আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভালবাসা সংক্রান্ত (একটি শ্রুতি কাব্য নাট্য)

(অনেকদিন ধরে নুতন কিছু লেখা হচ্ছে না ব্যস্ততার কারণে। তাই ২০০৭ এর বৈশাখের একটা লেখা পোষ্ট করলাম। আশা করি অসময়ে বৈশাখের লেখা দেখে কেউ বিরক্ত হবেন না) স্থান - কোন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস সময় - কোন এক পহেলা বৈশাখ নেপথ্যেঃ (সংগিত) এসো হে বৈশাখ এসো এসো... রানাঃ প্রতি বারের মত বছর ঘুরে আবারও এলো বৈশাখ.. চারিদিকে যেন প্রাণের মেলা, কি উন্মত্ত সবাই, সাজ পোষাকে বাঙ্গালী ঢংএ এ যেন দারূণ এক রংএর খেলা। লাল, সোনালী, নীল, আকাশী, হলুদ, সবুজ কত রংএর শাড়ি, এই ক্যাম্পাসের মেয়েরা যেন হঠাৎ করে সবাই-ই নারী। লিটনঃ কি রে দোস্ত কেমন আছিস? দু চোখ ভরে যেন মেয়েদের গিলে খাচ্ছিস।

রানাঃ হ্যাঁ, তুই হলে হয়ত তাই-ই করতিস। তবে আমি মানুষ দেখছি, প্রাণে প্রাণে মনের তারের সুর শুনছি। লিটনঃ হ্যাঁ দোস্ত, ঠিক বলছিস, কত্ত মেয়ে..ইস্.. রানাঃ কেন সংগে সাথে ছেলেও তো আছে। লিটনঃ সেটাই তো.. সেটাই তো কথা, মেয়ের সাথে ছেলে, আর ছেলের সাথে মেয়ে, সুন্দর সুন্দর সব মেয়ে। .. আর আমরা? কেবলই একা.. জীবনটা মরুভূমির মত ফাঁকা।

রানাঃ তোর হতে পারে, আমার না। আচ্ছা, প্রেমটাই কি জীবনের শেষ সীমানা? লিটনঃ আঁতলামী করবি না, দোস্ত, আঁতলামী করবি না। কে না জানে, না থাকলে নারী সঙ্গ সবখানেই হয় রস ভঙ্গ। মেয়েরা যদি না থাকত ক্লাশে তবে কি আর স্যারের লেকচার হজম হত এত আয়েশে? মেয়েরা যদি না থাকত ক্যাম্পাসে তবে কি আর বিকাল দুপুর এত রং ছড়াত আকাশে বাতাসে? মেয়েরা হল সঞ্জীবনী সুধা, তাদের ছাড়া তো জীবনটাই বৃথা। রানাঃ তারপরও তো দিব্যি বেঁচে আছিস ওদের ছাড়া, যদিও আফসোসের ঝড় তোকে সারাক্ষণ করে ফিরছে তাড়া।

লিটনঃ ইস.. এই জীবনের কোন মানে আছে বল? তিন তিনটা বছর এই ক্যাম্পাসে.. অথচ একটাও প্রেম হল না, ভাগ্যের এ কেমন তরো ছলনা। এত মেয়ে আশে পাশে রহিমুদ্দি করিমুদ্দি সবার গা ঘেঁষে ঘেঁষে, অথচ আমার কিনা পড়াশুনা শেষে একটা সার্টিফিকেটই হবে সম্বল? এ কেমন কথা বল? রানাঃ সে জন্যেই তো এখানে আসা ছাত্র জীবন তো বই পত্র আর সার্টিফিকেটে ঠাসা। লিটনঃ আর তার পরের জীবন? সেটার কি হবে? এখনই যদি একটা প্রেম করে ফেলতে না পারি তবে কবে আর দেব প্রেমের সাগর পাড়ি? সামনে তো আসছে বেকার জীবন কেউ তো আর ঘুরেও তাকাবে না তখন। চাকরী পেলে তারপর না হয় একটা কিছু হবে কিন্তু তখন কি আর মনের আকশে এত রং থাকবে? না দোস্ত, যা-ই বল তুই, ছাত্র জীবনই হল প্রেম ভালবাসা আবাদের উৎকৃষ্ট ভুঁই। যদিও তা পতিত রয়েছে আমার জীবনে।

