আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভাবিয়া খাইয়ো বাঁশ, খাইয়া কাইন্দো না ।

কি বলব নৌকা ও ট্রাক ভাড়া থেকে বাংলাদেশের অনেক আয় হবে : ভারতীয় হাইকমিশনার পরীক্ষামূলক নয়, স্থায়ী করিডোর পেল ভারত : বিশিষ্টজনরা বললেন গণআন্দোলনের বিকল্প নেই বিদায়ী ভারতীয় হাইকমিশনার রাজিত মিত্র বলেছেন, নৌকো এবং ট্রাক ভাড়া থেকে বাংলাদেশের অনেক আয় হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাত্ শেষে গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে তিনি এ মন্তব্য করেন। কোনো ধরনের ফি ছাড়াই গতকাল থেকে ট্রানজিট চালুর ব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, ১৯৭২ সালের নৌ প্রটোকল অনুযায়ী এই ট্রানজিট হচ্ছে। প্রটোকল অনুযায়ী যে চার্জ দেয়ার কথা, তা আমরা দিচ্ছি। ১৯৭২ সালের প্রটোকল বাংলাদেশের সব সরকার অনুমোদন করেছে।

তিনি বলেন, ভারতীয় পণ্য পরিবহনে নৌকার ৯০ ভাগ এবং ট্রাকের শতভাগই বাংলাদেশী। নৌকো এবং ট্রাক ভাড়া থেকে আপনাদের অনেক আয় হবে। বাংলাদেশের টেরিটোরি ব্যবহারের জন্য আপনারা কোনো ফি দিচ্ছেন না কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, ২০১০ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দিল্লি সফরের সময় আশুগঞ্জকে পোর্ট অব কল ঘোষণা করে এসেছেন। তাই নৌ প্রটোকল অনুযায়ী যে চার্জ দেয়ার আমরা তা-ই দিচ্ছি। উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালের নৌ প্রটোকল অনুযায়ী নদীর নাব্য বজায় রাখার জন্য ভারত বাংলাদেশকে বছরে মাত্র সাড়ে ৫ কোটি টাকা দেয়।

সরাসরি সড়কপথে ট্রানজিটের জন্য ফি সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে রাজিত মিত্র বলেন, শুনেছি বাংলাদেশ সরকারের একটি কমিটি কাজ করছে। এ ব্যাপারে আমাদের কিছুই জানানো হয়নি। তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, এই একটি বিষয়ে চুক্তি হয়নি। এটাও হয়ে যাবে। ন্যায্যতার ভিত্তিতে এ চুক্তি সই হবে।

বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করে ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, এ সরকারকে আমরা ধন্যবাদ জানাই। আমরা অনেক সহযোগিতা পেয়েছি। গত দুই বছরে দু’দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন এবং সহযোগিতার ক্ষেত্রে যে কাজ হয়েছে, তা পাঁচ বছরেও হওয়া সম্ভব নয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে আমার বাড়ি মনে হয়। এখানে কাজ করে খুবই আনন্দ পেয়েছি।

দেশের মানুষকে অন্ধকারে রেখে ট্রানজিটের নামে আজ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে করিডোর পেল ভারত। এখন থেকে আর পরীক্ষামূলক নয়, বাংলাদেশের বুক চিরে সরাসরি পণ্য যাবে ভারতের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। যদিও ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বলছে তারা ট্রানজিট বা করিডোর নয়, পণ্য পরিবহন করছে ১৯৭২ সালের নৌ প্রটোকল চুক্তি অনুযায়ী। এদিকে এনবিআর চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দিন আহমেদ বিবিসিকে জানান, পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে ট্রানজিট প্রক্রিয়া। ব্যাংক গ্যারান্টির মাধ্যমে এসব পণ্য পরিবহন করা হলেও কোনো ধরনের মাশুল নেয়া হচ্ছে না।

কেন মাশুল নেয়া হচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, দু’দেশের মধ্যে নৌ প্রটোকলের আওতায় এসব পণ্য পরিবহন করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে যে সড়কপথ ব্যবহার করা হচ্ছে সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এই চুক্তি সংশোধন করা হলে মাশুল নেয়া হতে পারে। তবে নৌসচিব আবদুল মান্নান হাওলাদার বলেন, মাশুল নেয়া না হলেও এর মাধ্যমে বাংলাদেশের শিপিং এজেন্ট কিংবা শ্রমিকরা লাভবান হচ্ছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের ট্রাকগুলোও পরিবহন কাজে নিয়োজিত থাকায় লাভবান হচ্ছে। ভারতকে গোপনে করিডোর দেয়ার এ প্রচেষ্টার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বিশিষ্টজনরা বলেছেন, সরকার পুরো জাতিকে অন্ধকারে রেখে গোপনে করিডোর কার্যকর করেছে।

