আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিজয়ার শুভেচ্ছা ও সার্বজনীনতা নিয়ে কিছু কথা আর স্মৃতিচারন

অযথা ক্যাচাল পছন্দ না, তাই তালগাছবাদীরা দূরে থাকুন বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা সবাইকে আজকে দশমী, অর্থাঁৎ শুক্লপক্ষের দশম দিন, আজকে দেবী মর্তধাম ছেড়ে আবার কৈলাশে ফিরে যাচ্ছেন। অবশ্যই সনাতন ধর্ম মতালম্বীরা এ ব্যাপারে অনেক ব্যাথিত, তবু দেবী আবার আসবেন এই আশায় আমরা আছি। ছোট বেলায় দেখতাম সবাই কেমন নাচানাচি করত মূর্তির সামনে, আমার তখন বুক ফেটে কান্না আসত। আমি ভাবতাম কেমন পাষন্ড তোরা মা আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছেন, তার মুর্তি টা নিয়ে তোরা হাসিখেলায় মেতে উঠেছিস। মনে কি একটু কষ্ট হয়না, যাকে এই কয়দিন ধরে পূজা করা হলো তাকেই এভাবে বিদায়।

কিন্তু এখন বুঝতে পারি এখানে সনাতন ধর্মের দর্শন কতটা গভীর। যখন কেউ মারা যায় তখন তার দেহ ঠিক ই থাকে শুধু থাকেনা আত্মা টুকু। তাই আত্মাবিহীন দেহ আর একটা পাথরের টুকরা একই সমান কথা। ঠিক তেমনি যখন দেবী মূর্তি ত্যাগ করেন তখন তা সামান্যই একটা মাটির মূর্তিতে পরিণত হয়। হিন্দুরা কখনও মাটির মূর্তিকে পূজা করেনা।

তারা ঈশ্বরকে মূর্তিতে কল্পনা করে তাকে আবাহন করে পূজা করে থাকে। যখন দেবীকে বলা হয়, "দেবী আমি এই কয়দিন যৎসাধ্য পূজা করেছি তোমার, তুমি চঞ্চলা, সর্বগামী, আজ দশমী এখন তুমি তোমার গন্তব্যতে গমন করতে পার"। তখন সেই মূর্তি শুধু ই মূর্তি থাকে। সার্বজনীনতা সার্বজনীনতা নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে, সত্যি কথা বলতে কি, সার্বজনীনতা হচ্ছে সকল ধর্ম বর্ণের মিশ্রণ, শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মের উচু নীচু জাতের মিলন মেলা হলে তা সার্বজনীন হয়না। একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে মন্দিরের পুরোহিত রা বা দর্শনার্থীরা সবাই বলছে সকল মানুষের কল্যাণের জন্য পূজা করেছি, মানব জাতির জন্য প্রার্থনা করেছি।

এখানে কিন্তু কোন বিশেষ গোষ্ঠির কথা বলা হয়না। এটাই সার্বজনীনতা। অথচ অন্য অনেক অনুষ্ঠানে দেখা যায় যে তারা বিশেষ কোন উম্মাহ্‌র জন্য প্রার্থনা করেন। বর্তমান পরিস্থিতি ও তথাকথিত চরমপন্থীদের কিছু কথা অনেকেই বলেন যে বর্তমানে হিন্দুদের সাথে মুসলমানেরা তাল মিলিয়ে নিজের ধর্মকে নষ্ট করছে বা তারা হিন্দু হয়ে যাচ্ছে বা হওয়ার চেষ্টা করছে। সত্যি কি তাই?? এভাবে জাত গেল গেল করে কি লাভ?? যদি কারো নিজের ধর্মের উপর বিশ্বাস না থাকে তবে তাকে এভাবে রাখা মানে হবে জোর করে ধরে রাখা।

কিন্তু আমার মনে হয় বর্তমান পরিস্থিতি টা তেমন না। আমার নিজের কথা ই বলি, গতকাল আমরা ৯ বন্ধু মিলে নারায়নগঞ্জ ও নরসিংদী ঘুরতে গিয়েছিলাম। অনেকে অবাক হতে পারেন আমাদের মাঝে ৫ জন ছিল মুসলমান ও আমরা ৪ জন হিন্দু। কিন্তু আমাদের সবার আগ্রহ ছিল সমান। কেউ বুঝতে পারবেনা কে কী।

কারণ মানুষের গায়ে ধর্ম লেখা থাকেনা। গাড়িতে উঠার আগে এক বন্ধু মস্‌জিদে গিয়ে নামাজ পরে আসলো আমরা তার জন্য অপেক্ষা করলাম। এটাই আমাদের মানবতা। এর জন্য ই আমরা বাঙালি। তারা যেমন আমাদের পূজাতে স্বতস্ফূর্তভাবে আসে ঠিক তেমনি তাদের ঈদে ও আমরা এভাবেই ঘুরি।

ঈদে ঘুরতে গেলাম আমরা ৫ জন তার মাঝে ৩ জন হিন্দু আর ২ জন মুসলমান। তাই বলবো বৃথাই এইসব চরমপন্থী মার্কা কথা বলে মানুষের মাঝের সদ্ভাব নষ্ট করবেন না। মানুষকে একত্রিত হতে দিন। সার্বজনীন মানে কোন মুসলমানকে পূজা দিতে হবেনা। কিন্তু একাত্মতা প্রকাশ করা।

এতে কেউ ধর্মচ্যুত হয়ে যাবে বলে আমার মনে হয়না। সবশেষে আবার ও সবাইকে বিজয়ার শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। ধন্যবাদ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।