আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাউদি আরব, পাকিস্তান, কাতার, সিরিয়া, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, সংযুক্ত আরব আমীরাতসহ ১২০ দেশে পেন্টগনের গোপন মিশন!!

বাঁচিতে চাহিনা এই নষ্ট ভুবনে...... বিশ্বাস করুন আর না করুন এই মুহূর্তেই এই গ্রহের কোথাও না কোথাও একজন আমেরিকান কমান্ডো মিশন পরিচালনায় রত আছেন। সাধারণ আমেরিকানরা তা জানে না, জানে না বিশ্ববাসী। জানার কথাও নয়। তাদের জ্ঞানের অন্তরালে ইউএস মিলিটারীর সিক্রেট ফোর্স সারা বিশ্বের সর্বত্রই যার যার মিশনে ব্যাস্ত রয়েছেন। পেন্টাগনের গোপন শক্তি এসব।

বলা যায় এলিট পাওয়ার। তাদের মিশনও সিক্রেট। সেই সিক্রেসির সাইজ এবং স্কোপ আমরা জানি না। তবে কি তাদের মিশন গ্লোবাল ওয়ার! বিশ্ব যুদ্ধ, যার উদ্দেশ্য বিধেয় আকার আয়তন কিম্বা পরিধি এখনো পর্যন্ত অজানা! একজন ইউএস নেভী সিল ওসামা বিন লাদেনের বুকে ও মাথায় গুলি মারল। লাদেন লুটিয়ে পড়ল।

খবর ছড়িয়ে পড়ল বিশ্বজুড়ে। মানুষের গোচরে আসল সেই মিশনের খবর। এর আগে পর্যন্ত কেউ কিচ্ছু জানে না। এটাই নিয়ম। টিপিক্যালী এটাই ঘটে আসছে।

আফগানিস্তান এবং ইরাকের যুদ্ধ ময়দানে যুক্তরাষ্ট্রের স্পেশাল অপরেশন ফোর্স এর খবর সবারই জানা। ইয়েমেন অথবা সোমালিয়ার কনফ্লিক্ট জোন খ্যাত এলাকাগুলিতেও ইউএস স্পেশাল ফোর্স রয়েছে। আরো কোথায় কোথায় যে ইউএস স্পেশাল ফোর্স আছে তা বিশ্বের বেশীর ভাগ মানুষই জানে না। ওয়াশিংটন পোষ্টের এক রিপোর্ট অনুসারে ১৯৬০ সাল থেকে বুশ শাসনামল পর্যন্ত বিশ্বের ৭৫টি দেশে ইউএস স্পেশাল ফোর্স নিযুক্ত ছিল। ইউএস স্পেশাল অপরেশনস কমান্ড স্পোকসম্যান কর্নেল টিম নাইয়ে খবরের কাগজে দেয়া সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন এ বছর পর্যন্ত ইউএস স্পেশাল ফোর্সের অপরেশনস বিশ্বের ১২০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।

কি করছে সারা বিশ্বে তারা? কর্নেল টম বলেন “আমরা আফগানিস্তান কিংবা ইরাকে যা করছি তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ন কাজে ব্যাস্ত বিশ্বের ১২০টি দেশে ইউএস স্পেশাল ফোর্স”। ১৯৮০ সালে ইরানে কয়েকজন আমেরিকানকে জিম্মি করা হয়। তাদেরকে উদ্ধার করতে ইউএস ফোর্সের সদস্যরা এক অভিযান চালায়। অভিযানে নিহত হয় ৮ জন ইউএস কমান্ডো। ব্যার্থ হয় সেই অভিযান।

সেই ব্যার্থ অভিযান থেকে ১৯৮৭ সালে জন্ম নেয় ‘ইউএস স্পেশাল অপরেশনস কমান্ড’ “সোকোম”। ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর আমেরিকান মিলিটারীর বেশ দু:সময় কাটে। বাজেট নিয়ে, অবস্থান নিয়ে, ক্ষমতা নিয়ে। সোকোম গঠনের পর এসব সমস্যা কেটে যায়। শক্তিশালি হয় আমেরিকান আর্মির স্পেশাল ফোর্সের কর্মকান্ড।

