আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিস ইউনিভার্সিটি : বাংলাদেশ

বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রীদের জন্যে কিংবদন্তী মিডিয়া নামের একটি প্রতিষ্ঠান এক প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। প্রতিযোগিতার নাম 'মিস ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ'। বার্তা সংস্থা বিডিনিউজ২৪.কম বলেছে একুশে টিভি নভেম্বর মাস থেকে এই রিয়েলিটি শোটি'র সমপ্রচার শুরু করবে। এতে মিডিয়া পার্টনার হিসেবে আরো রয়েছে রেডিও টুডে। 'স্বপ্ন দেখা শুরু হলো, জীবনেরই কথা বলো'।

এটি প্রতিযোগিতার টাইটেল সংগীত। তো, স্বপ্নটা কী? ১২ বছরের শিক্ষাজীবন অতিক্রম করে যে মেয়েটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে তাকে কি নতুন করে স্বপ্ন দেখাতে হবে? বিজ্ঞানী, গণিতবিদ, গবেষক, শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী হবার স্বপ্ন নিয়ে যে মেয়েরা এগিয়ে চলেছে, তাদের স্বপ্নকে নতুন নিশানার দিকে ঘুরিয়ে দিতেই কি ব্যবস্থা রাখা হয়েছে ঢাকায় ৩ কাঠার প্লট, নতুন গাড়ি, নগদ ৫ লাখ টাকাসহ নানারকম পুরষ্কারের? রাতারাতি স্টার হবার মায়াবী হাতছানি তো আছেই! শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, কর্মসংস্থানসহ বহুবিধ অভাবে জর্জরিত ষোলো কোটি মানুষের এ দেশে কতগুলো 'মিস' দরকার আমাদের? এসব 'মিস'রা টেলিভিশন সিনেমায় কিছু আদিখ্যেতা দেখানো ছাড়া আমাদেরকে বিশেষ কিছু কি দিতে পেরেছে? পেরেছে কি মানুষের কল্যাণে কোনো পদক্ষেপ নিতে? পেরেছে কি তাদের তারকা ইমেজ ব্যবহার করে দেশের তারুণ্যকে নতুন কোনো পথের দিশা দিতে? যদি না পেরে থাকে, তাহলে এ ধরনের 'মিস' আমাদের আদৌ দরকার আছে কি? হয়তো কেউ কেউ বলবেন, যাদের ইচ্ছে তারা যাবে, যাদের ইচ্ছে নেই তারা যাবেনা। এখানেও কথা থাকে। আপনার ইচ্ছেকে যদি কেউ প্রভাবিত করে বিপথে পরিচালিত করে, সেটিও অপরাধ। আমাদের দেশের কর্পোরেট বেনিয়ারা এ অপরাধই করে চলেছে একের পর এক।

আমরা চুপ করে আছি। কেউ হয়তো এমনও বলবেন, এসব প্রতিযোগিতায় শুধু রূপ নয়; মেধা, যোগ্যতা, ব্যক্তিত্ব সবকিছুই বিচার করা হয়। মানলাম। সবকিছু বিচার করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যবহৃত হয় কোনটা? গিয়েথুয়ে ওই রূপটাই তো! এ ধরণের প্রতিযোগিতা থেকে উঠে এসে কেউ কি বড় কোনো সামাজিক প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দিয়েছে? কেউ কি কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলেছে? কেউ কি কোনো সামাজিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে? দেয়নি।

এসব প্রতিযোগিতা থেকে উঠে এসে দিনে দিনে তাদের পোশাকেব্লর আকৃতি ছোট থেকে ক্ষুদ্র হয়েছে। কেউ কেউ প্রভা, নোভা, চৈতী হয়ে গেছে। আমাদের দেশটার আজ সত্যিই বড় দুর্দিন চলছে। এখানে এখনো একজনের আয়ে পাঁচ, সাত, দশজনের ভরনপোষণ চলে। এখানে মেয়েরা এখনো সমাজের, পরিবারের বোঝা।

আমাদের অনেকগুলো বিজ্ঞানী দরকার, অনেক চিকিৎসক দরকার, অনেক শিক্ষক দরকার, অনেক গণিতবিদ দরকার। আমাদের মেয়েরা পুলিশে যাক, সেনাবাহিনীতে যাক, পাইলট হোক। ঘুচে যাক মেয়েদের যত গ্লানি। মেয়েরা পরিচিত হোক মাতৃত্বে, ব্যক্তিত্বে, মেধায়, কর্মদক্ষতায়। আসুন আমরা সবাই এ ধরণের প্রতিযোগিতার প্রতিবাদ করি।

আমাদের মেয়েদেরকে এসব কর্পোরেট ফাঁদে পা দিতে নিরুৎসাহিত করি। -প্রথম আলো ব্লগ হতে সংকলিত ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।