আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রভুভক্ত কুকুর এবং তার প্রভুর গল্প

আলো অন্ধকারে যাই লম্বা করে রোগা যে মেয়েটি রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পরে আছে ,তার নাম সাবা । সাবা মাসানী । সাবার দৃষ্টিতে এখন কেবল বিস্ময় । হঠাৎ করেই তার জিমির কথা মনে পড়লো , সেও কি জিমির মত মারা যাবে। সাবা মাসানীর জন্ম কুয়েতে ।

নাম এবং চেহারায় মধ্যপ্রাচ্যীয় একটা ভাব রয়েই গেছে । সে যখন দেশে ফিরে আসে , তখন তার বয়স ১২ । সেই সময়টা তার খুব খারাপ কাটতো , যতদিন না জিমির সাথে তার পরিচয় হয় । পরিবেশ ,আবহাওয়া ,ভাষা সবই ছিল তার অপরিচিত । একে তো বয়ঃসন্ধিকাল তার উপর এতটা বাহ্যিক চাপ তার জীবনকে বিষিয়ে তুলেছিল ।

হঠাৎ করেই ,বাড়ির পাশের মাঠে জিমিকে খুঁজে পায় সে। খুঁজে পায় সময় কাটানোর জন্য একজন সাথী । জিমি আর কেউ না , একটি অদ্ভুত সুন্দর কুকুরছানা। সেই সময়টার বেশিরভাগই সাবা কাটিয়েছিল জিমির সাথে । তার একমাত্র খেলার সাথী ।

কিন্তু হঠাৎ একদিন জিমিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলোনা । একমাত্র মেয়ে সাবার প্রিয় খেলার সাথী, শওকত সাহেব হন্যে হয়ে খুঁজলেন বটে , পেলেন না। সাবার সে কি কান্না । পরের দিন সাবা স্কুলে যাচ্ছিল । হঠাৎ রাস্তায় রক্তাক্ত একটা মাংসপিণ্ড দেখতে পেল সে ।

গলার বেল্ট দেখে তার চিনতে ভুল হয় না । বেখেয়ালে হোক বা ইচ্ছাকৃত করেই হোক কিংবা পশু ভেবে তাচ্ছিল্য করেই হোক কেউ একজন গাড়িচাপা দিয়েছে জিমিকে । গন্ধ বেরুচ্ছিল জায়গাটা থেকে । সাবা দ্রুত সরে এসেছিল সেখান থেকে । দৃশ্যটা সে ভুলতে পারেনি কখনো ।

সাবাকে কিছুক্ষণ আগে একটা মাইক্রোবাস ধাক্কা দিয়ে কোথায় যেন চলে গেল । আশেপাশের মানুষ গোল হয়ে দাঁড়িয়ে তাকে দেখছে । সাবার জিমির কথা মনে পড়ছে । জিমির কথা । জিমিকে সে ছুঁয়েও দেখেনি সেদিন ।

তাকেও কি কেউ ছুবেনা । সে ও কি এখন কেবল একটা রক্তাক্ত মাংসপিণ্ড । অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় মারা যায় সাবা । মারা যাওয়ার সময় তার মুখে একটা অদ্ভুত হাসি ছিল । উপহাসের হাসি ।

আর মাথায় ছিল একটা প্রশ্ন “আচ্ছা ,মানুষ আর কুকুর তো তাহলে একই । নিজেকে তাহলে মানুষ কেন শ্রেষ্ঠ ভাবে ? মেয়ে ভার্সিটিতে গেছে সকালে। দুপুরের মধ্যে ফেরার কথা । এখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে চলল, কি ব্যাপার ? মেয়ের মোবাইল ও বন্ধ । মাঝে মধ্যেই মেয়েটা দেরি করে ফেরে ,তাই বলে মোবাইল বন্ধ থাকবে কেন ? মেয়ের বান্ধবীদের বাসায় খোঁজ নিবেন ভাবছেন ঠিক এমন সময় ফোন এলো।

“শওকত সাহেব বলছেন ? “ “ কে ? “ “ আমি ঢাকা মেডিকেল থেকে বলছি । “ ধক করে উঠলো শওকত সাহেবের বুকটা । “ কেন? কি হয়েছে ? “ “ তেমন কিছুনা ,আপনি একটু আসুন । “ লাশঘরে একটা রক্তাক্ত মাংসপিণ্ড দেখতে পেলেন শওকত সাহেব । কিন্তু নীল শাড়ি দেখে ,তার চিনতে ভুল হয় না ।

শখ করে আজ মায়ের একটা শাড়ি পরেছিল মেয়েটা । শওকত সাহেবের মাথাটা হঠাৎ করেই শূন্য হয়ে যায় । মাথাটা কেমন থেঁতলে গেছে মেয়েটার । নীল আর লালের এক অদ্ভুত সংমিশ্রণ সাবার শরীরে । শওকত সাহেব বীভৎস আলপনাটার দিকে অবাক হয়ে চেয়ে থাকেন ,আর ভাবেন “আমার মেয়েটা কি মারা গেল ? নাকি তাকে হত্যা করা হল? এর বিচার কি আমি পাব ?নাকি পাব ১ লক্ষ টাকার একটা চেক।

“ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।