আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডিজিটাল যুগ ... তাই হয়ত মানুষ ঘটকের কাছে যাওয়ার আগে গোয়েন্দার কাছে যায়...

বিয়ে নিয়ে ব্যবসা এখন ঘটক পাখি ভাইয়ের অফিস ছাড়িয়ে শার্লোক হোমসের দরজায় কড়া নাড়ছে। বিয়ে করতে যাচ্ছেন? তবে আপনার প্রয়োজন একজন গোয়েন্দা। পছন্দসই বর বা কনে কেমন ছিলেন, এর আগে কারো সঙ্গে সম্পর্ক ছিলো কি-না, টাকা পয়সা আছে নাকি নেই, রোগ বালাই কিছু লুকাচ্ছে নাতো, কিংবা হবু শ্বশুর বাড়ির লোকজন কেমন, বাড়ি কাজের লোকটা ঠিক মতো কাজ করে দেয় কিনা-সব জানতে ভারতে বর ও কনেরা এখন ছুটছেন গোয়েন্দাদের কাছে। আর গোয়েন্দাদের এই ব্যবসাও বেশ রমরমা। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জানায়, বিবাহপূর্ব তদন্তের আজকাল বেশ দাম বাড়ছে।

কারণ ভারতে ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে সঙ্গী নির্বাচন অনলাইনেই করা হচ্ছে। এর ফলে পাত্রের বাড়ি-গাড়ি, আত্মীয়-স্বজন বা কনের পরিবার বা তার ইতিহাস অজানাই থেকে যায়। তবে পাত্র-পাত্রী পক্ষ এটাকে গোয়েন্দাগিরি বলতে একেবারেই নারাজ। আগে যেমন কাকা, মামা বা খালু খোঁজ খবর এনে দিতো, পরে কোনো খুঁত পাওয়া গেলে তাদের গালমন্দ করবার সুযোগটা থেকে যেতো, এই বিষয়টিও সেরকমই। গোয়েন্দারা সঠিকভাবে তথ্যাদি দিতে পারলে ব্যবসার সুনাম, অর্থ এসে দুয়ারে কড়া নাড়বে।

আর না পারলে আপনাকে ব্যবসা গুটাতে হবে। এরকম খোঁজখবর করতে আসা এক কনের বোন আনিতা জানান, এটাকে গোয়েন্দাগিরি বলা চলে না। বোনের বিয়ের আগে হবু দুলাভাইকে যাচাই-বাছাই করে দেখতে চাইছেন। আর সেজন্য পেশাদার কাউকে দিয়ে এই কাজ করিয়ে নিশ্চিন্ত হতে চান। আনিতা আরো জানান, কর্মক্ষেত্রে পরিচয় হয়েছে তার বোনের সঙ্গে হবু বরের।

তার পরিবারের অতীত ইতিহাসটাও তো জেনে নেয়া দরকার। ছেলে পক্ষ যা যা তথ্য দিয়েছে সেগুলো সত্য না মিথ্যা, তা যাচাই না করে তো আর বোনকে বরের হাতে তুলে দেয়া যায় না। বাবা মায়েদেরও এমনটাই দাবি। শুধু কথা বলেই পাত্র বা পাত্র্রী ভালো নাকি খারাপ তা বোঝা সম্ভব না। সেক্ষেত্রে এ ধরণের সংস্থার সাহায্য নেয়া যেতেই পারে।

বিবাহপূর্ব তদন্ত সংক্রান্ত সংস্থাগুলোতে গিয়ে চাইলেই কাউকে তথ্য দেয়া হবে না। রয়েছে নানারকম পদ্ধতি। নিবন্ধন করতে হবে, অগ্রিম টাকা দিতে হবে-আরো কত কি! এসব সংস্থার কোনো কোনোটির রয়েছে ৩০/৪০ বছরের অভিজ্ঞতাও। একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য প্রয়োজন ১২ থেকে২৫ দিন। এর জন্য পকেট থেকে খসাতে হবে ২৫ থেকে ৪০ হাজার রুপি।

