আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল এর জন্য সংকটপুর্ন সময় | ডেভিড বার্গম্যান:ডেভিড বার্গম্যান

১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের দ্বারা যেসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে অভিযোগ- তার বিচারে নিয়োজিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল এক গুরুত্বপুর্ন অধ্যায়ে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। আটক সাত ব্যক্তির মধ্যে একজন- দেলাওয়ার হোসাইন সাইদীর বিপক্ষে আনা ‘অভিযোগসমুহ’ ট্রাইবুনাল ‘আমলে নিয়েছে’ এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন (ফ্রেম অফ চার্জেস) করা হবে কিনা, হলে কোন অপরাধগুলোর জন্য করা হবে সে বিষয়ে সোমবার (আজ) ট্রাইবুনাল তার সিদ্ধান্ত দেবে। কিছু দিন আগ পর্যন্তও ট্রাইবুনালের সামনে প্রধানত জামিন ও জিজ্ঞাসাবাদ সংক্রান্ত ইস্যুগুলোই ছিল; এখন যেভাবেই হোক, আইন ও সাক্ষ্য-প্রমান বিষয়ে অপরিহার্য সিদ্ধান্তগুলো ট্রাইবুনাল নিতে শুরু করেছে। বাংলাদেশের অনেকের কাছেই সাইদী ও অন্যান্য আটককৃত ব্যক্তিদের বিষয়ে উপসংহার টানা হয়ে গেছে, সাইদী এবং অন্যান্যদের সঠিকভাবে দোষি সাব্যস্ত করার দিকে অনিবার্যভাবে নিয়ে যাবে যেই আইনি পাইপলাইন- বর্তমানে অপরাধ আমলে নেয়া ও অভিযোগ গঠন স্রেফ সেই পাইপলাইনের প্রক্রিয়ার পথে আইনি বাধা মাত্র। সে যাই হোক, যথাযথ প্রক্রিয়া ও পক্ষপাতহীনতার বিষয়গুলোতে যারা গুরুত্ব দেন তারা স্বীকার করবেন যে ট্রাইবুনালের বিশ্বাসযোগ্যতা নির্ভর করবে- সাক্ষ্যপ্রমান যাচাই বিষয়ে ট্রাইবুনালের নেয়া সিদ্ধান্তের ওপর, কিভাবে ট্রাইবুনাল ব্যাখ্যা দেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইবুনাল) আইন ১৯৭৩-এ বর্ণিত অপরাধসমূহের বিষয়ে তার ওপর, এবং ট্রাইবুনাল তার সিদ্ধান্তের ভিত্তি হিসাবে কি আইনগত যৌক্তিক ব্যাখ্যা দেয় তার ওপর।

অপরাধ আমলে নেয়া বিষয়ে যেসব শুনানি এখন সমাপ্ত হয়েছে, সেসব ক্ষেত্রে দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই ব্যাপারগুলোয় তাল মেলে নাই। ট্রাইবুনালের নিজস্ব কার্যপ্রনালি- যা ট্রাইবুনালের বিচারকেরা নিজেরাই তৈরি করেছেন, সেই কার্যপ্রনালিতে বলা আছে যে তারা যদি কোনো একটা অপরাধ ‘আমলে নিতে’ চান তবে কি কি বিষয় দরকার হবে। বিধি ২৯(১) বলছে যে, ‘আনুষ্ঠানিক অভিযোগ, তদন্ত প্রতিবেদন, কাগজপত্রসমুহ, দলিলসমুহ এবং এসবের সমর্থনে প্রসিকিউটরের দাখিলকৃত সাক্ষ্যপ্রমান পরিক্ষা নিরিক্ষা করে, এগুলো যদি অভিযুক্তের বিচারের জন্য প্রাইমা ফেসি কেস প্রকাশ করতে পারে, তবে ট্রাইবুনাল যে কোনো অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে নেবেন। ’ এর মানে কী? প্রথমত, একজন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আনা প্রত্যেকটি অপরাধের অভিযোগই পৃথকভাবে আমলে নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ, তদন্ত প্রতিবেদন, কাগজপত্রসমুহ, দলিলসমুহ এবং এসবের সমর্থনে প্রসিকিউটরের দাখিলকৃত সাক্ষ্যপ্রমান নিরিক্ষনের ভিত্তিতে।

