আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মার্কেটিং

একবার আপনারে চিনতে পারলে রে , যাবে অচেনা রে চেনা হসপিটাল মার্কেটিং বলতে কি বুঝেন? - জ্বি না স্যার..... কিছু বুঝিনা। -ধারনা আছে কিছু? -না স্যার ধারনা নাই। -কি মনে হয় আপনার কাছে? - কিছু মনে হয়না স্যার। মনে হয় হসপিটালের আবার মারকেটিং কি? গুড কোশ্চেন। হসপিটালের আবার মার্কেটিং কি? মনে প্রশ্ন আসছে না, এখানে আবার প্রোডাক্ট কোনটা? -জ্বি স্যার মনে প্রশ্ন আসছে।

ভেরী গুড। ....... এই হল ইন্টারভিউয়ের নমুনা। উত্তর না পেরেও প্রশ্নকর্তাকে এভাবে খুশী করা যায় আবীরের ধারণা ছিলনা। লোকটা কি কোন কালে কলেজের টিচার ছিল? কলেজের টিচার রা উত্তরের চেয়ে নিরুত্তর ছাত্রদের বেশী পছন্দ করে। এতে নিজেদের জ্ঞাণ ফলানোর একটা সুযোগ তৈরী হয়।

ভদ্রলোক মনে হয় সুযোগটি পেয়ে আনন্দিত। এরকম ইনটারভিউয়ের পর কারো চাকরি হওয়ার কথা না । আবীরের হয়ে গেল। একটা চাকরির ভীষণ দরকার ছিল আবীরের। অবসরপ্রাপ্ত অসুস্থ' বাবা, ছোট দুই ভাই-বোন এখনো পড়াশুনার মধ্যে আছে।

বাবার পেনশন আর দুটো টিউশনির টাকায় আপাতত কোন রকমে চলছে। এটাকে ঠিক চলা বলেনা। ধার কর্জের উপর থাকতে হয়। এই সংসারের বড় ছেলে মাষ্টার্স পাশ আবীরের এখন দায়িত্ব অনেক। এর মধ্যে আবীর আবার প্রেম ও করে।

আবীরের প্রেমিকা রুমকী মাস্টারস শেষ বর্ষের ছাত্রী। তার বিয়ের তোড়জোড় চলছে। এরকম অবস্থায় আর কোন অপশন থাকেনা। একটা চাকরি আবীরের খুবই দরকার। টিউশনী করা ছেলেকে কেউ ভাল পাত্র বলেনা।

যাই হোক অবশেষে আবীর চাকরিটা পেল। আবীর খুশী। প্রথম ফোনটাই রুমকীকে। “চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছো…..”। চাকরি হিসেবে নেহাত মন্দ না।

একটা নামী হাসপাতালের মার্কেটিং অফিসার। শুরুতেই ধন্দটা লেগেছিল আবীরের। হাসপাতালের আবার মার্কেটিং কি? কিন্তু প্রথম দিনের মিটিংয়েই ধন্দ কেটে গেল। আবীরের বস খুব সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে দিলেন। -“হোয়াট ইজ দ্যা প্রোডাক্ট হেয়ার”? আবীর বলতে চেয়েছিল পেশেন্ট।

পরক্ষণেই মনে হল এটা বলা ঠিক হবেনা। চুপ থাকলেই ভাল। আবীর লক্ষ্য করেছে কেউ কিছু জানেনা এরকম বুঝতে পারলেই হেড অব মার্কেটিং আরিফ সাহেব খুশী হন। তাছাড়া পেশেন্টদের প্রোডাক্ট বলাটাও জানি কেমন শোনায়। - “সারভিস ইজ দ্যা প্রোডাক্ট হেয়ার।

আমরা আমাদের সার্ভিসটাকে প্রমোট করবো, দেন সেল করবো? পেশেন্ট হলো এর কনজ্যুমার। ক্লিয়ার? আমরা টারগেট কর্ণার গুলোতে যাব। আমাদের ফ্যাসিলিটিজগুলো এক্সপ্লেইন করবো। ডক্টররা এখানে মিডিয়া। কারণ রোগী হাসপাতালে আসে কোন না কোন ডক্টরের মাধ্যমে।

নার্স, ওয়ার্ডবয়, আ্যাম্বুল্যান্স ড্রাইভাররাও মিডিযা। তারাও এই প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত। উই হ্যাভ টু কমুনিকেট দেম। রিলেশন তৈরী করতে হবে। কিভাবে তৈরী করবেন সেটা আপনার বিষয়।

মার্কেটে আরো কমপিটিটর থাকবে। ইটস এ ওয়ার। নাথিং ইজ আনফেয়ার। ” মিটিং শেষে আবীরের মনে হল এখানে অপার সম্ভাবনা। অন্তত তার সিনিয়র কলিগদের দেখলে সেরকমই মনে হয়।

খালি কিছু টেকনিক এপ্লাই করতে হবে। মানি টকস হেয়ার। টাকা কথা বলে। আবীরের বস আরিফুল হক বলেছেন “মারকেটিং ইজ এ জব উইদ আউট লিমিট। সো ফিডব্যাক আনলিমিটেড, প্রসপেক্ট অলসো আনলিমিটেড”।

