আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিমর্ষতায় বিলীন সারাবেলা...

আজ বেঁচে থাকতে বড় লজ্জা হচ্ছে। দুটো পাহাড়ের মাঝখানে সবুজ একটি উপত্যকা । রংধনুর সিঁড়ি বেয়ে সে দেশে যেতে হয়। অনেক সাদা সাদা ফুল সেখানে ফুটেছিল। রংধনুর চুইয়ে পড়া রঙে সব সাদা ফুল গুলো রঙিন হয়ে উঠে।

ভালোবাসারা যেন রঙিন পাখা মেলে প্রজাপতির মত উড়ে বেড়ায়। রংধনুর সিঁড়ি বেয়ে সে ফুলের উপত্যকায় পৌঁছে শ্রেয়ার সাথে তার সময় কাটায়। ঠিক যেমনটা চাই। সে জগতে সব কিছুই চাওয়ার সাথে মিলে যায়। অরিত্র প্রায়ই এই ধরনের একটি দেশ স্বপ্নে দেখত।

কিন্তু অনেক দিন হয়ে গেলো স্বপ্নের সেই ফুলের উপত্যকা সে দেখতে পায়না । দীর্ঘদিন যাবত স্বপ্নে একটি মৃত্যুর আবির্ভাব হচ্ছে। যে কোন ভাবেই অরিত্র মারা যাচ্ছে। আসলে সে মারা যায়না না তাকে মেরে ফেলা হয়। অরিত্র এই মৃত্যু স্বপ্নের কোন অর্থ জানে না।

আজও তেমনি একটি দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম থেকে জেগে উঠে। অরিত্রের বুক ধড়পড় করে কাঁপছে। পুরো শরীর ঘামছে। অরিত্রের অস্থিরতা বাড়ছে। নিজেকে অসহায় ছাড়া আর আর কিছুই ভাবতে পারছে না।

হটাত কেনোজানি শুধু শ্রেয়াকেই সান্ত্বনা ভাবছে। তাতে কি, শ্রেয়া কি কখনো ভেবেছে তাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কাকে কখন কার জন্য খুব করে প্রয়োজন? আসলে যেকোনো সম্পর্কের জন্য শুধু একজনের হঠকারী খামখেয়ালীপনা কতটা বিপজ্জনক তা শুধু শ্রেয়াতেই নির্ণয়। মোবাইলের রিংটোন হতচকিত। এত সকাল কে ফোন দিবে? মায়ের তো দেয়ার কথা না। কোন খারাপ কিছু নাতো? - হ্যালো মা হ্যাঁ বল? - বাবা, বাবা তুমি কি কর? বাবা… - কি হল মা তুমি হাঁপাচ্ছো কেন কি হইছে? - আব্বা আপনে আজকে ঘর থেকে বাইর হইয়েন না।

- আচ্ছা বুঝলাম বের হওয়া যাবে না, কিন্তু তার আগেতো বলবে কোন দুঃস্বপ্নটা আজ আবার আমায় মারতে চেয়েছে। - তোর শুনে কাজ নেই। তুই যা উঠে নামাজ পড়ে আয়। - তুমি অহেতুক ভেবোনা। ভালো আছি যেনো।

তোমার দোয়ায় ভালোই থাকবো। আচ্ছা রাখি পরে ফোন দিবো। টেনশন করোনা শুধু শুধু। নিজের দিকে খেয়াল রেখো, আচ্ছা রাখি। অরিত্র হতভম্ব হয়ে বসে রইলো।

ব্যাপারটা তাকে ভাবাতে শুরু করে। হাত-মুখ ধুয়ে একটি সিগারেট জ্বালাতে জ্বালাতে নেটবুক ওপেন করে। নেট এ ঢুকে ‘স্বপ্নের অর্থ’ দিয়ে সার্চ করে বিভিন্ন সাইট ঘাঁটতে থাকে। কোন স্পষ্ট মিনিং পাওয়া যায় না। যতটুকু পাওয়া যায় তাতে বুঝা যায় স্বপ্নে আল্লাহর তরপ থেকে কোন ম্যাসেজ থাকে।

