আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মানবধিকার শব্দের অর্থ কি ?

আসলে আমাদের বাংলার জনগণ হিউমান রাইটস বা মানবধিকার শব্দটির সাথে বিশেষভাবে পরিচিত নয় অথবা অনেকেই এই শব্দটির নামও শোনেনি আর তাদের সংখ্যা্ই বেশি৷ তবে তারা অনেকেই শব্দটিকে না চিনলেও তার গুনাবলীর সাথে অনেকেই পরিচিত যার কারনে আজও পৃথিবীটা সুন্দর মনে হয়৷ পৃথিবীতে ভালর পাশাপাশি কিছু মন্দ শব্দ আছে যা দ্বারা আমরা ভাল মন্দের পাথর্ক্য নিরম্নপন করতে পারি যেমন-বিচার-অবিচার, দোষ-গুন , ন্যয়-অন্যায়, শান্তি-অশান্তি, পাপ-পূর্ণ, সত্য-মিথ্যা, শিৰিত-মুখ্য, অধিকার-অনধিকার, মানবতা-অমানবতা ইত্যাদি৷ আর পৃথিবীতে আজ এই ভাল মন্দের পার্থক্য যারা নিরম্নপন করতে পারে তারা্ই সত্যিকার মানুষ৷ আর তাদের সংখ্যা এই পৃথিবীতে খুবই সামান্য৷সকলেই এই গুনের অধিকারী হয়না৷ তবে প্রতিটি মানুষের ভিতরই দুহটি মানুষ বাস করে একটি ভাল আর অরপটি খারাপ৷ কিনত্ম আজ আমরা ভালটিকে আপগ্রেড করিনা তাইত আমাদের পৃথিবী থেকে ভাল গুনগুলির বিলুপ্ত হচ্ছে৷ তারপরও সকল কিছুরই পরিসমাপ্তি আছে৷ যেমন জন্ম হলেই মৃতু অনিবার্য৷ যতদিন পৃথিবী থাকবে, থাকবে মানব, আর ততদিন এই শব্দটিও বেচেঁ থাকবে ৷পরিসংখ্যানে দেখা গেছে বাংলার অধিকাংশ মানুষই এই মানবধিকার শব্দটির সাথে পরিচিতি নয়,তাই আজ আমার এ লেখা যা আমার স্বল্প জ্ঞানের পরিধি দিয়ে৷ মানবধিকার বা হিউমান রাহটস হল মানুষের অধিকার৷ যেখানে সকল বৈষ্যম্য ছাড়াই সকলের সমান অধিকার রয়েছে৷ আর এগুলি হল- পরস্পর নির্ভর, পরস্পর সম্পর্কিত এবং অবিচ্ছেদ্য৷ আর এই অধিকারগুলি স্বাভাবিকভাবে আসে মানুষের জাতীয়তা, বাসস্থান, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, জাতি, লিঙ্গ ইত্যাদি থেকে৷ মানবধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় কোন দেশের রা্ষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে৷ আর এই শব্দটির উপর গুরুত্ব দিয়েই গণতান্ত্র্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে৷ পৃথিবীর দিকে তাকালেই আমরা আজ দেখতে পাব গণতন্ত্রের জোয়ারে আজ সারা পৃথিবী ভাসছে৷ অর্থাৎ মানুষ স্বত:স্ফুর্তভাবে নিজেদের অধিকারের কথা্ অনুভব করে তা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আজ বদ্ধ পরিকর৷ আমি ছোটবেলা থেকে গ্রাম্য পরিবেশে মানুষ হয়ে পরিবার দেখেছি, সমাজ দেখেছি, বসত্মি দেখেছি, হাই সোসাইটি দেখেছি, ৰুদার যন্ত্রনা দেখেছি, প্রশাসন দেখেছি এমনকি দুইবার মৃতুকে অনেক কাছ থেকে দেখেছি তাই আমি সকলৰেত্রেই এই শব্দটির সাথে বেশি পরিচিত