আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রিয়জনকে যে সত্য কখনো বলা হয় না (ভেঙ্গে ফেল মনের কারাগার)

প্রেম কাহিনী নয়; নিখাদ বাস্তবতা সবার আচরণ বা অভ্যাস এক নয়। একেকজনের আচরণ বা অভ্যাস একেক রকম। সব মানুষের আচরণ বা অভ্যাসে কিছু ভালো দিক থাকে। মন্দ দিক থাকাটাও হতাশাব্যঞ্জক কিছু নয়। এটা নির্ভর করে দৃষ্টিভঙ্গির ওপর।

কিন্তু আমরা সবসময় মন্দদিকগুলোকে মেনে নিতে পারি না। কারণ যে আচরণ বা অভ্যাস নিজে করি না তা অন্যের দ্বারা হোক সচেতনভাবে কেউই প্রত্যাশা করি না। মনের বিষ: অপছন্দ দূর করবেন যেভাবে! আচ্ছা বলুনতো সবসময় সবাইকে কি আপনার ভালো লাগে? কখনো কখনো দেখলে বিষের মতো মনে হয় কি? নিজেকে একটু জিজ্ঞেস করুন। আসলে তাদেরকে আপনি কতটুকু ভালোবাসেন। আর কেনইবা এখন তাকে অপছন্দ করেন।

ভালোবাসা যতই গভীর হোক না কেন কখনো কখনো আমরা সেইসব প্রিয় মানুষদের আচরণে বিষন্নতায় ভুগি। কারণটা কি বলতে পারেন? কারণটি হচ্ছে আমরা তখন পছন্দের মানুষটির কোন বিশেষ দিককে পছন্দ করি না, বা অপছন্দের কোন বিষয় খুব সহজে মেনে নিতে পারি না। আবার সবসময় তা মুখ খুলে বলাও যায় না। *বাস্তবতাকে গুরুত্ব দিন! একজন মানুষকে সবসময়ই ভালোবাসতে হবে এমনটি কোথাও নেই। সবকাজের জন্য যে প্রশংসা করতে হবে তার ও বাধ্যবাধকতা নেই।

সাধারণত আমরা যাদেরকে পছন্দ করি তার দোষগুলোকে চেপে রাখি। কখনো বলতে সাহস বোধ করি না। বললে আমাকে ভূল বুঝতে পারেন, বা সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে এমনটি ধারণা মনের ভেতর থেকেই যায়। আসলে এ ধারণা যে কতটুকু ক্ষতিকর তা বুঝেও না বোঝার ভান করে থাকি। পছ্েন্দর মানুষকে অপছন্দ করার কারণ নেই , যদি আপনি তাকে অপছন্দের কারণগুলো সনাক্ত করে দিতে পারেন।

ধরুন আপনার কোন এক বন্ধুর জন্য প্রতিদিন একই জায়গায় অপেক্ষা করেন। জায়গাটার প্রতি ও কেমন জানি মায়া লেগে গেছে। সরতে ও পারছেন না, আসলে যদি আপনাকে না পায়! অথচ যথারীতি দেরি করে আসাই তার অভ্যাস। ইচ্ছে করে তাকে বলতে, দেরিতে আসাকে আমি অপছন্দ করি। কিন্তু তাও বলতে পারেন না।

-বিষয়টি নিয়ে মনে মনে কষ্ট পাওয়ার দরকার নেই। একবার সরাসরি তাকে বলেই দেখুন না। সে শুধু আপনার জন্যই নয়, অন্যদের বেলায় ও সবসময় সময়ানুবর্তীতার দৃষ্টান্ত রাখবে, আপনি নিজেই গর্বিত বোধ করবেন তখন। কারণ সময়ের প্রতি লাগামহীন চলা ছিল তার দীর্ঘদিনের অভ্যাস। যখন আপনি তাকে সমস্যাটির কথা সরাসরি বলতে শিখলেন তার ভেতরও শুরু হবে নতুনভাবে জাগরণ।

সময়ের লাগাম তখন তার হাতে। সচেতন হতে হবে, সে না যেন আপনাকে বলতে পারে সময়মত কাজ করতে না পারাকে আমি অপছন্দ করি। সময় শুধু অপেক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, কাজেও সময়ানুবর্তীতার গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না। *রূপের কদর প্রখর রোদের মাঝে ছায়ারূপী একটুকরো মেঘ! কারও বাহ্যিক সৌন্দর্য কখনো পছন্দের কারণ হতে পারে। কিছুদিন মাত্র এ মনভোলানো সৌন্দর্য টিকে থাকে।

একসময় এ সৌন্দর্য দেখলে দৌড়ে পালাতে হয়। অলিম্পিকে সোনা জিততে হলে যেভাবে দৌড়াতে হয়। বলুনতো কেন? আসলে রঙ রূপ খুব বেশীদিন কাজে আসে না। কারণ গুণহীন রূপবতীর কদর সাময়িক। গ্রামে এখনো শোষিত নিুশ্রেণীর মানুষের মুখে এ কথাগুলো শোনা যায়।

