আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আইপিএলের পর এবার ফর্মুলা ওয়ান। টাকায় কথা বলে।

পাওয়ার অব পিপল স্ট্রংগার দেন দি পিপল ইন পাওয়ার। http://mhcairo.blogspot.com/ বুদ্ধ ইন্টারন্যাশনাল সার্কিট ট্র্যাকের দৈর্ঘ্য ৫.১৪ কিমি রেসে ড্রাইভারদের চালাতে হবে ৩০৮ কিমি মোট ল্যাপের সংখ্যা ৬০ প্রতি ল্যাপ ঘুরতে গড় সময় ১ মিনিট ২৭.২সেকেন্ড গড় গতি ঘণ্টায় ২১০ কিমি সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৩২০ কিমি বিপজ্জনক বাঁক তিন এবং দশ নম্বর বাঁক সর্বোচ্চ খাড়াই ১৪ মিটার দর্শকাসন ১ লক্ষ ১০ হাজার টুকটুকে চেরি রঙের মার্সিডিজ বেঞ্জটা ট্র্যাকে এসে দাঁড়ানো মাত্র ক্রমাগত ফ্ল্যাশবাল্বের ঝলকানি আর আলোকচিত্রীদের হুমড়ি খেয়ে পড়া। উৎসাহী মিডিয়ার দাবি মেটাতেই দরজা খুলে তাঁর বেরোনো আর হাত নাড়া মাত্র উচ্ছ্বাসে জনতার ফেটে পড়া। গ্যালারিতে কারও হাতে তেরঙা জাতীয় পতাকা, কারও হাতে তাঁর ছোট পোস্টার। দুধ-সাদা টি শার্ট আর সমুদ্র-নীল জিনসের যে যুবক গাড়ি থেকে আবির্ভূত, তিনি নারায়ণ কার্তিকেয়ন।

আগামী ৩০ অক্টোবর বুদ্ধ ইন্টারন্যাশনাল সার্কিটে ঐতিহাসিক ফর্মুলা ওয়ান ইন্ডিয়ান গ্রাঁ প্রি-তে ভারতের একমাত্র প্রতিনিধি। ভারতের মাটিতে প্রথম বার কোনও ফর্মুলা ওয়ান ট্র্যাকের উদ্বোধন আর কার্তিকেয়ন থাকবেন না, হয়? অগত্যা মার্সিডিজ বেঞ্জ সেফটি কারের স্টিয়ারিংয়ে তিনি আর মুহূর্তের মধ্যে হু-উউ-স। রকেটের বেগে পক্ষীরাজ উড়ে গেল ধূ ধূ ট্র্যাকের বাইরে। যেন চলন্ত বিদ্যুৎ ছুটে গেল চোখের সামনে। ৫.১৪ কিলোমিটারের ট্র্যাকে দুটো ‘ল্যাপ’ দিয়ে এসে দরাজ সার্টিফিকেট অধুনা লন্ডননিবাসী তরুণের।

“বিশ্বের প্রায় সব ফর্মুলা ওয়ানের ট্র্যাকেই আমার ড্রাইভ করার অভিজ্ঞতা আছে। কোনও সন্দেহ নেই, আমার দেশের এই ট্র্যাক বিশ্বের যে কোনও ট্র্যাকের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে। এক কথায় এখানে চালানোর অভিজ্ঞতা অসাধারণ। আমার তো তাই মনে হল। ” প্রেসরুমে বসে হাসি মুখে আনন্দবাজারকে বলছিলেন গতির জাদুকর।

স্বপ্নও তো দেখাচ্ছেন, যখন বলছেন, “ভারতের রেসিং ইতিহাসে আজ একটা নতুন অধ্যায় তো বটেই। ৩০ অক্টোবর গোটা বিশ্বের নজর থাকবে এই ট্র্যাকে আর আমি নিশ্চিত, ভবিষ্যতে এই ট্র্যাক থেকে উঠে আসবে কোনও ভারতীয় চ্যাম্পিয়ন। কার্তিকেয়নের মতো কেউ ভবিষ্যতে এই ট্র্যাক থেকে উঠে আসুন বা না আসুন, নয়ডার বুদ্ধ ইন্টারন্যাশনাল সার্কিটের উদ্বোধন নিঃসন্দেহে ভারতীয় খেলাধুলোর ইতিহাসে স্বপ্ন দেখার নতুন মাইলস্টোন। আজই প্রথম প্রচারমাধ্যমের সামনে বোধন হল ট্র্যাকের। দেশ-বিদেশ থেকে আসা প্রায় ৭০০ সাংবাদিকের সামনে খুলে দেওয়া হল ট্র্যাক, হল রেড বুলের কার রেসিং শো।

যেখানে ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুইস ড্রাইভার নীল জানি ৩২০ কিলোমিটার গতিতে ছোটালেন গাড়ি, সিটে বসে স্তব্ধ হয়ে দেখলাম আমরা ভাগ্যবান হাজারখানেক। চাকার ঘর্ষণে ট্র্যাক থেকে বেরনো সাইরেনের মতো আওয়াজ থেকে বাঁচতে কানে গোঁজার জন্য দেওয়া হয়েছিল ইয়ারফোন। কিন্তু ওই ঐতিহাসিক মুহূর্তে কে আর ইয়ারফোন গোঁজে? মোবাইল ক্যামেরায় ফটাফট উঠছে ছবি, হঠাৎই স্টার্টিং ব্লকে এসে দুর্বার গতিতে গাড়িটা ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে দেন জানি। বনবন করে ঘুরছে গাড়ি, উঠছে ধোঁয়া। দ্রুত রেড বুল লেখা বিদ্যুৎ ফের ছুটে যায়।