হয়েছি জীবনে৷ আমাদের গণতান্ত্রিক রাষ্ট যা আমরা অর্জন করেছি সেই ৪০ বছর আগে৷ আজ আমাদের সংবিধানে ন্যায় বিচার, মানবধিকার, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তা সবই আছে কিন্ত বাস্তবক্ষেত্রে তা ব্যবহার হয়না৷ তাইত স্বাধীনতার ৪০ বছর পরেও আমরা সত্যিকারভাবে আমাদের কাক্ষিত লক্ষ্যে পৌছাঁতে পারিনি৷ আর এই একটি মাত্র কারনে আজ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির ভিতর বাংলাদেশ একটি অনুন্নত জাতি৷ যে দেশে মানুষের মন মানসিকার উন্নয়ন/পরিবর্তন ঘটেনা সেখানে দেশ ও জাতির পরিবর্তন সম্ভব নয়৷ আজ আমরা সকলেই পৃথিবী নামক গ্রহের ভিতর বাস করছি৷ আমাদের মুল নীতি হল-আমরা সকলেই এক জোড়া মানব ও মানবী হতে সৃষ্টি হয়ে নানা বর্ণ, গোত্র, জাতি, দেশ,বর্ণ, ধর্ম ইত্যাদিতে বিভক্ত হয়েছি কেবলমাত্র একে অপরের সহিত পরিচিত হবার জন্য৷ একটি বড় পরিবারে ভাই বোনের মত বাস করছি৷ আমরা একই আলো-বাতাস গ্রহন করছি, একই পানি পান করছি, একই খাবার খাচ্ছি, একই খোলা আকাশের নিচে ঘুমাচ্ছি আর মৃতুর পর একই কবরে শায়িত হচ্ছি৷ এটাই হল সত্যিকার পৃথিবীর মুলকথা৷ আর এই থেকে সত্যিকার বাসত্মবতাকে অনুধাবন করতে হবে৷ তবে আজ সারা পৃথিবীতেই ধনী-গরীবের বৈষ্যম্য বেশিমাত্রায় পরিলৰিত হচ্ছে, পুজিবাদী সমাজের প্রসার ঘটছে৷ ফলে সমাজতন্ত্রের বিলুপ্ত হচ্ছে৷ আর লিঙ্গভেদে বৈষ্যম্য রয়েছে আরও বেশি যা আমি আমার বাস্তব জীবন থেকে জেনেছি৷ আমি জন্ম নিয়েছিলাম একটি সম্ভানত্ম মুসলিম কৃষক পরিবারে৷ দাদার মৃতুর পর মাত্র তের-চৌদ্দ বয়সে দাদী বিধবা হন দুই মাসের পুত্র সনত্মান নিয়ে৷ ভাসুর , দেবর ছাড়া কেউ ছিলনা পাশে৷ কিন্ত মানুষের লোভ লালসা চিরনত্মন৷ সম্পত্তির লোভ ছাড়াও ছিল অন্য রকম লোভ লালসা৷ কিনত্ম কিভাবে তিনি তার সন্তান নিয়ে সততার সাথে মাথা উচু করে দাড়াবেন ? চারিদিকে কেবল শেয়াল শকুন উত্‍ পেতে আছে লোলুপ দৃষ্টি নিয়ে৷ সারাদিন দুই মাসের সনত্মান নিয়ে রোদ বৃষ্টিতে কখনও পানি সাতরিয়ে এ গ্রাম ও গ্রাম করতেন৷ একজন অসহায় বিধাব নারী৷ তারপর তিনি এক সময় মাথা এলোমেলো করে রাখতে শুরম্ন করলেন .পরনের শাড়ী পরিস্কার করা বন্ধ করলেন৷ সেদিন তিনি ময়লা শাড়ী আর এলেমেলো চুল নিয়ে বাস করা শুরু করলেন৷ কিন্ত কেন ? কেবলমাত্র মানুষের লোভ লালসা পূর্ণ দৃষ্টি থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখার জন্য৷তখনকার বাংলার মুসলিম সমাজে বোরকার প্রচলন কম ছিল৷ কারন তত্‍কালীন বেশি মাত্রায় হিন্দু সমাজের বাস৷ কোথায় ছিল তার অধিকার৷ তবে একজনের কাছে না থাকলেও অন্য জনের