আচ্ছা, দোস্ত একটা প্রশ্ন করি সংগোপনে, আমি কি মানুষটা দেখতে খারাপ? রানাঃ দোস্ত, কবে থেকে তোর কথাবার্তায় আসল এমন মেয়েলী ভাব? চেহারা তো জানতাম মেয়েদের মাথা ব্যাথা পড়াশুনা, ফিউচার, চাকরী আর ক্যারিয়ার এসব হল পুরুষালী কথা। লিটনঃ দোস্ত, কি আর বলব দুঃখের কথা, গেল না আমার মনের ব্যাথা। ছাত্র আমি মোটামুটি, বংশ পরিচয়? তাও মোটের উপর। বড়লোক নয় বলে কি, বল, এখন চিপে ধরব বাপের টুঁটি? কিন্তু সব প্রেমিকরাই কি বড় লোক হয়? নাকি ভাল ছাত্র? বিয়ের বাজারে তো অনেকই রয়েছে এমন যেন তেন পাত্র। প্রেমের বাজারে তো আরো বেশী, ডাইল খোর আর গাঁঞ্জাখোরাও তো প্রেম পায়.. সিনেমায় দেখেছি, চরিত্রহীন লম্পট তাদের কপালেও তো সতী সাধ্যি বউ জুটে যায়, তবে আমার কপালে কেন এমন হায় হায়.. সুমিঃ (দূর থেকে) রানা, শুভ নববর্ষ।

রানাঃ হ্যাঁ শুভ নববর্ষ, তবে একা কেন? লিটনঃ আমি যাই। এই সমস্ত মেয়েদের আসে পাশে থাকতে নাই। রানাঃ কেন? সুমি আবার কি দোষ করল? লিটনঃ কি দোষ করল মানে? এই সমস্ত মেয়েদের জন্যেই তো আমাদের এই দশা কার সাথে প্রেম তার? .. কালো ভুষভুষা, দেখলে তো মনে হয় আপাদমস্তক একটা চাষা। কি রুচি? ছি! সুমিঃ হাই। রানাঃ বাংলা মাসেও হাই? সুমিঃ ( হাসি ) আসলে অভ্যাস হয়ে গেছে তাছাড়া এটা একটা সম্বোধন মাত্র এটা নিয়ে এত প্রশ্ন তোলার কি আছে? রানাঃ তা ঠিক।

সুমিঃ আচ্ছা, বলত, লিটন আমায় দেখে এমন ভাগল কেন দিগ্বিদিক? রানাঃ তাতো জানি না। তবে তোকে আমার একটা প্রশ্ন করার ছিল বিষয়টা ভালবাসা সংক্রান্ত। সুমিঃ বলিস কি রে, রাব্বী তোকে ধরে ঠিক প্যাঁদানী দেবে। আমার সাথে প্রেমালাপ? তার চেয়ে লিচু তলায় বসে আছে বন্যা। একা।

তুই বরং তার কাছে যা। মেয়েটা তোকে ভীষণ পছন্দ করে। তোর জন্যে বোধ হয় সে মরতেও পারে। রানাঃ সেটাই তো ঠিক মানতে পারি না, কেউ কেন অযথা আরেক জনের জন্যে মরবে? আমি তো তার জন্যে মরছি না। সুমিঃ মানা করেছে কে? মর না।

খুব ভাল মেয়ে বন্যা। রানাঃ কি জানি, ঠিক বুঝি না। সুমিঃ আচ্ছা, তুই কি নারী বিদ্বেষী? নারী লোভী যে নোস তা জানি। অনেক ছেলে তো মেয়েদের দিকে তাকায় এমন যেন ভোগ্য পণ্য, বড্ড নোংরা তাদের দৃষ্টি। তারা কেন মানতে পারে না, আমরাও তাদের মতই এই প্রকৃতিরই সৃষ্টি।