যার কারণে বাংলাদেশকে সিকিমের ভাগ্য বরণ করতে হতে পারে। করিডোরের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, এটা মূলত ভারতের সামরিক ও প্রতিরক্ষা নীতির অংশ। ভারত করিডোর নিয়েছে তাদেরই একটি তাঁবেদার সরকারের মাধ্যমে। এতে বাংলাদেশকে একটি বিপজ্জনক জায়গায় ঠেলে দেয়া হয়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার জন্য বাংলাদেশের জনগণকে সংগঠিত করে দখলদার অপশক্তির বিরুদ্ধে গণআন্দোলন ও গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

বৃহত্তর গণজাগরণ ছাড়া করিডোর প্রতিরোধ সম্ভব নয়। আমার দেশ-এর আখাউড়া প্রতিনিধি জানান, গতকাল থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে করিডোর কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। প্রয়োজনীয় কিছু কাগজপত্র না থাকার কথা বলে পণ্যগুলো আখাউড়া স্থলবন্দর অতিক্রম করেনি। স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পণ্যের এজেন্ট ইন্দো-বাংলা শিপিং লাইন্স কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিতে পারেনি। ফলে তারা স্থলবন্দরের পার্কিং জোনে পণ্যবাহী গাড়িগুলো রেখে দেন।

আজ থেকে পণ্য ভারতে যাবে। ইন্দো-বাংলা শিপিং লাইনের কর্মকর্তা মো. নজিব জানান, পরীক্ষামূলক নয়, পূর্ণাঙ্গ ট্রানজিট প্রক্রিয়ায় পণ্য ভারতে নেয়া হচ্ছে। সরাসরি ত্রিপুরায় প্রবেশের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অর্ডার শিট জমা দেয়া হয়েছে আখাউড়া স্থলবন্দরে। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, আরও একটি কাগজ চাই। তাই তারা গতকাল পণ্যগুলো ছাড় দেয়নি।

ওই কাগজ গতকাল সন্ধ্যায় জমা দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। এসব পণ্য নেবে ত্রিপুরা ইস্পাত লিমিটেড। গতকাল বেলা ৩টায় ৯টি ট্রাকে ১৫৩ টন লোহাজাতীয় পণ্য আখাউড়া স্থলবন্দরে পৌঁছে। এর আগে পরীক্ষামূলক দুই চালান পণ্য ত্রিপুরায় গেলেও এবার ৬২১ টন লোহাজাতীয় পণ্যের চালান যাচ্ছে ব্যাংক গ্যারান্টির মাধ্যমে। এসব পণ্য থেকে কোনো শুল্ক আদায় হচ্ছে না বলে বন্দরের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

আখাউড়া স্থলবন্দর কর্মকর্তা হামিদুল হক হামিদ জানান, এসব পণ্যের কাগজপত্রে কোথাও ‘পরীক্ষামূলক’ শব্দ লেখা নেই। আগের গ্যালভানাইজিং পণ্যের দুই চালানের কাগজপত্রে ‘পরীক্ষামূলক’ লেখা ছিল। পরীক্ষামূলক দুই চালান পণ্য স্থলবন্দরে ক্র্রেন দিয়ে ভারতীয় গাড়িতে লোড করে ত্রিপুরায় চালান করা হয়েছিল। ওইসব পণ্যের এজেন্ট ছিল গালফ অরিয়েন্ট সিওয়েজ লিমিটেড। এবারের চালানে স্থলবন্দরে ভারতের গাড়ি নয়, বরং সরাসরি বাংলাদেশের গাড়ি যাবে ভারতে।