মাঝে ছিল৷ দাদার বন্ধু ব্রাৰন সুরেস চন্দ্র মুর্খাজী সেদিন তাদের দেখাশুনার ভার নিলেন৷ যা ছিল আলস্নাহ রহমত তাদের উপর ছায়া হয়ে এসে পড়েছিল৷এখানেই গল্পের শেষ নয়৷ যখন তার সন্তনটি বড় হতে লাগল-তখন তাকে বই হাতে দিয়ে স্কুলে পাঠান হল৷ কিন্ত দুষ্ট লোকেরা তার হাতের বই নদীতে ফেলে দিয়ে বাড়ীতে পাঠিয়ে দিত, মাঝে মাঝে গলা পর্যনত্ম কাদাঁতে দাবিয়ে রাখত দুষ্ট ছেলেরা৷ তারপর একদিন বড় হয়ে তিনি মা মাটিকে ভালবেসেছিলেন তাইত আলাউদ্দিনের চেরাগের মত তার সোনার সংসার গড়ে উঠেছিল৷ দাদী প্রায়ই বলতেন-''ইউসুফ আমার সোনার সংসার সাজিয়েছে৷'' এলাকার সবচেয়ে বেশি ভুসম্পত্তির মালিক হয়েছিলেন৷ তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি আওযামীলীগ সার্পোট করতেন৷ আর তার দশটি সন্তানকে সত্যিকারে শিক্ষিত করতে চেয়েছিলেন৷ তিনি মানবধিকার শব্দের অর্থ না জানলেও আত্মীয় স্বজনদের প্রতি মানবতা দেখিয়ে গিয়েছেন৷ চেয়ে দেখুন-তথ্য অধিদপ্তরের প্রশাসন প্রধান যিনি আমার বাবার প্রথম আত্মীয় (বড় বোনের দেবর)৷ তাদের লেখাপড়ার উপর আমার বাবার অনেক সাহায্য রয়েছে আর আজ তিনি আমার বাবার গল্পটি প্রকাশ করার মত মানবতা দেখাতে পারেন নাই৷ যে বোনটি আমার (কৃষক পরিবারের বড় মেয়ে) ম্যাট্রিক পাশ করার পর লেখাপড়া বন্ধ করে তার দেবর, ননদ মানুষ করেছিলেন আপন সনত্মানের মত দেবর বিসিএস অফিসার, ডাক্তার, লন্ডন প্রবাসী,স্ত্রীও ডাক্তার) অথচ তিনি শেষ জীবনে সংগ্রাম করেছেন মেশিন চালিয়ে কাপড় তৈরী করে৷ এই হল কৃষান কন্যারা যারা অন্যায়ের কাছে মাথা নত করা শিখেনি৷ অথচ সেই বোনের সংগ্রামী জীবনের গল্প আমি তাদের পত্রিকায় প্রকাশ করতে পারিনা৷ এর নাম মানবধিকার৷ তত্‍কালীন নলদী স্কুলের সকল হেড মাস্টার ও অসহায় ছেলেদের লজিং রাখতেন আমাদের বাড়ীতে৷ আজও বাংলায় ছড়িযে আছে যারা আমাদের বাড়ী থেকে লেখাপড়া শিখেছে৷ কারন আমার বাবা লেখাপড়া করতে পারেননি তাই লেখাপড়াকে বেশি ভালবাসতেন৷ এখানেই গল্পের শেষ নয়৷ ৪০ বছর ধরে আওয়ামীলীগের সকল রকম কর্মকান্ড আমাদের বাড়ীতে হয়েছিল৷ অথচ ১৯৭৫ সনে বড় ভাইয়ের নির্মম মৃতুর পর কেচটা করার সাহসও হয়নি আমাদের সেদিন৷ সেদিন বা্ংলায় ভিষণভাবে মানবধিকার লক্সঘিত হয়েছিল৷ তারপর নড়াইল শহরে গিয়ে লিঙ্গভেদের স্বিকার হলাম প্রথম৷ নারীরা সমাজে বড়ই অসহায়৷ তবে এই পার্থক্যগুলি সমাজে কেবল মানুষের সৃষ্টি, প্রকৃতির নয়৷ তারপরও নিয়তীর কাছে আমরা বড় অসহায়৷ ১৯৮৪ সনে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর সফিউদ্দিন মিনার দুই ছেলে মরহুম রাজ্জাক মিনা