আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লেবার পার্টি : আন্ত:দলীয় গনতন্ত্র চর্চ্চা (বিএনপি ও আওয়ামীলীগের শুভবুদ্ধি উদয়ের প্রত্যাশায়)

বিচ্যুত যৌবনে জোছনা আমায় করেছে উম্মাদ লেবার পার্টি, হারলো নির্বাচনী এলাকা না আমি এখনো লেবার পার্টিতে জয়েন করিনি। সম্ভবত শেখ মুজিবের নাতনি হওয়ার মতো যোগ্যতা বা অভিলাষ নাই বলে সে সাহস এখনো করিনি। সূদুর পরবাসে থেকেও যেহেতু দেশের জন্য, দেশের রাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য দিবিনিশি স্বপ্ন দেখি তাই প্রথম থেকেই আমার একটা উৎসাহ ছিলো উন্নত দেশগুলোতে দলের ভেতরে কিভাবে ডেমক্রেসী প্র‌্যাকটিস করে তা দেখার জন্য। যাতে করে কখনো সুযোগ হলে নিজ দেশে যেন এসব দেশের ভালো জিনিসগুলো ব্যবহার করতে পারি বা চেস্টা করি। গত সাতাশ নভেম্বর বন্ধু সামুর ডাকে সকাল ৮টায় বেরিয়ে পরলাম হারলোর উদ্দেশ্যে।

সামান্য ভূমিকা হারলো'র বর্তমান এমপি কনজার্ভেটিভ পার্টি থেকে নির্বাচিত। তিনি পরিশ্রমী, মেধাবী ও ধনবান হিসেবে সুপরিচিত। তার আরো একটি বিশেষ পরিচয় আছে তিনি একজন ইহূদী, সে হিসেবে তিনি যে পরিশ্রমী হবেন সেটা খুবই স্বাভাবিক। তের বছরের এমপি ও সাবেক মন্ত্রী বিল রামেল কে হারিয়ে তিনি এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। তাই লেবার পার্টি ২০১৫ সালের পরবর্তী নির্বাচনের জন্য এখনই প্রার্থী ঠিক করে ফেলতে চাচ্ছে।

যাতে করে তাদের প্রার্থী গনমানুষের সাথে মিশে যেতে পারেন এই সময়ের মধ্যে। তাই লেবার পার্টি প্রায় তিন বছর পূর্বেই তাদের প্রার্থী ঠিক করছে। প্রার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়া বন্ধু সামু শর্টলিস্টেড চার জন প্রার্থীর মধ্যে একজনের কনসাল্টেন্ট হিসেবে হাস্টিংস** সভায় যোগ দিচ্ছে। আর আমি একজন পর্যবেক্ষক হিসেবে তার সংগী। ঠিক সাড়ে দশটার সময় সভা শুরু হলো।

সভার সার্বিক বিষয় দেখাশোনার জন্য রিজিওনাল ডিরেক্টর এসেছেন যিনি তার রিজিওনের হাস্টিং গুলো পরিচালনা করেথাকেন। যাকে আরো কয়েকজন সহকর্মী সহযোগীতা করছেন। লেবার পার্টির মেম্বার রা নিজেদের মেম্বারশীপ কার্ড নিয়ে হাজির হয়েছেন। মেম্বারশীপ নম্বর দেখে দেখে ভেতরে ঢোকানো হচ্ছে। আনুষ্ঠানিকতা শেষে হাস্টিংস শুরু হলো।

প্রার্থীরা অন্য একটা ঘরে বসে আছেন যেখান থেকে সভাকক্ষের কোন কথা বার্তা ঐঘর থেকে শোনা যায়না। সভাকক্ষে প্রার্থীরা কি বক্তব্য রাখছেন বা প্রশ্নত্তোরে কি বলছেন তার কোন কিছুই অন্য প্রার্থীরা জানতে পারবেন না। একে একে প্রার্থীরা আসলেন এবং প্রথম ৫ মিনিট হারলো নির্বাচনী এলাকা নিয়ে তাদের কি প্লান ও স্বপ্নের কথা গুলো জানালেন। তারপর নির্ধারিত আধাঘন্টার প্রশ্নোত্তর পর্ব। এ পর্যায়ে আগে থেকে ভোটাররা প্রশ্ন পাঠিয়ে দেন কমিটির কাছে কমিটি সেখান থেকে গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলোর একটা সেট তৈরি করেন এবং সভার দিন পর্যন্ত এটি গোপন রাখেন।

