আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খালেকদাদ চৌধুরী

------ আজ সকাল থেকে পড়ছি আটপাড়া নেত্রকোনার প্রয়াত সাংবাদিক, সৃজনী সাহিত্য পত্রিকা ও উত্তর আকাশ পত্রিকার সম্পাদক জনাব খালেকদাদ চৌধুরীকে (১৯০৭-১৯৮৫) নিয়ে লেখা একটি বই। খুব ভালো লাগছে পড়তে। ছোটবেলা থেকে বাবার মুখে শোনা কথা গুলো নতুন করে ছাপা অক্ষরে বইয়ের পৃষ্ঠায় পড়ছি। জীবনের সমীকরনে যে ইতিহাস দেখে আসছি তা বিবৃত হলো বইয়ে। আমার কাছে এ অনুভূতিটা অন্যরকম ভালোলাগায় পরিপূর্ণ।

খালেকদাদ চৌধুরীর প্রধান উপজীব্য নেত্রকোনার ভাটি অঞ্চলের সংগ্রামমুখর লোকজীবন। মধ্যযুগে ইউরোপের হিরোয়িক কালপর্বে ইতিহাসের মিশেলে যে ধরনের সাহিত্য রচিত হয়েছিল অনেকটা তারই অনুরুপ লোক বাংলার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি সাহিত্য নির্মাণে ব্রতী হয়েছিলেন। আমাদের সাহিত্যে এক্ষেত্রে যে শূন্যতা বিরাজ করছিল, খালেকদাদ চৌধুরী তা পূরণে এগিয়ে এসেছিলেন। আমার বাবার সাথে এই মহান মানুষটির সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত গভীর। আমার বাবা (হামিদুর রহমান) জনাব চৌধুরী সম্পর্কে "স্মৃতির মুকুরে খালেকদাদ চৌধুরী" শীর্ষক প্রবন্ধে সেদিনের স্মৃতিচারন করেছেন।

আর এ প্রবন্ধটি স্হান পেয়েছে আমার বাবার লেখা আত্নজৈবনিক গ্রন্হ "জীবনবৃত্তে"। "জীবনবৃত্তে" বইটি প্রকাশ করেছে "নান্দনিক" অমর একুশে গ্রন্হমেলা ২০১৩ তে। সে বই থেকে কিছু স্মৃতিচারন তুলে ধরছি- ......কবি রওশন ইজদানী আমাকে পাঠিয়ে দেন জনাব খালেকদাদ চৌধুরীর কাছে। আমি জনাব চৌধুরীর সাথে দেখা করে আমার লেখা তার হাতে দেই । ১৩৭০ সনের চৈত্র আমার প্রথম দুটি লেখা কবিতা যথাক্রমে “দুষ্ট লীলাবতী” ও “মোরা হাই ইস্কুলে পড়ি” 'উত্তর আকাশ' পত্রিকায় প্রকাশ করেন ।

এভাবেই জনাব চৌধুরীর সাথে পরিচয় ঘটে । যতোবারই তার সান্নিধ্যে গেছি, সর্বদাই আমাকে উৎসাহিত করেছেন। একদিন উত্তর আকাশ পত্রিকার কার্যালয়ে (সিদ্দিক প্রেস) নির্মলেন্দু গুনের সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন। বল্লেন-“ওর নাম হামিদুর রহমান, আমার পত্রিকায় ভালো লিখে, পূর্ব পাকিস্তানের যেকোনো পত্রিকায় ওর লেখা ছাপা হবে । ” এ ভাবে বহুবার আমি তাঁর স্নেহ-সান্নিধ্যে এসেছি।

উত্তর আকাশের অনেক সংখ্যায়-ই আমার লেখা ছাপা হতো। এ ছাড়া মুকুল “কচি-কাঁচ” “সবুজ পাতা” সৃজনীতে ” ও আমার লেখা ছাপা হতো। কবি নির্মলেন্দু ও এসময় তাঁর পত্রিকায় লিখতেন। কবি নির্মলেন্দু গুণ "জীবনবৃত্তে" বইয়ের ভূমিকা পর্বে লিখেছেন- "হামিদুর রহমান। আমার কবি বন্ধু।

তিনিই স্মরণ করিয়ে দিলেন আমাদের জীবনের অতিক্রান্ত অভিন্ন স্মৃতিকে। মনে পড়লো, আমরা দু’জনই প্রায় সমানবয়সী। ১৯৬০-১৯৬৫-র দিকে, গ্রামে থাকাকালে, নেত্রকোনা থেকে প্রকাশিত এবং সুসাহিত্যিক খালেকদাদ চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ‘উত্তর আকাশ’ পত্রিকার মধ্য দিয়েই সাহিত্যজগতে আমাদের ভীরু পায়ের কর্দমাক্ত রথযাত্রা শুরু হয়েছিলো। আমরা দু’জন একই পত্রিকার লেখকই নই, একই সাহিত্যগুরুর শিষ্যও বটে। হামিদুর রহমানের ‘জীবনবৃত্ত’ বন্দী হয়েছে আমাদের পেছনে ফেলে-আসা শতবর্ষের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংগ্রামের ষ্ফটিকস্বচ্ছ জলছবি।

হাসান ইকবাল ১৪ চৈত্র ১৪১৯ বঙ্গাব্দ ঢাকা। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।