এবং তৃতীয়ত, কোন অপরাধ আমলে নেয়া যাবে শুধু তখনই, যখন ট্রাইবুনাল এই মত পোষন করছে যে সাক্ষ্য-প্রমানাদি ‘বিচারের জন্য প্রাইমা ফেসি কেস’ প্রকাশ করছে। যথাযথ প্রক্রিয়া ও পক্ষপাতহীনতার বিষয়গুলোতে যারা গুরুত্ব দেন তারা স্বীকার করবেন যে ট্রাইবুনালের বিশ্বাসযোগ্যতা নির্ভর করবে- সাক্ষ্যপ্রমান যাচাই বিষয়ে ট্রাইবুনালের নেয়া সিদ্ধান্তের ওপর, কিভাবে ট্রাইবুনাল ব্যাখ্যা দেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইবুনাল) আইন ১৯৭৩-এ বর্ণিত অপরাধসমূহের বিষয়ে তার ওপর, এবং ট্রাইবুনাল তার সিদ্ধান্তের ভিত্তি হিসাবে কি আইনগত যৌক্তিক ব্যাখ্যা দেয় তার ওপর গত ১১ই জুলাই ট্রাইবুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগগুলোর একটা অনুলিপি ও সংশ্লিষ্ট প্রমাণাদি জমা দেয় প্রসিকিউশন, অপরাধ আমলে নেয়া বিষয়ে একটি আবেদনের শুনানির জন্য পরে ট্রাইবুনাল ১৪ জুলাই তারিখ ধার্য করে। ওই ধার্য দিনে বিবাদী এবং প্রকিউশন- কোনো পক্ষের বক্তব্য না শুনেই ট্রাইবুনাল একটি সংক্ষিপ্ত আদেশ দেয়। আদেশে ট্রাইবুনাল বলে যে, ‘এসব জিনিসপত্র পর্যালোচনা করে আমাদের মত এই যে আইসিটি আইন ১৯৭৩ এর ৩(২) এর অধিনে অপরাধে অভিযুক্ত… এর বিপক্ষে মামলার সাক্ষ্যপ্রমান প্রাথমিকভাবে (প্রাইমা ফেসি) পাওয়া গেছে, আমরা আরো দেখতে পাচ্ছি যে এসব থেকে অভিযুক্তের বিচারের জন্য প্রাথমিক মামলা (প্রাইমা ফেসি কেস) দৃশ্যমান হয়েছে। ’ প্রক্রিয়ার এই পর্যায়ে, প্রসিকিউশন ও ট্রাইবুনাল ছাড়া আর কারো কাছেই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ কিম্বা সংশ্লিষ্ট প্রমানাদির কোন অনুলিপি ছিল না, কাজেই এই আদেশের তেমন কোন মুল্যায়ন করা আদৌ সম্ভব নয়, বড়জোর এই এতটুকুই বলা যেতে পারে যে, ট্রাইবুনাল তার এই সিদ্ধান্তের সপক্ষে কোন যুক্তি দেখায় নাই।

দশদিন পরে যখন বাদীপক্ষের আইনজীবীরা দলিলাদির একটা অনুলিপি পেল, তারা ট্রাইবুনালকে তার নিজের আদেশ পুর্নবিবেচনার জন্য বললো। ১৮ আগস্টে, আইনজীবীরা দুইটা প্রধান যুক্তিতর্ক তুলে ধরলেন ট্রাইবুনালের সামনে। প্রথমত, তারা যুক্তি দেখান যে ট্রাইবুনাল তার সিদ্ধান্তের সপক্ষে কোনো কারন দেখাতে ব্যর্থ হবার মাধ্যমে মৌলিক আন্তর্জাতিক বিধানাবলি লংঘন করেছে। এই যুক্তির অংশ হিসাবে তারা প্রশ্ন তোলে যে, ৫৪২ পৃষ্ঠার সাক্ষ্য-প্রমাণ যার মধ্যে আবার ৯৭টি পৃষ্ঠার লেখাই বোঝা যায় না- এই পুরো জিনিসটা যাচাই করে দেখার জন্য ৩ দিন সময় যথেষ্ট কিনা। তারা আদালতে যুক্তি দেন যে ‘কেন ট্রাইবুনাল মনে করছে যে অভিযুক্তের বিপক্ষে প্রাইমা ফেসি কেস প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সে বিষয়ে কোন কারন দেখাতে আদেশটি ব্যর্থ হয়েছে।

