আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্মৃতিচারনঃ প্রথম চাকরী এবং ভয়ঙ্কর টাউট বসের কথা। (যারা প্রথম চাকরীতে জয়েন করবেন বা খুঁজছেন তাদের পড়া উচিৎ)

আমি শুনতে পাই লক্ষ কোটি ফিলিস্তিনীর আর্তনাদ...হাহাকার এম.বি.এ পরীক্ষা চলার সময় একটা চাকরীর পোস্টের জন্য কল আসল দেশীয় এক গ্রুপ অব কোম্পানীজ থেকে। পরদিন রিটেন হলো, এটার পর হলো ভাইভা। ভাইভা ভালই হলো। ভাইভাতে বলেছিলাম ঢাকার বাইরে যেতে পারব না। দিন পনেরো পরে কল আসল যে আমাকে সিলেক্ট করা হয়েছে।

মনে মনে বেশ খুশী হলাম। আমার ভাবনা ছিল বেতন কম হলেও এক সময় চেঞ্জ করে ফেলব। তাছাড়া সেটি হচ্ছে অনেক বড় গ্রুপ অব কোম্পানীজ। কোম্পানীটর প্রধান ব্যাবসা সিগারেট ও জুস/সফট-ড্রিংস। তবে আমার চাকরীটি হল অন্য ইউনিটে।

আমাকে নিয়োগ দেয়া হলো ব্র্যান্ড অফিসার হিসেবে। প্রথম দিনই ইউনিট প্রধান আমাদের দুইজন কে তার রুমে নিয়ে গেল। বস বলল “এখানে নতুন ভাবে ব্র্যান্ডিং এক্টিভিটিজ শুরু হবে, আপনারা কিছু দিনের মধ্যে একটা মার্কেটিং প্ল্যান বানিয়ে ফেলুন, এবং সারা বছর এই প্ল্যান অনুযায়ী কাজ হবে। “ আর বেতনের অ্যামাউন্ট নিয়ে এত চিন্তা করবেন না, পাঁচ বছর পর এর ৬/৭ গুন পাবেন। আমরা শুনে বেশ পুলোকিত হলাম।

সেই প্রথম দিন বসকে খুব ভালো লাগল। তার অমায়িক কথাবার্তা, ভবিষ্যৎ প্ল্যনিং, এই কোম্পানিতে আমাদের উজ্জ্বল ক্যারিয়ার ইত্যাদি শুনে আমারা বেশ মোহিত হয়ে গেলাম, নিজেকে বেশ গুরুত্তেপুর্ন মনে হতে লাগল। ঘুনাক্ষরেও টের পাইনি এইসব ওজন কথা বার্তা ছিল আসলে মগজ ধোলাইয়ের ১ম ধাপ। কয়েকদিন পর লাঞ্চের পর কলিগরা মিলে বাইরে গেলাম চা খেতে। পুরানো এক কলিগ আমাদের দুজনের উদ্যেশে বলল সে(বস) আপনাদের রুমে নিয়ে সেদিন কি বলল।

আমি বেশ দেমাগের সাথে উত্তর দিলাম “আমাদের পুরো বছরের মার্কেটিং প্ল্যানিং নিয়ে আলোচনা হইয়েছিল। “ সে হেসে বলল, কিছুদিন যাক তারপর বুঝবেন এগুলা সব ভূয়া। তার কথা শুনে খারাপ লাগলেও কয়েক মাসের মধ্যে মনে হতে লাগল, উনার কথাই ঠিক। “ব্র্যান্ড অফিসার” হিসেবে যোগ দিলেও ব্র্যান্ডের কোনই কাজ হতো না। একবার আমাকে একটা ক্যাশ চেক ধরিয়ে দিয়ে বলল, আপনি তো সাহসি একটু ক্যাশটা তুলে নিয়ে আসুন আর আপনার ব্রান্ডিং এর কাজ সামনের মাস থেকেই শুরু হবে।

আমিও ভাবলাম যেহেতু সামনের মাসেই কাজ শুরু করব এটা করাই যায়, আর অন্যরা ক্যাশ নিয়ে চলতে পারলে আমি কেন পারব না? আসলে সেটি ছিল একটা বেকুবের মত কাজ। পরের মাসেও কোন কাজ শুরু হলো না, আমিও ব্যাঙ্ক থেকে বিভিন্ন পার্টির ক্যাশ তুলে নিয়ে আসতাম। ব্যাপারটা ছিল ভয়ানক ঝুঁকিপূর্ন, কিন্তু ব্র্যান্ড অফিসার হবার লোভে আমি কাজ করতাম। একবার এরকম হয়েছিল যে ব্যাঙ্ক থেকে ৪ লাখ টাকা তুলে হেটেই অফিসে ফিরেছি! একবার এক কলিগ ব্যাঙ্কে নিয়োগ পরীক্ষা দিয়েছিল, সেটা যেনে ফেলার পর আমার বস তাকে রুমে ডেকে নিয়ে যাচ্ছেতাই কথা বলেছিল। সে সবসময় খোঁজ নিত কেও খুজছে কিনা, এরকম কাউকে পেলেই চলত ব্রেন ওয়াশ।