যদি ঘরে একটি ফুটফুটে মেয়ে থাকে। শুধু রূপে কপালে সুখ সইবে না গো। কাজ শিখতে হবে, গুনী হতে হবে। শিক্ষিত না হলে এ রূপ কোন কাজে আসবে না। বাস্তবতা হচ্ছে: যৌতুকের বলি হতে হয় সে সব মেয়েদের।

*সে কৃতিত্ব হতে পারে আপনারও! যদি গুণ থাকে, বাস্তবতার শিক্ষা থাকে তাহলে সে স্বামীর ঘর না করার মাঝেও কৃতিত্ব থাকে। অথচ তা থেকে অধিকাংশ সময় বঞ্চিত হয় গ্রামের মেয়েরা। এ থেকে যে শুধু গ্রামের সুন্দরীরাই অবহেলিত হয় তা কিন্তু নয়। শহরের রমনীদেরকেও কম সইতে হয় না। গুণ থাকলেই গুণী।

গুণীদের সম্মান সবজায়গাতেই থাকে। ধরুন আপনার স্বামীর কাছে তার বন্ধু তার স্ত্রীর সুনাম করছে। খুব ভালো রান্না করতে পারে। ধর্মীয় উৎসবে হালূয়া, রুটি একাই তৈরী করে। আরও কত কী।

এর সবই বলছে আপনার সামনে। অথচ আপনার স্বামী সেরকম কিছুই মুখ ফুটে বলতে পারছেন না। তখন আপনার কাছে কেমন লাগবে। খুব ভালো নাকি খুব খারাপ। হিংসা করার কারণ নেই।

সব স্বামীই তার স্ত্রীকে নিয়ে গর্ব করতে চায়। আপনার সেরকম গুণ না থাকলে প্রিয় মানুষের মুখে পছন্দের পরিবর্তে কখনো অপছন্দের বাক্যকে নিশ্চুপে গলধঃকরণ করতে হবে আপনাকে। বাপের বাড়ির হুমকি ধমকিতে ও কোন কাজে আসবে না। *কাজের বেলায় কাজীকে সবাই পছন্দ করে! এবার কাজের কথায় আসা যাক। কাজের বেলায় কাজীকে সবাই পছন্দ করে।

কখনো যদি সে ব্যক্তি ধারবাহিকভাবে কাজের মান ঠিক রাখতে না পারে তাকে অপছন্দ করাটা কোন অস্বাভাবিক কিছু নয়। যদি না বিকল্প কোন ব্যবস্থা থাকে। ব্যক্তিত্ব খর্ব হয় এমন কথা স্বভাবতই কেউ কাউকে বলতে চান না। কাজের খাতিরে অনেক সময় তা বলতে হয়। শুনতে হয় তা ভুক্তভোগীকে।

ধারাবাহিক কাজে মান ঠিক না রাখতে পারলে কাজ করেও যেমন তৃপ্তি পাওয়া যায় না শান্তিতে ও থাকা যায় না। হিন্দু ধর্মে একটা কথা আছে পূজা ভালোমত না হলে পেট পূজায় ও তৃপ্তি পাওয়া যায় না। অশান্তি ভোগ করতে হয় সবার অলক্ষ্যে। কিন্তু তা প্রকাশ করা যায় না। এমন হলে প্রথমেই নিজেকে জিজ্ঞেস করুন কেন কাজ ভালো হচ্ছে না।

হতে পারে কাজ পেয়েছেন ভালো কিন্তু কাজের সাথে যে কিছু বাড়তি দায়িত্ববোধ সৃষ্টি হয় তার জন্য ও কারও না কারও সহযোগিতার প্রয়োজন হতে পারে। তা যদি না পান তবে কাজের মান খারাপ হলেও নীতিকথা শুনে চুবসে যাওয়ার কিছু নেই। ধৈর্য ধরুন। আপনার এ শিক্ষা বাস্তবজীবনে আপনাকে সফল নেতৃত্বে সহযোগিতা করবে। কারণ আপনি জানেন কোন পরিস্থিতিতে কি করতে হয়।

কার সাথে কার কাজের জুটি ঠিক করতে হয়। আপনি সফল হবেনই। আরেক জনের পছন্দের জন্য নিজেকে পিষিয়ে মারার যৌক্তিকতা নেই। সুযোগ থাকলে সরাসরি বলুন। যৌক্তিক কারণ বিশ্লেষণ করুন।

কি কি সুযোগ সুবিধা দরকার আপনার। হয়তো বা কাজের চাপে তিনি ও আপনার সম্পর্কে নির্দেশনা দিতে ভূলে গেছেন। মনে করিয়ে দেওয়ায় একটা বাড়তি থ্যাংকস পাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। না পেলেও ক্ষতি নেই। সবাই কাজের বেলায় কাজীকে পছন্দ করেন।