আনলিমিটেড প্রসপেক্টএর এই চাকরি পেয়ে আবীর খুশী, রুমকীও খুশী। কিন্তু অল্প কিছুদিন যাওয়ার পরই বোঝা গেল বিষয়টা অত সহজ না। নট সো ইজি। ডাক্তারদের কনভিন্স করে আইসিইউতে রোগী রেফার করানো অনেক কঠিন। এরচেয়ে ঠেলা গাড়ি চালানো সহজ।

বড় বড় সরকারী হাসপাতালে ধরনা দিতে লাগল আবীর। কিন্তু তার নামে কোন রোগী রেফার হয় না। আবীরের হাসপাতাল থেকে আবীরকে একটি টারগেট ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আবীর তার সিকি ভাগও পূরণ করতে পারেনি। সুতরাং দুইমাসের মাথায় আবীরের চাকরি যায় যায় অবস্থা।

আবীরের বস আবীরকে আল্টিমেটাম দিয়ে দিয়েছে। অন্তত একটি রোগী হলেও পাঠাতে হবে, যেভাবেই হোক। আদারওয়াইজ চাকরিটা নাই। আবীর হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরতে থাকে। ডাক্তার, সিস্টার, ওয়ার্ডবয়, অ্যাম্বুল্যন্স ড্রাইভার সবাইকেই অনুরোধ করে ফোন দিতে থাকে।

কিন্তু রোগী আর মেলেনা। অন্য অনেক বেসরকারী হাসপাতালে রোগী রেফার্ড হয় কিন্তু আবীরের হাসপাতালে হয় না। আবীরের বেধে দেওয়া আল্টিমেটামের দিন প্রায় শেষ। শেষ দিনে একটা ফোন আসে আবীরের কাছে। “বস আমি ড্রাইভার জামাল।

আল-আমীন অ্যাম্বুল্যান্স সার্ভিস । শিশু হাসপাতাল থেকে একটা খারাপ রোগী নিয়া আসতেছি। আইসিইউ ছাড়া গতি নাই। ফোন দিয়া রাখেন। রিসিপশনে ম্যাসেজ দিয়া রাখেন বস।

ড্রাইভার জামাল , আল আমীন আ্যাম্বুল্যানস সার্ভিস। বোঝেন তো, মার্কেটে খাদকের অভাব নাই”। আবীর ফোন দিয়ে জানিয়ে রাখে তার হাসপাতালে। যাক এ যাত্রায় টিকে গেল চাকরিটা। কিন্তু পরক্ষনেই আরেকটা ফোন আসে আবীরের কাছে।

ফোনটা পেয়ে “আবীর দমে যায়। বস কপাল খারাপ। রোগীটা নাই। মারা গেছে। আপনার হাসপাতালে যাওয়ার আগেই গেছে।

” আবীরের নামে রোগী আর ভর্তি হওয়া হলনা হাসপাতালের আইসিইউ তে। আবীরের ইচ্ছে করছিল ফোনটা ভেঙ্গে ফেলে। এই দুর্দিনে আরেকটা ফোন কেনা সম্ভব না। দুর্দিনে মাথা ঠান্ডা রাখতে হয়। আবীর ফোনটা বনধ করে দেয় রাত বারোটায়।

একটা ঘুমের উষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। এই চাকরি আবীরকে দিয়ে হবেনা। কে জানে চাকরিই বোধ হয় আর তাকে দিয়ে হবেনা। ঘুমভাঙে পরদিন সকালে। ফোন অন করতেই কনগ্রাচুলেশন ম্যাসেজ আসে আবীরের বসের কাছ থেকে।

“কনগ্রাচুলেশন। অবশেষে তোমার রেফারেন্সে রোগী ভর্তি হল। আইসিইউতে ২ নং বেডে। রোড ট্রাফিক একসিডেন্ট এর পেশেন্ট ”। একটা স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলে আবীর।

“চাকরিটা আমার টিকে গেল বেলা শুনছ........”। আবীর ফোন দেয়। রুমকীর ছোটবোন ফোনটা ধরে। ঐ প্রান্তে কান্নার শব্দ। -আবীর ভাই কাল রাতে অনেক চেষ্টা করেও আপনাকে পাইনি।

আপনার মোবাইল বন্ধ পেয়েছি। আমরা আপনার হাসপাতালেই সরাসরি চলে এসেছি। আপনার কথা বলে ভর্তি হয়ে গেছি। আবীর ভাই, আপু এ্যকসিডেন্ট করেছে। কাল রাতে সাভার থেকে ফেরার পথে আপুদের ভারসিটির মাইক্রোবাসটা.....।

এরপর আবীর আর কিছু শুনতে পায়না। “আপুর অবস্থা খুব খারাপ। আইসিইউ তে নিয়েছে। ডাক্তাররা কিছু বলছেনা। আপনি তাড়াতাড়ি আসেন প্লিজ।

” আবীর হাসপাতালের দিকে রওনা হয়। গল্পের শেষ দৃশ্যে আমরা দেখতে পাই মার্কেটিং বিভাগের প্রতিদিন সকালে রিপোটিং। হাসপাতালের এমডিকে হেড অব মাকেটিং আরিফ সাহেব বলছেন “স্যার অ্যাটলাস্ট আবীরের রেফারেন্স একটি রোগী ভর্তি হয়েছে আইসিইউতে। এমডি সাহেব খুশী হয়ে মাথা নাড়েন। -“আমি জানতাম ওপারবে”।

আরিফ সাহেবও মাথা নাড়েন। যেন বিষয়টা আরিফ সাহেবও জানতেন। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.