আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সংকর বাঙালির একই বৈশিষ্ট্য

বাক স্বাধীনতা মানে সত্য বলার অধিকার। বাংলাদেশের মানুষ সম্পর্কে ইতিহাস ঘাটলে যা পাওয়া যায় তার সারমর্ম হলো, এ দেশের মানুষের অর্থাৎ এ অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের সবচেয়ে বড় যে গ্রুপ তথা বাঙালি নৃগোষ্ঠির প্রকৃত অর্থে কোন সুনির্দিষ্ট একক পূর্বপুরুষ নেই। বাঙালি জাতি কয়েকটি নৃগোষ্ঠীর সমন্বয়ে গঠিত যার মাঝে রয়েছে নেগ্রিটো, দ্রাবিড়, অস্ট্রিক ও ভোটচিনীয়, সেমেটিক আরব ইত্যাদী। এ কারণে, সবাই জানে যে বাঙালি জাতি একটি সংকর জাতি। তাই এ দেশের মানুষের চেহারা একেক রকম।

কিন্তু স্বভাব চরিত্রে কেন এ দেশের লোক প্রায় একরকম এটা অবশ্যই প্রশ্নের দাবি রাখে। অনেকেই হয়তো ভাবছেন আমি এ কথা কেন বলছি? নিচে সংক্ষেপে তার বিবরণ দেয়া হলোঃ আমরা বাঙালি যারা তাদের মধ্যে কিছু কমন বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন- ১। ঘৃণাঃ আমরা নিজেদের মতামতের বাইরে অন্য যে কোন মতামতকে ঘৃণা করি এবং যারা সেই মতামতকে সমর্থন করে তাদেরও ঘৃণা করি। এই বৈশিষ্ট্য প্রায় সকলের মধ্যে উপস্থিত।

২। ঘুষ ও দূর্নীতিঃ সকলেই বিভিন্ন সভা সমাবেশে কিংবা যার যার অবস্থান অনুসারে আশেপাশের মানুষদেরকে নানা রকম ভাল ভাল কথা বলি কিন্তু নিজেরাই সামান্য স্বার্থ ছাড়তে চাই না। এমনকি অন্যকে ফাঁদে ফেলে বা তার দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে সেখান থেকেও দু চার পয়সা যা পারি আদায় করে থাকি। ঘুষ ও দূর্নীতি যে প্রায় সকল মানুষের মাঝে রয়েছে তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো সরকারী অফিস। যারাই এখানে আসে তারাই এর সাথে জড়িয়ে পড়ে।

বেসরকারী পর্যায়েও যে যার মত মারিং কাটিং করতে ছাড়ে না। অনেকেই আছে স্রেফ পরিবেশের দোহাই দিয়ে গা বাঁচাতে চায়। দূর্নীতিতে বাংলাদেশ এমনি এমনি রেকর্ড করেনি। ৩। অন্যের দোষ ধরাঃ নিজেদের মাঝে হাজারটা দোষ থাকা স্বত্বেও আমরা অন্যের দোষ খুঁজতে এবং অন্যের দূর্বল জায়গায় আঘাত করতে ভালোবাসি।

সাম্প্রতিক সময়ে ব্লগে ঝড় তোলা জাফর ইকবাল ইস্যু একটি বড় উদাহরণ। এর আগে জামাত নেতা কামরুজ্জামান (সম্ভবত) এর ছেলের ছবি নিয়েও একই ঘটনা ঘটেছে। এই বৈশিষ্ট্যও ৪। অসহিষ্ণুতাঃ আমরা জাতি হিসেবে অত্যন্ত অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছি। সম্ভবত ইংরেজদের ও পাকিস্তানীদের শোষন এবং তৎপরবর্তীকাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত বিভিন্ন সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম এবং বিভিন্ন দলের ক্যাডার ও সন্ত্রাসীদের কার্যকলাপ আমাদের দেশের ইয়ং ছেলেমেয়েদেরকে- যারা পড়াশোনা করেনি বিভিন্ন কাজকর্ম করে খায়, সন্ত্রাসে আগ্রহী ও অসহিষ্ণু করে তুলেছে।