আর্মির গ্রীন বেরেটস, রেঞ্জার্স, নেভী সিলস, এয়ার ফোর্স কমান্ডো, মেরিন কর্পস স্পেশাল অপরেশনস টিম, হেলিকপ্টার ক্রু, বোট টিম, সিভিল এ্যাফেয়ার্স পারসোনেল, প্যারা সেস্কিউ কর্মী, যুদ্ধক্ষেত্রের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার, স্পেশাল অপরেশনস ওয়েদারমান, সবকিছুর চমৎকার সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে এই ‘সোকোম’। এ্যাসাসিনেশন, কাউন্টার টেরোরিষ্ট রেইডস, দীর্ঘ মেয়াদী তদন্ত, ইন্টেলিজেন্স এ্যানালাইসস, ফরেন ট্রুপ ট্রেইনিং, মানব বিধ্বংসী অস্ত্র পরিচালনাসহ সবচেয়ে স্পর্শকাতর (সেনসিটিভি), গোপন, জটিল ও কঠিন অপরেশনগুলি পরিচালনার জন্যই গঠিত হয়েছে সোকোম। সোকোম এর একটি সহযোগী ইউনিট হচ্ছে জয়েন্ট স্পেশাল অপরেশনস কমান্ড। এর প্রাইমারী মিশন হচ্ছে সাসপেক্টেড টেরোরিষ্ট ডিটেক্ট করা ও ধ্বংস করা। জয়েন্ট স্পেশাল অপরেশনস কমান্ড সরাসরি প্রেসিডেন্টের কতৃত্বে কাজ করে।

এই ইউনিটের চলমান অপরেশন ‘কিল/ক্যাপচার’ ক্যাম্পেইনকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কেল কাউন্টারটেরোরিজম কিলিং মেশিন বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। নেভী সিলস অথবা আর্মি’র ডেল্টা ফোর্সের এ্যাসাসিনেশন প্রোগ্রাম কিংবা সোমালিয়া, পাকিস্তান ও ইয়েমেনে চলছে সিআইএ’র অপরেশন। এছাড়া এই কমান্ডের আওতায় রয়েছে অসংখ্য গোপন জেলখানা। আফগানিস্তানেই রয়েছে অন্তত ২০টি ব্ল্যাক সাইট যেসকল স্থানে চলে গোপন জিজ্ঞাসাবাদ। ১৯৯০ সালের গোড়ার দিকে ৩৭ হাজার থেকে স্পেশাল অপরেশনস কমান্ড ৬০ হাজারে পরিণত হয়।

সোকোমের কর্মকান্ড সবচেয়ে কড়াভাবে শুরু হয় নাইন ইলেভেনের পর থেকে। সোকোমের বাৎসরিক বাজেট ২.৩ বিলিয়ন থেকে বাড়িরয় ৬.৩ বিলিয়ন করা হয়। এর সাথে ইরাক ও আফগানিস্তানের বাজেট যোগ করলে দাড়ায় বছরে ৯.৮ বিলিয়ন ডলার। বাজেটই শুধু নয়, কে জানে কত বেড়েছে কমান্ডো পারসোনেলের আসল সংখ্যা আর কর্মপরিধি। মেরিন কর্পস ফোর্সেস স্পেশাল অপরেশনস কমান্ড সাবে প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ডেনিস হেজলিক, নেভি এ্যাডমিরাল এরিক ওলসন, ভাইস এ্যাডমিরাল উইলিয়াম ম্যাকরাভেন সম্প্রতি ইয়েমেন ও সোমালিয়ায় স্পেশাল অপরেশন বৃদ্ধির ওপর জোর দেন।

বিশ্বের উত্তর থেকে দক্ষিনে বিস্তৃত হচ্ছে তাদের অপরেশনস। তবে এসব অপরেশনের উল্লেখযোগ্য অংশই হচ্ছে যেসকল দেশে সোকোমের সদস্যসরা কাজ করছে তারা ঐসব দেশের সরকারের অনুরোধেই অপরেশনে নিয়োজিত হওয়া। সোকোমের মূল অপরেশন এরিয়া হচ্ছে গ্রেটার মিডল ইষ্ট। এখানকার ২০টি দেশেই মূল অপরেশন। আফগানিস্তান, বাহরাইন, মিশর, ইরান, ইরাক, জর্ডান, কাজাখস্তান, কুয়েত, কিরগিস্তান, লেবানন, ওমান, পাকিস্তান, কাতার, সাউদি আরব, সিরিয়া, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, সংযুক্ত আরব আমীরাত, উজবেকিস্তান, ইয়েমেন হচ্ছে মুলত আমেরিকার স্পেশাল ফোর্সের ঘাটি।

