আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমিরুল মুমিনীন হযরত আলী (আ.)

আসুন আমরা ২টি ভারী বস্তু আল্লাহর কুরান ও রাসুলের(সাঃ) পরিবারকে(আঃ) অনুসরন করি। আমিরুল মুমিনীন হযরত আলী (আ.)-ই সর্বপ্রথম ইমাম। তিনি মহানবী (সা.) এর চাচা এবং বনি হাশেম গোত্রের নেতা জনাব আবু তালিবের সন্তান ছিলেন। আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর এই চাচাই শৈশবেও তাঁর অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তিনি নিজের ঘরে মহানবী (সা.)-কে আশ্রয় দিয়েছিলেন এবং লালন পালনের মাধ্যমে তাঁকে বড় করেছিলেন।

মহানবী (সা.)এর নবুয়ত প্রাপ্তির ঘোষণার পর থেকে নিয়ে যত দিন তিনি (আবু তালিব) জীবিত ছিলেন, মহানবী (সা.)-কে সার্বিক সহযোগিতা ও সমর্থন করেছিলেন। তিনি সবসময়ই মহানবী (সা.)-কে কাফেরদের, বিশেষ করে কুরাইশদের সার্বিক অনিষ্ট থেকে রক্ষা করেছেন। হযরত ইমাম আলী (আ.) (প্রশিদ্ধ মতানুযায়ী) মহানবী (সা.)-এর নবুয়ত প্রাপ্তির ঘোষণার প্রায় দশ বছর পূর্বে জন্ম গ্রহণ করেন। হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর জন্মের প্রায় ছ’বছর পর মক্কায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল। মহানবী (সা.)-এর আবেদনক্রমে ঐসময় হযরত আলী (আ.) বাবার বাড়ী থেকে মহানবী (সা.)-এর বাড়ীতে স্থানান্তরিত হন।

তারপর থেকে হযরত ইমাম আলী (আ.) সরাসরি মহানবী (সা.)-এর অভিভাবকত্ব ও তত্ত্বাবধানে তাঁর কাছে লালিত পালিত ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হন। মহানবী (সা.) হেরা গুহায় অবস্থানকালে তাঁর কাছে সর্বপ্রথম আল্লাহর পক্ষ থেকে ‘ওহী’ বা ঐশীবাণী অবর্তীণ হয়। যার ফলে তিনি নবুয়ত প্রাপ্ত হন। এরপর হেরা গুহা থেকে বের হয়ে মহানবী (সা.) নিজ গৃহে যাওয়ার পথে হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর সাথে তাঁর সাক্ষাত ঘটে এবং তিনি তাঁর কাছে সব ঘটনা খুলে বলেন। হযরত ইমাম আলী (আ.) সাথে সাথেই মহানবী (সা.)-এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেন।

অতঃপর নিকট আত্মীয়দেরকে ইসলাম গ্রহণের আহ্‌বান জানানোর উদ্দেশ্যে মহানবী (সা.) তাদের সবাইকে নিজ বাড়ীতে খাওয়ার আমন্ত্রন জানিয়ে সমবেত করেন। ঐ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত সবার প্রতি লক্ষ্য করে মহানবী (সা.) বলেছিলেন যে, ‘আপনাদের মধ্যে যে সর্বপ্রথম আমার আহ্‌বানে (ইসলাম গ্রহণে) সাড়া দেবে, সেই হবে আমার খলিফা, উত্তরাধিকারী এবং প্রতিনিধি। কিন্তু উপস্থিত অতিথিদের মধ্যে একমাত্র যে ব্যক্তিটি সর্বপ্রথম উঠে দাঁড়িয়ে সেদিন বিশ্বনবী (সা.)-এর আহ্‌বানে সাড়া দিয়েছিল এবং তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিল তিনিই হচ্ছেন হযরত ইমাম আলী (আ.)। আর বিশ্বনবী (সা.) সেদিন (তাঁর প্রতি) হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর ঈমানকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন এবং স্বঘোষিত প্রতিশ্রুতিও তিনি তার ব্যাপারে পালন করেছিলেন। এভাবে হযরত ইমাম আলী (আ.)-ই ছিলেন সর্বপ্রথম মুসলিম।