মাঝে মাঝে রুমে ঢুকিয়ে বিভিন্ন ধরনের স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান করা হত,যার সব কিছু ছিল ফালতু। সেই বস বিভিন্ন সময়ে মিথ্যা কথা বলে আকৃষ্ট করত। তার কথা বার্তার নমুনা ছিল “আর এক বছরের মধ্যে আমাদের প্রতিদিনের রেভিনিউ এক কোটি টাকা হবে!! তখন আপনাদের স্যলারি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, চিন্তা করতে পারেন!! আপনারা জানুয়ারী মাসেই নতুন ব্যান্ড লঞ্চ করব!! আর কয়েকদিন পরেই আমাদের প্রোডাকশন আরো জোড়ালো ভাবে শুরু হবে। ৭ কন্টেইনার মেশিনারিজ পোর্টে মাত্র ঢুকেছে!! “আপনি কি জানেন, আর দুই বছরের মদ্ধ্যে এই ইউনিট কোম্পানীর ক্যাপিটাল ৬০০ কোটি টাকা হবে, আর রেভিনিউ হবে ৬০০ কোটি!!” , “এক বছরের মধ্যেই আপনি প্রমোশন পেয়ে যাবেন। “ “পাঁচ বছর পর আপনার বেতন কয়েক লাখ টাকা হয়ে যাবে।

“ এভাইবেই ৫/৬ মাস কেটে গেল। তারপর সিদ্ধান্ত নিলাম আর না এখন এখান থেকে যেতেই হবে। কিন্তু এখনে থাকলে তো আর চাকরী খোজা সম্ভব না। আমার ভাই বলল নতুন চাকুরী পেয়ে তারপর ছাড়তে। কিন্তু আমার আর সহ্য হচ্ছিল না, এক সকালে অফিসে যেয়ে বসকে সরাসরি বললাম এখন থেকে কোন ক্যাশ ক্যারি করতে পারব না, ব্যাপারটা আমার জন্য রিসকি।

বস বলল, তাহলে এতদিন ক্যাশ আনলেন কেন? আমারও সোজা সাপটা উত্তর “এতদিন রিস্কি মনে করিনি, এখন মনে হচ্ছে ব্যাপারটা রিস্কি। “ আর আমি যদি জানতাম আমাকে এভাবে টাকা আনতে হবে আথলে তো আমি জয়েন করতাম না!!” অবাক হয়ে দেখলাম আমাকে আর কিছু বলা হলো না। এখান থেকে একটা জিনিষ শিখলাম, কেউ যতই টাউট বদমাইশ হোক রুখে দাড়ালে ওরা একদম কেঁচো হয়ে যায়। এরপর যেই কয়েকদিন ছিলাম আমি কখনো ব্যাঙ্ক থেকে ক্যাশ আনতে যাইনি। আমার সিনিয়র কলিগরাই ক্যাশ নিয়ে আসত।

কয়েকদিন পর আমার চাকরী কর্নফার্ম হলো। কিন্তু আমি এর কয়েক দিন পরেই রিজাইন দিলাম। ভেবেছিলাম আমার একটা “এক্সিট ইন্টারভিউ” হবে,আমার মনের কষ্টের কথা এইচ.আর এর সাথে শেয়ার করব। কিন্তু যেদিন রিজাইন দিলাম সেদিন রাত্রেই আমার এক সিনিয়র কলিগ আমাকে ফোন করে বলল, “স্যার (আমার বস) বলেছেন ডিরেক্টর স্যার আপনার রেজিগনেশন লেটার অ্যাকসেপ্ট করেছেন, কাল থেকে আপনার আসার দরকার নেই। অর্থ্যাৎ আমাকে এইচ.আর এর মুখোমুখি করা হলো না, কত নীচ মানসিকতা হলে এরকম করতে পারে!! চাকরী ছাড়ার পর মনে হয়েছিল নতুন চাকরী না পেয়ে ছেড়ে দেয়াটা উচিত হয়নি, কিন্তু মানসিক অবস্থা এমন দাড়িয়েছিল যে না ছেড়ে আর উপায় ছিলনা।

ব্লগে দেখলাম কিছু মাল্টি ন্যাশেনাল কোম্পানী ও দেশীয় স্বনামধন্য কোম্পানী (যেখানে জব এনভায়রনমেন্ট/ এইচ.আর প্র্যকটিস বেশ ভালো) সেগুলোকে গালাগালি দেয়া হয়। কিন্তু আমি গালি দেই না!! কেননা সেসব কোম্পানী আর যাই হোক এমপ্লয়িদের মর্যাদা দেয়, যেটা দেশীয় অনেক কোম্পানী (সব কোম্পানী না) ছিটে ফোটাও দেয়না, কুকুরের মত আচঁড়ন করে, আমার মতে সেই সব কোম্পানীর বিরূদ্ধেও প্রতিবাদ করা উচিত। প্রথম চাকুরী ছাড়ার পর আরেক দেশী কোম্পানীতে তিন/চার মাস ছিলাম, সেখানেও কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল। সে সম্পর্কে আরেকদিন জানাবো। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।