আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গোপন ক্যামেরায় ছবি ধারণ করা হলে করণীয়

দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি / যাহা আসে আজ কই তাহা মুখে মাত্র ২ দশক আগেও ক্যামেরা শনাক্ত করা এমন কঠিন কিছু ছিলো না, কারণ সে সময় ক্যামেরার আকার ছিলো বড়োসড়। কিন্তু চলতি দশকের শুরু থেকেই ক্যামেরার আকার ছোটো হতে শুরু করেছে। আর বর্তমানে তা এতোই ক্ষুদ্রাকৃতির হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, ক্যামেরা কোথায় লুকানো থাকছে সেটি খুঁজে বের করাই এখন রীতিমতো কষ্টসাধ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত পাঁচ বছরে গোপন ক্যামেরার ব্যবহার এতোটাই বেড়েছে যে তা এখন রীতিমত এক আতংকের নাম। এনালগ, ডিজিটাল এবং মোবাইল ক্যামেরা এনালগ ক্যামেরা বা ফিল্ম ক্যামেরার যুগ প্রায় শেষই বলা চলে।

ডিজিটাল ক্যামেরা বলতে এমন ক্যামেরা বোঝায়, যেগুলোতে সনাতন ফিল্ম ব্যবহৃত হয় না, বরং তার বদলে মেমরি চিপের মধ্যে ছবি ধারণ করে রাখার ব্যবস্থা থাকে। ডিজিটাল ক্যামেরার ক্ষমতা যতো মেগা পিক্সেলের, তাতে ততো বড় ছবি ধারণ করা সম্ভব হয়। শুরুর দিকে দাম বেশি থাকলেও এখন ডিজিটাল ক্যামেরা অনেকটাই সাশ্রয়ী। বাজারে এখন বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মোবাইল বা স্মার্টফোন এসেছে। ডিজিটাল ক্যামেরার মতোই কাজ করে মোবাইল ক্যামেরা।

বেশি ক্ষমতার মোবাইল ক্যামেরা ব্যবহার করে ছবি তোলা বা ভিডিও করা এখন অনেকটাই হাতের মুঠোয়। সিসিটিভি কী সিসিটিভি মথাটির পূর্ণরূপ হলো ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন। এ প্রযুক্তিতে একটি কম্পিউটারের সঙ্গে সিসি ক্যামেরা জুড়তে ডিভিআর কার্ড প্রয়োজন পড়ে। ক্যামেরার সঙ্গে কোএক্সিয়াল কেবল দিয়ে সংযোগ দিয়েই এ ধরনের ক্যামেরা বসানো সম্ভব। কম্পিউটার থেকেই ক্যামেরার সামনে কি ঘটছে সেটি পর্যবেক্ষণ ও ধারণ করা সম্ভব।

সিসিটিভি ক্যামেরার অবশ্য রকমফের রয়েছে। কেবল শব্দ ধারণ বা ভিডিও এবং শব্দ ধারণ করার মতো ক্যামেরা রয়েছে। কিছু ক্যামেরা অবশ্য আলো ছাড়াও বস্তু শনাক্ত করে। দ্য প্রাইভেসি ইন্টারন্যাশনাল সিসিটিভি পেজে দেয়া তথ্যানুসারে, বর্তমানে সারা বিশ্বে আড়াই কোটিরও বেশি সিটিটিভি ক্যামেরা চালু রয়েছে। এ ছাড়াও শুধু যুক্তরাজ্যে প্রতিবছর সিসিটিভি ক্যামেরায় ৪৫ কোটি ডলার খরচ হয়।

গোপন ক্যামেরার খোঁজ করার প্রয়োজনীয়তা গোপন ক্যামেরা ব্যবহৃত হয় সাধারণত প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার খাতিরে। কিন্তু সাধারণ নাগরিক হিসেবে আপনার নিরাপত্তাই যখন সিসিটিভির কারণে ঘাটতির মুখে পড়ে তখনই গোপন ক্যামেরার খোঁজ জরুরী হয়ে পড়ে। গোপন ক্যামেরা কী ধরনের গোপন স্থানে লুকিয়ে থাকতে পারে এবং কোন পদ্ধতিতে সেটি কাজ করে তার জ্ঞান থাকাটাও দরকার। গোপন ক্যামেরা ভালো কাজে নাকি মন্দ কাজে ব্যবহার করা হবে সেটি পুরোপুরি নির্ভর করে ব্যবহারকারীর মর্জির ওপর। ছোট ক্যামেরা সাধারণত ২৫ ডলার বা প্রায় দুই হাজার টাকার মধ্যেই কিনতে পাওয়া যায়।

