আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আল বদর আল শামসের পর ‘আল হুদা’

আল বদর আল শামসের পর ‘আল হুদা’ মহাজোট সরকারের বিরুদ্ধে জামায়াতের আন্তর্জাতিক চক্রান্ত শুধু দেশের ভেতরেই গেরিলা কায়দায় অতর্কিত আক্রমণ নয়, আন্তর্জাতিক বলয়েও তালেবানি কায়দায় রাষ্ট্র, সরকার ও যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির আধার জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। ‘আল হুদা’ নামের মাসিক আরবি ভাষার পত্রিকায় আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত মহাজোট সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিকৃত সমালোচনা করে নিয়মিত সংবাদ, প্রবন্ধ ইত্যাদি প্রকাশ করে মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলোয় পাঠাচ্ছে দলটি। এতে আরববিশ্বে সরকারের ভাবমূর্তিই শুধু নষ্ট হচ্ছে না, বাংলাদেশ সম্পর্কেও বিষিয়ে তোলা হচ্ছে ওইসব দেশের শাসকের মন। যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধ করতে সরকারের ওপর আরব দেশগুলোর পক্ষ থেকে চাপ বাড়ানোই জামায়াতের এই প্রচারণার মূল উদ্দেশ্য। মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের শ্রমবাজার ধ্বংস করে সরকারকে বিপর্যস্তও করতে চায় দলটি।

‘আল হুদা’র অর্থ পথপ্রদর্শন অথবা দিকনির্দেশনা। সন্দেহ নেই, এ পত্রিকাটি দিয়ে একাত্তরের মতোই ভুল পথ প্রদর্শন করছে জামায়াতে ইসলামী। আর এর শিকার হচ্ছেন আরববিশ্বের ভাতৃপ্রতিম দেশের শাসকরা। মহাজোট সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্টে পত্রিকাটি ব্যাপক অর্থে নেতিবাচক ভূমিকা রাখছে। ‘আল হুদা’ নামের এই পত্রিকাটি আরবি ভাষার প্রকাশিত হওয়ায় জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী এবং দলটির পছন্দের কিছু মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়া বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ পত্রিকাটির খোঁজই রাখে না।

এমনকী সরকারের পুলিশ-গোয়েন্দারাও না। জামায়াতের নাম না থাকলেও এর লেখক-সম্পাদক সবাই জামায়াতকর্মী। পত্রিকাটি সরকারের নিবন্ধনকৃতÑ (রেজি-ডিএ-১/৯৫) এবং প্রিন্টার্স লাইনে দারুল আরাবিয়া বাংলাদেশ ৪৯৩ এলিফ্যান্ট রোড, বড় মগবাজার, ঢাকা (গ্রিন ভ্যালি অ্যাপার্টমেন্ট-১/এ) ঠিকানা রয়েছে। পত্রিকার সাম্প্রতিক কয়েকটি সংখ্যা থেকে কিছু শিরোনাম ও উল্লেখযোগ্য কিছু অংশ অনুবাদে তুলে ধরলেই বিষয়টি পাঠকের কাছে পরিষ্কার হবে। ‘আল হুদা’র চলতি অক্টোবর ২০১১ সংখ্যার সংবাদ শিরোনামগুলো হচ্ছে, ০১. দেশীয় ষড়যন্ত্রের কারণেই গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটছে না: জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমেদ ০২. বিশেষ আদালতের মাধ্যমে জামায়াত নেতাদের যুদ্ধাপরাধের শাস্তি দেওয়ার প্রচেষ্টাকে জনগণই রুখবে।

এ সংখ্যার মূল প্রবন্ধের শিরোনামÑ ‘বর্তমান সরকারের আমলে নিরাপদ নয়Ñ ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার’। প্রবন্ধটি লিখেছেনÑ আবুল খায়ের মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ। এ লেখায় সরকারের সমালোচনা করে বলা হয়েছেÑ “বর্তমান সরকার দাবি করে তারা ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করেছে। অথচ তাদের ধারাবাহিক কার্যক্রম বলছে, এ সকল অধিকার অনিশ্চিত-অনিরাপদ। যেমন, ১. পঞ্চম সংশোধিনীর মাধ্যমে তারা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ প্রতিষ্ঠা করেছে।

আমরা সকলেই জানি, ধর্মনিরপেক্ষতা একটি কুফুরি মতবাদ। আর এ মতবাদই ধর্ম থেকে রাষ্ট্রকে পৃথক করে দেয়। সমাজে কী রাষ্ট্রেÑ বর্তমান সরকার কোনওভাবেই ধর্মকে অনুমোদন করছে না। অনুমোদন করছে না ধর্মভিত্তিক কোনও রাজনৈতিক দলকেও। এ মতবাদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেক্যুলার শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছে।

এতে মুসলিম শিক্ষার্থীদের আল্লাহ ও ধর্মের সঙ্গে কোনও ধরনের সম্পর্ক থাকবে না। ২. বর্তমান সরকার মুসলিম নারীদের জন্য হেজাব নিষিদ্ধ করতে উঠে-পড়ে লেগেছে। এ কারণেই তারা আইন করেছেÑ সন্তানকে পিতা-মাতা এবং স্ত্রীকে স্বামী পর্দায় বাধ্য করতে পারবে না। ৩. সমঅধিকারের নামে জীবনের সকল বিষয়ে নারী ও পুরুষকে এক কাতারে এনে দাঁড় করিয়েছে সরকার। এমনকী ‘মিরাস’ তথা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পদেও তুলেছে সমঅধিকারের প্রশ্ন।

অথচ বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি রাষ্ট্র। ৪. বর্তমান সরকার কোনও বিরোধী দলের ব্যাপারেই উদার নয়। অনুমোদন করে না প্রতিবাদ, বিক্ষোভের। অথচ প্রতিটি প্রশাসন ও কার্যালয় তাদের দুর্নীতিতে ডুবে আছে। অকথ্য নির্যাতন চালাচ্ছে ইসলামি ও বিরোধী দলগুলোর ওপর।

মিথ্যা অভিযোগে তাদের হয়রানি করছে এবং জেলে পুরছে। ” প্রবন্ধটিতে আরও আছেÑ “এ সরকার রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার ধ্বংস করতে মরিয়া। নিরাপত্তাকর্মীদের সাহায্যে বিরোধী দলগুলোকে দমিয়ে রাখছে। যাতে জনগণ সরকারের দুর্নীতি ও রাষ্ট্রীয় অবস্থার অবনতি সম্পর্কে জানতে না পারে। তারা ধর্মীয়, গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতাকেও খর্ব করছে।

গত ১৯ সেপ্টেম্বর দেশব্যাপী জামায়াতে ইসলামীর বিক্ষোভরত কর্মীদের গ্রেপ্তারই এর প্রমাণ। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বশত মিথ্যা-বানোয়াট যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াত নেতাদের জেলে পুরছে। অথচ যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্কই নেই। এসকল নেতিবাচক পদক্ষেপ ও প্রতিহিংসা রাষ্ট্র ও সরকার কারও জন্যই সুফল বয়ে আনবে না। বিগত রাজনৈতিক ইতিহাসই এর সাক্ষী।

হুমায়ুন কবির খোকন ও হাসান আতিক // দৈনিক আমাদের সময় ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।