আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খরস্রোতা উত্তাল ব্রহ্মপুত্র এখন ক্ষীণকায় নদ

আমি একজন পেশাদার সাংবাদিক। আতাউল করিম খোকন ময়মনসিংহ ঃ দীর্ঘ তিন যুগেও খনন না হওয়াও যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গমস্থল জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ এলাকার প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকা জুরে প্রতি বছর পলি জমে জমে অন্তত ২০ থেকে ৩০ ফুট উচ্চতায় পলির স্তর জমায় শুষ্ক মওসুমে ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্যতা কমতে কমতে ব্রহ্মপুত্র এখন মরাখালে পরিণত হয়েছে। খননের অভাবে যমুনা-ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গস্থলে পনির প্রবাহ বন্ধ থাকায় ভারত উপমহাদেশের এককালের দিগন্ত বিস্তৃত খরস্রোতা উত্তাল ব্রহ্মপুত্র নদ এখন মরা গাঙ্গে পরিণত হয়েছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে বিপন্ন হয়ে পড়েছে এর জীব বৈচিত্র্য। একটি সূত্র জানায়, বর্তমান সরকার ব্রহ্মপুত্র নদ খননের পরিকল্পনা গ্রহণ করলেও এটি এখন পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ে অনমোদনের অপোয় রয়েছে।

শুষ্ক মৌসুম এলেই ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্যতা হ্রাস পেয়ে নদের বুকে জেগে উঠে অসংখ্য বিশাল বিশাল চর। উত্তাল খরস্রোতা ব্রহ্মপুত্র নদ এখন স্রোতহীন হয়ে পড়েছে। সেচ, পরিবেশ ও প্রাকৃতিক পানির অন্যতম উৎস ব্রহ্মপুত্র নদটি এখন ীণকায় মরা নদীতে পরিণত হয়েছে। শুষ্ক মওসুমে বন্ধ থাকে অসংখ্য সেচ প্রকল্প। ব্রহ্মপুত্র নদের দু’তীরের মানূষকে বন্যা ও খরার থেকে র্রা জন্য যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গমস্থল জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ এলাকার প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকা খনন করা খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে।

অপর দিকে শম্ভুগঞ্জ সেতুর নীচ থেকে অবৈধভাবে বালি ব্যবসায়ীদের অপরিকল্পিতভাবে বালি উত্তোলনের কারণে হুমকির মধ্যে রয়েছে সড়ক সেতু ও রেল সেতু। দীর্ঘ কয়েক বছরে নদের বুকেক চর পড়ে ভরাট হয়ে গেছে মাইলের পর মাইল। দীর্ঘদিন ধরে নদটি খনন না করায় নদের বিশাল বুকে জেগে উঠেছে অসংখ্য ছোট বড় ও বিশাল চর। শুকিয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী এলাকার বহু সেচ প্রকল্প এখন বন্ধ রয়েছে। সেচ সংকট এবং নৌ-চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

ব্রহ্মপুত্র নদ এখন হেটেই পার হওয়া যায়। অনেক স্থানে এখন হাটু পানি। সাধারণ নৌকা চলাচল করার সময়ই আটকে যায়, আর পণ্যবাহী নৌচলাচলের কোন সুযোগ নেই। ব্রহ্মপুত্র নদের বিভিন্ন শাখা নদী পথেও নৌচলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। নৌ পরিবহনের কাজে নিয়োজিত মাঝি ও শ্রমিকরাও এখন বেকার।

অনেকেই পেশা পরিবর্তন করেছে। নদী কেন্দ্রিক বানিজ্য এবং নদের তীরবর্তী বাজারগুলো অচল হয়ে পড়েছে। ব্রহ্মপুত্রের উভয় পড়ের উর্বর পলি মাটিতে প্রতিবছরই আবাদ হয় নানা জাতের কৃষি পণ্যের । কিন্তুু শুষ্ক মওসুমে নদে পর্যাপ্ত পনি না থাকায় কৃষকরা সময়মত সেচ না দিতে পারায় তাদের আবাদকৃত কৃষি পণ্যের কাংখিত উৎপাদন পাচ্ছেন না। ময়মনসিংহ অঞ্চলের কৃষক, কৃষি ও মৎস্যের অভয়ারণ্য হলেও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে ব্রহ্মপুত্র নদের পরিবেশ এখন বিপন্ন ও জীববৈচিত্রহীন হয়ে পড়েছে।