আর তিনিই সর্বপ্রথম ব্যক্তি, যিনি কখনই মূর্তিপুজা করেননি। মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনায় গমনের পূর্ব পর্যন্ত হযরত ইমাম আলী (আ.)-ই ছিলেন মহানবী (সা.)-এর নিত্যসঙ্গী। মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনা গমনের রাতে হযরত ইমাম আলী (আ.)-ই মহানবী (সা.) এর বিছানায় শুয়ে ছিলেন। ঐ রাতেই কাফেররা মহানবী (সা.) এর বাড়ী ঘেরাও করে শেষরাতের অন্ধকারে মহানবী (সা.)-কে বিছানায় শায়িত অবস্থায় হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেছিল। মহানবী (সা.) কাফেরদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত হবার পূর্বেই গৃহত্যাগ করে মদীনার পথে পাড়ি দিয়েছিলেন।

এরপর হযরত ইমাম আলী (আ.) মহানবী (সা.)-এর নির্দেশ অনুযায়ী তাঁর কাছে গচ্ছিত জনগণের আমানতের মালা-মাল তাদের মালিকদের কাছে পৌঁছে দেন। তারপর তিনিও নিজের মা, নবী কন্যা হযরত ফাতিমা (আ.) ও অন্য দু’জন স্ত্রীলোক সহ মদীনার পথে পাড়ি দেন। এমনকি মদীনাতেও হযরত ইমাম আলী (আ.)-ই ছিলেন মহানবী (সা.)-এর নিত্যসঙ্গী। নির্জনে অথবা জনসমক্ষে তথা কোন অবস্থাতেই মহানবী (সা.) হযরত আলী (আ.)-কে নিজের কাছ থেকে দূরে রাখেননি। তিনি স্বীয় কন্যা হযরত ফাতিমা (আ.)-কেও হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর কাছেই বিয়ে দেন।

সাহাবীদের উপস্থিতিতে মহানবী (সা.), হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর সাথে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন স্থাপনের ঘোষণা দেন। একমাত্র ‘তাবুকের’ যুদ্ধ ছাড়া বিশ্ব নবী (সা.) (স্বীয় জীবদ্দশায়) যত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, হযরত ইমাম আলী (আ.)-ও সেসব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তাবুকের যুদ্ধে যাওয়ার সময় বিশ্বনবী (সা.) হযরত ইমাম আলী (আ.)-কে মদীনায় তাঁর স্থলাভিষিক্ত হিসেবে নিযুক্ত করে গিয়েছিলেন। এ ছাড়াও হযরত ইমাম আলী (আ.) কোন যুদ্ধেই আদৌ পিছপা হননি। জীবনে কোন শত্রুর মোকাবিলায় তিনি পৃষ্ঠ প্রর্দশন করেননি।

তিনি জীবনে কখনোই মহানবী (সা.)-এর আদেশের অবাধ্যতা করেননি। তাই তাঁর সম্পর্কে বিশ্বনবী (সা.) বলেছেন যে, “আলী কখনই সত্য থেকে অথবা সত্য আলী থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না। ” বিশ্ব নবী (সা.)-এর মৃত্যুর সময় হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর বয়স ছিল প্রায় তেত্রিশ বছর। বিশ্বনবী (সা.)-এর সকল সাহাবীদের মধ্যে তিনিই ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ এবং ইসলামের সকল মহত গুণাবলীর অধিকারী ছিলেন তিনিই। সাহাবীদের মধ্যে হযরত ইমাম আলী (আ.) বয়সের দিক থেকে ছিলেন অপেক্ষাকৃত তরুণ।

