আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অব্যাহত খুন-খারাবি বোমাবাজিতে যশোরের সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায়

যশোর শহর সাধারণ মানুষের নিরাপত্তাহীন শহরে পরিণত হয়ে পড়েছে। অব্যাহত খুন-খারাবি, ছিনতাই, বোমা-হামলার কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পাড়ায় পাড়ায় উঠতি বয়সী সন্ত্রাসীদের দাপটে বীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছে মানুষ। পুলিশ প্রায় নির্বিকার এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে। খোদ সরকারি দলের নেতারাও বিরক্তি প্রকাশ করছেন বর্তমান পরিস্থিতিতে।

মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে যশোরে ঘটেছে ৭টি হত্যাকাণ্ড। ৯ নভেম্বর অভয়নগরে দলীয় প্রতিপরা কুপিয়ে হত্যা করে যুবলীগ কর্মী খোকনকে। পরের দিন ঝিকরগাছার দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী রবিউলের বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সেদিনই বাঘারপাড়ায় বোরহানউদ্দিন নামে এক যুবক খুন হন। ১১ নভেম্বর সদর উপজেলার ঝুমঝুমপুর, বারান্দীপাড়া ও জগহাটি থেকে তিন যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

তাদেরকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। ১৪ নভেম্বর শহরের ঝালাইপট্টিতে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে আহত হয় দু’যুবক। পরদিন সুজন নামে তাদের একজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। ১৪ নভেম্বর শহরের টিবি কিনিক এলাকায় দু’দল সন্ত্রাসীর মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলা ও বোমাবাজির ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের গাড়ি ল্য করেও সন্ত্রাসীরা বোমা হামলা চালায়।

তবে, পুলিশ এ ঘটনায় তাণিক অ্যাকশনে যায়। তারা এ ঘটনায় অস্ত্র, চাকু ও বোমাসহ ৫ জনকে আটক করে। ১৫ নভেম্বর রাতে একইস্থানে বোমাবাজির ঘটনা ঘটে। আর পুলিশ সেখানে অভিযান চালিয়ে ৪টি বোমা উদ্ধার করে। ৬ নভেম্বর রাতে সিটি কলেজ মার্কেটে একটি মটর পার্টসের দোকানে দুর্ধর্ষ ডাকাতি হয়।

১৪ নভেম্বর আরএন রোডের দুটি মটরপার্টসের দোকানে ঘটে চুরির ঘটনা । এসব ঘটনার জড়িতদের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা হলেও পুলিশ তাদের আটক করতে পারেনি। অপরদিকে, আসামিরা উল্টো মামলা তুলে নেয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের হুমকি দিচ্ছে। এসব ঘটনার প্রতিবাদে মটর পার্টস ব্যবসায়ীরা ১৫ নভেম্বর যশোরে অর্ধদিবস ধর্মঘটও পালন করে। এছাড়া, শহরে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে ছিনতাই ও জখমের ঘটনা।

আর এসব ঘটনার নায়ক উঠতি বয়সী সন্ত্রাসীরা। পাড়ায় পাড়ায় এসব সন্ত্রাসীদের রয়েছে ছোট ছোট দল। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতে এলাকাতেই তারা তৈরি করছে বোমা। প্রতিদিন রাতে আবাসিক এলাকার মধ্যেই এসব বোমার পরীামূলক বিস্ফোরণ ঘটায় তারা। প্রচণ্ড শব্দে কেঁপে ওঠে ঘরবাড়ি, আতঙ্কে রাত কাটে সাধারণ মানুষের।

শহরের বেজপাড়ার বাসিন্দা শাওন সুলতানা জানান, সন্ধ্যার পরে বাড়ি থেকে বেরোতেই ভয় লাগে। সবসময় মনে হয়, এই বুঝি ছিনতাইকারীর কবলে পড়ছি। শহরে চলাপেরায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগি। বিশিষ্ট লেখক বেনজীন খান বলেন, যশোরে রাজনৈতিক দলের নেতাদের নেতৃত্বসুলভ আচরণের অভাবে এখানে অস্থিরতা বিরাজ করছে। তার মতে, মতাসীন দলের দুই নেতার দ্বন্দ্বের কারণে প্রশাসন নতজানুনীতি মেনে চলেছে।

সেকারণে এসব অপরাধ কর্মকাণ্ডেও পুলিশ নির্বিকার হয়ে পড়েছে। অপরদিকে, বিরোধীদল তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে ব্যর্থ হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন। যোগাযোগ করা হলে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলী রেজা রাজু বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বর্তমান অবস্থায় আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, আমরা পুলিশের বিরুদ্ধে মিছিলও করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ সুপারের অনুরোধে তা করিনি।

ডিআইজির সাথে কথা বলেছি। তিনি আশ্বস্ত করেছেন, দু’একদিনের মধ্যেই পরিস্থিতির উন্নতি হবে। বোমার ব্যবহার বেড়ে যাওয়া ও উঠতি বয়সী সন্ত্রাসীদের অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি পুলিশের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এ ব্যাপারে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসেন বলেন, পূর্বে অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার রেকর্ড আছে এমন লোকজনই এখন নেপথ্যে থেকে কিশোর অপরাধীদের দিয়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। আমরা সবাইকেই আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি।

বোমার ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, যশোরে পুলিশের অতিরিক্ত ফোর্স আনা হয়েছে। আজ বুধবার থেকে এসব অপরাধীদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।