সংস্থাগুলো বর বা কনেকে নজরবন্দি করে ছদ্মবেশে বন্ধুত্ব গড়ে এবং আরো নানান ছুতো দিয়ে খুঁজে নিয়ে আসে আসল সব তথ্য। গোয়েন্দারাও তুলে ধরলেন নিজেদের কথা। তারা বলছেন, “যতটা সহজ ভাবা হয় আমাদের কাজটিকে, আসলে ততটাই কঠিন এটি। আমাদের তথ্যের ওপর নির্ভর করে দু’জন মানুষের ভবিষ্যত। এ ব্যবসার প্রধান খরিদ্দার মেয়েপক্ষ।

” মেয়ের বাবা-মা তাদের হবু জামাইয়ের খুঁটিনাটি সব জানতে চান বলে জানালেন এমনই একটি এজেন্সির মালিক রাহুল রায়। বিশেষত কী জানতে চায় কনে পক্ষ, জবাবে রাহুল রায় বলেন, ছেলে মদ্যপ কিনা, আগে কোনো সম্পর্ক ছিল কিনা, ড্রাগ নেয় বা নিতো কিনা, শারীরিক সম্পর্কের বিষয়ে তার মতামত কি, ছেলের পরিবার ধনী কিনা, মেয়েকে স্বাচ্ছন্দ্য দিতে পারবে কি, শ্বাশুড়ীর স্বভাব চরিত্র কেমন ইত্যাদি। রাহুল রায়ের গোয়েন্দা জয় প্রকাশ জানালেন, “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বর বা কনে কাউকেই জানতে দেয়া যাবে না আমরা তাদের ওপর নজর রাখছি। নিজেকে লুকিয়ে রাখতে হবে। ” অনেক নারী গোয়েন্দারাও এ পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন।

তাদের একজন উষা। তিনি জানালেন, এখনো ভারতের মেয়েদের শ্বশুরবাড়িতে থাকতে হয়। তাই সে পরিবারের ভেতরের অবস্থা আগে ভাগেই জেনে নেয়াটা দরকার। এজন্যই সেইসব হবু বরের বাড়ির অন্দরমহলের খোঁজ নিয়ে আসেন উষা। শ্বাশুড়ি দিনে কতবার রাগ করেন, কতবার হাড়ি পাতিল ছুঁড়ে মারেন, কতবার কেনাকাটা করতে যান, কিভাবে টাকা খরচ করতে ভালোবাসেন এগুলোও জানতে চান অনেকে।

একেক পরিবারের ক্ষেত্রে একেক নিয়ম পালন করতে হয় গোয়েন্দাগিরিতে। পরিবারের চালচলনের সঙ্গে বদলে যায় গোয়েন্দাদের কার্যপদ্ধতিও। তবে এধরনের গোয়েন্দাবৃত্তি কনের পরিবারের কাছে সমাদৃত হলেও বরদের জন্য বেশ বিরক্তিকরই। এরকম গোয়েন্দাগিরির শিকার মনিষ(ছদ্মনাম) প্রকাশ করলেন তার ক্ষোভ। তিনি বলেন, “আমার পেছনে এরকম গোয়েন্দা নিয়োগ করা মানে বিয়ের আগেই আমাকে অবিশ্বাস করা।

আর কলেজে পড়ার সময় হয়তো আমার কোনো সম্পর্ক ছিল সেটি তো আর আমার বর্তমানের সম্পর্ক নষ্ট করবে না। সেটি হয়তো আমি ভুলেই গেছি। এগুলো খুঁজে খুঁজে বের করে আনা সত্যিই অপমানজনক। ” মনিষ মনে করেন, এটি পুরোমাত্রায় অনধিকারচর্চা। ভালো কিছু বয়ে আনবে না এটি।

এদিকে রাহুল রায় ও উষা জানালেন, শতকরা ৯৯ ভাগ ক্ষেত্রেই তাদের তদন্তের বিয়েগুলো সুখী হয়েছে। তারা তাদের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান। সাহায্য করতে চান সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য। তথ্যসুত্র :: Click This Link Click This Link ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.