আর ইতিপূর্বে বিশ্বনবী (আ.)-এর পাশাপাশি অংশগ্রহণকৃত যুদ্ধসমূহে যে রক্তপাত ঘটেছিল, সে কারণে হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর প্রতি অনেকেই শত্রুতা পোষণ করত। এসব কারণেই বিশ্ব নবী (সা.)-এর পরলোক গমনের পর হযরত আলী (আ.)-কে খেলাফতের পদাধিকার লাভ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। আর এর মাধ্যমে সকল রাষ্ট্রীয় কাজ থেকে তিনি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। তাই বাধ্য হয়ে তখন তিনি নিরালায় জীবন যাপন করতে শুরু করেন এবং ব্যক্তি প্রশিক্ষণের কাজে নিজেকে ব্যপৃত করেন। মহানবী (সা.)-এর মৃত্যুর প্রায় ২৫ বছর পর তিনজন খলিফার শাসনামল শেষ হওয়া পর্যন্ত তিনি এভাবেই জীবন যাপন করতে থাকেন।

তারপর তৃতীয় খলিফা নিহত হবার পর জনগণ হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর কাছে ‘বাইয়াত’ (আনুগত্যের শপথ) গ্রহণ করেন এবং তাঁকে খেলাফতের পদে অধিষ্ঠিত করেন। হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর খেলাফতকাল ছিল প্রায় ৪ বছর ৯ মাস। তিনি তাঁর এই খেলাফতের শাসন আমলে সম্পূর্ণরূপে মহানবী (সা.)-এর জীবনাদর্শ অনুসরণ করেন। তিনি তাঁর খেলাফতকে আন্দোলনমুখী এক বিপ্লবীরূপ প্রদান করে ছিলেন। তিনি তাঁর শাসন আমলে ব্যাপক সংস্কার সাধন করেন।

অবশ্য ইমাম আলী (আ.)-এর ঐসব সংস্কারমূলক কর্মসূচী বেশকিছু সুবিধাবাদী ও স্বার্থান্বেষী ব্যক্তির ক্ষতির কারণ ঘটিয়ে ছিল। এ কারণে উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা, তালহা, যুবাইর ও মুয়াবিয়ার নেতৃত্বে বেশকিছু সংখ্যক সাহাবী হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করেন। তৃতীয় খলিফার হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণের দাবীর শ্লোগানকে তারা হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর বিরুদ্ধে একটি মোক্ষম রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। আর তারা ইসলামী রাজ্যের সর্বত্র বিদ্রোহের আগুন প্রজ্জ্বলিত করার মাধ্যমে এক ব্যাপক রাজনৈতিক অরাজকতার সৃষ্টি করে। যার ফলে উদ্ভুত ফিৎনা ও অরাজকতা দমনের জন্যে বস্‌রার সন্নিকটে ইমাম আলী (আ.) নবীপত্নি আয়েশা, তালহা, ও যুবায়েরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবর্তীণ হতে বাধ্য হন।

ইসলামী ইতিহাসের ঐ যুদ্ধিটিই ‘জঙ্গে জামাল’ নামে পরিচিত। এ ছাড়াও ইরাক ও সিরিয়া সীমানে- অনুরূপ কারণে মুয়াবিয়ার বিরুদ্ধে হযরত ইমাম আলী (আ.) ‘সিফফিন’ নামক আরও একটি যুদ্ধে অবর্তীণ হতে বাধ্য হন। ‘সিফফিন’ নামক ঐ যুদ্ধ দীর্ঘ দেড় বছর যাবৎ অব্যাহত ছিল। ঐ যুদ্ধ শেষ না হতেই ‘নাহ্‌রাওয়ান’ নামক স্থানে ‘খাওয়ারেজ’ (ইসলাম থেকে বহিস্কৃত) নামক বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে আরেকটি যুদ্ধে লিপ্ত হতে হয়। ঐ যুদ্ধিটি ইতিহাসে ‘নাহ্‌রাওয়ানের’ যুদ্ধ নামে পরিচিত।

