আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অবিলম্বে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দাবি করছি

হিন্দু না ওরা মুসলিম ঐ জিজ্ঞাসে কোনজন, কান্ডারি বলো ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা'র সহব্লগার বন্ধুগণ, বাসায় ফিরেছি কিছুক্ষন আগে। আশা করি এরি মধ্যে আপনারা আজকের কর্মসূচীর আপডেট জানতে পেরেছেন। কনকো ফিলিপ্সএর সাথে চুক্তি বিরোধী আন্দোলনের সময়ই পরিস্কার হয়ে গিয়েছিল যে বিদেশী প্রভু এবং নিজেদের হালুয়া রুটির স্বার্থে বর্তমান শাসকগোষ্ঠী গণতন্ত্রের ধার ধারেনা, বিনা অপরাধে দমন নিপিড়ন এবং গন গ্রেফতারের পথ বেছে নিতে তাদের কোন দ্বিধা নাই। যে কোন আন্দোলনকে একেবারে গোড়াতেই দমন নিপিড়নের মাধ্যমে শেষ করে দেয়াই তাদের পরিকল্পনা। আজকেও তার ব্যতিক্রম হয় নাই।

জাদুঘরের সামনে পৌছে যখন দেখলাম শত শত পুলিশ আর প্রিজন ভ্যানে একে একে তোলা হচ্ছে জগন্নাথের ছাত্রদের তখন একিসাথে বহু ধরণের অনুভুতি আর চিন্তাভাবনা ভর করছিল মাথায়। অনলাইনে প্রচার পাওয়া এবং অনলাইনে সংগঠিত হওয়া একটা কর্মসূচী নিয়েও প্রশাসন এতটা আক্রমনাত্বক হয়ে উঠেছে সেটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়েছে, আমার ধারণা ছিল এই দিন বাংলাদেশে আসতে আরো সময় লাগবে। সেই সাথে সোসাল মিডিয়াকেন্দ্রীক গণ আন্দোলনকে যে জনস্বার্থবিরোধী শাসকগোষ্ঠী এরি মাঝে ভয় পাওয়া শুরু করেছে সেটাও পরিস্কার হলো। হতাশাবোধ করছিলাম এই ভেবে যে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের এই কর্মসূচীটাও বুঝি ভেস্তে গেলো। সিনিয়র এক ব্লগারের ফোনে জানতে পারলাম ৩টা থেকেই পুলিশ দখল করে নিয়েছে কর্মসূচীর স্থল আর ৩টা ৩০ থেকে শুরু হয়েছে গনগ্রেফতার।

জানতে পারলাম ব্লগাররা সবাই মিলিত হচ্ছেন আজিজ সুপার মার্কেটে। একে একে আজিজ সুপার মার্কেটে জড়ো হতে থাকি আমরা, স্বিদ্ধান্ত নেয়ার চেষ্টা করি পরবর্তি কর্মসূচীর। এটা পরিস্কার হয়ে গিয়েছিল যে সমাবেশ করতে গেলেই পুলিশ গ্রেফতার করবে আমাদের। ৩ দিনমজুরদের একজন যিনি আজ উপস্থিত ছিলেন হঠাৎ বলে ওঠেন গ্রেফতার হলে হবো, আমরা সমাবেশ করবোই। গ্রেফতার হলে হবো, কিন্তু ত্রাসের কাছে মাথা নোয়াবোনা এই স্বিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা রওনা হই শাহবাগে জাদুঘরের দিকে।

শাহবাগে পৌছে এগোতে এগোতেই চোখে পরে বেশ কয়েকজন ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ব্লগার, ছাত্রবন্ধুদের। পুলিশ আমাদের ভালো মতো খেয়াল করার আগেই আমরা হঠাৎ করেই ব্যানার মেলে দিয়ে দাঁড়িয়ে পরি। চোখের পলকে চারদিক থেকে এসে জড় হয় বেশ কয়েকজন ছাত্র জনতা আর সেই সাথে টিভি পত্রিকার সাংবাদিকরা। মিডিয়ার এতগুলা ক্যামেরার সামনে দেখেই বোধহয় তরিঘরি আর কোন একশনে যেতে চায় নাই পুলিশ। এরপর আমরা শুরু করি সমাবেশ।

একে একে বক্তৃতা রাখতে থাকেন বেশ কয়েকজন তরুন ব্লগার, সাংবাদিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী এবং জগন্নাথের কয়েকজন ছাত্র। দেখতে দেখতে সমাবেশটা বড় হতে থাকে। গ্রেফতারের ভয়ে চারদিকে ছড়িয়ে থাকা ছাত্র, জনতারা আস্তে আস্তে এসে আমাদের চারপাশে জড় হতে থাকেন। ছোট্ট সমাবেশটা পুলিশের বাধা অতিক্রম করে ধিরে ধিরে পরিণত হয় জনসমুদ্রে। ব্লগার বাকী বিল্লাহ এবং ব্লগার ও সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফের আগুন ঝড়া বক্তব্যে এক পর্যায়ে সমাবেশটা পরিণত হয় এক গণ বিক্ষোভে।

এরপর শত শত ছাত্র জনতাকে নিয়ে আমরা মিছিল করে এগিয়ে যাই রাজু ভাস্কর্যের দিকে। এতবড় গণবিক্ষোভ আটকানোর সাহস আর দেখাই নাই পুলিশ। রাজু ভাস্কর্যে পৌছে আগামী মোঙ্গলবার শহীদ মিনারে পরবর্তি কর্মসূচীর ঘোষনা দিয়ে আমরা আমাদের আজকের কর্মসূচীর সমাপ্তি টানি। এরপরের কাহিনী পুলিশের কাছ থেকে ঘন্টার পর ঘন্টা আটককৃতদের ছারিয়ে আনার চেষ্টার। অনুষ্ঠানের শেষেই আমরা শাহবাগ থানায় পৌছাই।

পুলিশের কাছে আমাদের দাবি ছিল যে আমরা এই কর্মসূচীর আহবান করেছি, এই ছাত্ররা তাতে অংশগ্রহণ করতে এসেছিল। যদি গ্রেফতার করতে হয় আমাদের করুন, এদের ছেরে দিন, এদের বিরুদ্ধে তো কোন অভিযোগ নাই, এরা কিছু করে নাই। শুরুতে অল্পকিছুক্ষনের মধ্যে তাদের ছেরে দেয়ার আশ্বাস দিলেও ঠিক কি বিবেচনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত তাদের আটকে রেখেছে সেইটা কোন সুস্থ্য যুক্তি বুদ্ধিতে বুঝে ওঠা কঠিন। বিনা অপরাধে আটককৃত ২৯ জনের অবিলম্বে মুক্তি দাবি করছি। আজকে আমাদের কর্মসূচী ভেস্তে দেয়ার চেষ্টা চালিয়েছিল পুলিশ, কিন্তু আমরা সব বাধা উপেক্ষা করে কর্মসূচী সফল করেছি।

জনগণ যদি একজোট হয় তবে কোন দমন নিপিড়ন তাদের দমিয়ে রাখতে পারবেনা, এইটা পরিস্কার। সহব্লগার বন্ধুরা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি আদায়ের আন্দোলনে সংহতি জানানো অব্যাহত রাখুন। দাবি আদায়ে সফলতা আসবেই, বাধা যতই আসুক না কেনো। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.