আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রায়ে সরকার ছাড়া কেউ খুশি নয়

জানি না কেন লিখি! তবু লিখি মনের খেয়ালে, পরিবর্তন করার মানসে, পরিবর্তিত হওয়ার মানসে। যদিও জানি সব ব্যর্থ হচ্ছে। তবুও আমি আছি সেদিনের সেই আলোকময় প্রত্যুষার আগমনের অপেক্ষায় সরকারের মেয়াদের শেষ বছরে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের দ্রুত পরিবর্তন এর আগে এতটা হয়েছিল কি না আমার জানা নেই। একটা ইস্যুর উপর আরেকটা ইস্যু হাজির হয়ে যাচ্ছে। ইস্যুর পর ইস্যুতে খেই হারিয়ে ফেলার মত অবস্থা।

এমপি ইলিয়াস গুম, সাগর রুনি হত্যা, বিশ্বজিত ইস্যু, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারী, সমুদ্র জয়, যুদ্ধাপরাধের মামলায় একটার পর একটা রায়, সাইদীর ফাঁসিতে উত্তাল সারা দেশ, জাগরণ মঞ্চের উত্থান, আমার দেশের নব-উত্থান, মাহমুদুর রহমান ঝড়, স্কাইপ সংলাপ ফাঁস, শাপলা চত্বর, সাভার ট্রাজেডি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রির ঝাকুনি তত্ত্ব, কথিত রেশমা উদ্ধার অভিযান, পদ্মাসেতু দুর্নীতি, ডেসটিনি কেলেঙ্কারী অন্যতম। এ রকম একটার পর একটা ইস্যু দুরন্ত গতিতে দাবড়ে বেড়িয়েছে সরকারের এই শেষ সময়টা। এর কারণ কি তা নির্ণয় করা কঠিন। কেউ কেউ বলেছেন এটা চতুর আওয়ামীলীগের চালবাজী এবং অসাধু উপায়ে অর্জিত সফলতা। কারণ, কোন ইস্যুকেই বিরোধীদলগুলো সরকার পতনের জন্য সামনে দাঁড় করাতে পারে নি।

একটার পর একটা দমননীতি প্রয়োগ করে সরকার দোর্দ- প্রতাপের সাথে শাসনকাল অতিক্রম করেছে। তবে সর্বশেষ সিটি নির্বাচনের পর তারা কিছুটা ব্যাকফুটে চলে যায়। কিন্তু এরই মধ্যে যুদ্ধাপরাধ মামলায় গোলাম আযমের মামলার রায় দিয়ে আবার রাজনৈতিক মঞ্চ উত্তপ্ত করে দিয়েছে। হারিয়ে গেছে সিটি নির্বাচনে পরাজয়ের অসহনীয় তিক্ত ইস্যু। এর মধ্যে অবশ্য মাত্র তিন দিনের জন্য আল্লামা শফির ‘তেতুল’ তত্ত্ব এবং কোটা-বিরোধী আন্দোলন মাথাচাড়া দিয়েছিল, যা-ও সম্ভবত শিগ্ঘিরই হারিয়ে যাচ্ছে।

কিন্তু একটার পর একটা ইস্যুকে ধামাচাপা দিতে পারলেও এর স্মৃতির রেশ কিন্তু জনগণের মাথা থেকে একেবারে মুছে যায় নি। নির্যাসটুকু রয়ে গেছে। যারা প্রিন্ট মিডিয়া মাধ্যম বা ইলেক্টনিক মাধ্যমের সাথে জড়িত আছেন, তারা নিশ্চয় আমার সাথে একমত হবেন যে এই সময়টুকুতে কিন্তু তারা সংবাদ খরায় কখনো ভোগেন নি। টেলিভিশনের টিআরপিও ছিল উর্দ্ধারোহী। বরং হিমশিম খেতে হয়েছে কোনটা রেখে কোনটাকে গুরুত্ব দেবে এই নিয়ে।