ক্ষুদ্র এসব ক্যামেরার ব্যবহার বৈধ নাকি অবৈধ এ বিষয়ে নেই কোনো পরিষ্কার ধারণা। আমাদের দেশে বড়ো বড়ো প্রতিষ্ঠান এবং শপিং মলগুলো নিরাপত্তার নামে ক্যামেরার যথেচ্ছ ব্যবহার করছে। এ ছাড়াও ক্যামেরার কম দাম আর ব্যবহারের সুবিধা একে সহজলভ্য পণ্যে পরিণত করেছে। গোপন ক্যামেরার ব্যবহার তাই এখন সাধারণ মানুষের মধ্যেও। আর এ আগুনে আরো ঘি ঢেলেছে মোবাইল ক্যামেরা।

ক্যামেরার যথেচ্ছ ব্যবহার এখন প্রায়শই আইন ভঙ্গের নানা কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। প্রায় ক্ষেত্রে ক্যামেরায় ছবি তোলার মাধ্যমে ইভ টিজিং-এর মতো ঘটনা ঘটছে। এসব ক্যামেরা চালাতে কোনো বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। তাই পাবলিক প্লেস বা হোটেলের একান্ত কক্ষেও ঢুকছে ক্ষুদ্র ক্যামেরা। শাওয়ারের মধ্যে ক্যামেরা লুকিয়ে রাখা, বেডরুম বা কাপড় পরিবর্তন করার রুমে ক্যামেরা লুকিয়ে রাখার ঘটনাও ঘটছে।

ক্যামেরা কোথায় লুকিয়ে রাখা হচ্ছে এটা জানা সম্ভব হলে ক্যামেরা অপারেটরের কাজটা একটু কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। একটি পরিসংখ্যান বলছে, বৈধভাবে লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরাতেও নারীদের ছবিগুলোকে অসৎ উদ্দেশ্যে কাজে লাগান কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে শতকরা ১৫ ভাগ ক্ষেত্রেই বৈধভাবে স্থাপন করা গোপন ক্যামেরার ছবি নিজেদের উদ্দেশ্য সাধনে ব্যবহার করে ক্যামেরা অপারেটর। ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এবং স্বাধীনতার জন্যই গোপন ক্যামেরার অবস্থান খুঁজে বের করাটা জরুরী। এক্ষেত্রে ইচ্ছা না থাকলেও পরবর্তীতে বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হতে পারে।

প্রথম কারণটি হচ্ছে ফেস রিকগনিশন সফটওয়্যারের ব্যবহার। গোপন ক্যামেরায় তোলা ছবিটি কার, এ সফটওয়্যার সেটি সহজেই ধরে দেয়। তারপর ব্ল্যাকমেইলিং-এর মতো কাজেও সেটির ব্যবহার হতে পারে। এ সফটওয়্যারটির ব্যবহার এখন তাই বেশ সমালোচনার মুখেই পড়েছে। ক্যামেরা এ সফটওয়্যারের সঙ্গে জুড়ে দেয়া আছে কিনা সেটি ধরার কোনো উপায় নেই।

তাই সিসিটিভি ক্যামেরায় কি ছবি তোলা হবে সে বিষয়ে নির্দেশনা জরুরী। ক্ষুদে ক্যামেরা: বর্তমানে ক্যামেরার আকার এতোটাই ছোটো হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, এর ট্রাস্টমিটার , ব্যাটারিসহ পুরো সিস্টেমটি একটি ম্যাচ বা সিগারেটের বাক্সেই ধরে যাবে। সুইজারল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ নিউচাতেল-এর দ্য ইনস্টিটিউট অফ মাইক্রোটেকনোলজি সিএমওস প্রযুক্তির এমন একটি ক্যামেরা তৈরি করেছে যা একটি কলমের মধ্যেই আটকে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি গিভেন এমন একটি ক্যামেরা তৈরি করেছে ‘ইনজেস্টিগেবল ইমাজিং ক্যাপসুল’। এ ডিভাইসটি চিকিৎসা কাজের জন্য তৈরি হলেও এটি এতোটাই ক্ষুদ্র যে হজমও হয়ে যেতে পারে।

এ ক্যামেরাটিতে আবার কালার ক্যামেরা, ব্যাটারি এবং ট্রান্সমিটারও রয়েছে। বিভিন্ন কোম্পানি নানারকম গোপন ক্যামেরা তৈরি করছে। আর এ গোপন ক্যামেরাগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়, যাতে সহজে চোখে না পড়ে। ক্ষুদে এ গোপন ক্যামেরায় মোশন অ্যাক্টিভেটেড রেকর্ডিং করা যায়। এসব ক্যামেরা আবার থাকে ফিচার ভর্তি।

