আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পরকীয়ায় অনন্তের উত্থানের চমকপ্রদ কাহিনী বর্ষার বিরুদ্ধে অপকর্মের অভিযোগ, লাক্স সুন্দরী রাহার মৃত্যু নিয়ে রহস্য

তারকা দম্পতি অনন্ত বর্ষার জিডি তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ বেশ চমকপ্রদ তথ্য পেয়েছে। এতে প্রেম প্রণয়ের রোমাঞ্চকর কাহিনীর পাশাপাশি অনন্তর জীবনে একাধিক নারী কেলেঙ্কারির ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। এ কেলেঙ্কারি যখন ঢাকাই ফিল্মের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত ঠিক তখন রহস্যজনক মৃত্যু ঘটে অনন্তর আরেক বান্ধবী লাক্স সুন্দরী মডেল রাহার। নিজ বাসায় বেডরুম থেকে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাঁকে গোপনে তাড়াহুড়ো করে দাফনও করা হয়।

এতে মৃত্যুরহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে। রাহার মৃত্যুর সঙ্গে এ ঘটনার কোন যোগসূত্র রয়েছে কিনা সেটাও পুলিশ তদন্ত করছে। এদিকে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ দুটো জিডির তদন্ত করতে গিয়ে অনন্ত বর্ষার প্রেম প্রণয়, গোপন বিয়ে এবং একে অপরকে ফাঁকি দিয়ে অনৈতিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হওয়ার মতো অবিশ্বাস্য কাহিনী জানতে পারে। একজন দারোগা জানান, ঘটনা থানা পর্যন্ত গড়ানোয় এখন সব ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। ফিল্মিপাড়ায় নায়ক-নায়িকারা ছবি নির্মাণের আড়ালে কি ধরনের অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে পুলিশের তদন্তে তাও উঠে আসছে।

মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ জানায়, অনন্ত ও বর্ষা একে অপরের বিরুদ্ধে থানায় জিডি করার পর এখন উভয়েই অনুতপ্ত। তবে বর্ষা আগের মতোই জেদি মনোভাব নিয়ে আছেন। তিনি চান জিডির পূর্ণ তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হোক। আর অনন্ত চেষ্টা করছেন এটা মীমাংসা করে সব কিছু ধামাচাপা দিতে। এ ঘটনার জের ধরে আর কোন গোপন তথ্য ফাঁস না হওয়ার ব্যাপারে সতর্ক তিনি।

আলোচিত জিডিতে উভয়েই একে অপরের বিরুদ্ধে চারিত্রিক স্খলনের অভিযোগসহ দাম্পত্য জীবনের অশান্তির অভিযোগ করেছেন। কার অভিযোগ কতটা সত্য সেটা বের করাই এখন তদন্তের মূল বিষয়। এসআই কামরুজ্জামান ইতোমধ্যে তাদের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে চমকপ্রদ তথ্য পেয়েছেন বলে জানা যায়। পুলিশ জানায়, বর্ষার সঙ্গে প্রেম পরিণয় ঝগড়া বিবাদ যতটা রোমান্টিক- তার চেয়েও বিস্ময়কর হচ্ছে একটি সাধারণ পরিবারে জন্ম নেয়া অনন্তের উত্থান কাহিনী। আলাদীনের চেরাগের মতোই হঠাৎ বিপুল বিত্ত বৈভবের অধিকারী হওয়ার ফলেই এতসব অবিশ্বাস্য কা- কীর্র্তির জন্ম দিচ্ছেন অনন্ত।

নব্বই দশকের শুরুতেও তিনি ছিলেন একটি গার্মেন্টসের আয়রনম্যান। তারপর আকস্মিকভাবে তিনি গার্মেন্টসের মালিক বনে যান। এখন তিনি এজেডআই এ্যাপারেলস গ্রুপের মালিক। যেটা দেশের শীর্ষস্থানীয় পোশাক শিল্পের অন্যতম। তার প্রতিষ্ঠানেই তৈরি করা হচ্ছে বিশ্বের জনপ্রিয় ব্র্যান্ড পোলোর বিভিন্ন ফ্যাশন।

দ্রুততম সময়ে এতটা সফলতার ব্যাপারেও পুলিশ জানতে পারে অনন্ত যে গার্মেন্টসে এক সময় চাকরি করতেন সেটার মালিকের স্ত্রীকেই বশীভূত করে বিয়ে করতে সক্ষম হন। পরে তার পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি রাতারাতি ভাগ্য গড়ে নেন। সেটাই ছিল অনন্তের প্রথম ঘটনা। সে সংসারের একটি সোমত্ত কন্যাও রয়েছে। জীবনে এত কিছু পাওয়ার পরও তিনি সন্তুষ্ট হতে পারেননি।