আর মৃত্যু স্বপ্ন থেকে বুঝা যায় কোন খারাপ দুর্ঘটনা বা মৃত্যু হতে পারে। নিমিষে মনটা কালো হয়ে যায়। চোখের সামনে নিজের মৃত্যু দেখতে পায়। নিজের হতে কোন মানুষের খারাপ করাতো দূরে থাক! খারাপ করার চেষ্টা বা কল্পনাও করিনি। তাহলে কেন এমন হচ্ছে!! হটাত একটি প্রার্থনার কথা মনে হল শবেবরাত রাতের।

আল্লাহ্‌র কাছে করা প্রার্থনা। - যদি নিজের মত করে বাঁচতে না পারি। নিজের ভালোবাসার মানুষ শ্রেয়াকে না পাই। তাহলে বেঁচে থেকে কি লাভ। বাঁচালে বাঁচার মত বাঁচিয় না হয় আমাকে তুলে নিয়ো।

আত্মহত্যা করার সাহস না থাকায় মৃত্যু কামনা! আল্লাহ্‌ তাহলে শেষমেস মিলনাত্মকে কিছু না পেয়ে মৃত্যুতে কোন কিছুর সমাধান পেল। এই ভেবে কিছুটা আল্লাহ্‌র প্রতি অভিমান! মুসলিম হয়ে জন্ম। তার উপর শেষ নবী মোহাম্মদ (সঃ) এর উম্মত। মনে প্রাণে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস। আল্লাহ্‌ যা করবেন ভালোর জন্য করবেন।

তাই এখন আরেকটি প্রার্থনা করতে ইচ্ছে করলো! আল্লাহ্‌ যেন বেহেস্তে ৭০ জন হুর না দিয়ে একজন মানবী শ্রেয়াকে দেন। যাকে নিজের চেয়ে বেশি ভালোবাসে। যাকে পাওয়ার কোন সমীকরণ পার্থিব জীবনে মিলেনি। দুপরের খাওয়া শেষ। কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে পূর্ব নির্ধারিত কলাবাগান এর উদ্দেশ্যে রওনা।

শাহ এর সাথে দেখা করতে। অরিত্রের কলেজর প্রিয় বন্ধু। অস্ট্রেলিয়া থেকে এসেছে গতকাল। অরিত্র ৩৬ নাম্বার গাড়িতে বাম পাশের সিটে জানালার ধারে বসা। তাই দৃষ্টি বাহিরে।

গাড়ীটি মিরপুর শ্যাওড়াপাড়ায় যাত্রী নেয়ার জন্য দাঁড়ালো। একটি মেয়ের সাথে চোখাচোখি হল। সুমা! অরিত্রের বান্ধবী। লাইনের প্রথমে দাঁড়ানো। পরিচয় ভার্সিটি বন্ধু গোলাপ এর মাধ্যমে।

সুমা অরিত্রকে খুব ভালোবাসতো। কিন্তু শ্রেয়ার সমতুল্য কিছু না থাকায় চলার রাস্তা এক হল না। বন্ধুত্বটাও আর টিকে থাকেনি। বাস আবার চলতে শুরু করে। পাশের সিটে সুমা।

- কেমন আছ অরিত্র? - এইতো ভালো। তুমি? - আমিও ভালো। কোথায় যাচ্ছ? - কলাবাগান। তুমি? - নিউমার্কেট। মার্কেটিং করতে।

- হুম। তোমার বিবিএ কমপ্লিট হয়েছে কি? - না। লাস্ট সেমিস্টার চলছে। তোমার চাকুরীর কি খবর? - আপাদত করছি না। ভাললাগেনা অন্যকারো অধিনে কাজ করতে।

- তাহলে কি করবে? - দেখি কি করা যায় স্বাধীন ভাবে। - ভালো কথা! তোমার শ্রেয়ার কি খবর? - আমার শ্রেয়া !ভালো। মুখটা কিছুটা বিমর্ষ । - বিয়ে করছ কবে? - আল্লাহ্‌ যে দিন কপালে রাখে। একটু অনভ্যস্ত হাসি।

- বিয়ে হুটহাট করে করে ফেলোনা। দাওয়াত-টাওয়াত দিয়ো অন্তত। - দেবো! দেবো!দাওয়াত পাবে অবশ্যই। সুমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে কলাবাগান নেমে মনটা আবার খারাপ হয়ে গেলো। নিজের মনে মনে যাকে নিয়ে সারাবেলা বিমর্ষতায় বিলীন।