হু-উ-স। নির্যাস? এক কথায়, গতির হাত ধরে ইতিহাস সৃষ্টির খোঁজে ‘বুদ্ধ। ’ গতির সঙ্গে হাত মেলান---ফর্মুলা ওয়ানের বিপজ্জনক পৃথিবীকে ভালবাসতে শিখুন। নয়াদিল্লি থেকে গাড়িতে যেতে প্রায় দু’ঘণ্টা, গ্রেটার নয়ডার বুদ্ধ ইন্টারন্যাশনাল সার্কিটে ঢুকলে মনে হবে, এ দেশেই আছি তো? বিশ্বকর্মার আশীর্বাদ ছাড়া কী করে সম্ভব হল দু’হাজার পাঁচশো একর ব্যাপী এই রাজসূয় যজ্ঞ? কোথাও কোনও খুঁত বের করতে হলে অনুবীক্ষণ বা খুঁতখুঁতে মন লাগবে। যেমন মেডিক্যাল সেন্টার।

ফর্মুলা ওয়ান বিপজ্জনক স্পোর্ট। ট্র্যাকে যে কোনও সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা, এমনকী জীবনসংশয় হতে পারে দর্শকদেরও। সে জন্য প্রতি স্ট্যান্ডের বাইরে দেওয়া আছে সাবধানবাণী। যে কোনও রকম পরিস্থিতির মোকাবিলায় অপারেশন থিয়েটার-সহ অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে তৈরি থাকছেন দেশের শীর্ষ স্থানীয় একশোর বেশি ডাক্তার। গুরুতর পরিস্থিতির মোকাবিলা? ট্র্যাক-সংলগ্ন হেলিপ্যাডে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ওড়ার অপেক্ষায় থাকবে দুটো হেলিকপ্টার।

ভারতের মোটর স্পোর্টস ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট ভিকি চন্দক বলছিলেন, “ট্র্যাক তো বটেই, নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও সর্বোচ্চ মানের পরিকাঠামো থাকছে আমাদের। এই রেস আমাদের দেশের খেলাধুলোর ভাবনাটাই বদলে দেবে। ” ঐতিহাসিক ৩০ অক্টোবরের প্রস্তুতি সারা প্রায় ৯০ শতাংশ। এক কথায় কনের মেহেন্দি-পর্ব শেষ, শুধু শেষ মুহূর্তের সাজগোজ বাকি। এখনও হাতে দিন-দশেক সময়, মেয়েকে পার করে দেওয়ার ব্যস্ততা বিআইসি (বুদ্ধ ইন্টারন্যাশনাল সার্কিট)-র সর্বত্র।

আর রথী-মহারথীর কথা যদি ওঠে, কে থাকবেন না? সচিন তেন্ডুলকর থেকে ভিভিএস লক্ষ্মণ, শাহরুখ খান থেকে হৃতিক রোশন, লিয়েন্ডার পেজ থেকে সানিয়া মির্জা, ৩০ অক্টোবর দুপুর তিনটেয় সবার ঠিকানা একটাই। বুদ্ধ ইন্টারন্যাশনাল সার্কিট। আমন্ত্রিত গাঁধী পরিবারও। সংগঠকদের দাবি, রাহুল-প্রিয়ঙ্কা নাকি আসবেন। নিরাপত্তার কারণে শুধু ঘোষণাটা হয়নি।

শুধু তো ট্র্যাক নয়, মহা সমারোহে আজ উদ্বোধন হল রেসের থিম সঙেরও। সুর বেঁধে গান গেয়েছেন বলিউডের চার বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব লেসলি লুইস, লাকি আলি, দালের মেহেন্দি ও কেকে। গমগম করে প্রেস রুমে বাজছিল ‘হাম মে রফতার জিতে বার বার’। মানে আমাদের মধ্যে থাকা গতি জিতে যাক বারবার। নতুন প্রজন্ম গতিকে ভালবেসে এই গানকে আঁকড়ে ধরতেই পারে।

৩০ অক্টোবর রেস দেখতে চান? দুঃসংবাদ বলতে সর্বনিম্ন সাড়ে তিন হাজার টাকার টিকিট বহু আগে নিঃশেষিত আর সান্ত্বনা বলতে বিখ্যাত গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের কিছু টিকিট ৩০ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। ভারতে ফর্মুুলা ওয়ানের আসর বসানোর পিছনে যাঁরা, সেই জেপি গ্রুপের চেয়ারম্যান মনোজ গৌর বলছিলেন, “এক লক্ষ দশ হাজার আসনের একটাও ফাঁকা থাকবে না। ভারতের খেলাধুলার ইতিহাসে কোনও বেসরকারি সংস্থার তৈরি এত বড় পরিকাঠামো এই প্রথম। আগে কখনও হয়নি। ” ভুল নয়।

২৫০০ একর বিস্তৃত স্পোর্টস সিটি ঘুরে দেখতেই সময় লেগে যাবে ঘণ্টা দেড়েক, তবু অতৃপ্তি থাবা বসাবে মনে। ৩০ অক্টোবরের পরে ভারতের খেলাধুলোর ইতিহাস নতুন করে লিখতে হবে কি না সময় বলবে। ভবিষ্যতে কোনও ভারতীয় কোনও দিন ‘উইনিং পোডিয়াম’-এ উঠবেন কি না, সেটাও সময় বলবে। কিন্তু স্বপ্ন দেখতে তো সময়ের দ্বারস্থ হতে হয় না। সেখানে বুদ্ধ ইন্টারন্যাশনাল সার্কিটের স্লোগানটা ঘোর বাস্তব---‘নো ড্রিম টু বিগ!’ http://www.anandabazar.com/19khela1.html ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.