আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বাগতম লিলি-ক্যাপ!

তোকে দেখিনা, কতো হাজার বছর হয়ে গেলো... মনে হয় এই তো সেদিনের কথা! ২০০৪ এর ইংল্যান্ড সফরে একেবারে আচমকা দলভুক্ত করা হলো পুচকে মুশিকে। অবশ্য তখনো জানিনা মুশি ওরই নাম। নাম কিন্তু আরো একটা আছে- ময়না! তো ভাবছিলাম, উইকেটি কিপিংয়ে প্রায় বাংলাদেশরই সমার্থক হয়ে যাওয়া পাইলট থাকতে নতুন এই পুচকে কিপারের দরকার ছিলো কি? দরকার যদি হয়েই থাকে, এই পুচকে কেনো? মোহাম্মাদ সেলিম আছে। আছে আনোয়ার হোসেন ! যাদের আবার অভিজ্ঞতাও আছে, যেটা সময়ে বাংলাদেশে দলে নতুন আসা খেলোয়াড়ের জন্য একেবার বিরল না হলেও কাছাকাছি। ভাবাভাবি চলতে চলতেই ইংল্যান্ডে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে মুশি স্পেশালিষ্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলে ফিফটি করে ফেলেছে।

এ আর এমন কী! কিছু করতে পারার সম্ভাবনা আছে বলেই তো নেয়া হয়েছে। কিন্তু তার পরের প্রস্তুতি ম্যাচে যখন সেই পুচকেই ইংল্যান্ডের মাটিতে দুরন্ত সব পেসারদের খেলে দলের কনিষ্ঠজন হিসেবে সেঞ্চুরী করে ফেলে! তখন আমাদের একটু আধটু থমকে যেতেই হয়। যেভাবে থমকে যায় আজীবন নাক উচু ইংলিশ মিডিয়া। লর্ডসের স্বপ্নভূমীতে অভিষেক হয়েই যায় পুচকে মুশির। লিলিপুট মুশির! তবে পাইলটের জায়গায় নয়।

স্পেশালিষ্ট ব্যাটসম্যানের জায়গায়। ভাবতে মন চাইলো, কেনো ওকে এখনই খেলানো হবে? আরো কিছুদিন পরিচর্যা করেই কি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের উত্তপ্ত কড়াইয়ে ফেলা যেতোনা! আসলেই তখন সন্দেহ হচ্ছিলো, যতোই ফিফটি-সেঞ্চুরী করে ফেলুক না কেনো, ওই ছোট্র গড়নের ছেলেটার কি সত্যি সত্যিই ক্ষমতা আছে হার্মিসন-ফ্লিন্টফদের খেলার! নির্বাচকদের প্রতি সস্তা রাগও উঠে যাচ্ছিলো। ধুর! করলো কি এরা? এরা কি মনে করেই নিলো প্রস্তুতি ম্যচের মতো লর্ডস টেস্টেও মুশি সেঞ্চুরী মেরে দিবে! নাহ, নির্বাচকগণ সেদিন নিশ্চিত তা ভাবেননি। এও ভাবেননি আসলেই মুশি একদিন কী করতে পারবে। দিনে দিনে আমাদের লিলিপুট মুশফিক পরিণত হতে লাগলো।

যদিও পরিণত হওয়ার সমান্তরালে কিপিংয়ে দূর্বলতার কিছু সমালোচনাও ডালপালা মেলতে শুরু করলো। তবুও মুশফিক কিভাবে কিভাবে যেনো সব সামাল দিয়ে এগিয়ে চললো। লর্ডসেরই প্রথম ইনিংসে মুশফিক কিন্তু নিজের ব্যাটিং সামর্থের দারুণ প্রমাণ দিয়েছিলেন। যদিও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সেটা বলার মতো কিছুইনা, কিন্তু আমাদের মতো নবীন ক্রিকেট-কুলীনদের জন্য সেটাই অনেক। ৮৫ মিনিট আর ৫৬ বলে করা ১৯ রানের সে ইনিংসে মুশফিক ৩ টি চার মেরছিলেন।

সবচেয়ে সুন্দর যে চারটা ছিলো- ফ্লিনটফের বলে চমৎকার দৃষ্টিনন্দন অফড্রাইভ। সেই শটটি দেখেই আশা হতে সাহস পেয়েছিলাম। সাহসের একটা চাড়া সেদিনই রূপিত হয়েছিলো। এরপর বিশ্বকাপে ভারতের বিরুদ্ধে জেতা ম্যাচেও মুশফিক নিজের আলো ছড়িয়েছেন। সে ম্যাচে ফিফটি করা তিন ব্যাটসম্যানই সদ্যই অনূর্ধ ১৯ থেকে এসেছিলেন।

রবী শাস্ত্রী তো বলেই দিয়েছিলেন- ভারত হারলো বাংলাদেশ যুবদলের কাছে! আসলেই তা-ই। সেদিন তামিমের ব্যাটিংয়ের কথাও নিশ্চয় আপনার মনে আছে! আস্তে আস্তে মুশফিক গুনে গুনে ২৪ টি টেস্ট ও ৯৮ টি ওয়ানডে খেলে ফেলেছেন। নিজে হয়ে গেছেন, বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুন দিনের তারকা। হয়েছেন উইকেটের পিছনের সেরা প্রহরী। সেই সাথে যে ব্যাটিংয়েও ভরসা করার মতো একজন হয়ে গেছেন, সেটা আর কি বলবো! যদিও স্বীকার করতে দ্বিধা নেই- ২৪ টেস্টে ২৭.১৫ গড়ের ব্যাটসম্যান এতো উচু করে ধরার মতো নয়।

বিশেষ কিছু নেই ৯৮ ওয়ানডেতে ১ সেঞ্চুরী আর ৯ ফিফটির রেকর্ডেও। তবে মুশফিকের ছোট ছোট ইনিংসগুলো যারা দেখেছেন, তারা অবলীলায় মেনে নিবেন ওর ব্যাটিং সামর্থ্য। ক্রিকেটার মুশফিকের চেয়ে ঢের ভালো মনে করি ব্যক্তি মুশফিককে। ক্রিকেট যে ভদ্রলোকের খেলা, মুশফিককে দেখলে সেটা আর আলাদা করে বলে দেয়ার দরকার নেই। গত কয়েকদিনে বাংলাদেশ ক্রিকেটে বড় ধরণের একটা পালা বদল হয়েই গেলো।

সাকিব-তামিমের সম্ভাবনাময় অধিনায়ক-সহঅধিনায়ক জুটি ভেঙ্গে শুরু হলো নতুন দিনে শুভযাত্রা। যে যাত্রায় ১৬ কোটি ক্রিকেটপাগল জাতির নতুন দিনের কান্ডারী হয়ে হাজির আমার আলোচিত লিলিপুট মুশফিক। ভাবতেই ভালো লাগে- মুশফিক আমাদের ক্যাপ্টেন। লিলিপুট ক্যাপ্টেন। লিলি-ক্যাপ! সম্পূর্ণ লেখা ব্যক্তিগত ব্লগে।

 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।