আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা, আমরা তোমাদের ভুলবো না...

চাচা চৌধুরীর মগজ কম্পুটারের চেয়েও প্রখর হাত বাড়ালেই সবুজ ছোঁয়া যায়। যেনো সবুজের রাজ্যে হাঁটাচলা আর বিচরণ। যেতে যেতে এক চিলতে প্রাকৃতিক সুগন্ধি বার বার নাকে এসে ঝাপটা দিয়ে যায়। পাতা বা কুঁড়ির ডগায় শীতের শিশির বিন্দু। সকালের কুয়াশায় এক রূপ আর বিকেলে আরেক রূপ।

এই দৃশ্য বিরল। থরে থরে সাজিয়ে থাকা পাতা ও সবুজ গালিচার মধ্যে শুয়ে আছেন বাঙালির গর্ব, স্বাধীনতার গর্ব, লক্ষ-কোটি জনতার প্রাণের বীর বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান। শুক্রবার শ্রেষ্ঠ বীর তৎকালীন এক নম্বর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদস্য ঝিনাইদহসহ বাঙালি জাতির গর্ব বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমানের চল্লিশতম মৃত্যুবার্ষিকী। একাত্তর সালের এই দিনে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ধলই সীমান্তচৌকিতে তিনি শহীদ হন। হামিদুর রহমান ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার খোরদা খালিশপুর গ্রামের অককাশ আলি ও কায়সুননেছার ছেলে।

তিনি একাত্তর সালে কিছু সময়ের জন্য আনসার বাহিনীতে চাকরি করেন এবং একই বছর ২ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন এক নম্বর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিক পদে যোগ দেন। ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে বাংলার আকাশে রক্তিম সূর্য আনলে যারা, আমরা তোমাদের ভুলবো না’ গানের এই চরণ মনে করিয়ে দেয় বাঙালি জাতির মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের। সারাদেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নাম না জানা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবর, গণকবর, শহীদ মিনার ও স্মৃতিস্তম্ভ। তেমনি এক বীরের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের ধলই সীমান্তে নির্মাণ করা হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ। ধলই সীমান্তে হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধটির তিনদিকেই চা গাছ, সারিসারি বৃক্ষের সমাহার।

স্মৃতিসৌধের সম্মুখে ১৯৯২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ১৭ রাইফেল ব্যাটালিয়নের সৌজন্যে একটি বীরশ্রেষ্ঠ সরণিও নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া এখানে সীমান্ত যাত্রী অবকাশ নামে একটি সুদৃশ্য ছাউনিও রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় সারাদেশে ১১টি সেক্টরে ভাগ হয়ে যুদ্ধ হলেও এগুলো ভারতের ত্রিপুরা, আসাম ও পশ্চিমবঙ্গ থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হত। ১১টি সেক্টরের মাঝে ৪ নং সেক্টরের মেজর জেনারেল সিআর দত্তের অধীনে ছিল ত্রিপুরার কমলপুর সাব-সেক্টর। এ সাব-সেক্টরে অধিনায়ক ছিলেন কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগরের মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন (অব: ) সাজ্জাদুর রহমান।

বুধবার ক্যাপ্টেন (অব. ) সাজ্জাদুর রহমানের শমসেরনগরস্থ সিংরাউলি গ্রামের বাড়িতে গেলে সেদিনের যুদ্ধের স্মৃতি বাংলানিউজকে জানান এভাবে: মেজর জেনারেল সিআর দত্তের অধীনে ত্রিপুরার কমলপুর সাব-সেক্টর ছিল। ২৪ অক্টোবর ১৯৭১ সালের ভোররাতে ২৮ অক্টোবর ভোর পর্যন্ত কমলগঞ্জ উপজেলার ধলই সীমান্তে ইপিআর (বর্তমান বিজিবি) ফাঁড়ির সামনে পাক সেনাবাহিনীর সাথে তুমুল যুদ্ধ হয়। তিনি জানান, ধলই সীমান্তে মুক্তিযোদ্ধাদের এই প্লাটুনের অ্যাসল্ট অফিসার ছিলেন মেজর (অব: ) কাইয়ূম চৌধুরী। আর সিপাহী হামিদুর রহমান ছিলেন কাইয়ূম চৌধুরীর রানার। টানা চারদিনেও পাকিস্থানি বাহিনীকে যখন পিছু হটাতে পারছিল না মুক্তিযোদ্ধারা।

তখন মেজরের নির্দেশে সিপাহী হামিদুর রহমান ২৮ অক্টোবর ঘন কুয়াশা ও প্রবল গুলি বর্ষণের মধ্যে প্রায় আধা কিলোমিটার গ্রেনেড হাতে করে ধলই ইপিআর ক্যাম্পে পাকিস্থানি বাংকারের উপর ছুড়ে মারেন। গ্রেনেডের তেজস্ক্রিয়তায় বাংকার উড়ে যাবার পর পাকিস্থানি সেনাদের একটি গুলি পেছন দিক থেকে এসে শরীরে লাগে সিপাহী হামিদুর রহমানের। সেদিন দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করলেও নিজের শরীর রক্ষা করতে পারেননি। কিছু সময়ের মধ্যেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঝরে পড়েন। সহযোগী মুক্তিযোদ্ধারা হামিদুর রহমানের লাশ উদ্ধার করে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ২৫/৩০ কিলোমিটার অভ্যন্তরে ত্রিপুরার আমবাসায় নিয়ে তাকে দাফন করেছিলেন।

ক্যাপ্টেন সাজ্জাদ আক্ষেপ করে বলেন, ‘যে উদ্দেশ্য নিয়ে এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছি; লক্ষ লক্ষ লোক নিহত হয়েছে। সেই সত্যিকারের স্বাধীনতা আজও আমরা পেয়েছি কি না সন্দেহ রয়েছে। ’ বিগত চার দলীয় জোর সরকার আমলে কমলগঞ্জের সাংবাদিকদের লিখিত আবেদনে তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমান ধলই সীমান্তে যেখানে হামিদুর শহীদ হয়েছিলেন সেখানেই ২০০৩ সালের ৩০ এপ্রিল ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন এবং পরবর্তীতে ওখানেই স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়। সুত্র- Felani : Resistance Starts From Here (ফেলানী : প্রতিরোধের শুরু এখানেই)  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।