এরকম কয়েকটি ক্যামেরা হচ্ছে শাওয়ার রেডিও স্পাই ক্যাম, টিস্যু বক্স স্পাই ক্যাম, লাইট সুইচ স্পাই ক্যাম, এয়ার পিউরিফায়ার স্পাই ক্যাম, পেন স্পাই ক্যাম, অ্যালার্ম ক্লক হিডেন ক্যামেরা, সিডি প্লেয়ার হিডেন ক্যামেরা, ডিজিটাল ডেস্ক ক্লক, বাইনোকুলার, ফুলদানী এবং শোপিস আকারের ক্যাম, কম্পিউটার স্পিকার, বোতাম ক্যামেরা, মিরর হিডেন ক্যাম, মনিটর, ছোটো ম্যাচ বাক্স, ক্লিপ ক্যামেরা, হ্যান্ডব্যাগ ক্যামেরা ইত্যাদি। বিভিন্ন আকারের ক্ষুদে এসব ক্যামেরা এখন হাতের নাগালেই। ক্যামেরা লেন্স শনাক্তের উপায়: ইলেকট্রনিক বা বৈদ্যুতিক ক্যামেরাগুলো সবচেয়ে জটিল তাই এ ক্যামেরা থেকেই সচেতনতা সবচেয়ে জরুরী। এ ক্যামেরাগুলো অপারেট করাও সহজ, আবার এগুলো গোপনে রিয়েল টাইমে তথ্য পাঠাতে পারে। এর মধ্যে ফিল্ম পরিবর্তনের ঝামেলাও নেই।

আগের বড়ো ক্যামেরার কাজ ছিলো পিকচার টিউব ভিত্তিক। এ ধরনের ক্যামেরার অসুবিধা হচ্ছে- এগুলো গোপন ক্যামেরা হিসেবে অতোটা কার্যকর নয়। তবে, এ ক্যামেরাগুলো পুরোনো শোপিস আকারে লাগানো থাকতে পারে। এ ক্যামেরা তাই সহজেই শনাক্ত করা যায়। সবচেয়ে জটিল হয়ে দাঁড়ায় লেন্স বা ফাইবার অপটিক-এর ক্ষেত্রে।

এ লেন্স লুকানো হয় যেকোনো আড়ালেই। ছোটো বোতাম থেকে শুরু করে যেকোনো স্থানেই এটি জুড়ে দেয়া সম্ভব। এ লেন্সের গায়ে নন-কনডাকটিভ মেটাল জুড়ে দিলে মেটাল ডিটেক্টরেও এটি ধরা পড়ে না। তবে, এ ক্যামেরাগুলোর ক্ষেত্রে নখ, স্ক্রু বা বোতাম আকারের কোনো জিনিস আড়াল করে রাখে। যদি কোনো মিরর যা আয়নাকে গোপন ক্যামেরা বলে সন্দেহ জাগে সেটি স্পর্শ করলেও ক্যামেরার অস্তিত্ব রয়েছে কিনা টের পাওয়া যাবে।

ক্যামেরা লুকানোর স্থানগুলো: ক্যামেরা লুকানোর কিছু জনপ্রিয় স্থানও রয়েছে। এসব স্থান ভালো করে পর্যবেক্ষণ করেই ক্যামেরা লুকানোর স্থানটি খুঁজে বের করা সম্ভব। প্রথম ধারণা হলো- কি কারণে এবং কোথায় লুকানো হতে পারে? ক্যামেরা সাধারণত লুকানো হয় মাথার ওপরে বা ফেস লেভেল বরাবর। ক্যামেরা কোথায় লুকানো হচ্ছে সেটি ক্যামেরার ভাগ লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে। ক্যামেরা সাধারণ ডেস্ক বা নিচের দিকেও লুকানো হতে পারে।

তবে, প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম অনুসারেই গোপন ক্যামেরার ব্যবহার হতে পারে। গোপন ক্যামেরায় ছবি ধারণ করা হলে করণীয়: কেউ যদি মনে করেন তার ছবি গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা হয়েছে তবে তার প্রথম কাজ হবে নিকটস্থ আইনশৃক্সখলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করা। বাংলাদেশে থানায় অভিযোগ করতে পারেন বা নিকটস্থ র‌্যাব অফিসে যোগাযোগ করে আপনার অভিযোগ জানাতে পারেন। সবচেয়ে প্রয়োজন সচেতনতা বর্তমান সময়ে মোবাইল ক্যামেরা এবং ডিজিটাল ক্যামেরার ব্যবহার বেড়ে গেছে। এখন অজান্তেই কেউ অসৎ উদ্দেশ্যে ছবি তুলতে পারে।

এ ছাড়াও শপিং মল, বিভিন্ন ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানষ্ঠানে গোপন ক্যামেরা ব্যবহারের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এসব ক্যামেরা থেকে রক্ষা পাবার সবচেয়ে বড়ো উপায় হচ্ছে সচেতনতা আর প্রযুক্তির জ্ঞান। গোপন ক্যামেরা বিষয়ের সচেতন থাকুন। অন্ধকার নয় আলোয় উদ্ভাসিত হোক জীবনের প্রতিটি মুহুর্ত। সূত্র ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.