এভাবে হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর সমগ্র খেলাফতকালই আভ্যন্তরীণ মতভেদ জনিত সমস্যা সমাধানের মধ্যেই অতিক্রান্ত হয়। এর কিছুদিন পরই ৪০ হিজরীর রমযান মাসের ১৯ তারীখে কুফার মসজিদে ফজরের নামাযের ইমামতি করার সময় জনৈক ‘খারেজির’ তলোয়ারের আঘাতে তিনি আহত হন। অতঃপর ২০শে রমযান দিবাগত রাতে তিনি শাহাদত বরণ করেন। ইতিহাসের সাক্ষ্য এবং শত্রু ও মিত্র, উভয়পক্ষের স্বীকারোক্তি অনুসারে মানবীয় গুণাবলীর দিক থেকে আমিরুল মু’মিনীন হযরত ইমাম আলী (আ.) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ এবং এ ব্যাপারে সামান্যতম ক্রটির অস্তিত্বও তাঁর চরিত্রে ছিল না। আর ইসলামে মহত গুণাবলীর দিক থেকে তিনি ছিলেন বিশ্বনবী (সা.)-এর আদর্শের এক পূর্ণাঙ্গ প্রতিভু।

ইমাম আলী (আ.)-এর মহান ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে এ যাবৎ যত আলোচনা হয়েছে এবং শীয়া, সুন্নী, জ্ঞানী গুণী ও গবেষকগণ যে পরিমাণ গ্রন্থাবলী তাঁর সম্পর্কে আজ পর্যন্ত রচনা করেছেন, ইতিহাসে এমনটি আর অন্য কারও ক্ষেত্রেই ঘটেনি। হযরত ইমাম আলী (আ.) ছিলেন সকল মুসলমান এবং বিশ্বনবী (সা.)-এর সাহাবীদের মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞানীব্যক্তি। ইসলামের ইতিহাসে তিনিই সর্বপ্রথম ব্যক্তি, যিনি তাঁর অগাধ জ্ঞানগর্ভ বর্ণনার মাধ্যমে ইসলামে যুক্তিভিত্তিক প্রমাণ পদ্ধতির গোড়াপত্তন করেন। এভাবে তিনিই সর্ব প্রথম ইসলামী জ্ঞান ভান্ডারে দর্শন চর্চার মাত্রা যোগ করেন। তিনিই কুরআনের জটিল ও রহস্যপূর্ণ বিষয়গুলোর ব্যাখ্যা করেন।

কুরআনের বাহ্যিক শব্দাবলীকে বিকৃতির হাত থেকে রক্ষার জন্যে তিনি আরবী ভাষার ব্যাকরণ শাস্ত্র রচনা করেন। বীরত্বের ক্ষেত্রেও হযরত আলী (আ.) ছিলেন মানবজাতির জন্য প্রতীক স্বরূপ। বিশ্ব নবী (সা.)-এর জীবদ্দশায় এবং তাঁর পরেও জীবনে যত যুদ্ধেই তিনি অংশগ্রহণ করেছেন, কখনোই তাঁকে ভীত-সন্ত্রস্ত হতে বা মানসিক অস্থিরতায় ভূগতে দেখা যায়নি। এমনকি ওহুদ, হুনাইন, খান্দাক এবং খাইবারের মত কঠিন যুদ্ধগুলো যখন মহানবী (সা.)-এর সাহাবীদের অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে দিয়েছিল এবং সাহাবীরা যুদ্ধক্ষেত্রে ছত্রভঙ্গ হয়ে ভয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন, সেই কঠিন মূহুর্তগুলোতেও হযরত ইমাম আলী (আ.) কখনোই শত্রুদের সম্মুখে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেননি। ইতিহাসে এমন একটি ঘটনাও খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে কোন খ্যাতিমান বীর যোদ্ধা ইমাম আলী (আ.)-এর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে নিরাপদে নিজের প্রাণ নিয়ে ফিরতে পেরেছে।

তিনি এমন মহাবীর হওয়া সত্ত্বেও কখনও কোন দূর্বল লোককে হত্যা করেননি এবং তাঁর নিকট থেকে পালিয়ে যাওয়া (প্রাণ ভয়ে) ব্যক্তির পিছু ধাওয়া করেননি। তিনি কখনোই রাতের আঁধারে শত্রুর উপর অতর্কিত আক্রমন চালাননি। শত্রুপক্ষের জন্য পানি সরবরাহ কখনোই তিনি বন্ধ করেননি। এটা ইতিহাসের একটি সর্বজন স্বীকৃত ঘটনা যে, ইমাম আলী (আ.) খাইবারের যুদ্ধে শত্রুপক্ষের দূর্গম দূর্গের বিশাল লৌহ ত্বোরণটি তাঁর হাতের সামান্য ধাক্কার মাধ্যমে সম্পূর্ণ রূপে উপড়ে ফেলেছিলেন। একইভাবে মক্কা বিজয়ের দিন মহানবী (সা.)-এর নির্দেশে ইমাম আলী (আ.) কা’বা ঘরের মূর্তিগুলো ধ্বংস করেন।