ট্রাইবুনাল কোন কোন জিনিস পরিক্ষা করে দেখেছিল এবং কোন ভিত্তিতে তা অপরাধ আমলে নিয়েছে সে বিষয়ে কোন ব্যাখ্যা নেই। ’ দ্বিতীয়ত, বিবাদী পক্ষের আইনজীবীরা বলেন যে, আদালত সাইদীর বিপক্ষে আনা এসব অভিযোগ আমলে নিতে পারেন না, কারন এই অপরাধগুলো ১৯৭৩ সালের আইনে যেভাবে সংজ্ঞায়িত হয়েছে, তা অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সময়কার অর্থাৎ ১৯৭১ সালে বিদ্যমান প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে গ্রহনযোগ্য সংজ্ঞার সাথে সংগতি বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। উদাহরণ দিয়ে তারা বলেন যে, ১৯৭১ সালের সংজ্ঞানুযায়ি ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ (ক্রাইম এগেইনস্ট হিউম্যানিটি) শুধুমাত্র ‘আন্তর্জাতিক সংঘাতের’ ক্ষেত্রেই প্রযুক্ত হতে পারতো, আর ১৯৭১ সালের যুদ্ধের বিষয়ে ট্রাইবুনাল ইতিমধ্যেই আদেশ দিয়েছেন যে ওটা কোনো ‘আন্তর্জাতিক সংঘাত’ নয়। তারা আরো যুক্তি দেখান যে গনহত্যার অপরাধ কোন ‘রাজনৈতিক’ গোষ্ঠিকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত হতে পারে না, যেটা ১৯৭৩ সালের আইনে নির্ধারিত অপরাধের ক্ষেত্রে সম্ভব। ট্রাইবুনাল এসব যুক্তিকে আশ্বস্ত হয় নাই এবং অপরাধ আমলে নেয়া মর্মে তার আগের আদেশই বহাল রাখে।

১৮ই আগস্টের আদেশের ব্যাপারে প্রথম কথা হচ্ছে যে এতে বিবাদি পক্ষ কর্তৃক উপস্থাপিত কোন আইনি যুক্তির জবাব দেয়া হয় নাই। সেই সম্পর্কে আদেশের মধ্যে অস্পষ্ট একটা মন্তব্যে শুধু এতটুকু ইঙ্গিতই দেয়া হয়েছে যে ‘ আমলে নেয়ার মানে কি-সে বিষয়ে আমরা মনে করি যে বিজ্ঞ আইনজীবী তার এখতিয়ারের বাইরে চলে গিয়েছেন। ’ তবে এটা পরিষ্কার নয় যে এই কথাটার অর্থ কি কিম্বা ট্রাইবুনাল ঠিক কেনইবা এমনটা মনে করছে। একের পর এক শুনানিতে বিবাদি পক্ষ কর্তৃক উপস্থাপিত কোন আইনি যুক্তির জবাব দানে এই ব্যর্থতা এখন এই ট্রাইবুনালের একটি বৈশিষ্ট্যে পরিনত হয়েছে। হতে পারে যে বিবাদি পক্ষের যুক্তিগুলো দুর্বল ও সহজেই নাকচযোগ্য।