সম্ভবনাময় ব্রহ্মপুত্র নদটি দীর্ঘদিন ধরে খনন না করায় একদিকে যেমন নাব্যতা হ্রাস পেয়েছে; তেমনি প্রানহীন নদের বুকে ব্যস্ত কৃষক, জেলে, মাঝিদের জীবিকার পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে। এখন নদের বুকে বালু ব্যবসায়িদের অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন চলছে । নদের পড়ে গড়ে উঠছে নতুন নতুন বসত ভিটা। চলছে অবৈধ দখল। এক সময় ব্রহ্মপুত্র নদের এপার থেকে ওপারের দুরত্ব ছিল দশ থেকে পনের মাইল।

নদের বুকে ছিল সাগরের মত বিশাল ঢেউ। পাল তোলা হাজার মনি নৌকা চলতো। ব্রহ্মপুত্র ছিল নানা প্রজাতির মাছের অভয়ারণ্য। অসংখ্য জেলে পরিবারের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন ছিল এই নদ। নৌ-পথে চলাচল ও পরিবহনের সুবিধার্থে দুই তীরে গড়ে উঠেছিল অর্ধ শত ছোট বড় নদী বন্দর, হাট-বাজার।

নদের খেয়া পাড়ি দিতেই সেসময়ে ভাড়া দিতে হতো দশ কাহন বা দশ কড়ি। এ কারনে শেরপুরকে বলা হতো দশকাহনিয়া। ময়মনসিংহ শহর থেকে গৌরিপুরের রামগোপালপুর পর্যন্ত এই নদ বি¯তৃত ছিল। এখন সবই কিংবদন্তি। আজকের প্রজন্মের কাছে এটা যেন ‘কল্প কাহিনী’।

বিশাল ঐতিহ্যের সাী ব্রহ্মপুত্র নদটি এখন ীণ একটি নদে পরিণত হয়েছে। নেই খরস্রোত আর ভাঙ্গনের তীব্রতা। দিনে দিনে ব্রহ্মপুত্র তার প্রাকৃতিক অস্তিত্বের জৌলুস হারিয়ে ফেলেছে। বর্ষার সময় দু’দফায় নদের দু’কুল উপচে বি¯তৃর্ণ এলাকা পাাবিত হয়। কয়েক লাখ লোক ৩/৪ মাস পানিবন্দি থাকে।

তিগ্রস্ত হয় জানমাল ও ফসল। আবাদি জমি বালুর নিচে তলিয়ে যায়। দিনে দিনে চর পড়ে নদের বুক ভরাট হওয়ায় মাইলের পর মাইল বসতি গড়ে উঠেছে। ব্রহ্মপুত্রের পলি মাটিতে আবাদ হচ্ছে নানা ধরনের কৃষি পণ্য। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার উর্বর ভূমি ও বিভিন্ন নদ-নদী, খাল-বিল, জলাশয় কৃষকের জন্য ছিল আশীর্বাদ।

কিন্তু প্রাকৃতিক ও পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারনে এসব নদ-নদী জলাশয় পানি শুন্য। খরস্রোতা ব্রহ্মপুত্র নদ এখন স্রোতহীন। দীর্ঘদিন ধরে খনন না করায় পলি পড়ে নদের বুক ভরাট হয়ে গেছে। জেগে উঠেছে অসংখ্য ছোট বড় ও বিশাল চর। শুকিয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী এলাকার বহু সেচ প্রকল্প এখন বন্ধ রয়েছে।

সেচ সংকট এবং নৌ-চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ময়মনসিংহ জেলার বেগুনবাড়ী থেকে টোক পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ৫৫ কিঃমিঃ ব্রহ্মপুত্র নদটি বিভিন্ন স্থানে এঁকে বেঁেক প্রবাহিত হয়েছে। এর মধ্যে বেগুনবাড়ী, খাগডহর, কালিরবাজার, বালিপাড়া, ধলা, গফরগাঁও, খুরশিদমহল, দত্তেরবাজার, বারইহাটি এবং টোক এলাকায় নদটি এখন শুকিয়ে গেছে এবং কোন কোন স্থানে হাটু পর্যন্ত পানিও নেই। স্বাধীনতার পরও নদের তীরবর্তী এলাকার প্রায় ৫০ হাজার একর জমি চাষাবাদে ব্রহ্মপুত্রের পানিই ছিল সেচের একমাত্র উৎস। ১৯৭৮ সালে খাল খনন কর্মসূচীর অধীনে নদের পানি দিয়ে শিলাসী-শীলা সেচ প্রকল্প, চারিপাড়া-শীলা সেচ প্রকল্প, কর্তখালি খাল সেচ প্রকল্প এবং বেগুনবাড়ী সেচ প্রকল্প ছাড়াও শতাধিক মিনি সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে নদের তীরবর্তী এলাকার ২৫ সহস্রাধিক একর জমিতে সেচ প্রদান ও প্রচুর ফসল উৎপাদন করা হতো।