তাঁর গার্লফ্রেন্ডেরও অভাব হয় না। এরই ধারাবাহিকতায় তাঁর জীবনে আসে বর্ষার আগমন। সিরাজগঞ্জের এক সাধারণ ঘরের উচ্চাভিলাষী, শ্বেত-শুভ্র দীর্ঘাঙ্গী তনুলতার মতোই দেখতে বর্ষা নায়িকা হওয়ার মানসে নিজেকে সঁপে দেয় অনন্তের কাছেই। মেধা আর প্রতিভার যোগ্যতার অভাব তাতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। শুধু টাকার জোরেই অনন্ত একটি শর্টফিল্ম তৈরি করার উদ্যোগ নেন।

সেটাও বছর চারেক আগের ঘটনা। আমেরিকা প্রবাসী নির্মাতা ইফতেখারের পরিচালনায় খোঁজ দ্য চার্জ ছবিতে অনন্ত নিজেই নায়ক হন। সঙ্গে নায়িকা জুটিয়ে নেন বর্ষা ও রাহাকে। দুজনেই রূপ-লাবণ্যে সমসুন্দরী। এ ছবিটি হিট না হলেও মোটামুটি সফলতা পায়।

তবে চল্লিশোর্ধ খাটো দেহের এ নায়কের বিপরীতে ঢাকার কোন প্রতিষ্ঠিত নায়িকা অভিনয়ে রাজি না হওয়ায় তিনি কিছুটা অন্তর্জ্বালায় ভোগেন। যে কারণে বর্ষা ও রাহার মতো নবাগতা ছাড়া তাঁর পক্ষে কোন প্রতিষ্ঠিত নায়িকা জোটানো সম্ভব হয়নি। ঢাকাইয়া ফিল্মের প্রতিষ্ঠিত এক চলচ্চিত্র বিশ্লেষক বলেন, অনন্ত নিজে খাটো হওয়ায় তার বড় নেশা ছিল দীর্ঘাঙ্গী নারী। সেটা নায়িকাই হোক কিংবা বান্ধবীই হোক। জীবনের প্রথম ছবিতে নেয়া দুজন নায়িকার সঙ্গেই একই সময়ে একই আঙ্গিকে প্রেম প্রণয় ও অভিসার করার এত পটু নায়কের আবির্ভাব আগে কখনও দেখা যায়নি।

তবে এক্ষেত্রে রাহার তুলনায় বর্ষা কিছুটা চালাক-চতুর হওয়ায় তাঁকে আর ঢিল মেরে ছুড়ে ফেলার সুযোগ পাননি অনন্ত। শেষপর্যন্ত তাঁকেই বিয়ে করতে হয়েছে। বিয়ের পর এ দম্পতি মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের একটি ফ্ল্যাটে সংসার শুরু করেন। এ বাসা থেকেই তিনি হেমায়েতপুরে নিজ ব্যবসায়িক কাজকর্ম তদারকি করতেন। মাঝে মধ্যে প্রথম স্ত্রীর ধানম-ির বাসাতেও তাঁকে কাটাতে হয়।

অনন্ত এরপর আরও কয়েকটা ছবি নির্মাণ করেন যেখানে নায়িকা হিসেবে থাকেন বর্ষা। এভাবেই আলোচিত হয়ে ওঠেন এই তারকা দম্পতি। মিডিয়াতেও ছিল তাদের সরব পদচারণা। এ ব্যাপারে একজন পরিচালক বলেন, খ্যাতি, যশ, বিত্ত যখন হাতের মুয়ার মতো ধরা দেয়, তখন মানুষের বিবেক অন্ধ হয়ে আসে। অনন্তের জীবনেও তাই ঘটছে।

বর্ষাকে নিয়ে তিনি গত সপ্তাহে লন্ডনে যান তাঁর নির্মিত ‘মোস্ট ওয়েলকাম’ ছবির প্রিমিয়াম শো দেখতে। ছবিটি এখনও লন্ডনে চলছে। দেশে ফেরার পথে অনন্ত প্রায় কয়েক লাখ টাকার কেনাকাটা করেন। বর্ষা তখন তাঁকে প্রশ্ন করেন, এসব কার জন্য। অনন্ত জানান প্রথম স্ত্রীর জন্য।

মূলত তখন থেকেই বর্ষা তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। ঢাকায় ফেরার পর এর জের ধরে এই তারকা দম্পতির কলহ এতটাই মারাত্মক আকার ধারণ করে যে তা থানা পর্যন্ত গড়ায়। বর্ষা জিডিতে অভিযোগ করেন, তাঁকে রেখেও অনন্ত পরনারীতে আসক্ত। প্রতিবাদ করায় তাঁর ওপর নেমে আসে অত্যাচারের খড়গ। একইভাবে অনন্তও জিডিতে অভিযোগ করেন, এত সুখে থাকা সত্ত্বেও বর্ষা অনৈতিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে।

যখন-তখন বাইরে যাচ্ছে। আপত্তিকর কর্মে লিপ্ত হচ্ছে। এসব অভিযোগের ব্যাপারে মোহাম্মদ থানার ওসি আজিজুল জনকণ্ঠকে বলেন, তদন্ত চলছে। এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আরও সময় লাগবে।