একই প্রশ্ন সবার জন্য। তাদের উত্তরের উপর নির্ভর করবে ভোটার রা কাকে সিলেক্ট করবেন পরবর্তী নির্বাচনের জন্য তাদের পছন্দের প্রার্থী। তুমুল আলোচনা ও প্রশ্নত্তোরের মধ্য দিয়ে এভাবে সভা চললো সাড়ে বারোটা পর্যন্ত। সকল প্রার্থীর বক্তব্য ও প্রশ্নত্তোর শেষ হবার পরে এবার ভোটাভোটির পালা। ভোটারদেরকে সভাকক্ষে ঢোকার সময় তাদের মেম্বারশীপ নম্বর দেখে দেখে একটা আলাদা কার্ড দেয়া হয়েছিলো।

এবার সে কার্ড কালেক্ট করে একটা করে ব্যালট পেপার দেয়া হলো। ব্যালট পেপারে চারজন প্রার্থীরই নাম দেয়া আছে ভোটারদেরকে যেটা করতে হবে সেটা হচ্ছে নামগুলোর পাশের খালি বক্সে ১,২,৩,৪ করে সিরিয়াল দিতে হবে যাতে করে বুঝা যায় তার প্রথম, দ্বিতীয় পছন্দগুলো। তাৎক্ষনিক ভোটাভুটি শেষ হলো সবার সামনেই ফলাফল ঘোষনা করা হলো। শুধু কে নির্বাচিত হয়েছেন তাই বলা হলো দ্বিতীয়, তৃতীয় কে এগুলো বলা হলোনা। পারজিত প্রার্থীরা বিজয়ী প্রার্থীকে অভিনন্দন জানালেন।

ছোট্ট ঘোষনা সভার চেয়ার হঠাৎ করে মাইকে এসে একটু রসিকতা করলেন এবং বললেন এক্জিট দরজার পাশে একটা বাক্স রাখা হবে দয়া করে যেনো সবাই এক পাউন্ড করে দিয়ে যান টাহলে এই হল ভারাটা খুব সহজেই পরিশোধ করা সম্ভব হবে, পার্টি ফান্ডে হাত ডেওয়া লাগবেনা। আর কেউ দান না দিলেও কোন অসুবিধা নেই এটাও জানালেন। গনতন্ত্র বাংলাদেশ ভাবনা এমন চমৎকার ও শান্তিপূর্ন একটা পরিবেশে নির্বাচনী প্রার্থী সিলেক্ট করার প্রক্রিয়া দেখে খুব ভালো লাগলো। আর ভাবলাম আমাদের দেশে প্রার্থী হবার জন্য গুলশান অফিস ও সুধাসদনে ২০০৮ সালে যে দীর্ঘ লাইন দেখেছি তা থেকে কবে যে বেরিয়ে আসবো আমরা? শুরুতেই বলছিলাম শেখ মুজিবের নাতনির ব্যাপারটা। অনেকে মনে করতে পারেন আওয়ামীলীগের ব্যাপারে আমার যে নাক সিঁটাকানো ভাব আছে সে জন্য।

না তা নয়, এটা আসলে ইচ্ছা করেই টেনে এনেছিলাম। আপনার অনেকেই অবগত আছেন যে শেখ মুজিবের নাতনি টিউলিপ সিদ্দিকি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ না করে তিনি লেবার পার্টি করেন এবং তিনি একজন বিদেশী নাগরিকও বটে। এবং এটা নিশ্চয় সবাই জানেন তার মাতা শেখ রেহানা বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেশ ভালো দাপট ও আধিপত্য বিস্তার করে চলছেন ইদানিং। যে কারনে বড় বর রথী মহারথীরা লন্ডন আসলে দেশ থেকে তেল, ঘি, ডালডার টিন নিয়ে আসেন। তাই বলছিলাম আপনার মেয়ে যে গনতন্ত্র চর্চ্চা করছে বিদেশে সেই গনতন্ত্রের কিছু ছিটেফোঁটা যদি বাংলাদেশে চর্চ্চা করতেন তাহলে দেসবাসী কিছুটা উপকৃত হতো আপনাদের এই ঘি, ডালডার রাজনীতিতে।

আমার বিশ্বাস যেহেতু তারেক রহমান দীর্ঘ দিন ধরে লন্ডনে তার চিকিৎসা নিচ্ছেন সে হিসেবে তিনিও আমার মতো করে এদেশের গনতন্ত্র চর্চ্চা পর্যবেক্ষন করছেন। আশা করি দেশে ফেরার সময় এ বিষয়গুলোর উপরে তিনি বিশেষ নজর দিবেন এবং বিএনপির বিভিন্ন কমিটি ও নির্বাচনী প্রার্থী মনোনয়নে বাস্তবায়ন করবেন। ***হাস্টিংস (Hustings): নির্বাচনের পূর্বে সম্ভাব্য প্রার্থী কতৃক প্রচারাভিজান ও বক্তব্য।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।