আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঈসমাইল টিপু ওরফে নোবেলবিজয়ী টিপু

আমি বাড়ি যেতে চাই। কিন্তু ওরা আমার বাড়ীটারে মরুভূমি বানিয়ে ফেলেছে। লিখেছেনঃ লাল পাখা (তারিখঃ ২৬ নভেম্বর ২০১১, ৪:৫৪ পূর্বাহ্ন) ------------------------------------------------------------------------- গতকাল ছুটির দিন ছিলো, অনেক গড়াগড়ি করেও সাড়ে আট-টায় উঠে পড়লাম। নেট-এ ঢুকেই দেখলাম টিপু-র মৃত্যু সংবাদ। টিপু-র সাথে গতকাল-ই পরিচয়, এবং এমন একজনের জন্য গতকাল সারাটা দিন গেল আনমনে- এখনও এর রেশ কাটে নাই।

কতকিছু স্মৃতি-তে এসে ভিড় করে! যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজে প্রথম যেদিন ক্লাশ করতে ঢুকলাম, সেদিন-ই আবিস্কার করলাম রোল নং-০১ অনুপস্থিত, রোল নং- ০১ একটা মেয়ের, স্মৃতি যদি প্রতারনা না করে সেই মেয়েটার নাম ছিল "লিপি"। তো লিপি কেনো অনুপস্থিত সেই প্রশ্ন মনে আসার আগেই শিক্ষক জানালেন সে ব্লাডক্যান্সার-এ আক্রান্ত, চিকিৎসার জন্য ভারতে আছে। এর কয়েকদিনের মধ্যে খবর এলো সে একটু সুস্থ কিন্তু খরচ সামাল দেয়া যাচ্ছে না; কলেজ থেকে শিক্ষক-ছাত্রদের কাছ থেকে চাদা, অনুদান তোলা হলো- এর মধ্যেই খবর এলো লিপি আর নেই; ওর লাশ পৌছানোর পর ওর বাড়ীতে গিয়েছিলাম। মেধাতালিকায় স্থান পাওয়া, স্নিগ্ধ একটা মেয়ে নীথর হয়ে কফিনে শুয়ে আছে!!!! সারা পাড়া, সারা যশোর, সারা কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা কেদেছিলো সেদিন। এর পর টানা দুবছর রোল কল শুরু হলেই "লিপি"-র কথা মনে পড়ত।

মনটা বিষাদ হয়ে যেত। এই মুহুর্তে আজকের প্রথম আলো-র ১৩নং পৃষ্ঠা-তে প্রকাশিত "ভয়" পড়ছি। এক মায়ের আদরের ধন হারানোর হাহাকার। ডাক্তারের অবহেলায় মারা যায় অতুল। জানি না আমরা কোনদিকে চলছি।

এখানে রাষ্ট্রব্যবস্থা ভেংগে পড়ছে; মানবতাবোধ হারিয়ে যাচ্ছে; যারা মানবতাবোধ লালন করেন তারা সর্বক্ষেত্রে অবহেলিত, নিপিড়ীত, নির্যাতিত এবং অবজ্ঞার শিকার। Click This Link ইন্টার পরীক্ষার দ্বিতীয় দিন ইংরেজী পরীক্ষা দিয়ে বাসায় এসে দেখি কেও নেই; সবাই দাদু বাড়ি (মায়ের বাবা) গেছে। হঠাৎ এভাবে সবাই সেখানে? ব্যাপার কি? অনেক জোরাজুরির পর জানতে পারলাম দাদু আর নেই। বিআরবি কেবলের এক ট্রাক তাকে চাপা দিয়ে চলে গেছে; আমরা কেসই করতে পারলাম না। যার কাছ থেকে একই সাথে ঠাকুরদা, দাদু আর এক ঘনিস্ঠ বন্ধুর সুবাতাস পেতাম সে আর নেই।

ফুটপাতে দাড়িয়ে ছিলেন তিনি, তার পরেও মৃত্যু তাকে নিয়ে গেছে। কয়েকদিন ঘোরের মধ্যে ছিলাম, আমার বেচে থাকাটাই যেনো নিরর্থক মনে হচ্ছিল। বুদ্ধিজ্ঞান হবার পর থেকে ক্লাস এইট পর্যন্ত থানা শহরে বড় হয়েছি। আমার বেশ কাছের বন্ধু ছিল সন্তোষ। ও সম্ভবত: প্রাইমারি পার করে আর পড়াশোনার লাইনে যায়নি।

সোনা-রুপার কারিগরে নাম লিখিয়েছিল, তবে তাতে আমাদের বন্ধুত্বে বাধা পড়েনি। সারা টাউন টেংরিবাজী করে বেড়াতাম। ছোট্ট টাউনের অনেক গুপ্ত খবর পেতাম সন্তোষ-এর কাছে। ও ছিল আমার কাছে আর এক জানালা। ক্লাস এইটের পর বাবা'র বদলী জনিত কারনে অনেক দুরে চলে গেলাম।

