আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লালবাগের কেল্লা - একটি অপূর্ব ঐতিহাসিক নিদর্শন ।

যান্ত্রিক শহরের ল্যাম্পপোস্টের আলোয় ঘুরি কেল্লা বা দুর্গ বলতে বোঝায় শক্ত বেষ্টনী প্রাচীরবেষ্টিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। উদ্দেশ্য আক্রমণকারীর হাত থেকে নিজেদের সুরক্ষা। ফলে দুর্গ স্থাপত্যের সাধারণ বৈশিষ্ট্য সব সময়ই প্রায় এক রূপ হতে দেখা যায়। যেমন আভ্যন্তরীণ বৃত্তাকার বেষ্টনী প্রাচীর বহিঃপ্রাচীর দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়, সাথে প্রয়োজন অনুযায়ী পরিখা দ্বারাও পুনঃবেষ্টিত থাকে। আক্রমণ ও প্রতিরক্ষা উভয় ক্ষেত্রেই দুর্গের সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী অঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হতো সাধারণত দুর্গের প্রবেশফটক ও পার্শ্ব-বুরুজ।

তাই প্রবেশফটক এবং প্রতিরক্ষা প্রাচীর বা বুরুজ হয়ে থাকে প্রহরা কক্ষ সংবলিত। বেষ্টনী প্রাচীরের উপরিভাগে চলাচলের জন্য চওড়া পথের ব্যবস্থা থাকে যাতে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান থেকে আক্রমণকারী শত্রুর আগমন লক্ষ্য করা যায় । এবার লালবাগের কেল্লা নিয়ে কিছু কথা : লালবাগের কেল্লা মোগল আমলের ঐতিহাসিক নিদর্শন । মোগল আমলে বাংলায় নির্মিত ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে ঢাকার বুড়িগঙ্গার তীরে অবস্থিত লালবাগের কেল্লা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পুরাকীর্তি । সতেরো শতকে বাংলায় মোগল শাসকদের শাসন মনভাব, স্থাপত্য বিকাশের ঐতিহাসিক ক্ষেত্র এই লালবাগ কেল্লা।

ইতিহাসের পাতায় লালবাগ কেল্লার রুপকার হিসেবে শায়েস্তা খানের নাম পাওয়া গেলও মুলত শায়েস্তা খান এর নিরমান কাজ শুরু করেন নি । এটি নির্মাণের স্বপ্ন এবং নির্মাণ শুরু হয়েছিল মোগল সম্রাট আওরাঙ্গজেবের তৃতীয় পুত্র মুহাম্মদ আজম শাহের মাধ্যমে । আজম শাহ ১৬৭৮ থেকে ১৬৭৯ সাল পর্যন্ত বাংলার সুবেদার ছিলেন । এই সময় তিনি পিতার নামানুসারে একটি স্থাপনা নির্মাণ শুরু করেন । যার প্রথম নাম আওরাঙ্গবাদ কিল্লা হলেও পরবর্তীতে নাম হয় লালবাগ কেল্লা ।

আজম শাহ কেল্লার কাজ শুরু করলে তিনি জরুরী তলবে ঢাকা ছেড়ে দিল্লি চলে যান। থেমে যায় কেল্লার নির্মাণ কাজ । আজম শাহ নতুন সুবেদার শায়েস্তা খান কে অনুরোধ করেন কেল্লার কাজটি সম্পূর্ণ করতে । কিন্তু শায়েস্তা খান এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে পারেন নি পারিবারিক কারনে । অনেকের মতে বর্তমান এই লালবাগ কিল্লা নির্মাণের সময় শায়েস্তা খান তার কন্যা ইরান দুখত কে হারান ,ইরান দুখত ছিলেন আজম খানের স্ত্রী এবং তিনিই ছিলেন কেল্লার প্রথম রুপকার ।

এর পর শায়েস্তা খানএর বিশাস জাগে স্থানটি অপয়া । অতঃপর ১৬৮৪ সালে এর নির্মাণ বন্ধ করে দেন। কেল্লা নির্মাণ না করলেও তিনি তার কন্যার মাজার কে দর্শনীয় স্থাপনা বানিয়ে তুলেন । মাজারটি নির্মাণে শায়েস্তা খান ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নিয়ে আসেন । বাংলাদেশে এই একটি মাত্র ইমারতে মার্বেল পাথর, কষ্টি পাথর ও বিভিন্ন রং এর ফুল-পাতা সুশোভিত চাকচিক্যময় টালির সাহায্যে অভ্যন্তরীণ নয়টি কক্ষ অলংকৃত করা হয়েছে ।

কক্ষ গুলির ছাদ কষ্টি পাথরে তৈরী । মূল সমাধি সৌধের কেন্দ্রীয় কক্ষের উপরের কৃত্রিম গম্বুজটি তামার পাত দিয়ে আচ্ছাদিত । ২০•২ মিটার বর্গাকৃতি আই সমাধিটি ১৬৮৮ খ্রিষ্টাব্দের পুর্বে নির্মিত । এই ভবনটি মুঘল সুবেদার শায়েস্তা খানের প্রিয় কন্যা পরীবিবির সমাধি বা ইরান দুখতের মাজার নামে পরিচিত । এর দক্ষিণ-পূর্বাংশে সুদৃশ্য ফটক, এবং দক্ষিণ দেয়ালের ছাদের উপরে বাগান রয়েছে।

মাজারটি ছাড়াও কেল্লার অভ্যন্তরে রয়েছে গোসলখানা ,উত্তর পশ্চিমাংসের শাহী মসজিদ , পুকুর বাগান। তখনকার পুরো বাংলার শাসনক্ষমতা মোগল সম্রাটের অধিনস্ত থাকলেও সম্রাট আওরাঙ্গজেব শায়েস্তা খানের মেয়ের সৃতিস্বরূপ লালবাগ কেল্লাটি শায়েস্তাখানকে দান করে দেন । শায়েস্তা খানের পরবর্তী বংশধর রা পরবর্তীতে সরকারের কাছে কেল্লাটি লিজ দিয়ে বার্ষিক ৬০ টাকা করে বেতন পেতেন । পরবর্তীতে পুরানাপল্টন থেকে ১৮৫৩ সালে সেনানিবাস পরিবরতন করে এই কেল্লায় নিয়ে আসা হয় । বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এই কেল্লা এলাকার রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।