একটি সিগারেট জ্বালিয়ে শাহ এর বাসার দিকে এগোল। সিগারেটটা এখন নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে উঠেছে হাঁটার সময়, খাওয়ার পরে ও যে কোন কাজের আগে সিগারেট! বাসার সামনে গিয়ে শাহ কে ফোন করে। শাহ ছাদে চলে আসতে বলে। আর দুজন কলেজ ফ্রেন্ড এর সাথে দেখা হয়। এনাম ও সাদিক।

শাহ তাকে জড়িয়ে ধরে । - দোস্ত তোকে অনেক মিস করেছি। - আমিও দোস্ত। কেমন আছ? - ভালো। - কত দিন আছস দেশে? - এক মাস।

চাকুরী-টাকুরী কিছু করস? - কিছু দিন করেছি এখন না। - হুম। বাসায় সবায় কেমন আছে? - আব্বু আম্মু দুজনি অসুস্থ। তোর? - একই অবস্থা। বয়স হয়ে গেছে তাই।

- হুম। কেমন লাগলো বিদেশ? - ভালো । অনেক সুন্দর। শান্তির জায়গা। কিন্তু তোদেরকে অনেক মিস করেছি।

- হুম। সবাই তাই বলে। আমার জন্য কি আনলি বল ? - তেমন কিছু না। একটা টিশার্ট । সময় পাই নাই ।

হুট করে আসা। - আর। - স্কচ আনছি। সবাই মিলে খাব। তোর জন্যই অপেক্ষা করছি।

- স্কচ আবার কি জিনিস। খায় না পরে! - ন্যাকামি কর! তোমারে দুইদিন লোড অবস্থায় পাইছি ফোনে। - নারে মামা! ঐ দুদিন ভার্সিটির প্রোগ্রাম ছিল। পোলাপাইন জোর করে খাওায়ায় দিছে। - আজকে মনে করবা আমি জোর করে খাওয়ায়ছি ।

- আচ্ছা!! একটু খামু বেশি না। - ঠিক আছে মামা! আমি সব রেডি করে রেখেছি। খাওয়ার পর বের হব। সন্ধার আকাশ সূর্যের ফেলে যাওয়া লালিমায় লাল হয়ে গেছে। অরিত্র,শাহ,সাদিক ও এনাম গোল হয়ে টেবিল চারপাশে বসা।

হাতে ওয়াইন গ্লাস। শাহ হাইল্যান্ড পার্ক স্কচ এর বোতল খুলে সবার গ্লাস ভর্তি করে দিলো। অনেকটা অরেঞ্জ কালার। স্কচ এর গ্লাস চারটা একত্র করে মিনিট খানেক ধরে রাখে সবাই। চিয়ার্স বলে যে যার গালে ঢেলে দেয়।

গলাটা মনে হয় পুড়ে যায় যায়। যদিও আগের দুবারের চেয়ে অনেক কম। রেগুলার না বলে হয়তো এই অবস্থা! শাহ সিগারেটের প্যাকেট টা বাড়িয়ে দিয়ে বলে - নে একটা সিগারেট জ্বালা অনেক ভাল লাগাবে। একটা সিগারেটটা জ্বালিয়ে গ্লাসের বাকি স্কচ টুকু খেয়ে নেয়। মাথাটা ঝিমঝিম করেতে লাগলো।

সবাই চুপ হয়ে বসে থাকে কিছুক্ষণ। আরেক গ্লাস স্কচ খেয়ে যে যার মত কথা বলতে শুরু করে। অরিত্র চেয়ারটা টেনে ছাদের রিলিং এর পাশে গিয়ে বসে। নীরবতাটা অনেক ভাল লাগে। একটার পর একটা সিগারেট জ্বালায় আর দূরের আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।

বাতাস এসে চুল গুলো উড়িয়ে দেয়। স্নিগ্ধ বাতাসটা মাদকতার অন্য রকম অনুভূতির জানান দেয়। আপন ভুবনে ডুবে যায় অরিত্র! অন্য অনেক সময়ের চেয়ে কম পোড়াচ্ছে তার ভাবনার জগত। কখন জানি শাহ এসে পাশে দাড়ায়। - কিরে কে-মন লাগছে? - ভা-ল।

তোর ? - সে র-কম। বলছিনা মা-মা ভাল লাগবে। চল নি-চে যায়। - কে-ন? আরেক-টু বসি। - চল না।