আমাদেরও মন আছে, আছে ভাললাগা না লাগা আছে কিছু মানবিক অধিকার আর মর্যাদা। রানাঃ ঠিক এই কথাটাই যদি বলি তোর বন্যা বোঝে না আত্ম মর্যাদার সে তো ধারও ধারে না। যা হোক, যা বলছিলাম- ভালবাসা সংক্রান্ত তোরা দুজন প্রথমটায় ঠিক কি ভাবে হয়েছিলি প্রেমাক্রান্ত? সুমিঃ হঠাৎ আমাদের ইতিহাসে আগ্রহ? রানাঃ আসলে আমি ঠিক প্রেম ব্যাপারটাকে বুজতে ব্যগ্র। সুমিঃ প্রেম?! প্রেমকে বুঝতে চাস? তাও প্রেম না করেই? পারবি না। আমিই পারিনি বুঝতে এত দিনে শুধু জানি, আজও এই এতদিন পরেও সে যখন আমার হাত ধরে, আমাকে একটু ছুঁয়ে দেয়- আমি যেন পূর্নাঙ্গ হয়ে যাই, আশ্রয় পাই যেন সুশীতল কোন বট বৃক্ষের নীচে যেখানে অল্পনা আঁকে রৌদ্দের কড়া দীপালী পল্লবীত সবুজ পত্র পুঞ্জ।

ঝরে যাওয়া পাতা যেন প্রাণ ফিরে পায়, হৃদয়ের তারে তারে বেজে ওঠে সারগাম, মনে হয় এই তো জীবন এই তো বেঁচে থাকা। ব্যাস এই-ই আমার কাছে ভালবাসা। রানাঃ হয়ত এই-ই অনেক। জানি না। আমি যুক্তিবাদী।

যা বুঝি না, তা করি না। সুমিঃ তবে প্রেম তোর জন্যে নয়। প্রেম কখনও কোন যুক্তি মানে না। রাব্বীঃ (দূর থেকে) সুমি এসো, পান্তা খাবে। হাই রানা।

পান্তা খাবি না? রানাঃ অনেক খেয়েছি। ছোট্ট বেলায়, মায়ের হাতে। সুমিঃ সে তো বাসী ভাতের পান্তা। আজকের দিনে তো সবাই টাটকা ভাতের পান্তাতে মাতে। রানাঃ আমিও হয়ত মাতব পান্তা ভাতে তোদের সবার সাথে।

তবে তার আগে ভালবাসা সংক্রান্ত যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর চাই আমার অভ্রান্ত। এবারের এই বৈশাখ আমার, ভালবাসার নামে উৎসর্গ করলাম। সুমিঃ ঠিক আছে তবে তুই তোর গবেষনা কর, আমি চললাম। (মিউজিক) রানাঃ লিচু গাছের দিকে যাওয়া যাবে না। ওদিকে বন্যার প্রকোপ।

তাহলে কোনদিকে যাওয়া যায়? উম উম .. বন্যাঃ কেমন আছিস রানা? আমাকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাবি না? রানাঃ তুই এখানে? আমি তো শুনলাম তুই লিচু পাড়ছিস? বন্যাঃ এই সময়ে লিচু? ইয়ার্কি করছিস? বাদ দে চল পান্তা খাবি, রানাঃ পান্তা? মানে পানির মাঝে ভাতের নাকানী চুবানী? বন্যাঃ আমি জানি তুই আমাকে সহ্য করিস না। .. তারপরও শুধু আজকের দিনটা, প্লিস, তুই আমাকে কিছু বলিস না। শুধু আজকের সকালটা আমাকে দে তারপর না হয় আর কখনও কোন কথা নয় এমনকি আমার মনের মাঝে তোর সাথে যে নিরন্তর কথা হয় তারও হবে অন্ত। শুধু আজকের সারা সকালটা, ঠিক আছে না হয় মাত্র একটি ঘন্টা শুধু কয়েকটি মুহূর্ত একান্ত আমার হয়ে থাক। কথা দিচ্ছি, আমি তাকে সৃত্মির একেবারে অতলে অনেক গভীরে দাফন করে রাখব চিরটাকাল কেউ কখনও দেখবে না আর সেই সৃত্মির সাদা কংকাল এমন কি আমি নিজের কাছেও লুকিয়ে রাখব সংগোপনে তোর কাছে পাওয়া এই একটি ঘন্টার আবেশ।