তবুও কোন আদালত সেগুলোকে একেবারেই অগ্রাহ্য করতে পারে না, কারন তাতে এই ভাব তৈরি হয় যে ট্রাইবুনাল বিবাদীদের প্রতি কোনো পর্যাপ্ত সাড়াই দিচ্ছে না। তবে ট্রাইবুনাল কর্তৃক অভিযোগ আমলে নেয়ার আগের সিদ্ধান্তের কিছু কারন ওই আদেশে দেয়া হয়েছে। এই আদেশে বলা হয়েছে, ‘আমরা মনে করি যে সাক্ষি নম্বর ১, ২, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ২০, ২২, ২৩, ২৪ বলেছেন যে অভিযুক্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতন, লুট, ও ধ্বংসাত্মক কাজের সাথে জড়িত। আরো দেখা যাচ্ছে যে অভিযুক্ত হিন্দু সম্প্রদায় ও আওয়ামী লীগের কিছু মানুষকে হত্যার সাথেও জড়িত। অভিযোগ আছে যে তিনি জোরপূর্বক হিন্দুদেরকে মুসলমান বানিয়েছেন।

এই সবই মানবতার বিপক্ষে অপরাধের আওতায় পড়ে। তাই আমরা অভিযোগ আমলে নিলাম। এই আদেশ দেয়ার ট্রাইবুনালের পর্যবেক্ষকরা জানতো না যে সাইদীর বিপক্ষে আসলে কোন অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। এই ২০ জন সাক্ষি কি সবগুলো অপরাধের সাক্ষ্য দিয়েছিলেন নাকি কয়েকটির? স্পষ্টতই, যদি এসব সাক্ষি শুধু কয়েকটি অপরাধের সাক্ষ্যও দিয়ে থাকেন এবং তা যদি বিশ্বাসযোগ্য হয় তাহলেও –বিবাদিদের তোলা আইনি ইস্যুগুলো এক মুহুর্তের জন্য সরিয়ে রেখেও– ট্রাইবুনালের জন্য প্রাথমিক মামলা (প্রাইমা ফেসি কেস) আছে বলে ধরে নেয়া ও অপরাধ আমলে নেয়ার পর্যাপ্ত কারণ থাকতো। কিন্তু দুই সপ্তাহ পরে ৪ সেপ্টেম্বর যখন প্রসিকিউশন অভিযোগ গঠনের আবেদন পেশ করে তখন আমরা জানতে পারলাম যে বিজ্ঞ প্রসিকিউশন আসলে অভিযোগ করছেন যে সাইদী ৩১টি ভিন্ন ভিন্ন অপরাধ করেছেন।

এটা কি আসলে সম্ভব যে ২০ জন সাক্ষি ৩১টি অপরাধ প্রমাণের জন্য পর্যাপ্ত সাক্ষ্য দিবে? ধরে নিলাম এটা সম্ভব হতেও পারে যে ঐ সকল সাক্ষিই একাধিক অপরাধের সপক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। তবে প্রসিকিউশনের আবেদন থেকে এটা পরিষ্কার যে ব্যাপারটি মোটেও তা নয়– আসলে এই ২০ জন সাক্ষি ৩১টির মধ্যে শুধু ১৭টি অভিযোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত (নম্বর ১, ৩, ৫, ৬ ,৭, ৮, ৯, ১০, ১২, ১৫, ১৭, ১৯, ২২, ২৩, ২৬, ২৭ ও ৩৭)। এতে দুটি প্রধান ইস্যু উঠে আসছে। প্রথমত, মনে হচ্ছে ট্রাইবুনাল ওই ২০টি অপরাধের অনেকগুলোই আমলে নিয়েছে শুধু একজন সাক্ষির বক্তব্য থেকেই। ব্যাপারটা বোঝা আসলেই খুব কঠিন যে অত্যন্ত জোরদারভাবে শক্তিশালী বিবৃতি না হলে, ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ সংঘটনের অভিযোগ- যা সংঘটিত হয়েছিল চল্লিশ বছর আগে- সে বিষয়ে শুধু একজন সাক্ষির বিবৃতির ভিত্তিতে ট্রাইবুনাল কিভাবে এই সিদ্ধান্ত নিলো যে এখানে প্রাইমা ফেসি কেস বিদ্যমান আছে।

