আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কফির ধোঁয়ায় দেখা..........

ভাল লাগেনা কিছু ......... ইরির নিয়ম হলো নতুন আসা স্কলারদের প্রথম দু মাস ইরির ডরমেটরিতেই থাকতে হবে। এর পিছনে ওদের যুক্তি হলো বিদেশীরা প্রথম এসে স্থানীয় এলাকা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা লাভ করবে। এরপর তারা ইচ্ছা করলে বাইরে গিয়ে থাকতে পারে। অতএব আমাকেও প্রথম দু মাস ইরির ডরমেটরিতেই থাকতে হলো। কি যে দুঃসহ সময় গিয়েছে! যদিও ইরিতে আমার এটাই প্রথম আসা নয়, কিন্তু আগেরবারের আসা আর এবারের আসার মধে পার্থক্য ছিলো বিস্তর! কারণ আগেরবার এসেছিলাম মাত্র তিন সপ্তাহের জন্য, আর এবার তিন বছর! এর আগে ফ্যামিলি ছেড়ে খুব বেশি সময় বাইরে থাকিনি কখনও, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় হোস্টেল লাইফ এড়িয়ে চলেছি এ কারণে।

আর তাই, তিন বছর সবাইকে ছেড়ে থাকতে হবে, এই ভাবনাটাই পুড়িয়ে মারছিল আমাকে! মনে আছে সেসময় মামনির সাথে skype তে কথা বলার সময় কিভাবে জোর করে মুখে হাসি ফুটিয়ে রাখতাম। হয়তো কিছুক্ষন আগেই প্রচুর কান্নাকাটি করেছি, কিন্তু আমার মায়ের কাছে তা প্রকাশ করতাম না। জানতাম তাতে সে আরো বেশি ভেঙে পড়বে। তখন খাওয়া দাওয়া করতে যেতে হতো হারার হলে মেইন ক্যাফেটারিয়াতে। ইরির মেইন ক্যাফেটারিয়ার ইন্টারন্যাশনাল খাবার দাবার এতোটাই ইন্টারন্যাশনাল (?) যে, কোনো " ইন্টারন্যাশনাল" মানুষজনেরই ঐ খাবার ভাল লাগে না! আমিতো প্রথম দিকে শুধু কাঁচা মরিচ ডলে ডলে ভাত খেতাম! ওদের খাবার দাবারে মসলার ব্যবহার খুবই কম।

ঝালতো খায়ই না, পারলে শুধু লবন দিয়ে সিদ্ধ করা খাবার খেয়ে বসে থাকে। আর খায় শুধু ভিনেগার! ওদের অনেকের প্রিয় খাবার হলো "Rice and Tilapia fry with vinegar"। কে বলে "মাছে ভাতে বাঙালী"? আমিতো দেখি "মাছে ভাতে ফিলিপিনো"! বাঙালী এবং ফিলিপিনোদের মধ্যে পার্থক্য হলো, আমরা যেমন ভাতের সাথে মাছের ঝোল বা ডাল খেতে ভালবাসি, ওরা তেমনি ভাত মাছের সাথে ভিনেগার বা সয়াসস খেতে ভালবাসে। তো শুধু বাঙালীদেরই যে ঐ খাবার খেতে কষ্ট হয়, তা কিন্তু না। ইন্ডিয়ান, পাকিস্তানী, চইনীজ, এমনকি আফ্রিকানরাও ঐ খাবার পছন্দ করে না।

শুধুমাত্র সাদা চামড়ার ইউরোপীয়ান আর আমেরিকানদেরকেই দেখি বেশ সোনামুখ করে খেয়ে নেয়। (ইরির মেইন ক্যাফেটারিয়া ) একদিকে দেশে সবাইকে ছেড়ে এসে মন খারাপ, অন্যদিকে খাওয়া দাওয়ার এই অবস্থা! শেষপর্যন্ত আমি আর আমার এক সহকর্মী মিলে আঁটলাম এক বুদ্ধি ! রান্না করতে হবে! কিন্তু কোথায় করা যায়? ধরলাম গিয়ে ক্যাফেটারিয়ার ম্যানেজারকে, "আমাদের হালাল খাবার রান্না করার ব্যাবস্থা করে দাও"। সেও বেশ "ইয়েস ম্যাম, ইয়েস ম্যাম" করতে করতে রাজী হয়ে গেলো। শুধু তাই না, আমাদের রান্না করার জন্য হাঁড়ি পাতিল, তেল মসল্লা এমনকি রান্নার কাজে সাহায্য করার জন্য লোক ও দিয়েছিলো। আমরা দুই সপ্তাহ পর পর একগাদা করে রান্না করে রেফ্রিজারেটরে স্টোর করতাম।

আর পরে মাইক্রওভেনে গরম করে খেতাম! তবে বেশিদিন হলে সেই খাবারও আর খেতে ভাল লাগতো না! কত যে খাবার ফেলেছি! ( সেসময় রান্না করা খাবার) আরওবেশি খারাপ লাগতো ছুটির দিনগুলিতে। ইরিটা কেমন ফাঁকা হয়ে যেত। নতুন নতুন এসেছি, রিসার্চের কাজও শুরু হয় নাই তেমনভাবে। বোরিংনেস কাটাতে আর মানুষজন দেখতে আমি ক্যাফেটারিয়ায় গিয়ে বসে থাকতাম। ছুটির দিনগুলিতে ইরি ক্যাফেটারিয়ায় অনেক বাইরের লোক আসত খেতে।

ফিলিপিনোরা খেতে আর বেড়াতে খুবই পছন্দ করে। ঠিক এমনি এক বিষন্ন ছুটির দিনে ক্যাফেটারিয়ায় এক বিশাল টেবিল দখল করে একমাত্র সঙ্গী এক কাপ কফি নিয়ে বসে ছিলাম। যদিও আমি চা প্রেমী, কফি প্রেমী নই। কিন্তু ফিলিপাইন হলো কফির দেশ,কফি না খেয়ে উপায় নাই। এমন সময় চোখে পড়লো কাঁচের দরজা ঠেলে ভিতরে আসছে একটা ফিলিপিনো পরিবার।

বেশিরভাগ ফিলিপিনো মেয়ে চাকুরীজীবি এবং এরা রান্না বান্না করতে পছন্দ করে না। ছুটির দিনে তাই দলবেঁধে বাইরে গিয়ে খাওয়াটাই ট্রাডিশন। ঐ পরিবারটিতে বিভিন্ন বয়সের প্রায় ৮ থেকে ১০ জন সদস্য ছিলো, কিন্তু সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি কাড়লো বয়োঃজৈস্ঠ ব্যাক্তিটি। উনার হাটতে কষ্ট হচ্ছিল, তাই উনাকে ধরে ধরে নিয়ে আসছিলো অন্যরা। ওদের এই জিনিসটা আমার অসম্ভব ভালো লাগে।

ওরা বয়স্ক ব্যাক্তিদের সম্মান করতে জানে। ব্যংকে, শপিং মলে এমনকি জিপ্পনীতে তাঁদের জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। আমাদের দেশেও তো কত খাবারের রেস্টুরেন্ট রয়েছে, কিন্তু কয়টা পরিবার পরিবারের বয়স্ক ব্যাক্তিদের সাথে নিয়ে বাইরে খেতে যায়, বলুনতো? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।