অন্যান্যরা হচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকা থেদেক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পর্যন্ত সমগ্র বিশ্বে ছড়ানো। স্পেশাল অপরেশন কমান্ড নির্দিষ্ট করে কোন দেশে কি কাজে নিয়োজিত, কোন কমিউনিটির সাথে কর্মরত, ভবিষ্যত উদ্দেশ্য কি এসব পরিস্কার করে না বললেও স্পেশাল কমান্ডের মুখপাত্র টিম নাইয়ে সাংবাদিকদের কাছে জানিয়েছেন, “হোষ্ট দেশগুলি পর্যন্ত জানে না কোন উদ্দেশ্য নিয়ে অপরেশনে নিয়োজিত তারা। তবে যে কারণেই হোক---হতে পারে ইন্টারনাল অথবা রিজিওনাল”। এক্সপার্টরা বলছেন যেখানে ‘সিলস’ এবং ‘ডেল্টা ফোর্সে’র ন্যায় ব্ল্যাক স্পেশাল অপরেশনস সদস্যরা আফগানিস্তান, ইরাক, পাকিস্তান, ইয়েমেনে ‘কিল/ক্যাপচার’ মিশনে নিয়োজিত সেখানে ‘গ্রীন বেরেটস’ কিংবা ‘রেঞ্জার্স’ এর ন্যায় হোয়াইট ফোর্সের সদস্যরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্থানীয় কমিউনটির সাথে মিশে তাদেরকে আল কায়েদা টাইপের মৌলবাদী গ্রুপের সাথে যুদ্ধ করার কায়দা কানুন শিক্ষা দিচ্ছে সেটা গোপন মিশন হলেও খারাপ কিসের। উদাহরনস্বরূপ, ফিলিপাইনে যুক্তরাষ্ট্রের ৬০০ সদস্যের একটি কন্টিনজেন্ট রয়েছে যার আওতায় আছে আর্মি স্পেশাল অপরেশন ফোর্স, নেভী সিলস, এয়ার ফোর্স স্পেশাল অপরেটরস এবং অন্যান্য।

তারা জেমাহ ইসলামিয়াহ এবং আবু সাইয়াফ টাইপের ফিলিপাইনের শসস্ত্র মিলিশিয়া গ্রুপের জঙ্গীদের সাথে ফিলিপিনো আর্মির সহযোগি হিসাবে কাউন্টার টেরোরিষ্ট অপরেটর হিসাবে কাজ করছে। তাদের জন্য বছরে যুক্তরাষ্ট্রের খরচ হচ্ছে ৫০ মিলিয়ন ডলার। কাউন্টার টেরোরিজমের অংশ হিসাবে, গত বছর পেন্টাগনের তথ্য থেকে জানা যায়, আমেরিকার সবচেয়ে অভিজাত (এলিট) ট্রুপ বেলিজে, ব্রাজিল, বুলগেরিয়া, বুরকিনা ফাসো, জার্মানী, ইন্দোনেশিয়া, মালি, নরওয়ে, পানামা, পোল্যান্ডে জয়েন্ট ট্রেনিয়ং এক্সারসাইজ করে। চলতি বছর এই প্রোগ্রাম চালানো হয়েছে ডমিনিকান রিপাবলিক, জর্ডান, রোমানিয়া, সেনেগালদক্ষিণ কোরিয়া, ও থাইল্যান্ডে। এইসব কাউন্টারটেরোরিজম ট্রেনিং এক্সারসাইজের মধ্য দিয়ে ইউএস স্পেশাল ফোর্সের সদস্যরা স্থানীয় কমিউনটির কাউন্টারপার্টের কাছ থেকে জ্ঞান, তথ্য ও সংস্কৃতি বিনিময়ও করছে ভবিষ্যত সঞ্চয় হিসাবে।

একদা ইউএস মিলিটারীর সৎ-পুত্র হিসাবে পরিচিত ও নিগৃহীত ছিল যে স্পেশাল অপরেশন ফোর্স তা এখন আকারে আয়তনে কলেবরে অর্থে শক্তি ও যোগ্যতায় সুপ্রতিষ্ঠিত। ইউএস মিলিটারি তথা পেন্টাগনের ‘অভিজাত বাহিনি’ (এলিট ফোর্স) এটি। ২০০২ সাল থেকে সোকোম ‘সেন্টকোমে’র ন্যায় নিজস্ব টাস্ক ফোর্স করেছে। ফ্লোরিডার ম্যাকডিল এয়ারফোর্স ঘাটিতে হেডকোয়ার্টার হলেও স্পেশাল ফোর্সের কাজকর্ম সারা বিশ্বেই চলছে হাওয়াই, জার্মানী, দক্ষিণ কোরিয়ার সাব কমান্ড ঘাটিগুলির সমন্বিত প্রয়াসে। সোকোমেন বিদায়ী প্রধান ওলসন একে আখ্যা দিয়েছেন, ‘ডিফেন্স ডিপার্টমেন্টের মাইক্রোকজম হিসাবে’।

এর রয়েছে গ্রাউন্ড, এয়ার, মেরিটাইম কম্পোনেন্ট। স্পেশাল ফোর্সের সদস্যরা বিশ্বের ১২০টি দেশে স্পেশাল অপরেশনে নিয়োজিত। গোপন যুদ্ধ, গোপন হাই প্রোফাইল এ্যাসাসিনেশন, ক্যাপচার, কিডন্যাপ, রেইড, জয়েন্ট অপরেশন, সহ বহু গোপন মিশনে নিয়োজিত। অধিকাংশ আমেরিকানই তা জানে না। জানে না বিশ্ববাসী।

যাদের অর্থে সারা বিশ্বে গোপন মিশনে নিয়োজিত এই এলিট ফোর্স সেই ট্যাক্সপেয়ারদের প্রশ্ন কি হচ্ছে তাদের কষ্টের অর্থ দিয়ে? source:View this link ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।