আমি মনে করি শিক্ষা আমাদের ভিতরে সহিষ্ণুতা তেমনভাবে জাগাতে পারেনি। নাহলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মেধাবী ছেলেরা সন্ত্রাসে লিপ্ত হয়ে সহপাঠীকে তিন তলা থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে মেরে ফেলতে পারতো না। যাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানোর ক্ষমতা নেই তারা ভালো ভালো কথা বলে কিন্তু সুযোগ পেলে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে এমন উদাহারণ আমার দেখা আছে। ৫। তোষনঃ আমাদের মাঝে উর্ধতন লোককে তোষন করার অভ্যাস আছে।

৬। অবিবেচকঃ আমরা নিজ স্বার্থের ক্ষেত্রে ভালো ও মন্দের পার্থক্য বিবেচনা করি না। আমরা এমন লোকের পিছে পিছে ঘুরে তাকে শক্তিশালী করি যাদের সম্পর্কে আমাদের স্পষ্ট ধারনা রয়েছে যে লোকটা কি রকম দূর্নীতিবাজ। তারেক জিয়ার পিছে অনেক ছেলে ঘোরে, তাকে তোষন করে এবং তার সম্পর্কে অনেক ভালো ভালো কথা বলে। কিন্তু সকলেই জানে যে তারেক জিয়া একটা চোর।

তারপরেও ঘোরে কারণ সেখানে স্বার্থের ব্যাপার জড়িত আছে। ৭। পাকিস্তান ও ভারতপ্রীতিঃ পাকিস্তান প্রীতি আমাদের ভিতরে অনেকের মাঝেই তীব্র এবং ভারতের প্রতিও আমাদের দেশের একটা বৃহৎ জনগোষ্ঠী বুকের ভেতরে প্রেম লালন করে। দুইটাই একই বিষয়। কারণ, দুইটাই বিদেশ।

৮। সৌদী প্রীতিঃ অনেকেই সৌদী আরবকে একমাত্র প্রকৃত ইসলামী রাষ্ট্র মনে করে। বিশেষতঃ রাসূলের (সাঃ) এর দেশ বলে দেশটিকে পবিত্র মনে করা হয়। কিন্তু সৌদী সরকারের আমেরিকা তোষন ও ইসরায়েলের ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন সম্পর্কে এরাও নীরব থাকে। অবশ্য আমাদের দেশের হিন্দুদের মাঝে অন্যান্য কারণের পাশাপাশি ধর্মীয় কারণে ভারত প্রীতি দেখা যায় যদিও তারা তা মুখে স্বীকার করে না।

৯। দেশ সম্পর্কে হতাশাঃ আমাদের দেশের বেশিরভাগ লোকই মনে করে এ দেশে বসবাস করে কোন ভবিষ্যৎ নেই। তাই তারা বিভিন্ন দেশে চলে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে। এটা অবশ্য বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। ১০।

ধর্মীয় উন্মাদনাঃ আমাদের দেশের মানুষের একটা বৃহৎ অংশ নামাজ রোজা না করলেও ধর্মের ব্যাপারে অনেকাংশেই উন্মত্ত থাকে। বিভিন্ন ইস্যুতে তারা অন্য ধর্মের লোকদের ও নাস্তিকদের গালিগালাজ করে থাকে (সবাই নয়)। এগুলো করে তারা যাদের জ্ঞান কম। ব্লগে নাস্তিকদের মধ্যে এ প্রবণতা আরও বেশী। তারা উন্মত্ততার দিক থেকে একধাপ এগিয়ে এবং আস্তিকদেরকে নাস্তানাবুদ করার জন্য তারা অভাবজনিত কারণে জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় না গিয়ে ব্যঙ্গ- বিদ্রূপ করতেই বেশি পছন্দ করে (সবাই নয়)।

ইদানিং অবশ্য আস্তিকেরাও ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করা শুরু করেছে বিধায় তারা সংখ্যায় কম হবার কারণে সুবিধা করতে পারছে না। ১১। দেশকে নিয়ে স্বপ্ন দেখাঃ আমদের দেশের লোকজন দেশ সম্পর্কে হতাশ হলেও প্রায় সবাই স্বপ্ন দেখে যে, দেশে একসময় পরিবর্তন আসবে। দেশের অবস্থার পরিবর্তন হলে তারাও সৎ পথে চলতে শুরু করবে এমন চিন্তাও সবার মাঝেই আছে। কিন্তু সেই সৎ পথে এখন থেকেই চলতে শুরু করলে দেশ সত্যিই পরিবর্তীত হয়ে যাবে এমন চিন্তা খুব কম লোকেই করে।

ধন্যবাদ। মতামত থাকলে দিতে পারেন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।