আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বেহেশতের তিন মিনিট

যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে তোমার কোনো দুশ্চিন্তা নেই, ঘটনাটা ঘটার পর থেকে তোমার সব দায়িত্ব নেবেন স্বয়ং আল্লাহ! চোখের রঙ ফ্যাকাসে। ভেতরে কৃষ্ণকায় বৃত্ত টিও সাদা হয়ে আছে, গভীরে তাকালে বোঝা যায়। তবে এই আশ্বাসবাণী শোনার পরে তাজা হয়ে উঠলো অক্ষি গোলকের চতুষ্পার্শ্বে স্তিমিত সেলগুলো। ঠিক ঘটনাটি ঘটার পরেই তো? এত নৈকট্যে পৌঁছে যাবে সে মহান আল্লহতায়ালার! আনন্দ সংবাদটি পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করার পূর্বে অবশ্য দৃশ্যপট পরিবর্তন হয়ে গেলো। শুক্রবার জুম্মার আগে যেভাবে ধোয়া পাজামা পাঞ্জাবী বের হয় ওয়াড্রব থেকে একটা সুগন্ধ ছড়িয়ে,কিচেন থেকে রান্নার সুঘ্রাণ মিশে যায় মুসুল্লির কাতারে, সবাইকে দেখে আলামীনের তাই মনে হলো।

তাকেও নামাজ পড়তে নিয়ে যায়। দি ইমপেরিয়াল মস্কে। চারপাশে ধবধবে সাদা কাপড়ে মোড়ানো মুসুল্লি। ফ্রেঞ্চ সুগন্ধিতে মাতোয়ারা। আলামীনের কাছে বেহেশতের সিঁড়ি মনে হয়।

গ্রান্ড মুফতি তাকে বেহেশতের নিশ্চয়তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তোমার জীবন আজ দোযখের অনন্ত আজাব থেকে মুক্ত হবে, আর এর ফলে আরো কোটি কোটি মুসলমানের নাজাত মিলবে, তারা সাবধান হয়ে যাবে! আলামীনের তখন নিজেকে মুক্তিদূত মনে হয়। নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে সে মানুষকে সত্যের পথে নিয়ে আসবে। চারদিকে উৎসবের আমেজ। মসজিদের এক পাশে আলাদা একটা দরজা।

সেটা দিয়ে প্রবেশ করানো হলো। গালিচার উপরে পা ঢুকে যাচ্ছে। পারস্যের সেই বিখ্যাত গালিচা – যার গল্প সে শুনে এসেছে এযাবত্কাল। দাঁড়াতেই সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য উপলব্ধি হয়। এরপরে ঘাড়ে মাথা না থাকলেও সে পরওয়া করে না।

চারিপাশে মানুষের কলরব। যতটুকু আরবী সে বুঝতে পারে তাতে কারো মাঝে কোনো অস্বাভাবিকতা নেই। যেমন তার ডান পাশের সিকিউরিটির লোকটা বলছে তার পাশের জনকে, যত তাড়াতাড়ি সে আজ বাড়ী ফিরতে পারে সে চেষ্টা করবে। মেহমান এসেছে ঘরে। ওদিকে আজকেই ৮টি শিরশ্ছেদ ঘটবে! একজন কেউ পাশ থেকে ফিসফিস করে কথা বলতে নিষেধ করলো।

আলামীনের কানের ভেতরে খুতবা শুরু হয়ে যায়। এত চমৎকার মিষ্ট স্বর হতে পারে কারো – না শুনলে বিশ্বাস হতো না। মনে হচ্ছে পুরো বিশ্ব মগ্ন হয়ে শুনছে গ্রান্ড মুফতির কথা, সরাসরি পৌঁছে যাচ্ছে খোদার আরশে। খুতবা শেষ হলে আলামীন জামাতে দাড়িয়ে যায়। নামাজ পড়ে,মোনাজাত ধরে।

তারপরে সিকিউরিটির লোকজন বেশ যত্ন করে তার হাত বেঁধে নিয়ে আসে মসজিদের সামনে সবুজ বেদীতে। চারিপাশে আরো বেশ কয়েকজন। সবাইকে চেনে। সবারই হাত বাঁধা। আলামীনের মাথায় যখন একটা কালো টুপি পড়ানো হয় তখন মূলত তার চোখ উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে।

একটা আরবী চিৎকার কানের মধ্যে আছড়ে পড়ে,ইস! মাথা পুরোটা কাটে নি! আলামীনের মনে হলো গলাটা একদিকে ঝুলে আছে, ভেতর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে নরম কিছু তরল। একদিকে ঝুলে থাকা মাথা নিয়ে আলামীন কিছু বুঝতে পারে না। তার কি শিরশ্ছেদ হয়ে গেছে, সেকি পৌঁছে গেছে বেহেশতে, এই চেচামেচি কি বেহেশতের ওয়েলকাম টিউন! রক্তের ফিনকি যখন চারদিকে ছড়িয়ে যাচ্ছিলো আলামীন বৃত্তাকারে মাথা দাপিয়ে তার চারিপাশটাতে একটা রক্তিম সূর্য এঁকে দেয়। তিনমিনিট ধরে আলামীনের অর্ধ কর্তিত মস্তক ঝুলে থাকে সেই সবুজ চাদরে কেবলামুখী। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।