ফৌজদারী বিচারকার্যের দৃষ্টিকোন থেকে; ‘প্রাইমা ফেসি’ শব্দটি সাধারনত, কোনো একটি অপরাধ সংঘটনে দরকারি সবগুলো উপাদান ছিল বলে ধরে নেয়ার জন্য যথেষ্ট হবে এমনসব প্রমানকে বোঝায়- যেসব প্রমানাদি নিজে থেকেই যথেষ্ট, বিবাদির ব্ক্তব্য না শুনেই। এই ব্যাপারে কি কেবল একজন সাক্ষী যথেষ্ট হতে পারে? দ্বিতীয়ত, এবং সম্ভবত আরো তাৎপর্যপুর্নভাবে, আদালতের আদেশে দেখা যায় যে ট্রাইবুনাল সাক্ষীদের কোনো বক্তব্যের প্রতি মোটেও দৃষ্টিপাত করে নি যাতে প্রসিকিউশনের অভিযোগ অনুযায়ি ৩১টির মধ্যে ১৭টি অভিযোগ প্রমানিত হয় বলে দাবী করা হয়েছে। তাহলে কিভাবে ট্রাইব্যুনাল এসব অপরাধকে আমলে নিয়েছে? যখন ট্রাইবুনালের নিজের আদেশ থেকেই এটা দেখা যাচ্ছে যে; ১৪ টি অপরাধের অভিযোগ, যার মধ্যে ৫টি অভিযোগ হচ্ছে গনহত্যার অপরাধের বিষয়ে-এগুলোর কোনোটাকেই ট্রাইবুনাল যথাযথভাবে আমলে নেই নাই, তখন কি ট্রাইবুনাল এসব অপরাধ বিষয়ে ‘অভিযোগ গঠন’ (ফ্রেমিং চার্জ)-এর অগ্রসর হতে পারে? এটি স্পষ্টতই বোঝা যায় যে, প্রত্যেকটি অভিযুক্ত অপরাধের ব্যাপারে ট্রাইবুনাল যথার্থভাবে দৃষ্টিপাত করে নি এবং অপরাধের উপাদানগুলোকে সাক্ষিদের বক্তব্য এবং অন্যান্য প্রমাণ দিয়ে যাচাই করা হয় নি। বরং, ট্রাইবুনালের কাজকর্ম দেখে মনে হয়, কিছু সাক্ষির বক্তব্যের প্রতি কেবল সাধারন দৃষ্টিপাত করা হয়েছে, যারা অভিযোগ করেছে যে, সাঈদী বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতন, লুণ্ঠন এবং ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর কাজে এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্য ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের হত্যা করার কাজে জড়িত ছিলেন; সাথে সাথে হিন্দুদেরকে জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করেছেন। আর এই ব্ক্তব্যে উল্লিখিত অভিযোগের ওপর ভিত্তি করেই অপরাধ আমলে নিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।

যাই হোক, এক্ষেত্রে আইন বেশ স্পষ্ট। তাহলো: প্রত্যেকটি অপরাধকেই আলাদাভাবে আমলে নিতে হবে। তাছাড়া, এখানে আরো একটি পৃথক ব্যাপার রয়েছে। সেটা হলো, ট্রাইবুনাল যখন অপরাধ আমলে নেয় তখন তার কাছে সব সাক্ষির সাক্ষ্য ছিল কিনা। অপরাধ আমলে নেবার ৫ সপ্তাহ পর গত ২৩ আগস্টে অভিযোগ গঠনের এক শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

তখন একটা বিষয় প্রকাশিত হয় যে, ট্রাইবুনালের সদস্যবৃন্দ কিংবা বিবাদিপক্ষকে তখন পর্যন্ত সাক্ষিদের জবানবন্দির দ্বিতীয় অংশটি দেয়া হয় নাই। অর্থাৎ, অপরাধ আমলে নেবার সময় ট্রাইবুনালের কাছে তাদের কাছে ১ থেকে ৩০ নম্বর সাক্ষির জবানবন্দি সম্বলিত প্রথম অংশটি থাকলেও ৩১ থেকে ৬৮ নম্বরের সাক্ষিদের জবানবন্দি সহ দ্বিতীয় অংশটি ছিল না। ২১ সেপ্টেম্বর তারিখে, ট্রাইবুনালের আমলে নেয়ার আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্যে বিবাদি পক্ষের আইনজীবীরা পুনরায় আবেদন করে। প্রশ্ন তোলা হয়, সকল সাক্ষির জবানবন্দি না থাকা সত্ত্বেও ট্রাইবুনালের পক্ষে অপরাধ আমলে নেয়া কি করে সম্ভব? ট্রাইবুনাল তার আদেশে জানান, তারা সকল জবানবন্দির হার্ডকপি হাতে না পেলেও এসব দলিলের সিডি এবং ডিভিডি কপি আমলে নিয়েছেন- যা ১১ জুলাই তাদেরকে সরবরাহ করা হয়েছিল। শুধু ট্রাইব্যুনাল এবং প্রসিকিউশনই জানেন যে, ওই সিডি এবং ডিভিডিগুলোতে কি কি দলিল ছিল।

