আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রবীন্দ্রনাথের যত গান-২

ঠিক দুক্কুর বেলা ভূতে মারে ঠেলা। দুপুর বেলা ভূতে ঠেলা মারে ১১ তোমায় গান শোনাব তাই তো আমায় জাগিয়ে রাখ ওগো ঘুম-ভাঙানিয়া । বুকে চমক দিয়ে তাই তো ডাক’ ওগো দুখজাগানিয়া ॥ এল আঁধার ঘিরে, পাখি এল নীড়ে, তরী এল তীরে– শুধু আমার হিয়া বিরাম পায় নাকো ওগো দুখজাগানিয়া ॥ আমার কাজের মাঝে মাঝে কান্নাধারার দোলা তুমি থামতে দিলে না যে । আমায় পরশ ক’রে প্রাণ সুধায় ভ’রে তুমি যাও যে সরে– বুঝি আমার ব্যথার আড়ালেতে দাঁড়িয়ে থাক ওগো দুখজাগানিয়া ॥ ১২ গানের ডালি ভরে দে গো ঊষার কোলে– আয় গো তোরা, আয় গো তোরা, আয় গো চলে ॥ চাঁপার কলি চাঁপার গাছে সুরের আশায় চেয়ে আছে, কান পেতেছে নতুন পাতা গাইবি ব’লে ॥ কমলবরণ গগন-মাঝে কমলচরণ ওই বিরাজে । ওইখানে তোর সুর ভেসে যাক, নবীন প্রাণের ওই দেশে যাক, ওই যেখানে সোনার আলোয় দুয়ার খোলে ॥ ১৩ ওরে আমার হৃদয় আমার, কখন তোরে প্রভাতকালে দীপের মতো গানের স্রোতে কে ভাসালে ॥ যেন রে তুই হঠাৎ বেঁকে শুকনো ডাঙায় যাস নে ঠেকে, জড়াস নে শৈবালের জালে ॥ তীর যে হোথায় স্থির রয়েছে, ঘরের প্রদীপ সেই জ্বালালো– অচল রহে তাহার আলো ।

গানের প্রদীপ তুই যে গানে চলবি ছুটে অকূল-পানে চপল ঢেউয়ের আকুল তালে ॥ ১৪ কাল রাতের বেলা গান এলো মোর মনে, তখন তুমি ছিলে না মোর সনে ॥ যে কথাটি বলব তোমায় ব’লে কাটল জীবন নীরব চোখের জলে সেই কথাটি সুরের হোমানলে উঠল জ্বলে একটি আঁধার ক্ষণে– তখন তুমি ছিলেনা মোর সনে ॥ ভেবেছিলেম আজকে সকাল হলে সেই কথাটি তোমায় যাব বলে । ফুলের উদাস সুবাস বেড়ায় ঘুরে, পাখির গানে আকাশ গেল পূরে, সেই কথাটি লাগল না সেই সুরে যতই প্রয়াস করি পরানপণে– যখন তুমি আছ আমার সনে ॥ ১৫ মনে রবে কি না রবে আমারে সে আমার মনে নাই । ক্ষণে ক্ষণে আসি তব দুয়ারে, অকারণে গান গাই ॥ চলে যায় দিন, যতখন আছি পথে যেতে যদি আসি কাছাকাছি তোমার মুখের চকিত সুখের হাসি দেখিতে যে চাই– তাই অকারণে গান গাই ॥ ফাগুনের ফুল যায় ঝরিয়া ফাগুনের অবসানে– ক্ষণিকের মুঠি দেয় ভরিয়া, আর কিছু নাহি জানে । ফুরাইবে দিন, আলো হবে ক্ষীণ, গান সারা হবে, থেমে যাবে বীন, যতখন থাকি ভরে দিবে না কি এ খেলারই ভেলাটাই– তাই অকারণে গান গাই ॥ ১৬ আকাশে আজ কোন্‌ চরণের আসা-যাওয়া । বাতাসে আজ কোন্‌ পরশের লাগে হাওয়া ॥ অনেক দিনের বিদায়বেলার ব্যাকুল বাণী আজ উদাসীর বাঁশির সুরে কে দেয় আনি– বনের ছায়ায় তরুণ চোখের করুণ চাওয়া ॥ কোন্‌ ফাগুনে যে ফুল ফোটা হল সারা মৌমাছিদের পাখায় পাখায় কাঁদে তারা ।

বকুলতলায় কাজ-ভোলা সেই কোন্‌ দুপুরে যে-সব কথা ভাসিয়ে দিলেম গানের সুরে ব্যথায় ভরে ফিরে আসে সে গান-গাওয়া ॥ ১৭ নিদ্রাহারা রাতের এ গান বাঁধব আমি কেমন সুরে । কোন্‌ রজনীগন্ধা হতে আনব সে তান কন্ঠে পূরে ॥ সুরের কাঙাল আমার ব্যথা ছায়ার কাঙাল রৌদ্র যথা সাঁঝ-সকালে বনের পথে উদাস হয়ে বেড়ায় ঘুরে ॥ ওগো, সে কোন্‌ বিহান বেলায় এই পথে কার পায়ের তলে নাম-না-জানা তৃণকুসুম শিউরেছিল শিশিরজলে । অলকে তার একটি গুছি করবীফুল রক্তরুচি, নয়ন করে কী ফুল চয়ন নীল গগনে দূরে দূরে ॥ ১৮ আমার কন্ঠ হতে গান কে নিল ভুলায়ে, সে যে বাসা বাঁধে নীরব মনের কুলায়ে ॥ মেঘের দিনে শ্রাবণমাসে যূথীবনের দীর্ঘশ্বাসে আমার প্রাণে সে দেয় পাখার ছায়া বুলায়ে ॥ যখন শরৎ কাঁপে শিউলিফুলের হরষে নয়ন ভরে যে সেই গোপন গানের পরশে । গভীর রাতে কী সুর লাগায় আধো-ঘুমে আধো-জাগায়, আমার স্বপন-মাঝে দেয় যে কী দোল দুলায়ে ॥ ১৯ যায় নিয়ে যায় আমায় আপন গানের টানে ঘর-ছাড়া কোন্‌ পথের পানে ॥ নিত্যকালের গোপন কথা বিশ্বপ্রাণের ব্যাকুলতা আমার বাঁশি দেয় এনে দেয় আমার কানে ॥ মনে যে হয় আমার হৃদয় কুসুম হয়ে ফোটে, আমার হিয়া উচ্ছলিয়া সাগরে ঢেউ ওঠে । পরান আমার বাঁধন হারায় নিশীথরাতের তারায় তারায়, আকাশ আমায় কয় কী-যে কয় কেই বা জানে ॥ ২০ দিয়ে গেনু বসন্তের এই গানখানি– বরষ ফুরায়ে যাবে, ভুলে যাবে জানি ॥ তবু তো ফাল্গুনরাতে এ গানের বেদনাতে আঁখি তব ছলোছলো, এই বহু মানি ॥ চাহি না রহিতে বসে ফুরাইলে বেলা, তখনি চলিয়া যাব শেষ হলে খেলা ।

আসিবে ফাল্গুন পুন, তখন আবার শুনো নব পথিকেরই গানে নূতনের বাণী ॥ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।