আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেহরী এবং ইফতার !!! একটু লক্ষ্য করুন !!!

রমজান মাস খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটি মাস। এটি বিজয়ের মাস,রহমতের মাস,বরকত,মাগফিরাতের মাস,সংযমের মাস,আত্মশুদ্ধির মাস। রসূল(সাঃ) সাবান মাসে বেশী বেশী ইবাদত করতেন এবং রমজানের অপেক্ষা করতেন। অন্য মাসের চাইতে এ মাসের ইবাদতে বেশী নেকী লাভ হয়ে থাকে। এই মাসের ফজিলত সম্পর্কে খুব কম বর্ণনা করা হয়েছে।

তবে যা বর্ণনা করা হয়েছে সেটা শুনে বোঝা যায় এই ফজিলত কত বিস্তৃত। ....রোজা আল্লাহর জন্যে এবং আল্লাহ স্বয়ং এর প্রতিদান দিবেন। রাইয়ান নামক বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ দরজা দিয়ে রোজাররা প্রবেশ করবে,আরও অনেক ফজিলত বর্ণিত হলেও সেটাকে কম বলেছেন আলেমগন। কারণ এটি এমন একটি ইবাদত যা খুব গোপনে ঘটে এবং বান্দা গোপনে তার নিজেকে সংশোধন করে আল্লাহর ভয়ে। একটি কষ্টকর প্রক্রিয়া শুরু করে সে শুধুমাত্র আল্লাহকে ভয় করে।

ইচ্ছা করলেই সে কিছু খেতে পারে কিন্তু অন্তর থেকে আল্লাহকে ভয় করার কারনে গোপনেও সে খাবার গ্রহণ করেনা এবং পাপাচার করেনা। ফলে আল্লাহ তার প্রতি খুশী এবং তাকে এমন বিশাল কিছু দিবেন যা পূর্বেই তিনি অল্প একটু ধারণা দিয়েছেন। মূলত: আল্লাহ তায়ালা যে পুরষ্কার দিবেন তা বর্ণনা করার ক্ষমতা আমাদের দেওয়া হয়নি। কিন্তু আমার আজকের আলোচ্য বিষয় এটি নয়। আমরা কিছু হাদীস শুনে নেই : *** “....রসূল(সাঃ) বলেন,তোমরা সেহরী খাবে কেননা সেহরীতে বরকত রয়েছে”-(বুখারী-মুসলিম) *** “আমাদের রোজা এবং আহলে কিতাবদের রোজার মদ্যে পার্থক্য হল সেহরী খাওয়া”-(মুসলিম) দেরীতে সেহরী খাওয়া মুস্তাহাব।

কিন্তু আমাদের দেশে একটি জাতীয় কমিটি আছে এরা খুব সতর্ক। এরা নির্ধারিত সময়ের ৩/৪ মিনিট পূর্বেই সেহরীর সময় শেষ ঘোষনা করেন। আর যে সময়কে শেষ সময় হিসেবে সাব্যস্ত করে সেটার ব্যাপারে আপনাদেরকে অবহিত করব। আমরা যে সময়ে সেহরী খাওয়া শেষ করি তার অন্তত ৩০ মিনিট পর সকাল হয়। অর্থাৎ বেশ রাত থাকতেই আমরা সতর্কতার সাথে সেহরী শেষ করি।

হিসেব করলে দেখা যায় বিশেষ সতর্কতার ৩/৪ মিনিট সহ আমাদের জাতিয় কমিটি আমাদেরকে প্রায় ৩৫ মিনিট পূর্বেই সেহরী খাওয়া থেকে বিরত রাখছে। যেসব আলেমরা সময় নির্ধারণ করছেন তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি আবারও সুন্নাহ অনুসরনে। আমি এমন কোনো হাদীস দেখিনি যেখানে সেহরীর সময় রসূল(সাঃ) ঘুমন্ত মানুষদেরকে ডাকতে অন্যদেরকে প্রেরন করছেন বা কোনো শব্দ করে তাদেরকে ঘুম থেকে জাগানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু আমাদের দেশে বহু মসজিদে সাইরেন নামক বিকট শব্দের এক ধরনের মহা বিপদ সংকেত রয়েছে। মাঝ রাতে এটি বিকট শব্দে বেজে ওঠে এবং তখন মহা মানুষও জিন্দা হয়ে ওঠে।