আখাউড়া স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, ইন্দো-বাংলা শিপিং লাইন্সের মাধ্যমে গত ২৯ সেপ্টেম্বর ‘নীলকণ্ঠ’ নামে একটি জাহাজ কলকাতার বর্ধমানের ইছাপুর, গোর্টগোরিয়া ও দেওয়ান দীঘির কেবি স্প্রিং আয়রন লিমিটেড, এক্সপেন্ডেবল এন্টারপ্রাইজ ও এনএন ইস্পাত প্রাইভেট লিমিটেড থেকে ৬২১ টন লোহাজাতীয় পণ্য আশুগঞ্জ নৌবন্দরে আনা হয়। আখাউড়া স্থলবন্দর কাস্টমস কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র কুণ্ডু জানান, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব পণ্য যাবে শুল্কমুক্তভাবে। আগের দুই চালান পণ্য গেছে পরীক্ষামূলকভাবে। আজ থেকে পণ্য যাচ্ছে ব্যাংক গ্যারান্টির মাধ্যমে। আখাউড়া স্থলবন্দর আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ট্রানজিটের পণ্য আখাউড়া স্থলবন্দর ইয়ার্ডে নামানো হলে স্থানীয় অনেক শ্রমিক কাজ করতে পারতেন।

ট্রানজিট পণ্য সরাসরি চলে যাওয়ায় শ্রমিকরা এই কাজটুকুও পাচ্ছে না। ট্রানজিটের নামে করিডোর কার্যকরের বিষয়টি অস্বীকার করে ভারতীয় হাইকমিশনার রাজিত মিত্র সাংবাদিকদের জানান, পণ্যগুলো যাচ্ছে ১৯৭২ সালের নৌ প্রটোকল চুক্তি অনুযায়ী। পুরো জাতিকে অন্ধকারে রেখে করিডোর কার্যকর করার বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে দেশের সাধারণ মানুষও। বহুল প্রচারিত একটি জাতীয় দৈনিকের অনলাইনে পাঠকরাও সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন। পাঠক আহেমদ রহমাতুল্লাহ বলেন, আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করে ভারতকে ট্রানজিট দেয়া হয়েছে।

এই ট্রানজিট আমরা মানি না। তার ভাষ্য, এটা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়। জাহেদ হাসান মন্তব্য করেন, আমার বুঝতে খুব কষ্ট হচ্ছে, শেখ হাসিনা কী করে ১৫ কোটি জনগণের সঙ্গে সরাসরি প্রতারণা করে ভারতকে ট্রানজিট দিয়ে দিলেন। গত ৪০ বছরে দেশের কোনো সরকার এত বড় প্রতারণা করার সাহস দেখায়নি; অথচ মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি পরিচয় দেয়া আওয়ামী লীগ তা-ই করল। বাংলাদেশের জনগণ কখনোই এ ট্রানজিট মানবে না।

তিনি আরও বলেন, ভারতের তাঁবেদার আওয়ামী লীগ সরকারকে বিদায় করতে হবে। অপর পাঠক তারেক মন্তব্য করেন, ট্রানজিটকে রুখে দিতে হবে। বাংলাদেশের ভাই ও বোনেরা, এখনও সময় আছে আসুন এক হয়ে ট্রানজিট রুখে দিই। জাকির হোসেনের মন্তব্য, ট্রানজিটের নামে করিডোর কার্যকর হওয়ায় সিকিমের কথা মনে ভেসে উঠছে! বাংলাদেশের পরিণতিও সিকিমের মতো হওয়া আর বেশি দূরে নয়। হাসিবুর রহমান মন্তব্য করেন, মনে-প্রাণে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করতাম।

এই খবর প্রকাশের পর এখন সরকার পতনের আন্দোলনে সরাসরি যোগ দেব। বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী তালুকদার মনিরুজ্জামান বলেন, আগে বলা হয়েছিল ভারতকে ট্রানজিট দিলে বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর হবে, মধ্যআয়ের দেশে পরিণত হবে। এখন বলা হচ্ছে, ট্রানজিটের বিনিময়ে ফি নেয়াটা অসভ্যতা। তিনি বলেন, ট্রানজিট প্রশ্নে গণআন্দোলন সৃষ্টি করতে হবে। গণআন্দোলন ছাড়া ট্রানজিট প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়।

বর্ষীয়ান এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, সরকার পুরো জাতিকে অন্ধকারে রেখে ট্রানজিট কার্যকর করেছে। বিরোধী দলের উচিত রোডমার্চ কর্মসূচি শেষ করেই ট্রানজিটের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তোলা। বিশিষ্ট সমাজচিন্তক ও কলামিস্ট ফরহাদ মজহার বলেন, এই করিডোর নেয়া মূলত ভারতের সামরিক ও প্রতিরক্ষা নীতির অংশ। ভারত করিডোর নিয়েছে তাদেরই একটি তাঁবেদার সরকারের মাধ্যমে। এতে বাংলাদেশকে একটি বিপজ্জনক জায়গায় ঠেলে দেয়া হয়েছে।

