আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রপোজ এবং অতঃপর.........

রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন একজন যুবক। কন্ঠে তাহার সুমিষ্ট গান। কি যাদু করিলা পিরীতি শিখাইলা থাকিতে পারিনা ঘরেতে.......শার্টের পকেটে লুকানো গোলাপ ফুল। জ্বী, ঠিক চিনেছেন। আমাদের বল্টু ভাই।

এলাকায় তিনি অনেক সুপরিচিত এবং একি সাথে বিখ্যাত। তা তো হবেনই। এলাকায় যত ছোট ভাই আছে বিশেষ করে যাদের সুন্দরী বোন আছে তাদের তো কখনো চকলেট কোল্ড ড্রিংক্স আর কিনে খেতে হয়না। আর যাদের নেই তারাও যে পায়না তা কিন্তু নয়। কারণ,এলাকার কন্যাদের কাছে বল্টু ভাইয়ের প্রেমপত্র দেয়ার মত অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজটি তারাই করতো কিনা তাই।

আর মেয়েদের প্রপোজ করায় তিনি এতোটাই অধ্যবসায়ী ছিলেন যে তাকে অনায়াসেই রবার্ট ব্রুসের সাথে তুলনা করা যায়। জীবনে তিনি এতো মেয়েকে প্রপোজ করেছেন যে গুনতে গেলে বোকামি হবে। যদিও সব বিফলে যায় তাও তিনি মনঃক্ষুণ্ন হন না। নতুন উদ্যমে আবার কাজ শুরু করেন। কিন্তু এইভাবে আর কত দিন?? তার ছোট ভাইয়েরা তার সামনে দিয়ে গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরে বেড়াবে আর তিনি চেয়ে চেয়ে দেখবেন তা কি হয় নাকি? মহল্লায় তার একটা ইমেজ আছেনা?বল্টু ভাই তার সব চেলাকে ডেকে পাঠালেন।

বল্টু ভাইয়ের আড্ডায় চিপস আর চকলেট মাস্ট থাকবে তাই পোলাপান পারলে ডাকার আগেই চলে আসে। সবাইকে নিয়ে গোলটেবিল বৈঠকে বসলেন বল্টু ভাই। "এইভাবে তো আর থাকা যায়না। গার্লফ্রেন্ড তো আমার লাগবেই লাগবে। তোরা আমাকে আইডিয়া দে তো কি করা যায়?? নাহয় এলাকায় আমার মানইজ্জত আর থাকবে না।

" বিষন্ন হয়ে বললেন বল্টু ভাই। অনেকেই অনেক রকম বুদ্ধি দিচ্ছে কেউ বলে একসাথে একগাদা চিঠি দিতে কেউ বলে অনেক দামী গিফট করতে কেউ বলে মেয়ের সামনে ঐ মেয়েকে বিরক্ত করে এমন ছেলেদের ধোলাই দিয়ে হিরো সাজতে কিন্তু বল্টু ভাইয়ের হাতের লেখা যা তা, বল্টু ভাই অনেক গিফট কিনলেও চকলেট ছাড়া আর তেমন কিছুই বুঝেন না যে কি দিবেন, আবার বেটে খাটো বল্টুভাই মারামারি খুব ভয় পান। চেলাদের মধ্যে স্যাম ছিলো অনেক চালাক। সে বললো যে বল্টু ভাই আপনি এক কাজ করেন, সবসময় তো আপনি লুকিয়ে লাভলেটার দিয়ে প্রপোজ করেন তো এইবার সিনেমার হিরোদের স্টাইলে গোলাপ দিয়ে কোন মেয়েকে সবার সামনে প্রপোজ করে ফেলেন। দেখবেন এইবার কাজ হবে।

স্যামের বুদ্ধিটা পছন্দ হল বল্টু ভাইয়ের। আগামী পরশু এলাকায় এক বোনের বিয়ে। বোনের বান্ধবীরা তো আসবেই। চেলাদের সাথে পরামর্শ করে সব ঠিক করে ফেললেন বল্টু ভাই। অবশেষে এলো সেই কাঙ্খিত দিন।

টুকটুকে লাল পান্জাবী পরে বল্টু ভাই রেডী। সাথে চেলারাও। মেয়েও সিলেক্ট করা হলো। প্রথমে ছোট একটা মেয়ে কে দিয়ে গোলাপ পাঠানো হল। মেয়ে তো অবাক।

কে পাঠাইলো গোলাপ?? এরপর আর একটা। এরপর আর একটা। এরপর সুযোগ বুঝে হাটু গেঁড়ে মেয়েটার সামনে বসে পরলো বল্টু ভাই। হাতের লাল গোলাপ টা বাড়িয়ে দিয়ে বলেই ফেললো হৃদয়ের কথা। "মেয়ে তোমার হাসির শ্রাবন জলে স্বপ্ন নিয়ে ভাসতে চাই।

হবে কি আমার?" মেয়েটা বাড়িয়ে দেয়া ফুলটা নিলো না। অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। বল্টু ভাই এবার তার সাগরেদদের দিকে তাকালো। তারাও কিছু বলছেনা। অপরাধীর মত তাকিয়ে আছে।

সবাই চুপ। কি ব্যাপার?? কোন ভুল হলো না তো?? সবার দৃষ্টি অনুসরন করে বল্টু ভাই পিছনে একবার তাকালো আর সাথে সাথে ভুত দেখার মত চমকে উঠলো। প্রপোজ এর চিন্তায় এতো বেশী মগ্ন ছিলো যে তার মা যে এই বিয়েতে আসবে এটাও মনে ছিলো না তার। তার মা সবার সামনে আর কিছু বললেন না। বল্টু ভাইকে নিয়ে চলে গেলেন।

তারপর কি হল জানা যায়নি। তবে বল্টু ভাইয়ের পকেটে আর কখনো গোলাপ দেখা যায়নি। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২৫ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।