ও সাত্তার মিনা আমাদের গ্রামের বাড়ী দুইদিন থাকার পরেও নড়াইল এসে আমার শশুর আমার কলেজ, প্রাইভেট টিচারের বাসা পর্যনত্ম আমার পিছনে পিছনে পর্যবেৰন করে ঠিক গরম্ন কেনার মত কিনে নিয়ে গেলেন৷ আর সেদিন আমার বাবা তার ভালবাসার সম্পদকে তাদের হাতে আমানত হিসেবে তুলে দিয়েছিলেন কিনত্ম বাসত্মব জীবনে আমি কতটুকু অধিকার পেয়েছি তা আমার জানা নেই৷ বরং তাদের প্রতি আমাকে মানবতা দেখাতে হয়েছিল সারাজীবন৷ আর সমাজ আমাকে ক্ষত বিক্ষত করে রক্তাক্ত করে পদদলিত করেছিল আমার অধিকারগুলির৷ সেদিন আমি আমার অধিকারের জন্য চিত্‍কার করেছিলাম, এদেশের শিৰিত সমাজপতিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছিলাম কিনত্ম কোথায় মানবতা ? কোথায় মানবধিকার ? আমি খুজে পাইনি এই বিশাল ইট পাথরের ঢাকা শহরে৷ আমার চিত্‍কার সেদিন আকাশ বাতাস ধ্বনিত হয়ে সেই কঠিন দেয়ালে আঘাত ্হেনে আবারও ফিরে এসেছিল৷ আমি কান্নাও সেদিন ভুলে গিয়েছিলাম৷ কোথায় আমার অধিকার? আর প্রশাসন ? সংবিধানে নারী নীতি আছে৷ প্রতিবন্ধী নীতি আছে৷ মানবতা, সহযোগিতা, মানবধিকার শব্দগুলি আছে৷ যা আছে কেবল কাগজের পাতায়, কিনত্ম বাসত্মবে নেই৷ তাইত কৃষান কন্যার আত্ম চিত্‍কার কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি ওযালে ধ্বনিত হয়ে নিজের কাছে ফিরে এসেছিল৷ কিন্ত তাদের কানে পৌছাইনি৷ কারন এই মানবতা, মানবধিকার শব্দগুলি আজ প্রশাসন থেকেও বিলুপ্ত হয়ে গেছে৷ তাইত আজ বসে বসে কেবল ভাবছি-কোথায় আমাদের মানবধিকার ? কোথায় আমাদের হিউমান রাইটস ? কেন আমাদের অধিকারগুলি কেবল কাগজে, কলমে ? কেন বাসত্মবে পরিনত হয়না? কেন মানবতার মৃতু হয় ? কেন মানবধিকার কেড়ে নেয়া হয় ? কিভাবে আমরা আমাদের দেশে মানবধিকার প্রতিষ্ঠা করব সেটাই আজ ভাবনার বিষয়৷ তবে আমার শেষ কথা হল- অধিকার কেহ কাউকে হাতে তুলে দেয়না৷ তাকে নিজ চেষ্টা দ্বারা অর্জন করতে হয়৷ আর এই ভাল মন্দ শব্দগুলি আমাদের মাঝে আছে বলেই আমরা তাকে আইনে পরিনত করতে পেরেছি৷ এটা আল্লাহ প্রদত্ত কোন আইন নয়, যা কেবল মানুষের তৈরী৷ তাই আজ মানুষকেই খুজে নিতে হবে, আপগ্রেড করতে হবে নিজেদে ভিতর থেকে মানবতা, মানবধিকার, ন্যায় বিচার, আইন, সহযোগিতা, সহমর্মিতা, স্নেহ , ভালবাসা, শানত্মি, ভ্রাতৃত্ববোধ আর তখনই আমরা খুজেঁ পাব আমাদের সত্যিকার মানবধিকার৷ জয় হোক মানব ও মানবতার৷ ফিরে পাক মানুষ তার ন্যয্য অধিকার৷ -কৃষান কন্যা রাহিলা কৃষি মন্ত্রনালয় (সাময়িক বরখাসত্ম)৷ ৫ নভেম্বর,২০১১ খ্রি:, বিকাল ৫-০৩ মি:৷  

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।