ধুসর হয়ে গেল ওর সাথে যোগাযোগ। আমারও নতুন জায়গায় অনেক বন্ধু জুটে গেলো। অনেকদিন পর যখন আবার যখন যশোর-এ ফিরলাম ততদিনে সন্তোষ বিয়ে করে ফেলেছে। বাবা-মা'র কাছে শুনলাম বাচ্চাও হচ্ছে বা হবে। বাবা-মা আমাকে ওর কথা বলে চাপ দিত বিয়ে করে ফেলার জন্য।

এক আধ-দিন শহরে বিভিন্ন সময় ওর সাথে দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে; ওর গলায় সেই পুরানো দিনের উষ্ণতা। বছর খানিক পর শুনলাম ও ক্যান্সারে আক্রান্ত এবং সেটা এডভ্যান্স পর্যায়ের। মা-বাবা গেলো ওকে দেখতে। আমি ইচ্ছে করেই যাই-নি। ঐ দৃশ্য সহ্য করা আমার পক্ষে সম্ভব হতো না।

সন্তোষ আমার মা-কে জানালো আমি যেন যাই। গেলাম, সন্তোষ হাসি-মুখে আমাকে সম্ভাষন জানালো। ওর বিছানার পাশে অনেক হাসি-ঠাট্টা করলাম, পুরানো দিনের কথা হলো। একবারও ওর রোগ নিয়ে কথা হলো না; আমিও বলিনি আর সন্তোষও ঐ প্রসঙ্গ তোলে নাই। এর কিছুদিন পরেই সন্তোষ মারা যায়।

না ওর শেষকৃত্যে আর যাই নি, যাবার সাহস হয়নি, ওর বাবা-মা, বৌ- এর দিকে তাকানোর সাহস ছিলো না। আমার বাবা ক্যানসারে আক্রান্ত হয় ২০০৬-এর দিক। আমরা সারা পরিবার এক বিভীষিকাময় সময় কাটিয়েছি। ভারতে ঠাকুর-পুকুরে নিয়ে গেলাম। চিকিৎসা হলো।

ডাক্তাররা অভয় দিলো কিছু হবে না। চিকিৎসা চলল। একসময় বাবা ভালো হয়েও গেলো। ২০০৯ -এ পরপর দু-বার ব্রেইন স্ট্রোক করলেন এবং এক শুক্রবার সকালে আমার ঈশ্বর চলে গেলো। অনেক কষ্ট, দু:খ-ব্যাথা বুকে নিয়ে এই দুবছর পার করছি।

আত্মীয় বন্ধু দের কারবার দেখলাম, কে কি জিনিস টের পেলাম এবং এখনো পাচ্ছি। আজ দুমাস খুব মনোকষ্টে আছি, আমার কাছের এক বড় ভাই কাম ফ্রেন্ড ক্যান্সার-এ আক্রান্ত। লড়াই করে যাচ্ছে সে কিন্তু শেষ কি জানি না। সত্যি জানি না। দুর্ভাগার কেও নেই যে সবসময় ওর পাশে পাশে থাকবে।

জানি না কি খাচ্ছে, কি করছে? আমি তো জীবিত শব-এর মতো। আমি যেনো ঘোরের মধ্যে আছি সবসময়। এই মুহুর্তে মারা গেলে কে আমার মা-কে দেখবে, আমার বোনটাকে কে দেখবে? সত্যি জানি না, সব সময় এক নিরাপত্তাহীনতা আমাকে গ্রাস করে। এর মধ্যেই গতকাল সকালে পেলাম ঈসমাইল টিপু-র (ব্লগে নোবেলবিজয়ী টিপু নামে পরিচিত) মৃত্যু সংবাদ। ওর ব্লগ, ফেসবুক একাউন্ট চেক করলাম।

সারাটাদিন খুব মন খারাপ গেলো। ছেলেটা সাহসী ছিলো খুব। কতই বা বয়স- ২২ মাত্র। এই বয়সেই কি অসীম ভালোবাসা, সাহস আর আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ছেলে ছিলো সে। নিজেই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ব্লগে কখনো কাউকে বলে নাই সে অসুস্থ বরং সে ব্লাড ক্যান্সারের সচেতনামুলক পোস্ট দিয়েছে।