রানাঃ আমি কেন? বন্যাঃ জানি না, হয়ত আমি যেমনটা চাই তুই ঠিক তাই। রানাঃ কখনও কি ভেবেছিস আমারও কিছু চাওয়া থাকতে পারে আর তোর বসত বাড়ি হয়ত আমার চাওয়া না চাওয়ার নদীর অপর ধারে। বন্যাঃ তাহলে বল তুই কি চাস? আমি তাই হব। তোর চাওয়ার ভিটায় বসত গড়ব আমি পরব তুই দেখে নিস। রানাঃ ওফ্, তুই কেন বুঝিস না? এভাবে কেউ কখনও নিজেকে বদলাতে পারে না।

আর যদি তুই সত্যিই বদলাস তবে সে তো হবে কেবলই তোর অস্তিত্বের মরা লাশ লাশ নিয়ে আমি কি করব? বন্যাঃ (অসহায় হাসি) তোর কখনও যুক্তির অভাব হয় না। সত্যি তো তোর জন্যে আমি অযথাই কেন মরব। শুভ নববর্ষ রানা। শুভ নববর্ষ। রানাঃ মেয়েটা কষ্ট পেয়ে গেল আমার কাছে কিন্তু আমার কি বা করার আছে? যাক গে আমার বিষয় ভালবাসা সংক্রান্ত।

উম.. হ্যাঁ ওখানে জোর আড্ডা চলছে তবে ওদেরকেই করা যাক আক্রান্ত। (মিউজিক) সুমনঃ না না বন্ধু তুই ভুল করছিস আজ প্রেম দিবস নয় পহেলা বৈশাখ তমালঃ তাতে কিছু যায় আসে না। ভালবাসা কোন দিন তারিখের ধার ধারে না তাছাড়া পহেলা বৈশাখ কি পহেলা বসন্ত সবই আজকাল প্রেমাসক্ত। চারিদিকে তাকিয়ে দেখ সবারই চোখে মুখে দেখবি ভালবাসার উল্লেখ। আসলে এসবই প্রকৃতি প্রদত্ত জৈবিক ক্রিয়া প্রক্রিয়ায় আমরা সবাই প্রেমে উন্মত্ত।

রানাঃ কিসের আলাপ চলছে? বাবুঃ আরে রানা এসেছে, রানা এসেছে শুভ নববর্ষ। শুনলাম বন্যার সাথে তোর নাকি চলছে দারুণ সংঘর্ষ। রানাঃ ওসব কিছু না। বাবুঃ কেন রে ভাই এত অনীহা, নগদ যা কিছু পাস হাতিয়ে নে না। রানাঃ সবাই এক রকম হয় না।

তারপর তুই কি যেন বলছিলি? আলোচ্য বোধ হয় ছিল প্রেমের ব্যঞ্জনা। তমালঃ ব্যঞ্জনা নয়, ব্যাখ্যা। বলতে পারিস প্রেমের সমীক্ষা। আমি কিছু থিওরী গড়েছি, প্রেম ভালবাসা ব্যপারটাকে একটা ছাঁচে ফেলেছি। সুমনঃ ধ্যত্তেরিকা প্রেমের নিকুচি, প্রেম ব্যাপারটাই সর্বগ্রাসী।

রানাঃ তাহলে একটা বিতর্ক হয়ে যাক, ভালবাসা বিজ্ঞান নাকি চোরাবালীর পাক। তমালঃ ভালবাসা অবশ্যই হিসেব নিকেশ। তবে তা আবেগ সংক্রান্ত, বলতে পারিস আবেগীয় অংক। তাকেই ভালবাসবি সে তোকে ভালবাসে, এবং তাকেই ভালবাসবি যাকে তোর ভালবাসতে মন চাইবে। রানাঃ মানে, চাওয়াটা দুদিক থেকেই হতে হবে।

একতরফা কিছু নয়, নয়ত সংঘর্ষ বাঁধাটা সঙ্গত। সুমনঃ জানব কি করে কে আমাকে পছন্দ করে? এক্ষেত্রে তোর দর্শন কি বলে? বাবুঃ জানার কি দরকার? প্রেম ভালবাসা ব্যাপারটাই তো দুদিনকার। আজ আছে, কাল নাই। তাই জানাজানির পরোয়াও নাই। সুমনঃ সবাই তোর মত মৌসুমী প্রেমিক নয় যে মৌসুম পেরুলেই প্রেমের সমাপ্তি হয়।