এ পরস্থিতি থেকে বের হওয়ার জন্য বাংলাদেশের জনগণকে সংগঠিত করে দখলদার অপশক্তির বিরুদ্ধে গণআন্দোলন ও গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে সফল হতে চাইলে আমাদের উচিত পাশের দেশের রাজ্যগুলোর মানুষের সঙ্গে মৈত্রীর সম্পর্ক গড়ে তোলা। কারণ তারাও দিল্লির সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহ্বুবউল্লাহ্ বলেন, সরকারের মন্ত্রী ও উপদেষ্টারা একেক সময় একেক কথা বলেন। একবার বলেন ট্রানজিট চুক্তি করেছেন আবার বলছেন করেননি।

আসলে তারা পুরো বিষয়টি নিয়ে জাতিকে অন্ধকার ও বিভ্রান্তির মধ্যে রেখেছেন। এখন একটি বিষয়টি শোনা যাচ্ছে তা হলো, ট্রানজিট আর পরীক্ষামূলক নয়, বরং সরাসরি কার্যকর করা হয়েছে। ট্রানজিটের নামে এই করিডোর কার্যকর করায় দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও মর্যাদা বলতে আর কিছু অবশিষ্ট নেই। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গত ৪০ বছরে আমরা যে সম্পর্ক লক্ষ্য করেছি, তা হলো নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করা, ভারতের বাজারে বাংলাদেশী পণ্য প্রবেশে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা সৃষ্টি করা, ছিটমহল বিনিময় না করা, সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া, সীমান্তে বাংলাদেশী নিরীহ নাগরিক হত্যা, বাংলাদেশের দ্বীপ দক্ষিণ তালপট্টি দখল, বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার ওপর মালিকানা দাবি, বাংলাদেশী সন্ত্রাসীদের ভারতে আশ্রয় এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিচ্ছিন্নতাবাদ উসকে দেয়া। উভয় দেশের সম্পর্কে আস্থার প্রচণ্ড সঙ্কট।

আস্থার মনোভাব ফিরিয়ে আনার জন্য ভারত আজ পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েও করেনি। এখন তারা পরীক্ষামূলক নামে ট্রানজিট সরাসরি কার্যকর করেছে। এ অবস্থায় প্রয়োজন দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা। বৃহত্তর গণজাগরণ ছাড়া ট্রানজিট বা করিডোর প্রতিরোধ সম্ভব নয়।

কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, পরীক্ষামূলক চালুর নামে ফারাক্কা বাঁধ চালু করে ভারত তা যুগ যুগ ধরে অব্যাহত রেখেছে। ট্রানজিটও পরীক্ষামূলক চালুর নামে এখন বাস্তবেই চালু করেছে। এটা দেশের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। দেশের মানুষকে এভাবে বোকা বানিয়ে গোপনে ট্রানজিট চালু করায় সরকারের কাছে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। শুধু ভারত একা নয়, প্রতিবেশী সব রাষ্ট্রকে বাংলাদেশের পূর্ব থেকে পশ্চিমে এবং পশ্চিম থেকে পূর্বে যাতায়াতের সুবিধা দেয়া সমর্থন করি।

এতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে লাভবান হবে। কিন্তু আলোচিত ক্ষেত্রে (ট্রানজিট বিষয়ে) সরকার দেশবাসীকে অন্ধকারে রেখে শুধু ভারতকে উপকার পাইয়ে দেয়ার সুযোগ দিয়েছে। বিষয়টি দেশপ্রেমিক কোটি কোটি মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। ট্রানজিট বিষয়ে যে নিয়মে বাংলাদেশ আগাচ্ছে, সে নিয়মে ভারত সরকার চুপি চুপি তাদের আবদারকে অধিকারে পরিণত করছে। এই নিয়ম চলতে থাকলে ভারতীয় যানবাহনের পাশাপাশি সামরিক যানবাহন ও অস্ত্রশস্ত্র পরিবহন হবে।