‘আকিক’ পাথরের তৈরী ‘হাবল’ নামক মক্কার সর্ববৃহৎ মূর্তিটি কা’বা ঘরের ছাদে স্থাপিত ছিল। ইমাম আলী (আ.) মহানবী (সা.)-এর কাঁধে পা রেখে কা’বা ঘরের ছাদে উঠে একাই বৃহাদাকার মূর্তিটির মূলোৎপাটন করে নীচে নিক্ষেপ করেন। খোদাভীতি ও আল্লাহ্‌র ইবাদতের ক্ষেত্রে ইমাম আলী (আ.) ছিলেন অনন্য। জনৈক ব্যক্তির প্রতি ইমাম আলী (আ.)-এর রূঢ় ব্যবহারের অভিযোগের উত্তরে মহানবী (সা.) তাকে বলেছিলেন যে, “আলীকে তিরস্কার করো না। কেননা সে তো আল্লাহ‌ প্রেমিক”।

একবার রাসুল (সা.)-এর সাহাবী হযরত আবু দার্‌দা (রা.) কোন এক খেজুর বাগানে ইমাম আলী (আ.)-এর দেহকে শুষ্ক ও নিষপ্রাণ কাঠের মত পড়ে থাকতে দেখেন। তাই সাথে সাথে নবীকন্যা হযরত ফাতিমা (আ.)-এর কাছে তাঁর স্বামীর মৃত্যু সংবাদ পৌঁছালেন এবং নিজের পক্ষ থেকে শোকও জ্ঞাপন করেন। কিন্তু ঐ সংবাদ শুনে হযরত ফাতিমা (আ.) বললেন ঃ “না, আমার স্বামী মৃত্যুবরণ করেননি। বরং ইবাদত করার সময় আল্লাহ্‌র ভয়ে তিনি সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেছেন। আর এ অবস্থা তাঁর ক্ষেত্রে বহু বারই ঘটেছে।

” অধীনস্থদের প্রতি দয়াশীলতা, অসহায় ও নিঃস্বদের প্রতি ব্যথিত হওয়া এবং দরিদ্র ও অভাবীদের প্রতি পরম উদারতার ব্যাপার ইমাম আলী (আ.)-এর জীবনে অসংখ্য ঘটনার অস্তিত্ব বিদ্যমান। ইমাম আলী (আ.) যা-ই উপার্জন করতেন, তাই অসহায় ও দরিদ্রদেরকে সাহায্যের মাধ্যমে আল্লাহ্‌র পথে দান করতেন। আর তিনি ব্যক্তিগতভাবে অত্যন্ত সহজ সরল ও কষ্টপূর্ণ জীবন যাপন করতেন। ইমাম আলী (আ.) কৃষি কাজকে পছন্দ করতেন। তিনি সাধারণতঃ পানির নালা কেটে সেচের ব্যবস্থা করতেন।

বৃক্ষ রোপণ করতেন। চাষের মাধ্যমে মৃত জমি আবাদ করতেন। কিন্তু পানি সেচের নালা ও আবাদকৃত সব জমিই তিনি দরিদ্রদের জন্যে ‘ওয়াকফ’ (দান) করতেন। হযরত ইমাম আলী (আ.)-এর পক্ষ থেকে দরিদ্রদের জন্যে ‘ওয়াকফ’কৃত ঐসব সম্পত্তির বার্ষিক গড় আয়ের পরিমাণ ২৪ হাজার সোনার দিনারের সমতুল্য ছিল। তাঁর ঐসব ‘ওয়াকফ্‌’কৃত সম্পত্তি ‘আলী (আ.)-এর সাদ্‌কা’ নামে খ্যাত ছিল।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।