বাবুঃ ভাইরে মন বড় যার, সেই তো প্রেমে পড়ে বার বার। রানাঃ কয় বার? বাবুঃ মানে? রানাঃ মানে কত বড় মনে কয় দফা প্রেম? হিসেব আছে কোন তার? তমালঃ হা হা হা আসলে বড় মনের জন্যে চাই বড় মাপের প্রেম, তা সে একটাই হোক ক্ষতি নেই। যা বলছিলাম, পছন্দ ব্যাপারটা প্রকাশে মনে রাখতে নেই কোন দ্বিধা, সোজা সোজি বল, ভাললাগার কথা। তবে প্রথম থেকেই আশায় বুক বাঁধাটা বৃথা। কারণ তারও তো থাকতে পারে অন্য কোন ভাললাগা।

এক্ষেত্রে অনেকেই অবশ্য নিজেকে ভাবে অভাগা। বাবুঃ আমি ভাবি না। আসলে আমার কাছে অন্যরকম প্রেমের সংগা। কত আসবে কত যাবে, কি এমন ভাবনা। সুমনঃ আমি একবার একজনকে বলেছিলাম, আমার বুকের মাঝে একটি সুর আছে।

যদি শুনতে চাও তো সময় করে শোনাবো একদিন তোমায়। সে সুরে হয়ত রাগ রাগিনীর পল্লবিত কোন মূর্ছনা নেই, তবে সে সুর কেবলই তোমার জন্যে গাঁধা। যদি ভাল লাগে, তবে উদাত্ত কন্ঠে কন্ঠ মিলিও একান্ত আপন নিরালা কোন বাসনায়। নয়ত ফিরিয়ে দিও তোমার স্পষ্টতম কোন উচ্চারণে, প্রতিবাদে আমি টুঁ শব্দটিও করব না। তমালঃ চমৎকার, নিজের আত্মসম্মান বজায় রেখে এর চেয়ে উন্নত প্রকাশ আমি আর শুনিনি।

রানাঃ তারপর, কি বলল সেই মেয়ে তোর অনুভুতির প্রকাশ দেখে? সুমনঃ কিচ্ছু বলেনি এখনও। তবে এরপর থেকে রাস্তা, ঘাটে, ক্লাসে, ক্যাম্পাসে, আমাকে দেখেই বান্ধবীদের নিয়ে দল বেঁধে হাসে। বাবুঃ হা হা হা এজন্যেই তো বলি মেয়েদের বিশ্বাস নাই। তাই তো আমি আমার মতন, ইচ্ছে মত নড়ন চড়ন। সময় পেলে প্রেম করে নেই, তারপরে ব্যাস উড়াল দেই।

তুইও দোস্ত এই দলে আয়, কমে যাবে জীবনের ক্ষয়। সুমনঃ না দোস্ত, জীবনে আর প্রেম নয়। ন্যাড়া বেল তলাতে একবারই যায়। রাব্বীঃ কিসের বেল, কিসের তলা? কি নিয়ে হচ্ছে ছলাকলা? রানাঃ রাব্বী, আয় বস। সুমি কোথায়? রাব্বীঃ সে তো এখনও পান্তা খায়।

তমালঃ কথা হচ্ছিল এক জীবনে কয়টি প্রেম করা যায়? রাব্বীঃ (গান) তুমি প্রথম বলি না এমন শেষ হতে পার কি? তাই নিয়েছি শেষ বিকেলে হুম.. নিঃস্ব হবার ঝুঁকি। শেষ বিকেলের একরোখা জেদ আশার ঘোরে বাঁচি। বাবুঃ তোরা ভাই যত যাই বল, প্রেমের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রেম হচ্ছে পরকীয়া প্রেম। রানাঃ কিভাবে? বাবুঃ কি ভাবে? মন চাইলে মন পাবে, দেহ চাইলে দেহ। সবই হবে অগোচরে জানবে না তো কেহ।

শুধু কি তাই? বোনাস হিসাবে আরো পাবি হাত খরচের টাকা। তার স্বামী রোজগার করবে আর তুই করবি তার পকেট ফাঁকা। উঁহু, পকেট মারিং নয়। তোর বিবাহিত প্রেমিকা তোকে ভালবেসে নজরানা দেবে। তোরা তো শালা প্রেমিকার পিছনে খরচ করেই শেষ, পরকীয়া প্রেমের পৃথিবীতে খরচের নেই কোন রেশ।