কাল সারাদিন কেদেছি, কষ্ট পেয়েছি। আজ সকালে আমার ভাই কাম বন্ধু-কে ফোন দিলাম সে অসুস্থ; গায়ে জ্বর। জানি না কপালে কি আছে। আমি নাস্তিক মানুষ, তারপরেও মনে হয় একজন ঈশ্বর থাকলে ভালোই হতো যার কাছে কান্নাকাটি করে যদি প্রিয় মানুষগুলো-কে ফিরিয়ে আনা যেত। টিপু-র ব্লগ http://www.somewhereinblog.net/blog/ismail1971 টিপু-র সেই "ব্লাডক্যান্সার বিষয়ক কিছু কথন" ব্লগ; কক্ষনো বলে নাই সে নিজেই এই রোগে আক্রান্ত http://www.somewhereinblog.net/blog/ismail1971/29389411 টিপু-র ফেবু ওয়াল https://www.facebook.com/itipu?sk=wall&v=wall টিপু-র ব্লগের প্রোফাইলের ঠিক নিচে লেখা "It's better to rule in Hell than to serve in Heaven " চিঠি ( টিপুর জন্য শোকগাথা) Click This Link টিপু খুব খুব সাহসী একজন ছেলে।

রাজার মতোই সে মৃত্যু-কে বরণ করেছে। টিপু-র ব্লগে দেয়া একটি গান------ "ক্যান্সার নিয়ে My Chemical Romance এর চমৎকার একটি গান আছে, এখানে লিরিক্সটা দিলাম, প্রত্যেকটা শব্দ একজন ক্যান্সার রোগীর জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা প্রতিফলন করে Turn away, If you could get me a drink Of water 'cause my lips are chapped and faded Gather all my things And bury me in all my favorite colors, My sisters and my brothers, still, I will not kiss you, 'Cause the hardest part of this is leaving you. Now turn away, But counting down the days to go It just ain't living And I just hope you know That if you say (if you say) Goodbye today (goodbye today) I'd ask you to be true (cause I'd ask you to be true) 'Cause the hardest part of this is leaving you 'Cause the hardest part of this is leaving you এই গানের ইউটিউব ভিডিও গুলো Click This Link Click This Link ========================================== ইসমাইল টিপু-র ফেসবুক একাউন্ট-এ তার Favorite Quotations ======================================== You either die a hero......or you live long enough to see yourself become the villain I never prayed for heaven coz in heaven all the interesting people are missing বিপ্লবীদের বেশি দিন বাঁচা ঠিক নয়। বেশি বাঁচলেই তারা প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে। একটি বই থেকে নিয়ে লিখলে সেটা হয় চুরি। আর কয়েকটা বই থেকে নিয়ে লিখলে সেটা হয় গবেষণা।

মানুষ সিংহের প্রশংসা করে, কিন্তু আসলে গাধাকেই পছন্দ করে। সুন্দর মনের থেকে সুন্দর শরীর অনেক আকর্ষনীয়। কিন্তু ভন্ডরা বলেন উলটো কথা। বাঙালি যখন সত্য কথা বলে তখন বুঝতে হবে পেছনে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য আছে। আবর্জনাকে রবীন্দ্রনাথ প্রশংসা করলেও আবর্জনাই থাকে।

মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো পাপ, তবে বাঙালির ওপর বিশ্বাস রাখা বিপজ্জনক। শয়তানের প্রার্থনায় বৃষ্টি নামে না, ঝড় আসে; তাতে অসংখ্য সৎ মানুষের মৃত্যু ঘটে। বাঙলাদেশের প্রধান মূর্খদের চেনার সহজ উপায় টেলিভিশনে কোনো আলোচনা-অনুষ্ঠান দেখা। ওই মূর্খমন্ডলিতে উপস্থাপকটি হচ্ছেন মূর্খশিরোমণি। এরশাদের প্রধান অপরাধ পরিবেশদূষন : অন্যান্য সরকারগুলো পুরুষদের দূষিত করেছে, এরশাদ দূষিত করেছে নারীদেরও।

অধিকাংশ রূপসীর হাসির শোভা মাংসপেশির কৃতিত্ব, হৃদয়ের কৃতিত্ব নয়। প্রতিটি সার্থক প্রেমের কবিতা বোঝায় যে কবি প্রেমিকাকে পায় নি, প্রতিটি ব্যর্থ প্রেমের কবিতা বোঝায় যে কবি প্রেমিকাকে বিয়ে করেছে। তৃতীয় বিশ্বের নেতা হওয়ার জন্যে দুটি জিনিশ দরকার : বন্দুক ও কবর। পাপ কোনো অন্যায় নয়, অপরাধ অন্যায়। পাপ ব্যক্তিগত, তাতে সমাজের বা অন্যের, এমনকি পাপীর নিজেরও কোনো ক্ষতি হয় না; কিন্তু অপরাধ সামাজিক, তাতে উপকার হয় অপরাধীর, আর ক্ষতি হয় অন্যের বা সমাজের।

--------------------------------- এটা আগে অন্য একটি ব্লগে দেয়া হয়েছে ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।