তবে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো, ১৮ আগস্টে দেয়া ট্রাইবুনালের আদেশে দ্বিতীয় পর্বের সাক্ষিদের মধ্য থেকে কারোর কথাই উল্লেখ করা হয় নাই। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের আদেশে আটক অভিযুক্তদের ক্ষেত্রে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে কিনা, এই ব্যাপারে বিবাদিপক্ষের আইনজীবী ছাড়া বাংলাদেশের খুব কম সংখ্যক মানুষ কিম্বা সংবাদ প্রতিষ্ঠানকে উদ্বিগ্ন মনে হয়েছে। স্থানিয় মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ ব্যাপারে নীরব এবং মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানও এ ব্যাপারে কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করেন নি। এই নীরবতার অবশ্য বেশ বড় একটা প্রভাব রয়েছে সেসব মানুষের মাঝে, যারা আইন ও এর কার্যপ্রনালির খুঁটিনাটির ব্যাপারে আগ্রহ রাখেন না এবং ট্রাইবুনাল প্রশ্নবিদ্ধ হয়- এমন কিছু করতে চায় না। অভিযুক্তরা এরই মধ্যে অনেক মানুষের কাছে ‘দোষি’ হিসেবে প্রমানিত হয়ে পড়েছেন, ট্রাইবুনাল শুধু এদের অপরাধকে একটা বিচারিক খামে পুরে দেয়ার কারিগরি মাধ্যম হিসাবে ভূমিকা রাখছে।

উদ্বিগ্ন অন্য যারা আছেন, তারাও ট্রাইবুনাল বিষয়ে প্রশ্নগুলো তুলতে চান না- কারন তারা ভয় পান যে তাদের ‘জামায়াতপন্থি’ কিংবা ‘স্বাধীনতাবিরোধি’ বলে অভিযুক্ত করা হবে; যে দুটি উপহাসসূচক শব্দ এখানে কোনো যুক্তিবোধসম্পন্ন বক্তব্যকে উড়িয়ে দিতে প্রায়ই ব্যবহার করা হয়। যা-ই হোক, ট্রাইব্যুনাল কিন্তু জোর করেই দাবি করে আসছে যে, যথার্থ আইনি প্রক্রিয়ার সর্বোচ্চ মান তারা রক্ষা করবেন এবং স্পষ্ট করেই বলছে যে, নিজেদের প্রস্তুতকৃত কার্যবিধিও তারা অনুসরন করবেন। বর্তমানে ট্রাইবুনাল সাক্ষ্য-প্রমানাদি মূল্যায়ন করছে এবং অপরাধের প্রকৃতি সংক্রান্ত বিষয়ে বিবাদিপক্ষের আবেদনগুলো বিবেচনা করছে, নিজের খেলার তুঙ্গে অবস্থান করছে ট্রাইবুনাল। এই মুহূর্তে, বিবাদি পক্ষ যে একটা পক্ষপাতমূলক বিচার প্রক্রিয়ার শিকার হচ্ছে সেই দাবি করার মত আরো কিছু যৌক্তিক কারন বিবাদি পক্ষের হাতে তুলে দেয়ার ঝুঁকির মধ্যে আছে ট্রাইবুনাল। নিউ এজের অনুমতিক্রমে ও সৌজন্যে ডেভিড বার্গম্যান (David Bergman) : স্পেশাল রিপোর্টস এডিটর, নিউ এজ।

পুরোটাই কপি পেষ্ট। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.