এরপর একপাল লোক হামদ-নাত গাইতে গাইতে ছোট-বড় সকল রাস্তা একাধিকবার প্রদক্ষিণ করে চরম দায়িত্বশীলতার সাথে উঠিয়ে দেয়। মসজিদে সাইরেন বাজানোর পর এক বা একাধিক জন মাইকে কুরআন তিলাওয়াত,হামদ-নাত শুরু করেন এবং কানিক পর পর হুঙ্কার দিয়ে ঘুমন্ত মানুষদেরকে জাগানোর চেষ্টা করেন একইসাথে সেহরীর সময় শেষ হতে আর কত সময় বাকী আছে তা জানিয়ে দেন। শেষের দিকে অনেকটা কাউন্টডাউনের মত ঘন ঘন সেই সময় জানানো হয় এবং তারপর বলা হয় সময় শেষ,আর সেহরী করবেন না। তারপর তিনি রোজার নিয়ত দুবার পাঠ করেন যাতে কারো ভুল হলে দ্বিতীয়বারে শুধরে নিতে পারেন। সবকাজে বাড়াবাড়ির করা বাঙ্গালীর খুব পুরোনো অভ্যাস।

কিন্তু তার এই আচরনে সুন্নাহ রক্ষিত হচ্ছে কিনা সেটা নিয়ে তারা ভাবিত নয়। তাদের দায়িত্ব হল মাঝরাতে মানুষকে যেকোনো মূল্যে জাগিয়ে দেওয়া। সেহরী নামক মুস্তাহাবের ব্যাপারে আমাদের পারফর্মেন্স অসাধারন অতিরিক্ত কিন্তু ফরজের বেলায় আমাদের জীবন প্রথম রাতের ঘুমের অবস্থায়। বহু হৃদরোগী বা অন্যান্য রোগী আছেন যারা সাইরেনের শব্দে বা হঠাৎ কারো আওয়াজে চীরতরে সেহরীর মায়া ত্যাগ করতে পারেন,সেদিকে লক্ষ্য রাখার অনুরোধ রইল। সুন্নাহর নামে অজ্ঞতা বন্ধ হউক।

একটু হাদীস শুনে নেই ঃ ... “তোমরা পানাহার কর,যতক্ষন রাতের কালো রেখা হতে দিনের সাদা রেখা সুস্পষ্টভাবে তোমাদের চোখে ফুটে না ওঠে”। আদী ইবনে হাতেম(রাঃ) বলেন, যখন এই আয়াত অবতীর্ণ হল,তখন আমি একটি কালো ও একটি সাদা রঙের রশি আমার বালিশের নীচে রেখে দিয়েছি। এগুলোর দ্বারা আমি রাত ও দিনের পার্থক্য নিরূপন করি। এটা জেনে তখন রসূল(সাঃ) বললেন তোমার বালিশ তো খুব প্রশস্ত ! এ তো হল ,রাতে অন্ধকার এবং প্রত্যুষের আলো। (অনেক সাহবী নিজেদের পায়ে সাদা-কালো দড়ি বেধে রেখে রাত ও সকালের পার্থক্য বোঝার চেষ্টা করতেন) (মুসলিম, হাদীস নং-২৪০২ এবং ২৪০৩,২৪০৪) “... যখন তোমাদের কেউ আযান শুনে আর খাওয়ার পাত্র তার হাতে থাকে তখন সে যেন আগে খাওয়াটা রেখে না দেয়,সে আগে তার আবশ্যক পূরণ করবে।

”-(আবু দাউদ) বিষয় ক্লিয়ার ??? ইফতারঃ “যখন রাত আসে,দিন বিদায় হয় এবং সূর্য্য আড়ালে চলে যায় তখন রোজাদার ব্যক্তি ইফতার করবে। ”( -মুসলিম) “...আব্দুল্লাহ ইবনে আওফা বলেন,কোনো এক সফরে আমরা রসূল(সাঃ)এর সাথে ছিলাম। সূর্য্য অস্ত গেলে তিনি বললেন,হে অমুক ! নেমে পড় এবং আমাদের জন্যে ছাতু গুলিয়ে আন ! সে বলল,ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এখনও যে দিন রয়েছে। তিঁনি(সাঃ) পূনরায় বললেন, নেমে পড় এবং আমাদের জন্যে ছাতু গুলিয়ে আন ! তখন সে ছাতু গুলিয়ে তার(সাঃ) সামনে পেশ করল। রসূল(সাঃ) তা পান করলেন এবং হাত দ্বারা ইশারা করে বললেন,সূর্য্য যখন এদিক দিয়ে অদৃশ্য হয়ে যাবে এবং রাত যখন এদিক দিয়ে আসন্ন হয়ে পড়বে,তখন রোজাদার ব্যক্তি ইফতার করবে।

” (-মুসলিম, হাদিস নং ২৪২৮ এবং ২৪২৯,২৪৩০,২৪৩১) “...মানুষ ততক্ষন পর্যন্ত কল্যানের পথে থাকবে যতক্ষন তারা দ্রুত ইফতার করবে”(বুখারী ও মুসলিম) আমাদের জাতীয় ওলামা কমিটি মহা সতর্কতার কারনে সূর্যাস্তের ৩/৪ মিনিট পর মাগরিবের আযান দেওয়ার ব্যবস্থা রেখেছেন। তাদের এই মহা সতর্কতা সুন্নাহ পরিপন্থী এটা কি তারা আরেকবার ভেবে দেখবেন ?  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.