তবে প্রতিটি পরকীয়া প্রেমের নির্দিষ্ট একটি মেয়াদ থাকে। মেয়াদ উত্তীর্ণ পরকীয় প্রেম বড়ই ভয়ংকর। হয় স্বামীপ্রবর তোকে গুন্ডা দিয়ে পেটাবে, নয়ত প্রেমিকা তোর বিবাহের জন্যে উন্মাদিনী হবে। তোরাই বল বিবাহিত একটা মেয়েকে কি বিয়ে করা যায়? রাব্বীঃ পরকীয়াকে আর যাই বল প্রেম বলিস না। প্রেমের একটা আভিজাত্য আছে সেটাকে খর্ব করিস না।

প্রেম হল একটা অনুভুতি যা একই সাথে দুটি মনে খেলা করে, প্রেম হল একটা বিশ্বাস যা দুজনেই একান্ত ভাবে রক্ষা করে, প্রেম হল গ্রীষ্মের দাবদাহে শীতল ছায়া, প্রেম হল একটি অচীন মায়া, যাকে বোঝা যায় কিন্তু ধরার উপায় নাই। এ যেন এক আজব খেলা, সব খানে আছে, আবার কোথাও নাই। দুচোখ যখন অভ্যস্ত হয়, দুকান যখন চিনতে শেখে, তখনই না প্রেমের প্রকাশ প্রেমিক জনের মাঝে। যারা ক্ষণে ক্ষণে মানুষ পাল্টায় তারা কি আর প্রেম বোঝে? রানাঃ তুই তবে বলছিস, প্রেম একটি অভ্যাস যা ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে। সুমনঃ প্রেম হচ্ছে ভাগ্য, যা ভাগ্যবানদেরই জোটে।

তমালঃ ঠিক তাই। তবে সেই ভাগ্যকে গড়তে আমরা ভয় পাই। যেমন প্রেমের যোগ্য তুমি, তেমন প্রেমই তো পাবে। আমরা শুধু চাঁদের পানে হাত বাড়াই, ব্যর্থ প্রেমের সুর ছড়াই। নিজেকে নিয়ে এই যে কেবল আলগা বড়াই, প্রেমের কাছে তার এক কানা কড়িও মূল্য নাই।

সব কিছু ঠিক হিসেব করা। প্রেম হাটে সোনার দামে সোনা বিকোয়, আর লোহার দামে লোহা। তাই নিজের ওজন যাচাই কর, তার পরেতে প্রেমে পড়। বাবুঃ আমি যাই। ইলিশ ভাজা দিয়ে পান্তা খাই।

তোদের এখানে বাতাস বড় ভারী, সুতরাং আমি কেটে পড়ি। রানাঃ আমিও যাব। শুভ নববর্ষ। (স্বগোক্তি) এবার তবে কোন আড্ডায়? উম ..ছেলেদের তো হল, দেখা যাক মেয়েদের আড্ডায় কি পাওয়া যায়? (মিউজিক) কোরাসঃ (মেয়ে কন্ঠ) ভালবাসি কিনা বাসি বন্ধু- বাসি কি না বাসি বন্ধু, টেরাই কর আমারে, কত্ত ভালবাসি তোমারে। কুত্তা যেমন ভালবাসে- কুত্তা যেমন ভালবাসে ডাস্টবিনেরই ময়লা রে, তেমনি ভালবাসি তোমারে।

রানাঃ কি ব্যাপার? হঠাৎ ভালবাসার জয় গান? তাও আবার এভাবে? সীমাঃ কেন খারাপটা কি দেখলি? ফুল পাখি আর জোসনা দেখেই তো তোরা মরলি। ভেবে দেখ কুকুরের সাথে ডাস্টবিনের যে সখ্যতা, তা কি আর কারো মাঝে যায় দেখা? সুমিঃ রানা এখানে নয়, তুই বরং বন্যার পাশে বস। বেচারাকে তুই কি বলেছিস? তোর মনে কি একদম নেই রসকষ? বন্যাঃ আমি ঠিক আছি, কাউকে আমার পাশে বসতে হবে না। সীমাঃ তবে তুই আমার পাশে বস। ছেলেরা যখন মেয়েদের পাশে বসতে চায়, তখন তাদের বাঁধা দেয়াটা উচিৎ নয়।