দিনে দিনে নদের পানি হ্রাস এবং শুকিয়ে যাওয়ায় পলি পড়ে নাব্যতাহীন ব্রহ্মপুত্র নদ কেন্দ্রীক এসব সেচ প্রকল্প বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অধিকাংশ ফসলি জমি পতিত থাকছে। চাষিরা সামান্য জমিতে বিকল্প সেচ দিয়ে নানা ফসল আবাদ করছে। ব্রহ্মপুত্র নদ খনন না করায় বিভিন্ন শাখা নদী পথে নৌচলাচলও বন্ধ হয়ে গেছে। নদের বুকে জেগে উঠা বিস্তীর্ন চরে এখন রীতিমত রবি মওসুমের আবাদ করা হচ্ছে।

বর্তমানে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার ঘনফুট বালু ও মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে প্রতিবছরই গতিপথ পাল্টে নদটি আঁকা বাঁকা হয়ে ীণ হয়ে যাচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু ও রেলওয়ে সেতুর মধ্যবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ব্রীজ সংলগ্ন স্থান থেকে বালু উত্তোলন করায় বর্ষা কালে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে স্রোত ও ঢেউয়ের মুখে চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু ও রেলওয়ে সেতু এবং মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ, শশ্মান ঘাট, বাসষ্ট্যান্ড, মুক্তিযোদ্ধা পলীসহ বিদ্যমান স্থাপনাগুলো ভাঙ্গনের কবলে পড়ে নদের গর্ভে বিলীন হয়ে যাবার আশংকা থাকে। প্রবিণ এক ব্যবসায়ীরা জানান, দেড় যুগ আগেও ব্রহ্মপুত্র নদে বড় বড় পালতোলা নৌকা দেখা যেতো। বরিশাল ও ফরিদপুর থেকে নারিকেল বোঝাই নৌকা শহরের কাচারি ঘাট, কালিবাড়ি ও জুবলিঘাটে ভিড়তো।

ময়মনসিংহ থেকে বিভিন্ন স্থানে মালামাল নৌপথেই আমদানি রপ্তানি করা হতো। এখন নৌ পথে মালামাল পরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে। নৌ পরিবহনের কাজে নিয়োজিত মাঝি ও শ্রমিকরাও এখন বেকার। অনেকেই পেশা পরিবর্তন করেছে। নদী কেন্দ্রিক বানিজ্য এবং নদের তীরবর্তী বাজারগুলো অচল হয়ে পড়েছে।

কৃষি বিশেষঞ্জরা জানান, নদটির গতিপথ পরিবর্তন এবং পানি হ্রাসের কারণে সেচ প্রকল্পগুলো বন্ধ থাকায় বোরো উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। চাষিরা শ্যালো মেসিন বসিয়ে জমিতে সেচ প্রদান করছে। এতে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। নদটি খনন করা হলে প্রাকৃতিক উৎসের পানি দিয়ে কম খরচে চাষিরা অধিক ফসল উৎপাদন করতে সম হবে। অনেকের মতে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গমস্থলের ১০ কিলোমিটার এলাকার ২০/৩০ ফুট গভীরতায় খনন করলেই শুষ্ক মওসুমে ব্রহ্মপুত্রের নাব্যতা ও পনির প্রবাহ থাকবে।

ফলে নৌচলাচল ও সেচ সংকট দূর হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানাযায় তৎকালীন পাকিস্তান আমলে ব্রহ্মপুত্র বহুমুখি প্রকল্পের নামেই ময়মনসিংহে সে সময় ওয়াপদা গঠিত হয়। বিভিন্নস্থানে কোটি কোটি টাকা খরচ করে অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়। সম্ভবনাময় উক্ত প্রকল্পের মাধ্যমে বাঁধ ও ব্যারেজ নির্মাণ, পানি বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ বিভিন্ন প্রকল্প অর্ন্তভূক্ত ছিল। পরে অজ্ঞাত কারনে প্রকল্পটি বাতিল হয়ে যায়।

বর্তমানে ব্রহ্মপুত্র নদ দিনে দিনে মরে যাচ্ছে। যদি যথাযতভাবে নদটি খনন করা যায় তবে ব্রহ্মপুত্রে আবারো নাব্যতা ফিরে পাবে। ব্রহ্মপুত্রের নাব্যতা ফিরিয়ে আনা ও নদ খকননের জন্য ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলন গত দু’বছর যাবৎ ব্রহ্মপুত্র নদের নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে নৌকা মিছিল,মানব বন্ধনসহ বিভিন্ন আন্দোলনের কর্মসূচী অব্যাহত রেখেছে। ### আতাউল করিম খোকন ময়মনসিংহ ২২-১১-১১ মোবাইল Ñ +৮৮-০১৭১২২৬২৭৫৭ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।