*অন্যের আচরনে মনের ভেতর জমাট কষ্টের নিস্তার আপনারই হাতে! আচার আচরণ নিয়েও আমাদের ভেতর কষ্টের শেষ নেই। ও কেন এভাবে চলে। আমি চাই সবকিছু হোক আমার মনের মত। কিন্তু তা হয় না। আসলে এ ধারণা যখন নিজের ভেতর পুষতে থাকবেন দেখবেন আপনার কষ্টই বাড়ছে।

বুঝতে হবে প্রত্যেক মানুষের আচরণ ব্যক্তিত্ব সবকিছু তার নিজের মতো হয়। নিজের মত করে চাওয়া নিছক বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই বলে অসচেতন ভাবে তার অপছন্দের দিকগুলো আরেকজনের কাছে বলে তাকে ছোট করার কোন যৌক্তিকতাই নেই। যদি আপনি তা করেন তা হবে আপনার মানসিক সমস্যা। পছন্দকে যেমন নিজের মত করে পাওয়ার আনন্দ থাকে, অপছন্দকে নিয়ে বাড়াবাড়ির কিছু নেই।

কোন কিছুই একক নয়। বিশেষ করে মানুষের আচরণে। সবকিছুর বিপরীত অবস্থা থাকে। বাস্তবতা থাকে। দুটোকেই মেনে নেওয়ার অভ্যাস করতে হবে।

তবে আপনি প্রিয় মানুষটিকে বলতে পারেন, পার্টিতে তোমাকে এ ড্রেসে দেখতে আমার খুব ভালো লাগে। দেখবেন তার গোঁড়ামি মুহূর্তেই গায়েব। আপনার পছন্দই হয়ে উঠবে তার পছন্দ। * মন কেন বন্দী জালে বন্দী? আরেকজনকে অনুকরণ করা শিশু সুলভ আচরণ। বড়দের মাঝে এ আচরণ মানায় না।

হতে পারে নিছক ন্যাকমি আর অর্থের অপচয়। সঙ্গত কারণেই তাই অপছন্দনীয় বিষয়। কোন কিছু বলা বা চাওয়ার আগে অবচেতন মনে ন্যাকমি প্রকাশ পায় কিনা একটু খেয়াল করুন। শয়তান কিন্তু সবসময় মানুষকে কিছু আচরণ থেকে বের হয়ে আসতে দেয় না। পারা যায় না যে তা কিন্তু নয়।

পারা যায়। তবে সচেতন হতে হয়। সুন্দরভাবে কথাবলে অনেক বৈপ্লবিক পরিবর্তন করা অসম্ভব কিছু নয়। আচার-আচরন অভ্যাস সবকিছুই বদলে যায় ইতিবাচকভাবে। খোঁচা দিলে খোঁচা পেতে হয়।

নিজের বেলায় তা মেনে নেওয়া অসম্ভব। কেন হলো? কেন এভাবে বললো? এরকম কত প্রশ্ন। আরেক জনকে বলার ব্যাপারে আমরা যতটুকু স্বাধীনতা চাই নিজে শোনার ব্যাপারে ততটুকু স্বাধীন নই। মনটা তখন বদ্ধ জালে বন্দী। নিজের পছন্দকে যেভাবে গুরুত্ব দেই সেভাবেই আরেকজনের পছন্দকে ও সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া উচিত নয় কি? *ভেঙ্গে ফেল মনের কারাগার! যাকে খুব ভালোবাসি পছন্দ করি তার ক্ষেত্রে আমাদের দৃষ্টিভঙি এমনটি হওয়া দরকার নয় কি?- তা হলো *ভুলকে সংশোধন করার চেষ্টা করা।

কারণ সবাই নিজেকে সংশোধন করতে চায়। কিন্তু তার সুযোগ সবার হয় না। একজন ভালো বন্ধু তার বন্ধুর কল্যান কামনায় ভূলকে শুধরে দেওয়া চেষ্টা করে। পৃথিবীতে কোন তৃতীয় পক্ষ নেই যে এ মহান দায়িত্ব পালন করতে পারে। *নিজেকে বড় না ভাবা।

অন্যকে বুঝতে চেষ্টা করা। বুঝতে না চাইলেও ক্ষতির কিছু নেই্। পাথরের ও অপমানবোধ আছে। তা বুঝতে হলে প্রথমেই তাকে পাথর ভাঙার মেশিনে পড়তে হয়। বাস্তবতার খাতিরে মানুষও বুঝতে বাধ্য।

তবে সময়টা থাকে অপেক্ষা সময়। *পছন্দ অপছন্দের ব্যাপারটি খোলামেলা বলুন। লুকানোর কিছু নেই। তাতে উভয়ের বোঝাপড়া সহজ হবে। তবে নিজেরটা বলতে যেমন স্বাধীনতা আপনি প্রত্যাশা করেন অন্যেরটা শোনার জন্য ও আপনাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.