টুরিষ্টরা গুহার একপ্রান্ত দিয়ে প্রবেশ করে অপর প্রান্ত দিয়ে বেড়িয়ে যায় ।

গুহাটির ভেতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার তাই পথ চলার জন্য মশাল নিয়ে ঢুকতে হয় । ছোট ছোট পাহাড়ী ছেলে মেয়েরা সরু বাশ কেটে ভিতরে কেরোসিন তেল দিয়ে মুখে সুতীর কাপড় চেপে দিয়ে মশাল তৈরী করে বিক্রী করে প্রতিটা পাঁচ টাকা করে । এরকম দুটি মশাল কিনে মেয়ের হাত ধরে গুহার দিকে রওনা দিলাম জুতো হাতে নিয়ে খালি পায়ে তারপরও পিছলে পড়ার আশংকা ছিলো । আমাদের সামনে কয়েকটা ছোট ছেলে ছিলো ওদের মশালের আলোয় ভালই পথ চলছিলাম হঠাৎ ওরা আর না এগিয়ে ফিরে চলল পিছন দিকে থেলে আসা পথে, ফলে আমরা সামনে পড়ে গেলাম । মশালের আলো এই গভীর অন্ধকারে খুব অকিঞ্চিতকর মনে হল, ভয় পেলাম, এক সময় মনে হল আমরা দুজন মশাল ধারী অনন্তকাল ধরে অন্ধকারের জীবদের মাঝে অজানা পথে চলেছি যদি মশাল নিভে যায় তাহলে ওরা হয়তো আমাদের ছিড়ে খুড়ে খেয়ে ফেলবে ।

রাস্তাটি বন্ধুর কখনো উচুতে উঠতে হচ্ছে কখনো নামতে হচ্ছে । এক সময় অনেক দূরে ছোট্ট একটি আলোর ঝলক দেখতে পেয়ে বুঝলাম ঐটি গুহার অপর প্রান্ত তারপর বেরিয়ে এসে হাপ ছেড়ে বাচলাম । ওখান থেকে অল্প সময়ের মধ্যে খাগরাছড়িতে গন্তব্যে পৌছে গেলাম। বিকালে বেড়াতে বেরিয়ে গেলাম বিজিবি ষ্টলে ওখানে বিভিন্ন ধরনের ফাষ্ট ফুড ও কফি পাওয়া যায় সাশ্রয়ী মুল্যে এবং কোন সার্ভিস চার্জ বা টিপস দেওয়ার সুযোগ নেই অথচ প্রচুর আন্তরীকতা ও সেবা পাওয়া যায় । ওখানে মাটিতে বাংলাদেশের ম্যাপ তৈরী করা আছে যেখানে যেখানে বিজিবি ষ্টেশন আছে ।

পরদিন সকাল বেলা খুব সুন্দর একটি দৃশ্য দেখলাম, আকাশ থেকে মেঘ নেমে এসেছে পাহাড়ের বুকে কিছুক্ষন পর শুরু হল মুষুলধারে বৃষ্টি এবং পাহাড় অদৃশ্য হয়ে গেল মেঘের আড়ালে কি জানি প্রকৃতি হয়তো পাহাড় আর মেঘের মিলনকে মানুষের দৃষ্টি গোচর করতে চায়না । তাই বৃষ্টির পর্দা টাঙ্গিয়ে দিয়েছে । কিছুক্ষন পরই ঝকঝকে নীল আকাশ আর বৃষ্টিস্নাত সতেজ সবুজ পাহাড় প্রকৃতির শোভাকে জাজ্বল্যমান করে তুলল । যা চিরদিন স্মৃতির মনিকোঠায় উজ্জ্বল হয়ে থাকবে ।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।