পুলিশ আরও জানায়, এই দম্পতির জীবনে মারামারি নতুন কিছু নয়। এর আগেও অনন্ত একবার টিম নিয়ে বিদেশ যাচ্ছিলেন। খবর পেয়ে বিমানবন্দরে গিয়ে তাঁর সঙ্গে মারপিটে জড়িয়ে পড়েন বর্ষা। এদিকে শুক্রবার মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন সিটির নিজ বাসায় রহস্যজনক মৃত্যু ঘটে মডেল তারকা রাহার। এটা আত্মহত্যা নাকি হত্যাকা- সেটা এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।

পুলিশ জানায়, হঠাৎ মৃত্যুর ঘটনা মিডিয়ার কেউ না জানার আগেই শনিবার দুপুরে অনেকটা চুপিসারে রাহাকে আজিমপুর কবরস্থানে কবর দেয়া হয়। রাহার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনটি শনিবার সন্ধ্যা থেকেই বন্ধ পাওয়া গেছে। নাটকের অভিনয়ের পাশাপাশি রাহা বেশ কয়েকটি পণ্য মডেল হয়ে আলোচিত হন। এছাড়া র‌্যাম্প মডেল হিসেবে তিনি বেশ জনপ্রিয়। রাহার উল্লেখযোগ্য ধারাবাহিক নাটকগুলো: জল তরঙ্গ, স্বপ্নবাজার, পুতুল খেলা, পাটিগণিত, উচ্চতর শারীরিক বিজ্ঞান, লাকি থারটিন, দিন বদলের পালা, কামিং সুন এবং এক খ-ের নাটকগুলোর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো- এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, জিম্মি, যত চিনি তত মিষ্টি, কাজী অফিস, ফোরটি টু মিনিটস, মেঘ ডেকেছে বেলায় বেলায়, টাইম বোম, মাকড়সা ও ইউনিভার্সিটি ইত্যাদি।

এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে বাবা-মার বড় সন্তান রাহা লালমাটিয়া কলেজের ছাত্রী। তিনি রাজধানীর আদাবর থানাধীন জাপান গার্ডেন সিটিতে পরিবারের সঙ্গেই থাকতেন। রাহার বাবার ভাষ্য ॥ এদিকে রাহার বাবা শেখ মোহাম্মদ আলী আজগর জানান, রাহা কয়েকমাস ধরেই মাইগ্রেন ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছিল। তাকে নানা সময়ে নানা ডাক্তার দেখানো হয়েছে। ডাক্তার তাকে মাইগ্রেনের কারণে ওষুধপথ্য ও চশমা দিয়েছিল।

অন্যসব দিনের মতো স্বাভাবিকভাবেই রাতে ঘুমাতে গিয়েছিল রাহা। কিন্তু ঘুম না আসার কারণে প্রায়ই রাতে ঘুমের ওষুধ খেত। সেদিন রাতেও ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল। কিন্তু কখন, কীভাবে ঘুমের মধ্যে মারা গেল আমরা বুঝতে পারিনি। তিনি আরও বলেন, শনিবার সকালে রাহাকে ধানম-ির একটি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার পর ডাক্তার তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এরপর তাঁকে আমার ভাগ্নিজামাই কমিশনার সেন্টু, সেলিম, মোজাম্মেলসহ অনেকে গিয়ে আজিমপুর কবরস্থানে তাঁকে দাফন করি। জানতে চাইলে ওসি বলেন, মোহাম্মদপুর তাজমহল রোডের ২৯/১৫ নম্বর বাসার ঠিকানা পাওয়া যায়। কিন্তু সেখানে রাহা নামে কেউ থাকে না বলে পুলিশ খবর পায়। পরে রাহার বাসায় গিয়ে জানা যায়, মোহাম্মদপুর চানমিয়া হাউজিং সোসাইটির ২ নম্বর রোডের ৪১ নম্বর বাসা। রাহার হঠাৎ এই মৃত্যু নিয়ে অনেকের মধ্যে রয়েছে নানা সংশয়।

রাহার সঙ্গে অনেকের সম্পর্ক ছিল বলে জানা গেছে। কিন্তু সর্বশেষ সাকিব নামে একজনের সঙ্গে তাঁর ফেসবুকে ছবিও দেখা গেছে। মিডিয়ার অনেকেই রাহার বয়ফ্রেন্ড হিসেবে সাকিবকে চিনত। কিন্তু মৃত্যুর সংবাদ জানার পর থেকে সাকিবের মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। মোহাম্মদপুর থানার ওসি আজিজুল হক আরও জানান, এ ব্যাপারে থানায় কোন মামলা হয়নি।

আমরা তদন্ত করছি সুত্রঃ দৈনিক জনকণ্ঠ  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।