যার জন্য বাংলাদেশের ভয়ঙ্কর পরিণতি হতে পারে। ত্রিপুরা বিদ্যুেকন্দ্রের সাড়ে তিন হাজার টন ভারী যন্ত্রাংশ আশুগঞ্জ নৌবন্দরে : আশুগঞ্জ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি সাদেকুল ইসলাম সাচ্চু জানান, ভারতের কলকাতা ক্ষিদিরপুর নৌবন্দর থেকে ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুেকন্দ্রের ভারী যন্ত্রাংশ নিয়ে আসা ২৭টি জাহাজের মধ্যে ২৬টি জাহাজের মালামাল আশুগঞ্জ নৌবন্দরে খালাস করার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল দুপুর থেকে খালাস হচ্ছে সর্বশেষ জাহাজ ওয়াটার কিংয়ের ভারী যন্ত্রাংশ। উপজেলার সোনারামপুর ডিপো থেকে গত ৫ মাসে প্রায় ৫ হাজার টন ভারী যন্ত্রাংশ ১৩০ চাকার ট্রেইলার দিয়ে আখাউড়া সীমান্তপথে ত্রিপুরায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখনও পরিবহনের অপেক্ষায় রয়েছে সাড়ে ৩ হাজার টন ভারী যন্ত্রাংশ।

চুক্তি অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের জুন মাসের মধ্যে বাকি যন্ত্রাংশ ত্রিপুরার আগরতলায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। এদিকে পালাটানা বিদ্যুেকন্দ্রের যন্ত্রাংশ দেশের আড়াইশ’ কিলোমিটার নৌপথ ও ৬০ কিলোমিটার সড়কপথ ব্যবহার করে ত্রিপুরা নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো শুল্ক বা চার্জ কিছুই নেয়া হয়নি। অথচ এসব ভারী যন্ত্রাংশ নেয়ায় আশুগঞ্জ-আখাউড়া ৬০ কিলোমিটার সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে এই সড়কের ১৫টি সেতু। এ অবস্থায় ডাইভার্সন সড়ক সংস্কার না করেই ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর ওপর দিয়েই আবার ভারী যন্ত্রাংশ নেয়া শুরু করা হয়েছে।

এসব বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ ও অসন্তোষ। ত্রিপুরার পালাটানায় নির্মাণাধীন বিদ্যুেকন্দ্রের ভারী যন্ত্রাংশ নিয়ে প্রথম জাহাজ এমভি আল সামি গত ৮ মার্চ আশুগঞ্জ নৌবন্দর পৌঁছে। উত্সবমুখর পরিবেশে গত ২৭ মার্চ মধ্যরাতে জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও রাজস্ব কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে পুলিশ প্রশাসনের কড়া নিরাপত্তায় উপজেলার সোনারামপুর ডিপো থেকে বিদ্যুেকন্দ্রের ভারী যন্ত্রাংশ নিয়ে ১৩০ চাকার প্রথম ট্রেইলার ত্রিপুরার উদ্দেশে যাত্রা করে। এই ভারী যন্ত্রাংশসহ ট্রেইলারগুলো আখাউড়া সীমান্তপথ দিয়ে ত্রিপুরার আগরতলার পালাটানায় যায়। এসব ভারী যন্ত্রাংশ পরিবহন করার ঠিকাদারের দায়িত্ব পালন করছেন এদেশের গালফ ওরিয়েন্ট ও ভারতের এবিসি কোম্পানি।

এর আগে বিদ্যুেকন্দ্রের ভারী যন্ত্রাংশ আগরতলা নেয়ার জন্য প্রায় ৬০ কিলোমিটার আশুগঞ্জ-আখাউড়া সড়ক চলাচলের উপযোগী করা হয়। তাদের নিজস্ব তত্ত্বাবধান ও অর্থায়নে এই মহাসড়কের সংস্কার কাজ করা হয়। এসময় ঝুঁকিপূর্ণ ১৫টি সেতুর পাশ দিয়ে নির্মাণ করা হয় ডাইভার্সন সড়ক। এদিকে দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা আশুগঞ্জ বিদ্যুেকন্দ্রের জেটি ব্যবহার করে এর ভেতর দিয়ে বেশ কয়েকটি ভারী যন্ত্রাংশ নেয়া হয়েছে। এমভি ওয়াটার কিং নামে একটি জাহাজ মাল খালাসের জন্য বেশ কিছুদিন বিদ্যুেকন্দ্রের জেটিতে নোঙর করে রাখা হয়েছে।