নাস্তা ক-রব। - আচ্ছা চ-ল। তুই যা বল-বি তাই। চেয়ার থেকে উঠে টলতে টলতে শাহ’দের সাথে নিচে যায়। গন্তব্য এখন রবীন্দ্র সরোবর এর দিকে।

রবীন্দ্র সরোবর এর পাশে একটি চাপ এর দোকান খোলা। সবায় চাপ খেতে বসে। চাপ খেয়ে গল্প করতে করতে সাড়ে নয়টা বেজে যায়। হঠাৎ চোখ পড়ে মোবাইল এর দিকে। মোবাইলে সময় দেখে চমকে যায় অরিত্র।

দেশের পরিস্থিত ভালো না। যে কোন সময় যে কোন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। মার্ডার মামলার জামিন থাকলেও শিবিরের মামলার জামিন নাই। শরীরেতো আর দেশপ্রেমিকের সিল মারা নেই। তাই অরিত্র সকলের কাছে বিদায় নেই।

একটি রিক্সা নিয়ে কলাবাগান মাঠের কাছে আসে। রিক্সাওয়ালাকে একটি বিশ টাকার নোট দিয়ে সামনে হাটতে শুরু করে। কোন জায়গায় দাড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে করলো না। নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে চেষ্টা। আরেকটি সিগারেট জ্বালিয়ে বাস এর জন্য অপেক্ষা।

একটি সিএনজি দেখে আর দেরি করলো না। সিএনজিতে করে মিরপুর নিজের বাসার সামনে নামে। মানিব্যাগ থেকে পাঁচশত টাকার একটি নোট বের করে সামনের দোকান থেকে এক প্যাকেট বেন্সন কিনে। বাকী টাকা সিএনজিওয়ালা কে দিয়ে টলতে টলতে এপার্টমেন্টে প্রবেশ করে দারওয়ানকে কোক আনতে টাকা দেয়। দারওয়ান একশত টাকার একটা নোট নিয়ে কোক আনতে চলে যায়।

অরিত্র সবুজকে ফোন করে নিচে আসার জন্য। সবুজ নিচে নামাতে নামতে দারওয়ানও কোক আর কয়েল নিয়ে আসে। - ভাই! তোমার কি হয়েছে। চোখ-মুখ এত লাল কেন? - কিছু-না। আমাকে বা-সায় নিয়ে চল।

- বেশি খারাপ লাগলে এখানে কিছুক্ষণ বসতে পার। - আমা-র খারাপ লাগবে কে-ন। আমি এক-দম ঠিক আছি। চ-লতো । স্পষ্টভাবে কথা বলতে পারছে না।

সবুজের ঘাড়ে হাত রেখে সোজা রুমে। কিছুটা স্বস্তি লাগছে নিজের পরিবেশে। রাত এগারটা। ফ্রেশ হয়ে শুয়ে শুয়ে সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে নেটবুক চালিয়ে গান প্লে করে। Jal এর Bikhra hoon main গানটা শুনতে শুনতে চোখে শ্রেয়াকে না পাওয়ার হতাশা ভর করে।

কখনো শ্রেয়ার হৃদয় স্পর্শ না করতে পারার পরাজয় কুঁড়ে কুঁড়ে পোড়ায়। কোন চেষ্টার তো কমতি ছিলোনা। তবু কেন শ্রেয়াকে পাওায়া হল না? চোখ বন্ধ করে শ্রেয়ার হৃদয় স্পর্শ করার চেষ্টা। প্রায়ই অরিত্র এরকম করে। চোখ বন্ধ করে কল্পনার জগতে শ্রেয়ার হৃদয় ছুঁতে চায়।

এমন সময় একটি গানের কিছু লাইন কানে ভেসে আসে। তোরে মন দিয়া মন দিয়া আগুন জ্বালায় যে মনে মনের আগুন মনে জ্বলে রে..... গানের ব্যাকুলতায় টলটল করে জল ঝড়তে থাকে দুচোখে। এভাবে অরিত্রের জীবন থেকে হারিয়ে যায় আরেকটি হতাশাগ্রস্থ রজনী ….. -------------------------------------------------------------------------- শ্রেয়াকে নিয়ে অরিত্রের ভাবনার জগতের পূর্ববর্তী পোস্ট নয়নও তোমাকে পাইনা দেখিতে রয়েছ নয়নে নয়নে --------------------------------------------------------------------------  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.