আসা যাক বর্তমান ইস্যুতে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় রায়ে একমাত্র আওয়ামীগ ছাড়া কেউই খুশি হয় নি। একপক্ষের দাবী রায়ে আবেগপ্রবণতা কাজ করেছে, ন্যায় বিচার হয় নি, অন্যায়ভাবে একটা বুড়ো মানুষকে ৯০বছরের জেল দেওয়া হয়েছে। প্রতিবাদে মঙ্গলবার হরতালও আহবান করেছে তারা। অপর পক্ষ মনে করছে যথাযথ শাস্তি দেওয়া হয় নি।

অপরাধ ফাঁসির জন্য উপযুক্ত হলেও বয়সের বিবেচনায় শাস্তি কমানো মেনে নেওয়া যায় না। তাদের দাবী- যুদ্ধাপরাধীদের অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য। খুশি হয় নি জাগরণ মঞ্চ, খুশি হয় নি মঞ্চের সাথে জড়িত অন্যান্য প্রগতিশীল ভাবধারা হিসেবে প্রচারকারী ছাত্র সংগঠনগুলোও। তাই প্রতিবাদে তারা তাৎক্ষণিক শাহবাগে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে দিয়েছে। তারা দাবী করছে যতক্ষণ ফাঁসির নির্দেশ না দেওয়া হবে ততক্ষণ তারা ঘরে ফিরবে না।

সেই সাথে তারাও একই দিনে পাল্টা হরতালের আহ্বান করে। রায়ে খুশি নয় ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। খুশি নন আযম পুত্র আমান আযমি। খুশি নয় ছাত্র শিবির, খুশি নয় দেশে বিদেশে অনেক ব্যক্তি এবং সংগঠন। কেউ কেউ অভিযোগ করছেন এই রায়ে নমনীয়তা দেখিয়ে সরকার জামায়াতের সাথে একটা আপস রফায় আসার চেষ্টা করছে।

প্রকৃতপক্ষে আওয়ামীলীগ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে চায় না, বরং এটি তাদের ভোট আদায়ের কৌশলমাত্র। যারা যুদ্ধপরাধীদের বিচারের দাবীতে বদ্ধ-পরিকর, তাদের আবেগকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করছে আওয়ামীলীগ। তাই গোলাম আযমের ফাঁসি না হওয়ায় তারা আওয়ামীলীগের উপর চটেছে। এই অবস্থায় আপাতত মনে হয় আওয়ামীলীগ বন্ধুশুন্য হতে চলেছে। কিন্তু সমঝোতায় সাফল্য এলে হয় তো আওয়ামীলীগের উপর থেকে ধর্মবিদ্বেষী তকমাটা দুর হতে পারে।

বাঁচার কোন পথ হয়তো পেয়েও যেতে পারে। এই আশায় আওয়ামীলীগ খুশি হতেই পারে। বাস্তবেও তাই দেখা যাচ্ছে একমাত্র আওয়ামীলীগ ছাড়া এই রায়ে কেউ খুশি নয়। আওয়ামীলীগ খুশি- তার প্রমান গত সোমবার দুপুরে আওয়ামীলীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সংগঠনটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। এর আগে আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ ও প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলামও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

হানিফ বলেন, ‘আমরা এ রায়ে নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করছি। যদিও গোটা জাতির প্রত্যাশা ছিল কুখ্যাত এ যুদ্ধাপরাধীর রায় হবে মৃত্যুদ-। আওয়ামীলীগ আরো খুশি এই জন্য যে, তারা আরো একটা ইস্যু সৃষ্টি করে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে পরাজয়ের তিক্ত অভিজ্ঞতা ও বিরোধীদলসহ সমালোচকদের তীব্র খোঁচাকে দমন করা গেছে। কিন্তু ইস্যু সৃষ্টির এই রাজনৈতিক ছেলে খেলা আর কত দিন চলতে পারে- জাতির সামনে এ এক বিরাট প্রশ্ন! যতই ইস্যু আসুক আর যাক, একটা কথা সবাইকে মনে রাখতে হবে এই গোলকধাধার সিস্টেম চলছে, এই ধরনের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে সামনের দিনগুলো কারো জন্যই শুভ ফল বয়ে আনবে না। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.