এই বিদ্যুেকন্দ্রের ভেতর দিয়ে যন্ত্রাংশ নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ। কীভাবে বিদ্যুেকন্দ্রের ভেতর দিয়ে এসব যন্ত্রাংশ নেয়া হচ্ছে, এ নিয়ে সর্বমহলে প্রশ্ন উঠেছে। এ ব্যাপারে বিদ্যুেকন্দ্রের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা মো. আব্বাস উদ্দিন আহম্মেদ জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতিক্রমেই বিদ্যুেকন্দ্রের জেটি ও ক্রেন ব্যবহার করে ভেতর দিয়ে ভারী যন্ত্রাংশ নেয়া হচ্ছে। বিদ্যুেকন্দ্রের জেটি ব্যবহার করার ক্ষেত্রে প্রতি ঘণ্টা হিসাবে চার্জ নেয়া হচ্ছে। বিআইডব্লিউটিএ’র আশুগঞ্জ ট্রাফিক পরিদর্শক মো. শাহ আলম জানান, ভারতীয় ক্ষিদিরপুর নৌবন্দর থেকে পালাটানায় নির্মাণাধীন বিদ্যুেকন্দ্রের ভারী যন্ত্রাংশ নিয়ে এরই মধ্যে সবক’টি জাহাজই আশুগঞ্জ নৌবন্দরে এসেছে।

গত ৭ মাসে ২৭টি জাহাজের মধ্যে ২৬টি জাহাজের ভারী যন্ত্রাংশ খালাস করে আশুগঞ্জ উপজেলার সোনারামপুর এলাকায় এবিসি কোম্পানির নিজস্ব ৩টি ডিপোতে রাখা হয়েছে। একমাত্র জাহাজ এমভি ওয়াটার কিং এখনও খালাস করা সম্ভব হয়নি। বিদ্যুেকন্দ্র কর্তৃপক্ষ জানায়, ৯০টি কন্টেইনারে আনা ভারী যন্ত্রাংশের ওজন প্রায় সাড়ে ৮ হাজার টন। এসব যন্ত্রাংশ আনার ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মোতাবেক কোনো বার্থিং চার্জ বা এন্টি ফি নেয়া হয়নি। এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গালফ ওরিয়েন্ট কোম্পানির স্থানীয় কর্মকর্তা মো. নূরুজ্জামান জানান, ৯০টি কন্টেইনারের মধ্যে ৪৭টি কন্টেইনার আগরতলায় পাঠানো হয়েছে।

বাকি ৪৩টি কন্টেইনার পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। বর্ষার পানিতে ডাইভার্সন সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় এখন কন্টেইনার খুলে মডিউটরগুলো একাধিক ট্রেইলারে ডাইভার্সন ব্যবহার না করেই নেয়া শুরু হয়েছে। এদিকে বিদ্যুেকন্দ্রের এই ভারী যন্ত্রাংশ পরিবহনের কারণে আশুগঞ্জ নৌবন্দরের প্রায় এক কিলোমিটার সড়ক চলাচলের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সড়কের মাঝখানে অসংখ্য বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ পণ্য নিয়ে আশুগঞ্জ বন্দরে ট্রাক প্রবেশ করাতে অনীহা প্রকাশ করছে চালকরা এবং ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে।

শহর শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি গোলাম হোসেন ইপটি জানান, দেশের স্বার্থ ঠিক রেখে ভারতকে ট্রানজিট দিলে আপত্তি নেই। তবে ট্রানজিট পণ্য পরিবহনের আগে বন্দরের অবকাঠামো ও রাস্তাঘাট নির্মাণ করা প্রয়োজন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, আশুগঞ্জ-আখাউড়া সড়কের ব্রিজ ও কালভার্টের পাশ দিয়ে ডাইভার্সন এবং সুলতানপুর-চিনাইর আখাউড়া সড়ক প্রশস্ত করার কাজ করেই ১৩০ চাকার ট্রেইলার দিয়ে ভারী যন্ত্রাংশ নেয়া হচ্ছে, যে কারণে সড়কের ওপর তেমন কোনো চাপ পড়বে না। তবে ব্রিজের ওপর একসঙ্গে পুরো গাড়ির চাপ পড়বে বলে ডাইভার্সন নির্মাণ করা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা রাজস্ব কর্মকর্তা কাজী আবুল হোসাইন জানান, মালামাল পরীক্ষা করে কাগজপত্র অনুযায়ী সব মালামাল ঠিক পাওয়া গেছে।

মালগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রতিটি ৭০ টন ওজনের মডিউটর ওয়াটার টিউব বয়লার, প্রতিটি ৭৫ টন ওজনের রিঅ্যাক্টর ট্যাঙ্ক ও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ট্রান্সফরমার রয়েছে। কাস্টমসের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেই মালামাল খালাস করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে এসব মাল থেকে কোনো শুল্ক নেয়া হচ্ছে না। Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।