এতে তাদের মন ভেঙ্গে যায়, আর মন ভাঙ্গা মানেই মসজিদ ভাঙ্গা। এ বড়ই পাপের কথা। রানাঃ বুঝলাম, ছেলেদের তুই ভালই চিনিস। সীমাঃ চিনি বললে ভুল হবে, বলতে পারিস বিশেষজ্ঞ। আমাদের জন্যে তোদের মাঝে তো ঘটে যায় দক্ষ যজ্ঞ।

রানাঃ মনে হয় ব্যাপারটাকে তুই উপভোগ করিস? সীমাঃ করব না? বিয়ের পরে তো আমাদের আর তোরা দামও দিবি না। দাসী বাঁদী করে রাখবি ঘরে। এই সময়টাই যত মজা, দিবারাত্রী তোদের তোষামোদ পাই গাদা গাদা। ভাবতে ভালই লাগে। জোড়ায় জোড়ায় পুরুষ চক্ষু আমাদের জন্যে নিদ্রাবিহীন রাত্রী জাগে।

সুমিঃ তুই ভাল হবি না। রাব্বীটা যে কোথায় গেল, দেখেছিস নাকি রানা? রানাঃ তোর রাব্বী তো ঐ ওধারে, আড্ডা মারে। সুমিঃ আমি যাই তবে। রানাঃ হ্যাঁ কি যেন বলছিলি, পুরুষ মানুষ গাদা গাদা.. সীমাঃ বলছিলাম একদিক দিয়ে ব্যাপারটা ভালই আমরাও সঠিক মানুষটা বেছে নেবার সুযোগ পাই। জীবন তো একটাই, আর তাতে সুখী হওয়া চাই-ই চাই।

না রে, আমিও উঠি, তোরা বস, গল্প কর। বন্যাঃ সরি, আমি ওদের কাউকে আমাদের একা রেখে যেতে বলিনি। যাহোক, আমিও যাচ্ছি। রানাঃ যাবি কেন, বস না? বন্যাঃ দয়া দেখাচ্ছিস? রানাঃ ঠিক তা না। ভাবছি .. ওরা বলল ভালবাসা নাকি ভাগ্য বলে জোটে।

আরো বলল ভালবাসাটা আস্তে ধীরে গড়ে ওঠে। আমরা আসলে কেউ জানি না প্রেমের হাটে কার কি ওজন? কোন ঘাটে কার ভিড়বে তরী, কারা হবে কাদের সুজন। প্রেম ব্যাপারটা তারাই বোঝে, যারা প্রেমের সংগে আছে। তাই ভাবছিলাম, আমি এখনও না বাসলেও তুই তো বাসিস.. ভুল করবি আমায় যদি ভালবাসার শত্রু ভাবিস। তবে, বুকের মাঝে প্রেমটুকু তো আসতে হবে, তার জন্যে কি তুই আমাকে কয়েক দিন বা বছর, মাসের সময় দিবি? তুই কি আজ সকালের বৈশাখীতে আমার সাথে পান্তা খাবি? বন্যাঃ (হাসি+আবেগ) হ্যাঁ খাব।

(তারা দুজনে কথা বলতে থাকবে। মিউজিক বা গান ওভারল্যাপ হবে) সমাপ্ত রচনাকালঃ ৯-১২/৪/২০০৭ প্রথম মঞ্চায়নঃ ১৪/৪/২০০৭ প্রথম মঞ্চায়নের স্থানঃ শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় মুক্ত মঞ্চ প্রথম মঞ্চায়নের কলাকুশলীঃ অভিনয়- রানাঃ এম এম উজ্জ্বল আহমেদ লিটন লিটনঃ সাইফুল ইসলাম জনি সুমিঃ সৈয়দা সাফিনা-ই-সান্জিদা সুমনা রাব্বীঃ আসিফ ইকবাল তমাল বন্যাঃ লুৎফুন্নাহার লায়লা সুমনঃ মোঃ আনিস তমালঃ মোঃ আশরাফুল ইসলাম নয়ন বাবুঃ ইহতিশাম আহমদ টিংকু সীমাঃ তাকিয়া তানজিনা ২য় কন্ঠঃ লুবনা ও নির্মল চন্দ্র দে সংগীত- গীটারঃ রাসেল প্রথম পরিচালনাঃ ইহতিশাম আহমদ টিংকু প্রথম প্রযোজনাঃ অতন্দ্রিলা (শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.